দারিদ্রতা দূরীকরণ জন্মনিয়ন্ত্রণে নয় ,
অপচয় নিয়ন্ত্রণে -
সাম্যবাদের ভিত্তিতে সকল জীবন পরিচালনায় ।
( আপনারা আমাকে অপচয় নিয়ন্ত্রণ ও
সাম্যবাদের ভিত্তিতে জীবন পরিচালনার গ্যারান্টি দিন ,
আমি আপনাদেরকে কোন প্রকার জন্মনিয়ন্ত্রণ না করে
বাংলাদেশে স্বচ্ছল ভাবে জীবন পরিচালনার গ্যারান্টি দিব । )
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
---------------------
প্রতিটা মানুষ তাদের নিজ নিজ রুজি নিয়েই পৃথিবীতে আগমন করে । আমাদের অতি লোভ , মজুতদারী এবং সমাজ ব্যবস্থায় মানুষদের সেই রুজির অপব্যবহার হয় বলেই সেই রুজিতে টান পড়ে । আজ আমরা যদি সুক্ষ দৃষ্টি দিয়ে দেখি , তবে আমাদের তথা অভুক্ত - অন্নহীন মানুষদের রুজিটা কোথায় যাচ্ছে ? কেন আমরা ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিচ্ছি ? কেন আমরা সমাজের একাংশ মানুষ না খেয়ে মরছি ? তা আমরা বুঝতে পারবো ।
তার কারণ হচ্ছে - আমাদের অপচয় , আমাদের রুজি - রোজগার ও ধন সম্পদের অপব্যবহার , আমাদের অতি লোভ , আমাদের মজুতদারী , আমাদের অসাম্য সমাজ ব্যবস্থা , আমাদের অপরের ধন সম্পদ কেড়ে নিয়ে নিজে ধনী হবার অপচেষ্ঠা , আমাদের অহংবোধ , আমাদের মানবতাবিরোধী মনোভাব , আমাদের অসাম্য নীতি ।
বর্তমান সমাজে দেখা যায় - অপচয়ের প্রতিযোগিতা । যেখানে একজনের খাদ্য প্রয়োজন এক প্লেট , সেখানে মন রক্ষর্থে ধরিয়ে দেয়া হয় একের অধিক প্লেট খাদ্য ! ফলে সে কিছু খেয়ে বাকি অংশ ডাস্টবিনে ফেলে দেয় , আর সে খাবার কুঁড়িয়ে খায় অন্নাভাবে মৃতপ্রায় পথকলি শিশুরা !
আমাদের খাবার টেবিলে যেখানে দু’টি তরকারীই যথেষ্ট যা দিয়ে ভালোভাবেই খাওয়া যায় , সেখানে আমরা ১০টা তরকারীর আইটেম দিয়ে টেবিল সাজাই ! আর বাহির ভিক্ষুক তা দেখে জিব চাটে , কিন্তু ঐ ভিক্ষুককে এক লোকমা খাদ্য দিতে আমাদের মনে সায় দেয়না ! আমরা বেশীর ভাগ খাদ্য অপচয় করি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে । যদি আমরা সুক্ষ দৃষ্টি দিয়ে দেখি , তবে বুঝতে পারবো একটা বিয়েতে য খাদ্য অপচয় হয় তা দিয়ে কমপক্ষে ১০০০ অভুক্ত মানুষের পেঠে শান্তি দেয়া যেতো ।
যদি আমাদের কাপড়ের প্রয়োজন হয় ২ সেট , তবে আমরা কাপড় ক্রয় করি ৫ সেট । আমরা মাসের পর মাস হাজার হাজার টাকা দিয়ে বাড়িতে আলোকসয্যা করতে পারি , গরীবদের অন্ধকার ঘরে বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা নিতে পারিনা । আমরা গরীবদের সম্পদ কুক্ষীগত করণে দৃষ্টি ফেলতে পারি , কিন্তু তাদের স্বচ্ছলভাবে চলার লক্ষ্যে সুদৃষ্টি দিতে পারিনা । আমরা কোটি টাকার গাড়ি কিনতে পারি , কিন্তু গরীবদের চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ করতে পারিনা । আমরা দৈনিক হাজার হাজার টাকার খাদ্য অপচয় করতে পারি , কিন্তু অন্নহীনদের অন্নাভাব দূর করতে পারিনা । আমরা বিশাল বিশাল অট্রালিকা নির্মাণ করতে পারি , কিন্তু গৃহহীনদের মাথা গোজার ঠাই করে দিতে পারিনা । আমরা বাড়িতে হাজার হাজার টাকা খরচ করে নিজেদের রক্ষায় কুকুর ও দারোয়ান পুষতে পারি , কিন্তু আশ্রয়হীনদের আশ্রয় দিতে পারিনা । আমাদের পকেটে সব সময় টাকা ভর্তি থাকে , কিন্তু ভিক্ষুকদের একটাকা দান করতে পারিনা । আমরা আমাদের সন্তানদের হাজার হাজার টাকার খেলনা কিনে দিতে পারি , কিন্তু পথের পাশে পড়ে থাকা বস্ত্রহীনদের উম্মুক্ত দেহ ঢাকার পর্যাপ্ত বস্ত্র কিনে দিতে পারিনা ।
আমরা যারা এসব করি , তারা কি ভাবি কখনো - কাদের জীবনের অংশ কেড়ে নিয়ে এগুলো করি ? না , আমাদের সেটা ভাবার সময় নেই , আমাদের মাথায় মগজে ভিন্ন চিন্তা । আমরা যদি এসব অপচয় না করে গরীবদের দিকে দৃষ্টি দিই , তবে কি কেউ না খেয়ে মরতে পারে ?
গরীবদের দূর্দশার দিকে দৃষ্টি দিয়ে আমরা জন্মনিয়ন্ত্রণের কথা ভাবতে পারি , কিন্তু ধনীদের অপচয়ের দিকে দৃষ্টি দিয়ে তাদের অপচয় নিয়ন্ত্রনের কথা ভাবতে পারিনা । যারা জন্মনিয়ন্ত্রণের কথা বলেন আমি তাদের বলতে চাই - আপনারা আমাকে অপচয় নিয়ন্ত্রণ ও সাম্যবাদের ভিত্তিতে জীবন পরিচালনার গ্যারান্টি দিন , আমি আপনাদেরকে কোন প্রকার জন্মনিয়ন্ত্রণ না করে বাংলাদেশে স্বচ্ছল ভাবে জীবন পরিচালনার গ্যারান্টি দিব ।
জন্মনিয়ন্ত্রণ নয় , অপচয় নিয়ন্ত্রণ করুন । অপচয় নিয়ন্ত্রণ করলে আর জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে হবেনা । মনন - মস্তিস্কে জাতীয় সমতার ভিত্তিতে সকলকে নিয়ে সাম্যের দর্শন সঙ্গী করে সুন্দর রূপে জীবন পরিচালনা করতে শিখুন । মানুষ মেরে নিজে একাকী জীবন উপভোগ করার চিন্তা মন ও মস্তিস্ক থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন । তবেই দেখবেন - দারিদ্রতা দূরীকরণ জন্মনিয়ন্ত্রণে নয় , অপচয় নিয়ন্ত্রণে - সাম্যবাদের ভিত্তিতে সকল জীবন পরিচালনায় । আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উত্তম বিবেক দান করুন - আমীন ।