“ স্বপ্ন পথের পথিক ” - শান্তি-সুখের বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে একদল স্বেচ্ছা সেবক কর্মী বাহিনীর দেশের শান্তি রক্ষায় আত্মনিবেদিত কর্মী হিসাবে আত্মোৎস্বর্গের কল্পকাহিনী নিয়ে রচিত - একটা ধারাবাহিক উপন্যাস । উপন্যাসটির সকল চরিত্র এবং ঘটনা সবকিছুই কল্পনা প্রসূত , বাস্তবের সাথে এ লেখার কোন মিল খুঁজে পেলে তা হবে নিতান্তই কাকতালীয় ঘটনা ।
এ লেখায় সুন্দর সমাজ বিনির্মানের লক্ষ্যে লেখকের ক্ষুদ্র মস্তিস্কে ঘুরপাক খাওয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চিন্তা সমষ্ঠি প্রদর্শিত হবে । সকলকে প্রতিটি পর্ব পড়ে মন্তব্য করতে অনুরোধ থাকলো । সেই সাথে রইল উপন্যাসটি ভালোই ভালোই শেষ করার লক্ষ্যে সকলের কাছে দোয়ার আবেদন ।
পর্ব – ০০২
======
হঠাৎ কোন একটি ল্যান্ডফোনে রিং বেজে উঠল পুরো কক্ষের নিরবতা ভেঙ্গে ! দ্বিতীয় রিং এর অপেক্ষায় মামুন । তীক্ষ্ন দৃষ্টি টেলিফোন সেটের উপরে । হলদে সেটটায় বেজে উঠল দ্বিতীয় রিং ।
- আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ বলে মামুন রিং এর জবাব দিলেন ।
ওপাশ থেকে “ - ওয়ালাইকুমুচ্ছালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু ’’ বলেই চট্টগ্রাম পাঁচলাইশ থানার স্মারক দলের অফিসের আমীর নিজের পরিচয় দিলেন ।
মামুন আমীর সাহেবের কুশলাদি জানতে চাইলেন
– কেমন আছেন জনাব ? আপনার পরিবারের সদস্যরা ভাল তো ?
- আলহামদুলিল্লাহ্ ! আমরা সবাই আল্লাহর রহমত ও নেক দৃষ্টিতে ভাল আছি । আপনি কেমন আছেন ? অফিসের বন্ধুরা সবাই ভাল আছেন তো ? ’’ আমীর সাহেব ও কুশলাদি জানতে চাইলেন মামুনের কাছ থেকে ।
- আলহামদুলিল্লাহ্ আমরাও সবাই আল্লার রহমতে ভাল আছি । তারপর বলুন আপনার কি খবর ?
ওপাশ থেকে আমীর সাহেবের সংবাদ শুনতে উদগ্রীব হয়ে উঠলেন মামুন ।
- জনাব একটা সুখবর ! বললেন আমীর সৈয়দ তাওহীদুল আনোয়ার ।
- কি সুখবর ? বলুন ।
মামুনের আর যেন এক মিনিট ধৈর্য্য ধরার সময় নেই । রিসিভারটা ভাল করে কানের সাথে সেটে ধরলেন তিনি ।
- সিলেটের জাফলং এ স্মারকের অফিস খোলার অভিপ্রায় নিয়ে আমার এক বন্ধু এখন আমার কাছে । সে নিজেই ওই এলাকার দায়িত্ব নিয়ে শান্তি রক্ষার লক্ষ্যে স্মারকের কর্মী হিসাবে আত্মনিয়োগ হতে চায় । আমার ধারণা তাকে দিয়ে স্মারকের আরও এক ধাপ এগুনো যাবে । আপনার সাড়া পেলে তাকে নিয়ে আপনার কাছে আসতে চাই - বললেন আমীর সাহেব ।
- ঠিক আছে , ওনাকে নিয়ে রাতেই যাত্রা করুন । এখানে আসলে বাকি কথা হবে । ( মামুন আমীর সাহেবের আগ্রহে সম্মতি দিলেন ) ততক্ষণের জন্য বিদায় । আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ ।
