শবেবরাত এবং কিছু প্রশ্ন ও প্রত্যাশা
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
---------------------
আজ ছিল চন্দ্রমাসের ১৪ই শাবান । চন্দ্রতারিখ অনুযায়ী ১৪ই শাবান দিবাগত রাত শবে বরাত আমাদের দেশে এই শবেবরাতকে এক পূণ্যরজনী হিসাবে আখ্যায়িত করা হয় । পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এ রাতটা মুসলমানরা মহাপূণ্যময় রজনী হিসাবে বরণ করে ইবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত হয় । মুসলমানরা এ রজনীটিকে আগামী এক বৎসরের ভাগ্য নির্ধারণী রাত হিসাবে মেনে নিয়ে তাদের প্রতিপালকের কাছে উত্তম ভাগ্য নির্ধারণ ও তাঁর সন্তুষ্টি অরজনের জন্য রাতভর প্রার্থনায় রত থাকেন ।
কিন্তু আমরা এমন একটা দেশে অবস্থান করছি , না আমি কোন অমুসলীম দেশের কথা বলছিনা । আমি বলছি ইসলামের মুলকেন্দ্রস্থল মদিনা মুনাওয়ারার মসজিদে নববীর কথা । এখানে ইসলামের বড় দু'টি দিন ছাড়া অন্য কোন দিন বিশেষ ভাবে পালন করা হয় না । এখানে শবেবরাত , শবেক্বদরের রাত বলে কোন বিশেষ দিন নেই । এখানে না মহররম , না আছে মি'রাজ আর না আছে ঈদে মিলাদুন্নবী । এখানে আছে শুধু মুসলমানদের দু'টি বড়দিন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। আমি বুঝিনা আমাদের দেশগুলোতে এ দু'টি দিন ছাড়া হাজার হাজার পালনীয় দিন কিভাবে নির্ধারণ করে নিয়েছে । কয়েকদিন আগে আমি একটা নোট পোষ্ট করেছিলাম , যা ছিল ঈদে মিলাদুননবী নিয়ে । এঈ ঈদে মিলাদুন্নবীর উৎপত্তি সম্পর্কে জানতে গিয়ে শত শত ইন্টারনেট সাইট ঘেঁটে যা পেলাম তাতে চক্ষু ছানাবড়া । ঈদে মিলাদুন্নবী নামে আমরা যে অনুষ্টানটা পালন করি সেটার উৎপত্তির মূলে ছিল ইসলামের একটি বিতর্কিত দল এবং খ্রীষ্টানদের দেখানো একটা পথের অনুস্মরণ । যা রাসুল (সাঃ), রাসূল (সাঃ) এর প্রকৃত ও পরীক্ষিত ভালোবাসার বন্ধু এবং একনিষ্ট সহচর সাহাবাগণ , তৎপরবর্তী তাবেয়ী , তাবে তাবেয়ীগণ কর্তৃক অনুমুদিত নয়।
আজ শবেবরাত পালন করতে গিয়ে আমাদের দেশের কথা মনে করে মনে হলো শবেবরাতের আয়োজন ও ঈদে মিলাদুন্নবীর মত নয় তো ? যদি না হয় , এখানে শবেবরাত পালন হয় না কেন ? আমাদের দেশের মুসলীম আর এদেশের মুসলীমদের মধ্যে এতটা ব্যবধান কেন ? তবে কি আমাদের দেশের আলেমরা আমাদেরকে ইসলাম সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন , নাকি এদেশের আলেমরা ইসলাম সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন ? কোন আলেমদের তথ্যকে আমরা সঠিক ভাববো - এদেশের নকি আমাদের দেশের আলেমদের ? আমরা সাধারণ মুসলমানরা আল্লাহর পথে যতে হলে কোনদিকে ধাবমান হব ? কেন মুসলমানদের মধ্যে এত বিভক্তি? সাধারণ মুসলমানরা কিভাবে বুঝবে কোনটা আল্লাহর পথ ? এভাবে দুইদিকের আল্লাহর পথে চলতে গিয়ে যদি সাধারণ মুসলমানরা আল্লাহভক্তির পরিবর্তে আল্লাহকে বিভক্ত করে ফেলে , তবে সে দায়দায়িত্ব কে নিবে ? আমাদের দেশের আলেমরা নাকি এদেশের আলেমরা ? এভাবেই অনেক প্রশ্ন এসে ভীড় করে মনের কোণে । কেন আলেমদের মাঝে এত বিভক্তি ?
যা হোক এ লেখা লিখে কোন ফায়দা নেই । কারণ আলেমরা আলেমদের মতই থাকবে । এ বিভক্ত নিরসনে তারা কোন পদক্ষেপ নিবেনা । কারণ তারা জানে পদক্ষেপ নিতে গেলেই তাদের পেঠপূঁজা বন্ধ হয়ে যাবে । এক এক আলেম এক এক স্থান দখল করে তাদের পেঠ পূঁজা করে যাচ্ছে । সাধারণ মানুষদের আল্লাহর পথ দেখানোর নামে তাদের বোকা বানিয়ে করে যাচ্ছে তারা নিজ নিজ পেঠপূঁজা। প্রকৃত পক্ষে তারা নিজেরাও জানেনা আল্লাহকে পাওয়ার পথ কোনটি , আল্লাহর নিকটবর্তী হবার পথ কোনটা ? নয়তো কেন আল্লাহকে পাওয়ার একটি মাত্র রাস্তার মধ্যে এত বিভক্তি ?
সে যাক, আর বিশেষ কিছু বলতে চাইনা । মসজিদে নববীতে মাগরীব ও এশার নামাজ শেষ করে এলাম কিছুক্ষণ আগে । যখন দেখলাম আমাদের দেশের মতো এখানে কেহই শবেবরাত পালন করেনা , তখন কিছুটা মনের অনুভুতি শেয়ার করনে এই লেখা । জানি আলেমরা এ লেখা পড়বেনা , পৌঁছবেনা তাদের কাছে আমার মনের কথা । তবুও কামনা করি প্রত্যেক আলেম একই পথের পথিক হোক , এক রাসুল (সাঃ) আর এক আল্লাহ , এক কোরআন আর এক হাদীস এই দু'টি অবলম্বন করেই বিশ্বের সকল আলেম একই রাস্তায় উপণিত হয়ে সাধারণ মুসলীমদের এক আল্লাহর পথে ধাবিত করুক - এটাই হলো শেষ প্রত্যাশা।
==================