বুঝার আর বাকী রইলনা কেন অসময়ে বাড়ী থেকে ফোন । ছেলেদের মিটিং এ যাওয়া থেকে বিরত রাখার এক ব্যর্থ চেষ্ঠার এই ফোন । আমিও জানি ছেলেদের আজ বিরত রাখা যাবেনা । কারণ ঘরের সম্মুখেই যে মিটিং এর আয়োজন , সেই মিটিং এ যাওয়া থেকে ছেলেদের বিরত রাখার চেষ্ঠা বোকামীর নামান্তর । অবুঝ শিশুরাও আজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাঠে নামছে ভাবতেই যেন গা শিহরীয়ে উঠে । আমার ছেলে দু’টোর বয়স ১৫/১৬ । কি বুঝবে তারা দেশের নোংরা রাজনীতি সম্পর্কে ? তবুও বললাম – “ আব্বু তোমরা মিটিং এ যেওনা । দূর থেকে দেখো। মিটিং এ পুলিশ আসবে । ধরে নিয়ে যাবে নীরিহ মানুষ । আমি পুলিশকে দেখেছি বড় একটা লাঠি দিয়ে ৭ বছরের একটা ছেলেকে নির্দয় ভাবে পেঠাতে । তোমরা ছোট তা পুলিশরা বুঝবেনা ’’ । এভাবেই তাদের বাধা দেবার বৃথা চেষ্ঠা চালালাম । যদিও আমি নিশ্চিত তারা তামাশা দেখার জন্য মিটিং এ যাবেই ।
যা হোক , লাইন কেটে দিয়ে ভাবলাম – যেখানে চলতো আওয়ামী লীগের সোনার ছেলেদের হোন্ডা আর অস্ত্রের মহড়া , সেখানে আজ অনুষ্টিত হচ্ছে এলাকা ভিত্তিক বিক্ষুভ সমাবেশ ! যাতে যোগ দিচ্ছে আওয়ামী লীগের মাথা মোটারাও ! তবে কি আওয়ামী লীগের ভরাডুবি আসন্ন ?
অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে – বি এন পি জেগেছে এইবার । তারা এখন রাজপথ থেকে গা ঢাকা দিয়ে নতুন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তৃণমূল পর্যায় থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের অরাজকতা ও স্বৈরাচারী শাসনের জবাব দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে । যদি এই হয় বি এন পির বর্তমান রাজনৈতিক কৌশল , তবে নিশ্চিত যে আওয়ামী লীগ সরকারের ভরাডুবি হতে যাচ্ছে এইবার ।
মনে হয় বি এন পি বুঝে গেছে - শুধুমাত্র মহানগরে মিছিল মিটিং করে জনবল সংগ্রহ করা যাবেনা । জনবল সংগ্রহের লক্ষ্যে এলাকা ভিত্তিক তাদের কর্মসুচী নিতে হবে । করতে হবে প্রতিটি এলাকায় মিছিল মিটিং এর আয়োজন । যেতে হবে তাদের দেশের প্রতিটি এলাকায় । শুধুমাত্র নগর-মহানগরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে তাদের বিজয় অর্জন সম্ভব নয় । তাই তাদের মফস্বল ও গাঁও-গেরামের দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে । দেশের আলোকিত জনপদ আলোকিত করনে নয় , দেশের অন্ধকার জনপদ আলোকিত করেই তাদের বিজয় অর্জনে নামতে হবে ।
