শুরু হলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
----------------------------------
আজ বৃহস্পতিবার , ১লা ডিসেম্বর ২০১১ ।
শুরু হলো বাংলাদেশের মহান বিজয়ের মাস । এ দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগের স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে বছর ঘুরে আবার ফিরে এল বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ২৪ বছরের পাকিস্তানী শাসন-শোষণকে কবর দিয়ে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের দামাল সন্তানদের ছিনিয়ে আনা বীরত্বগাথা বিজয় অর্জনের মাস এই ডিসেম্বর। বিশ্ব মানচিত্রে আজকের এই বাংলাদেশ নামক ভুখন্ডটির একটি নতুন জাতি হিসাবে স্বীকৃতি আদায়ের মাস এই ডিসেম্বর ।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর শুরু করা হত্যাযজ্ঞ চলে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পাকিস্তানিরা এই সময়ে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করে। এ দেশের প্রায় ২ লাখ মা-বোন তাদের কাছে সম্ভ্রম হারান। পাকিস্তানিদের চেয়ে এদেশের সন্তান ঘৃণ্য রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের অসভ্যতা ও অমানুষিক আচরণ বিশ্ববাসীকে স্তম্ভিত করে।
৯মাসের সামরিক ও কূটনৈতিক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর নিয়াজী প্রায় ৯৫ হাজার সৈন্য নিয়ে এ দেশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭১ এর এইদিনে আজকের এই বাংলাদেশ শত্রু মুক্ত হয় , অর্জন করে স্বপ্নে লালিত মহান স্বাধীনতা। ২৬শে মার্চে জন্ম নেওয়া এই দেশটি বিশ্বের মানচিত্রে একটা সার্বভৌম দেশ হিসাবে নিজের স্থান দখল করে নিতে সক্ষম হয় ।
ডিসেম্বর এলেই বাংলাদেশের মানুষ হারিয়ে যায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলোর স্মৃতিচারণে। ১৯৭১ র মুক্তিযুদ্ধ বাংলদেশের একটি শ্রেষ্ঠতম অর্জন। যার পেছনে রয়েছে এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢেলে দেয়া রক্ত আর মহান আত্মত্যাগ। মুক্তিপাগল এ দেশের আপামর জনতার এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ এর এই ডিসেম্বরেই ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান বিজয়। বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পায় লাল-সবুজের রক্তস্নাত স্বাধীন পতাকা , স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
১৯৭১ সালে এদেশের আপামর জনতা গর্জে উঠে বিশ্বকে চিনিয়ে দিয়েছিল উদীয়মান এক জাতিকে। স্বাধীনতা নামের সোনার হরিণ পাবার জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিল নিজেদের অমূল্য জীবন। তাদের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জন এই বাংলাদেশ , আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।
১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর এ জাতি মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রথম পর্ব শেষ করেছে। এখন মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় পর্ব শুরু করার সময় এসেছে । সময় এসেছে শান্তি , প্রগতি , সমাজ সংশোধন , ব্যক্তি সংশোধন অভিমুখী গণজাগরণ গড়ে তোলার। যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ লক্ষ্য ধারণ করে ব্যক্তি ও সমাজ সংশোধনের মাধ্যমে শান্তি ও প্রগতির মুলধারা প্রতিষ্ঠা পাবে এবং ১৯৭১ এর সেই উথ্থাল দিনগুলোর মত প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদনে মুক্তিযুদ্ধের এই দ্বিতীয় পর্বেও দেশের আপামর জনতা স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করে কাধে কাধ মিলিয়ে প্রকৃত বিজয় অর্জন করবে।
অবশেষে , আজকের এই বিজয় মাসের শুরুতে স্মরণ করছি সেই সব মহান ত্যাগী মানুষদের । যারা দেশের স্বাধীনতার বিজয় অর্জনে অকুতুভয়ে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছিল । অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করছি সেইসব লক্ষ লক্ষ শহীদদের যারা দেশের ও দেশের মানুষদের সুখ আর শান্তির লক্ষ্যে অকাতরে তাদের বুকের তাজা রক্ত দেশের রাজপথে ঢেলে দিতে কার্পণ্য করেনি এবং শ্রদ্ধা জানাচ্ছি অগুণিত সেই সব মহান মা - বোনদের , যারা দেশ ও দেশের মানুষদের জন্য তাদের জীবন - মান - সম্মান - সম্ভ্রম হারাতে হয়েছিল নরপিশাচ পাকিস্তানী ও তাদের দোষরদের হাতে । আজকের এই দিনে তাদের সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি ।
সকলকে মহান এ বিজয় মাসের সংগ্রামী শুভেচ্ছা ।
========================================
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন