আমি সৌদি আরবের মদিনায় আসি ১৬/১২/২০০০ ইং সালে। তখন আমার শরীরে একটি মাত্রই রোগ ছিল - গ্যাস্ট্রিক। যার জন্য আমাকে খেতে হতো দৈনিক তিনটা নিউসেফটিন আর অথবা নিউট্যাক। সৌদিতে আসার পর যখন মসজিদে নববীতে গেলাম, দেখলাম বিশেষ বিশেষ স্থানে সাজিয়ে রাখা আছে জমজমের পানি পানের আয়োজন। মসজিদের ভিতর থেকে তেমন পানি বাইরে নিতে দেয়া হয়না। জিজ্ঞেস করলাম বাহিরে পাওয়া যায় কিনা ? জানতে পারলাম লোকজনের চাহিদা মোতাবেক জমজমের পানি মসজিদে নববীর বাহিরে বাউন্ডারীর ভিতরেই উত্তর-পশ্চিম কোণে এক নিদ্রিষ্ট স্থান থেকে সরবরাহ করা হয়।
তারপর দিন থেকেই সপ্তাহে দুইবার উক্ত স্থান থেকে ২০ লিটারের গ্যালনে করে নিয়ে আসতে থাকি জমজম। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম। জমজমই যেহেতু সর্বরোগের মহৌষধ , আমার গ্যাষ্ট্রিক রোগ নির্মূলে এ জমজমে বিশ্বাস করেই দেখি। সৌদিতে আসার পাঁচদিন পর থেকেই জমজমের পানিকে ঔষধ হিসাবে পান করতে থাকি। যেদিন থেকে ঔষধের নিয়তে দৈনিক তিনবার জমজম পান শুরু করি , সেদিন থেকে যত কষ্টই হতো দেশ থেকে নিয়ে আসা নিউট্যাক ট্যাবলেট মুখে তুলিনি। এইভাবে তিনমাস ঔষধ হিসাবে পান করি শুধুমাত্র জমজম, মাঝখানে অন্য কোন ঔষধ খাইনি। দুই মাস পর অনুভব করলাম আমার রোগ কষ্ট তেমন অনুভব হচ্ছেনা। তবুও ভাবলাম মনে মনে ধরে নেয়া তিন মাসের কোর্সটি আর এক মাসের জন বাদ দিব কেন ? তাই কোর্সটি শেষ করলাম। তিনমাস শেষে আমি দূরারোগ্য রোগ গ্যাস্ট্রিক থেকে সমপূর্ণ মুক্ত হলাম । সেই থেকে এই পর্যন্ত ১২ টি বৎসর আর কখনো গ্যাষ্ট্রিক আমার কাছে আসেনি। আলহামদুলিল্লাহ। এই অমিয় সুধা নাকি হাজিদের বাংলাদেশে পরিবহনে বাধা দিচ্ছে বাংলাদেশ বিমান !
যুগ যুগ ধরে চলে আসা নিয়ম ভঙ্গ করে বাংলাদেশ বিমানের হাজিদের জমজমের পানি পরিবহনে বাধাদান প্রমাণ করে বর্তমান সরকারের আমলে মুসলীমদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মনোভাবের উপর আরও একটা কুঠারাঘাত।
যুগ যুগ ধরে হাজিদের জমজমের পানি পরিবহনে বিমানগুলোর কোন অসুবিধা হয়নি বা সমস্যা সৃ্টি করেনি, কিন্তু হঠাৎ এখন কি এমন সমস্যা সৃষ্টি হয়ে গেলো যে হাজিরা হজ্জে গিয়ে জমজমের পানি আনতে পারবেনা ?
হজ্জে গিয়ে পরিবার পরিজনের জন্য হাজিরা সাধারণত প্রধান দুটি জিনিস আগেই সংগ্রহ করে রাখে। এক জমজমর পানি আর দ্বিতীয়টি হল খেজুর। আর কিছু হাজিরা দেশে আনুক না আনুক , কিন্তু এ দুটি জিনিস হাজিরা না আনলেই নয়। জমজমের পানি সর্বরোগের মহৌষধ , যা মুসলমানদের বিশ্বাস। তাই জমজমে পানি আনতে বাধাদান এ বিশ্বাসে বাধাদান।
অবশ্য বিমান বাংলাদেশ থেকেই হাজিদেরকে এই পানি সরবরাহ করবে বলে বলছে, কিন্তু তা যে খাটি জমজমের পানিই হবে তার নিশ্চয়তা কতটুকু বাংলাদেশের ভেজাল মানুষদের ভেজাল মনোভাবের আঙ্গিকে প্রশ্ন থেকে যায়। অথচ এই পানি হাজিরা সরাসরি নিজ হাতে নিলে কোন প্রকার সন্দেহ থাকতোনা। সর্বোপরি , জমজমের পানি নিতে বাধাদান একটা বিতর্ক বিষয়ের নামান্তর।
=============