বি এন পি মনে হয় বুঝে গেছে – দেশের অধিকাংশ জনগণ নগর-মহানগরে নয় , বাস করে মফস্বল ও গাঁও-গেরামে । তারা বুঝে গেছে যে , তাদের বিজয় নগর-মহানগরে নয় , তাদের বিজয় দেশের ৬৮ হাজার গ্রামে , দেশের প্রত্যান্তাঞ্চলে । তারা বুঝে গেছে ,গাঁও-গেরামের মানুষদের অবহেলা করে ক্ষমতায় আরোহন সম্ভব নয় । জিয়াউর রহমানের মত গাঁও-গেরামে গিয়ে খাল কেটে – মাটির ভার মাথায় তুলে – গ্রামের উন্নয়ন করে গাঁও-গোমের মানুষদেরকে সন্তানের মত বুকে তুলে নিতে হবে । তারা বুঝে গেছে , ভোটযুদ্ধে তারা শুধুমাত্র নগর-মহানগর দিয়ে জয়ী হতে পারবেনা , তাদের ভোট সংগ্রহ করতে মফস্ব ও গাঁ-গেরামের অন্ধকার গলিপথ থেকে ।
বি এন পি মনে হয় বুঝে গেছে – দেশের উন্নীত জনপদ উন্নত করে নয় , দেশের অনুন্নীত জনপদের উন্নয়ন করেই বিজয় অর্জন করতে হয় । অভুক্ত মানুষদের খানার বাটি ছিনিয়ে নিয়ে নয় , তাদের মুখে অন্ন তুলে দিয়েই তাদের মন জয় করতে হয় । নারী মাংস ভক্ষণ করে নয় , নারীদের ভালবেসেই তাদের কাছে টানতে হয় । দেশ ও দশের সম্পদ ভোগ দখল করে নয় , তার রক্ষক হয়েই দেশ ও দশকে হাতের মুঠোয় রাখতে হয় । তারা বুঝে গেছে , অরাজকতার রাজত্ব কায়েম করে নয় , শান্তির জনপদ তৈরী করেই করতে হবে বিজয় অর্জন । তারা বুঝে গেছে , দেশের জনগণকে মেরে নয় , তাদেরকে সাথে নিয়েই টিকে থাকতে হয় ক্ষমতার গদিতে ।
যদি এই হয় বি এন পির রাজনৈতিক নতুন কৌশল , তবে আওয়ামী লীগ সরকারের এইবার ভরাডুবি হবেই । যদি এই হয় বি এন পির ভবিষ্যত কর্মসুচী , তবে বি এন পির ক্ষমতায় আরোহনকে ঠেকিয়ে রাখবার সাধ্য নেই কারো ।
আওয়ামী লীগ সরকার তার ঘটমান কর্ম দিয়ে যেখানে জনগণের আস্থা হারাচ্ছে , সেখানে গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে ভরাডুবি হওয়া বি এন পি সরকার তাদের হারানো আস্থা জনগণ থেকে কুড়িয়ে নিচ্ছে । মনে হচ্ছে – যে সব বি এন পি নেতা গা ঢাকা দিয়েছেন , তাঁরা ছড়িয়ে গেছেন দেশের সকল অন্ধকার জনপদে আলোকবর্তীকা হয়ে । অন্ধকার সব জনপদ আলোকিত করণের দীক্ষা নিয়েছেন তাঁরা । তাই তাঁরা চলে গেছেন অন্ধকার জনপদের কালো গহবরে আঁটকে থাকা মানুষদের কল্যানে । তাঁরা মিশে গেছেন গাঁও-গেরামের অবহেলীত মানুষদের কাতারে । তাঁরা শামিল হয়েছেন গ্রাম-গঞ্জের পীছিয়েপড়া মানুষদের সুখ-দুঃখের সাথে ।
পরিশেষে বলতে হয় – সরকার যেই হোক , যদি সেই সরকার দেশজ কল্যানে – দেশের অন্ধকার জনপদের পীছিয়ে থাকা মানুষদের কল্যানে আত্মনিয়োগ করে , তবে সেই সরকার দেশের মানুষদের পূঁজণীয় সরকার রূপে চিরন্তন সমাসীন থাকবেই ।
বি এন পির বর্তমান কর্মসুচী – গ্রাম-গঞ্জের প্রতিটি এলাকার মানুষদের সাথে সম্প্রীতি – সৌহার্দ্য – বন্ধুত্বসুলভ আচরণ – সহমর্মীতা ইত্যাদি জানান দিচ্ছে , তারাই হতে যাচ্ছে দেশের ভবিষ্যত রচনার দিকপাল ।
যদি এই হয় বি এন পির পথচলার লক্ষ্য , তবে বলতে হয় –
স্বাগতম বি এন পি , দেশ পরিচালনায় - দেশের সিংহাসনে ।
=========================