লেখালেখির উপর একটা মন্তব্য
আমি জটিল রচনার বিপক্ষে । আমি যা লিখি তা যদি সাধারণ পাঠক বুঝতে না পারে তবে আমার লেখার স্বার্থকতা কোথায় ? কিন্তু এই কথাটা অনেক লেখক বুঝতে চান না । আমরা যা রচনা করি সাধারণ পাঠকদের বোধগম্যের দিকে দৃষ্টি রেখেই রচনা করা উচিত বলেই আমি মনে করি । আমাদের ভাবা প্রয়োজন - আমরা কেন লিখছি , কার জন্য লিখছি ? যদি আমার লেখা সাধারণ পাঠক বুঝতে না পারে , তবে সেটা আমি কার জন্য লিখলাম ? আমরা জ্ঞান দিতে যাবো কাদের কে ? যাঁরা জ্ঞানী তাঁদের কে , নাকি যাঁরা জ্ঞানের আলোয় আলোকিত নন তাঁদের কে ?
আমাদের বেশীর ভাগ লেখকই দেখতে পাচ্ছি জ্ঞানী লোকদেরই জ্ঞান দান করতে স্বচেষ্ঠ ! তাঁরা লিখায় যেন বলতে চান - জ্ঞানী লোকরাই আমার লেখা পড়ুক , সাধারণ পাঠক আমার লেখা পড়ে কি বুঝবে , করবে কি ? এই হলো আমাদের লেখক সমাজের বেশীরভাগ লেখকদের একটা বিরাট রোগ । তাঁরা সাধারণ পাঠকদের উপযোগী করে কোন কিছুই লিখতে চান না ।
স্কুল - কলেজ গঠিত হয় জ্ঞানহীনদের জ্ঞানদানের জন্য । জ্ঞানীদের জন্য নয় । আমি মনে করি লেখকদের এক একটি লেখা সমাজ সংশোধনের এক একটা হাতিয়ার । যদি এই হাতিয়ার সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রেনা পৌঁছায় , তবে সমাজ সংশোধন হবে কি করে ? যারা হাতিয়ার বানায় তাদের কাছেই যদি হাতিয়ার রখে দেয়া হয় , তবে সেই হাতিয়ার বানানোর প্রয়োজনীয়তা কি আমার বুঝে আসেনা ।
আমরা এই যে কবিতা লিখি, গল্প লিখি , উপন্যাস লিখি - তা কেন লিখি ? কাদের জন্য লিখি ? আমরা কি ভাবি - আমাদের লেখাগুলো পড়ে জ্ঞানহীন লোকেরা আমাদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হোক ? আমরা কি ভাবি - আমাদের লেখাগুলো পড়ে একজন সাধারণ মানুষের কতটুকু উপকার হচ্ছে ? আমরা কি ভাবি - আমাদের লেখাগুলো আদৌ কোন সাধারণ মানুষ পড়তে পারছে কি না ?
আমাদের জীবন যেমন জটিল করে ফেলেছি আমরা , তেমনই আমাদের লেখালেখির জগতও আধুনীকতার নামে জটিল করে ফেলেছি । আজকের আমাদের লেখাগুলো হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষদের বোধগম্যের বাইরে ! সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের কোন উপকারেই আসছেনা আমাদের লেখা ।
আগে ঘরে ঘরে দেখতাম পুঁথি রাখা হতো । সহজ সরল সহজবোধ্য সকলের বোধগম্য কাব্যবিশেষ বইয়ের নাম পুঁথি । গ্রাম-গঞ্জে সবাই হারিকেন জ্বালিয়ে পুঁথি পড়তো । মা - বোনরা গোল দিয়ে বসতো পুঁথির আড্ডায় ! এমন কোন ঘর ছিলোনা , যেখানে পুঁথি পরার আয়োজন ছিলোনা । আমি এখনও ধরে রেখেছি আমার ঘরের বুকসেল্ফে কয়েকটা পুঁথি আমার বাবার দিনের ।
আমার বাবা ছিলেন তদানিন্তন বার্মা ( বর্তমান মায়নামার ) -য় কর্মশেষে রাত্রে সঙ্গীদের কাছ থেকে সবুজসাথী বা বাল্যশিক্ষা পড়ুয়া একজন শিক্ষিত । আর তিনিই পড়তেন পুঁথি - সয়ফুল মুল্লুক বদিউজ্জামান , দাতা হাতেম তাই , মাওলানা রুমীর মসনবী শরীফ ইত্যাদি আরও কত কি !
আর এখন আমাদের লেখাগুলো প্রতিটা ঘরে দূরে থাক গ্রামের মেট্রিক পাশ ছাত্রদের হাতে ও দেখতে পাইনা ! জিজ্ঞেস করলে বলে - যেটা বুঝিনা সেটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করে লাভ কি ? কি সব কবিতা লেখে কবিরা , একটা শব্দও বুঝা যায়না !
এখন ভাবুন আমাদের লেখা কার জন্য ? আমরা কেন লিখি ? ফেইসবুকের লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী । দেখুনতো কয়জন পড়ছে আমাদের লেখা ? কেন পড়ছেনা , আমরা কি জানতে ছেয়েছি কখনো ? আমাদের লেখা আমরাই পড়ছি , আর কেউ পড়ছেনা , কেন ?
আসলে আমরা সবকিছুর মতো আমাদের লেখাকেও জটিল করে ফেলেছি , তাই আমাদের লেখার পাঠক শুধু আমরাই , অন্য কেহই আমাদের লেখা পড়ছেনা ।
ভুলত্রুটি মার্জনীয় …
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন