দূর্গের উপরে যখন বসলাম । একথা ওকথার পর মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম -
বলতো তোমার জীবন সঙ্গী কেমন চাও ? (আসলে ওর ভাই-ই আমাকে জিজ্ঞেস করতে বলেছিল তার কেমন ছেল পছন্দ)
- হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন ?
- জানতে চাইলাম আর কি ? দেখি আমি তোমার উপযুক্ত কি না ? (একটু যোগ করলাম)।
- ও তাই ! সাহস তো কম না !
- এতে আবার সাহস লাগে নাকি ? একটা কথা জিজ্ঞেস করতে যদি সাহস লাগে , তবে আর পুরুষ হলাম কেন ?
- এই জন্যই তুমি আমার বন্ধু । যা বল অকপটে। সেটা খারাপ হোক আর ভাল । মনে আসলেই বলে ফেললে , আর তাতে কেউ রেগে যায় কি না দেখনা ! সত্যি তুমি খুব সহজ সরল ।
- থাক আর প্রশংস করতে হবেনা । যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও ।
- উত্তর কি দিতেই হবে ?
- তোমার অসুবিধা হলে দিওনা , চল বের হয়ে যাই ( একটু রাগের ভান করলাম। সে জানে আমি একবার রাগলে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ রাখি কম্পক্ষে পনের দিন)।
- তোমাকে নিয়ে এই হচ্ছে একটা সমস্যা । নাকের ডগায় যেন তোমার রাগ কিলবিল করে ।
- আর তোমাকে নিয়ে কোন সমস্যা নাই ?
- বল আমাকে নিয়ে কি সমস্যা ?
- এইযে ডুবে ডুবে প্রেম কর আর আমাকে কিছু জানাওনা । কেমন বন্ধু তুমি ?
- আমি প্রেম করি ! তোমাকে কে বলল ?
- কেউ বলতে হবে নাকি ? তোমার আচার আচরণেই তো বুঝা যায় ।
- কি আচরণ দেখেছ যে , আমি প্রেম করছি মনে হচ্ছে ?
- এই যে দুপুর দুইটায় ফোন করে জানালে এক্ষুনি বের হও , ঘুরতে যাব । প্রেম না করলে কি কেউ কাউকে বলে ?
- আহারে আমার প্রেমিকরে ! বিড়ি খায়না , সিগারেট খায়না , মদ খায়না , প্রেম কারে কয় তাও জানেনা , তার সাথে করব আমি প্রেম ! তুমি জাস্ট আমার বন্ধু। যদি প্রেম করতে চাও আজ থেকে বন্ধুত্ব কাট। আর প্রেম তো প্রশ্নই আসেনা।
- ওই তাই ! বুঝতে পারলাম ।
- কি বুঝতে পারলে ?
- তোমার কেমন ছেলে পছন্দ তা।
- কচু বুঝেছ । কচু চিন ?
- তুমি কয়টা কচু চিন সটা বল আগে ।
- কেন ওলকচু , মানকচু । আর কি কোন কচু আছে নাকি ?
- বুঝেছি তুমি কচু চিন , তবে যাতকচু, গুরা কচু , ছড়া কচু এগুলি চিননা ।
- আমি জন্মেছি শহরে । এতগুলো চিনব কি করে । তুমি গ্রামে জন্মেছ তাই তুমি অতসব জান ।
- তাইলে আবার বললে কেন যে আমি কচু চিনি কি না ?
- সরি ।
- হ , গ্রামের মানুষদের শহুরেরা সরি বললেই তারা মনে করে তাদের কেল্লাফতে। তাই ত বলি - কেন আমার সাথে প্রেম করতে তোমার বাধা ? আমি গ্রামের আর তুমি শহরের । কোথায় আকাশ আর কোথায় পাতাল ! ঠিক আছে । প্রেম করতে হবেনা আমার সাথে । আমি নিজেও জানি আমি তোমার উপযুক্ত না । বামন কখনো চাঁদের দিকে হাত বাড়িয়ে চাঁদ ধরতে পারেনা । এখন বল তোমার কেমন ছেলে পছন্দ?
- তুমি তো রেগে গেছ দেখছি । আমি বুঝতে পারিনি তুমি এত রেগে যাবে । সরি বন্ধু , মাফ করে দাও ।
- নাতো আমি রাগিনি । গ্রামের মানুষদের শহুরেদের সামনে রাগ করা শোভা পায়না। তেমনি আমারও না ।
- ঠিক আছে যতক্ষণ পার তুমি বলে গায়ের ঝাল মিঠাও , তবু রাগ করোনা। তুমিই তো আমার একমাত্র বন্ধু , যার সাথে আমার মনের সব কথা শেয়ার করি।
- ওকে , বাবা আমি রাগ করিনি । এখন বল তোমার কেমন ছেলে পছন্দ ?
- তুমি এই কথা নিয়ে আছ কেন ? কারো দালালী নিয়েছ নাকি ?
- দালালী নিলেই বা ক্ষতি কি যদি আমার বন্দুর কোনদিন উপকার হয় ।
- বুঝলামনা । উপকার মানে ?
- তোমার এত বুঝার কাম নেই । আপাতত উত্তর দিলেই চলবে ।
- ঠিক আছে উত্তর দিচ্ছি একটা শর্তে ।
- কি শর্ত ?
- এ কথা জানত চাচ্ছ কেন ?
- সেটা কয়েকদিন পরে বললে হয়না ?
- আজকে বললে অসুবিধা কি ?
- অসুবিধা আছে বলেইতো আজ বলা যাবেনা। যদি বলতে না চাও থাক , বলার দরকার নেই ।উঠ সন্ধ্যা হয়ে গেছে ।
- আবারও রাগ ! ঠিক আছে বাবা , বলছি । আমি এমন ছেলে পছন্দ করি - যে সিগারেট খায় , মদ খায় , নেশাখোর , সিনেমা দেখে , গুন্ডামী করে , মিথ্যা বলে , নারীদের প্রতি আসক্ত , সবসময় সেক্সুয়্যাল কথা বলে , লজ্জাহীন , ধুকাবাজ , চঞ্চল , বে-পরোয়া , লোভী , ধর্মাসক্ত নয় , মেয়ে দেখলেই যার জীবে জল আসে , মেয়েদের যে ছ্যাকা দিতে জানে , লড়াকু , শক্তিশালী , তেজোদীপ্ত , প্রতিজ্ঞাভঙ্গকারী , লুচ্ছা , বদমাস এই ধরণের ছেলেই আমার পছন্দ!
- এটা কি আমাকে থাপ্পড় দিলে নাকি আমাকে শিক্ষা দিলে ।
- না বন্ধু , কোনটাই না । যা সত্য তাই বলেছি । আমরা বেশীরভাগ মেয়েরা এই ধরণের ছেলেই পছন্দ করি। সহজ সরল ছেলেদের পছন্দ করে জীবন বরবাদ করে ফায়দা কি ?
- তবে তো তোমার পছন্দগুলির প্রত্যেকটি বিষয়ে ভাল করে জানতে হবে । কেন তোমাদের এই ধরণের ছেলে পছন্দ?
- আজকেই কি সব জানতে চাও ? সব আজকে জানিয়ে দিলে অন্যদিন কি বলব ? চল বেরিয়ে পড়ি । মাগরিবের সময় হয়ে গেছে । অন্যদিন বলব ।
সেদিনকার মত তার কাছ থেকে বিদায় নিলাম মৌছাক মোড়ে এসে । তারপর আরও একদিন …
=====================