একটা প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠল মামুনের মুখে । রিসিভার রেখে জানালার কাঁচ ভেদ করে বাইরে দূর দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে থাকলেন তিনি কিছুক্ষণ ।তারপর পুণরায় গবেষণায় লিপ্ত হলেন ।
খাতাটা উল্টিয়ে কলমটা হাতে নিয়ে কি যেন নোট করতে যাবেন , এমনি সময়ে মোবাইলটা সুরের ঝংকারে মেতে উঠলো । গাইতে লাগলো গান –
**********************
আমরা শান্তির পতাকা নিয়ে
ধরেছি শান্তির গান ,
শান্তির তরে মোরা দিব জীবন বলি
অশান্তির আগুন নিভাতে মোরা হয়েছি আগোয়ান ।।
অশান্তি দূর করনে মোরা নির্ভীক সৈনিক
মানবনা কোন বাধা – আসুক না যতই অশান্তির ঝড় ,
শান্তিকামী সব মানুষ নিয়ে শান্তির সব মন্ত্র দিয়ে
করব মোরা শান্ত সব অশান্ত ঘর ।
এই আমাদের পণ –
শান্তি রক্ষা করব মোরা ,
যায় যদিও মোদের তাতেই জান ;
পীঁছু হঠবোনা কখনো মোরা
অশান্তির ধ্বংস সাধনে করে যাব শান্তির কাম
গেয়ে যাব আমরা শুধুই শান্তির গান ।।
যেখানেই হবে অশান্তির কর্ম ধ্বংস
সেখানেই দেখবে মানুষ - আমরাই নিয়েছি তাতে অংশ ,
জেনে নাও , হে সব অশান্তির দানব !
খোলস পড়ে হয়ছো তোমরা যারা আজ শান্তির মানব !
অশান্তির দাবানল জ্বালিয়ে যদি তোমরা পেতে চাও সুখ ,
জেনে নাও , রয়েছে তোমাদের কপালে বিষ ভরা দুঃখ !
শপথ করেছি মোরা করব তোমাদের বদ
গড়ব তোমাদের দেহ দিয়ে মহাগোরস্থান ,
শান্তির মন্ত্র দিয়ে করব মোরা
তোমাদের তৈরী সব অশান্তির অবসান ।।
*************************
এই একটি মাত্র গান মামুন পুরোটা না শুনে স্বস্তি পায়না । তাই গানটির পুরোটাই রিংটোন হিসাবে বেছে নিয়ে সেট করে নিয়েছেন তিনি । গানটি শেষ হতেই কলমটা খাতার ভিতরে রেখে খাতাটা বন্ধ করে দিলেন মামুন । মোবাইলটা হাতে নিয়ে কী টিপে দেখলেন কার কল ।
“ মায়মুনা ’’! নিশ্চিত ফালতু আলাপের জন্য কল । মেয়েটির আর কোন কাজ নাই যেন ! মনে মনে বিড় বিড় করে বিরক্তির ছাঁপ ফেললেন চোখে মুখে মামুন । মোবাইলটা যথাস্থানেই রেখে দিলেন লাইনটা কেটে । ঘড়ি দেখলেন । বেলা সাড়ে বারোটা । আরও আধঘন্টা পর লাঞ্চের ছুটি ।মায়মুনার কল এই সময়ে ! ফাল্তু আলাপের জনই , নয়তো আর কি ? এ সময়ে কল করার কি দরকার ? লাঞ্চের সময় মনে করিয়ে দেবার জন্য হলেও তো কল করতো আরও আধ ঘন্টা বা চল্লিশ মিনিট পর । কলের হিসাব মিলাতে না পেরে আবারও খাতা খুলতে যাবেন এমন সময় আবারও বেজে উঠল মোবাইলটি ।
------------------
|
স্বপ্ন পথের পথিক–০০৩
|
স্বপ্ন পথের পথিক – ০০৩
- মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
“ স্বপ্ন পথের পথিক ” - শান্তি-সুখের বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে একদল স্বেচ্ছা সেবক কর্মী বাহিনীর দেশের শান্তি রক্ষায় আত্মনিবেদিত কর্মী হিসাবে আত্মোৎস্বর্গের কল্পকাহিনী নিয়ে রচিত - একটা ধারাবাহিক উপন্যাস । উপন্যাসটির সকল চরিত্র এবং ঘটনা সবকিছুই কল্পনা প্রসূত , বাস্তবের সাথে এ লেখার কোন মিল খুঁজে পেলে তা হবে নিতান্তই কাকতালীয় ঘটনা ।
এ লেখায় সুন্দর সমাজ বিনির্মানের লক্ষ্যে লেখকের ক্ষুদ্র মস্তিস্কে ঘুরপাক খাওয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চিন্তা সমষ্ঠি প্রদর্শিত হবে । সকলকে প্রতিটি পর্ব পড়ে মন্তব্য করতে অনুরোধ থাকলো । সেই সাথে রইল উপন্যাসটি ভালোই ভালোই শেষ করার লক্ষ্যে সকলের কাছে দোয়ার আবেদন ।
পর্ব – ০০৩
মামুন মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলে কার কল । পূণরায় মায়মুনা ! এবার কথা বলতে ইচ্ছা করলেন মামুন । “ হ্যালো ’’বলতেই ওপাশ থেকে মায়মুনা “ আচ্ছালামু আলাইকুম ’’বলে প্রতিউত্তর দিলেন ।
“ ওয়ালাইকুমুচ্ছালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ ’’। মামুন জানতে চাইলেন কল করার কারন ।
- কেন ! ডিস্টার্ব করলাম নাকি ?
- ডিস্টার্ব করনি , তবে বিরক্ত করছ । আচ্ছা বল – প্রয়োজনীয় কিছু ?
- প্রয়োজনীয় কিছু বলেই তো অসময়ে বিরক্ত করা । আর তুমি মনে করছ ফালতু আলাপ – তা নয় কি ?
- আসলেই আমি প্রথম কল পেয়ে তাই মনে করেছিলাম । যখন দ্বিতীয়বার কল দিলে তখন মনে করেছি প্রয়োজনীয় কল ।
- জনাব , অসময়ে যখন আমাকে বিরক্ত করা হয় তখন কোন প্রয়োজনে জানতে পারি কি ?
কথার টোনে ধরা পড়ল আনন্দোচ্ছাস । কথাটা বলেই মায়মুনা একটু মজা লুঠতে চাইছেন । মামুন ও কম নয় । সময় না থাকলেও তিনি মায়মুনার সাথে মজা করতে ভুলেনা । তাই যেমন প্রশ্ন তেমন তেমন উত্তর দেয়া উচিৎ মনে করলেন মামুন ।
- অসময়ে তোমাকে যখন বিরক্ত করা হয় , তখন যা করা হয় , তা কি অপ্রয়োজনীয় কিছু ?
প্রশ্নটা করেই মামুন স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললেন , মুখে ভেসে উঠল তাঁর তৃপ্তির হাসি ।
- বাহ্ চমৎকার ! প্রশ্নের উত্তর প্রশ্ন দিয়ে ! তবে কি আজকের গবেষণার বিষয় এটা ছিল ?
পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন মায়মুনা । মামুনও কম কি ? প্রশ্নের উত্তর তো দিতেই হয় । তাই তিনি আর দেরী করলেন না ।
- না ম্যডাম ! আজকের গবেষণার বিষয় তা ছিলনা । তবে অনুরূপ ক্যাটাগরীর ভিন্ন একটা বিষয় ছিল । জানতে চাও ?
- না , থাক । এখন জানতে চাইনা । বাসায় আসলে ভাল করে জেনে নিব । মোবাইলে তো আর ভাল করে জানা যাবেনা । ঘড়ি দেখেছ ?
- ঘড়ি দেখে কি লাভ ? তাড়াতাড়ি করতে বললে তো বলবে তোমার প্রতি আমার ভালবাসা কম । আমি তোমাকে সময় দিইনা । এক গাদা শুনিয়ে দিতে তৎপর হবে । তার চেয়ে ঘড়ি না দেখে যতক্ষণ ধরে রাখা যায় তোমাকে – তাই লাভ ।
- তাহলে আমার কথা থেকে বাঁচতেই আমার কল রিসিভ করা ! ভালবাসার টানে নয় ?
বুঝতে পারছেন মামুন , কথা বলতে গেলে একের পর এক ঝরতেই থাকবে কথার ফুলঝুরি । মাঝখানে ম্যাডামের অভিমানের মাত্রা বেড়ে গিয়ে একসময় কথা বলা বন্ধ করে দিবে মায়মুনা । তারপর তিন চারদিন মুখ গুমরাহ করে থাকবে । এটা কোনমতেই মানা যায়না । মেয়েদের গুমরাহ করা মুখের এ বদভ্যাস কোনমতেই মানানসই হতে পারেনা । প্রকৃত অর্থে মেয়েদের গুমরাহ মুখ মানায়না । ভাল লাগেনা মায়মুনার এ ধরণের গুমাহ মুখ । তাই মামুন কথার মোড় ঘুরিয়ে দিলেন ।
- কি , মোবাইলেই কথা বললে সারবে ? আমার বাসায় যাওয়া বন্ধ করতে বুঝি তোমার এই নতুন ফন্দি ? ঠিক আছে , কথা বলতে থাক । প্রয়োজনীয় কথাটা না হয় পরে শুনা যাবে । আর দুপুরের লাঞ্চটা না হয় আজ আশে পাশের কোন রেস্তোরায় সেরে নিব , কি বল ?
মামুন নিশ্চিত এ কথায় কাজ হবে । মুল প্রসঙ্গে চলে আসবে মায়মুনা । যেমন ভাবা তেমন কাজ !
- আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম কি জন্য কল দিয়েছিলাম ! শোন , আমার বান্ধবী মাকসুদা কিছুক্ষণ আগে চুয়াডাঙ্গা থেকে ফোন করেছে । সেখানে সে আমাদের দলের একটা ব্রাঞ্চ খুলতে চায় । সে নিশ্চিত দলের ব্রাঞ্চ খুলে সেখানে সে দলের একটা মজবুত ভিত্তি গড়ে তুলতে পারবে । সে তোমার মতামত চেয়েছে । কিছুক্ষণ পর ফোন করার কথা । তাকে কি বলব ? তা জানার জন্যই কল করেছিলাম । তাকে কি বলা যায় , বলতো ?
মায়মুার বান্ধবীর প্রস্তাবটা শুনে মামুনের শরীরে শিহরণ খেলে গেল !মায়মুনার সাথে তাঁর বিয়ের প্রায় সাত মাস পর একবার মাকসুদার সাথে তাঁর কথা হয়েছিল । সেদিনই আবিস্কার করেছিলেন মামুন মাকসুদার ভিতরের সাংগঠনিক গুণটি । যার প্রকাশ ঘটেছে তার আজকের প্রস্তাবের মাধ্যমেই !
যেদিন মামুনের সাথে মাকসুদার কথা হয়েছিল , সেদিন মামুন তার সাত মাসের দাম্পত্য জীবনের সঙ্গী মায়মুনাকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে । মামুন-মায়মুনা দুজনেই একে অপরের হাত ধরে সৈকত ছেড়ে উঠতে যাবে ঝিনুক মার্কেটে , এমন সময় মাকসুদার সথে দেখা হয়ে যায় মায়মুনার !
মাকসুদা সুদর্শন এক যুবকের হাত ধরে নামতে ছিল সৈকতে । মাকসুদার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিল সমুদ্র দেখার আনন্দোচ্ছাস । সেই অট্টহাসি শুনে দৃষ্টি ঘুরে যায় মামুন-মায়মুনার সেদিকে।
বলেই মায়মুনা মামুনের হাত ছেড়ে দিয়ে দৌড় দেন তাঁদের দিকে ! মামুন হতবিহ্বল ! সাথে সাথে মামুনও মায়মুনার পীছন পীছন দৌড়াতে থকেন । অল্পসময়ের মধ্যেই তাঁরা দু’জন পৌঁছে যান তাদের নিকটে ।
*********************
চলমান > > পর্ব – ০০৪