সমাজ সংস্কার : প্রেম বা ভালবাসা
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
----------------------
অথচ, আজ নারীরা সমানাধিকারের লড়াইয়ে রাজপথে নেমে সকল কর্মক্ষেত্রে অবস্থান নিয়েছে। সমানাধিকার অর্জন করতে গিয়ে তারা দ্বিগুণ কর্মে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে, এতে নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুমের খড়ক তুলছে। যা ইসলাম চায়নি। ইসলাম নারীদের সমানাধিকার দিয়েছে পুরুষ ও নারীর কর্মসমুহের সমবিভাজন দিয়ে। যতে নারীদের উপর কোন জুলুম না হয়। আর সেই জুলুমের স্বীকার হচ্ছে নারীরা তাদের ইচ্ছা মাফিক সমানাধিকার চাইতে গিয়েই। নিজেরাই সমানধিকারের নামে নিজেদের করে যাচ্ছে জুলুমের শিকলে বন্ধী ! যদি তারা আল্লাহ ও রাসুলের আইন বাদ দিয়ে সমানাধিকার চায়, তবে তাদের চাওয়া উচিত সন্তানের গর্ভধারণ–প্রসব-লালনের কর্মকেও সমানভাগে পুরুষদের কাছে বন্টন করা। নারীদের সমানাধিকার যারা চায় , তারা কি পারবে এই কাজটিকে সমভাগে বন্টন করতে ? তারা কি পারবে পুরুষদের দ্বারাও সন্তান গর্ভ ধারণ করিয়ে প্রসব করাতে ? যদি তারা তা না পারে, সমানাধিকার তারা কিভাবে বন্টন করবে ? তবে কি সমানাধিকারের ধ্বজাধারীরা আল্লাহ রাসূলের আইন বাদ দিয়ে নারীদের সমানাধিকারের নিশ্চয়তার বিধান রচনা করতে পারবে , বা নারীরা কি আদৌ তাদের চাহিদা মোতাবেক সমানাধিকার অর্জন করতে পারছে ? যদি পুরুষরাও সন্তান গর্ভে ধারণ ও প্রসব করতে পারত , তবেই তো হতো , নারীদের প্রকৃত সমানাধিকার অর্জন। তাই বলতে হয়, নারীদের সমানাধিকার চাইতে গিয়ে তারা পুরুষদের চেয়েও অধিক কর্মে নারীদের জড়িত করে তাদের উপর জুলুমের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে নারীর সমানাধিকারে আগ্রহীরা। আর নারীদের উপর এ অন্যায় - অবিচার ও অত্যাচারের খড়ক তুলতে সহয়তা করেছে-করছে বেশ কিছু স্বার্থপর – নারী মাংসলোভী পুরূষরূপী পিশাচ। যারা নারীদের ঘরের বের করে প্রতিনিয়ত তাদের সুবিধা ভোগ করে চলেছে। আর নারীরা হচ্ছে তাদের শিকার।
ফলশ্রুতিতে, অধুনা জগতের সর্বনাশী অবৈধ প্রেমের বন্যায় সয়লাব হয়ে গেছে সর্বত্র, সকল স্তরে। বেহায়াপনার প্রদর্শনী চলছে আমাদের সমগ্র দেশব্যাপী। শালীনতার মোহনীয় রূপ নির্লজ্জ প্রেমবাজারের উম্মুক্ত অন্ধকার গলিতে বিক্রি হয়ে গেছে। চতুর্দিকে চলছে বেলাল্লপনার উম্মুক্ত প্রদর্শনী, যে প্রদর্শনীর দর্শনার্থী সমগ্র বিশ্বের মানুষ। এই অবৈধ প্রেমবাজারের ধ্বংসাত্মক ছোঁয়ায় ধ্বংসের পাদপীঠে দন্ডায়মান আজ ব্যক্ত – সমাজ – রাস্ট্র।
নারীদের কোমল, লোভনীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দর্শন করতে করতে পুরুষদের চোখে সৃষ্টি হয়ে গেছে কামুকতার দৃষ্টিফাঁদ। তাই, নারীরা তুলতুলে শরীর নিয়ে যখনই মুক্তভাবে মাঠে নামছে, তখনই তারা পুরুষদের সেই কামুকতার দৃষ্টিফাঁদে আটকে যাচ্ছে। ফলে, যত্রতত্র নারীদের কোমলাঙ্গ পুরুষদের রুক্ষ-শক্ত-কঠিন অঙ্গের চাপে পিষ্ঠ হচ্ছে। চারদিকে চলছে নারীদেহের উপর পুরুষদের ষ্টিমরোলার। নারীদেহের সৌন্দর্য র্শনের পরিবর্তে তাদের দেহের উপর নেমে আসছে গণধর্ষণের মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনা। অবৈধ প্রেম করতে গিয়ে ধরা খাচ্ছে নারীরাপুরুষ্দের দুই হাতের মুঠোয়।
তাই বর্তমান আধুনীক হালফ্যাশানের প্রেমের মাধ্যমে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অশান্তির দাবানল না ছড়িয়ে প্রকৃত প্রেম-ভালোবাসার শান্তিময় রাজ্য গড়ে তুলুন। তাতেই সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রশান্তির পরশ পাথর অর্জিত হবে।
সর্বস্তরের নারী-পুরুষের কাছে আকুল আর্তি, প্রেম – ভালবাসা – বন্ধুত্ব করতে হলে আল্লাহর সাথে করুন, ভালবাসুন আল্লাহ ও রাসূল(সাঃ) এর আদেশ নিষেধকে। নিয়ম ও যথাযোগ্যানুষারে প্রেম করুন – মাতা-পিতার সহিত, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সহিত, সন্তান-সন্ততির সহিত, আপন ভাই-বোনের সহিত, রক্ত সম্পর্কীয় বন্ধনের সহিত, আপন আত্মীয়-স্বজনের সহিত, পাড়া-প্রতিবেশীর সহিত, অন্যান্য আত্মীয়ের সহিত, দ্বীন রক্ষার্থে মুসলমান ভাই-বোনদের সহিত, উস্তাদ-সাগরেদ একে অপরের সহিত, পীর-মুরীদ একে অপরের সহিত, আল্লাহর সৃষ্টি সকল মানুষ – প্রাণী – বস্তুর সহিত।
এছাড়া অন্য কোন অবৈধ প্রেম – ভালবাসা – বন্ধুত্ব করে নিজের, সমাজের, দেশের ধ্বংসের জন্য জোগান গ্রহণ করবেননা। যে সব কিশোর-কিশোরী, তরুন-তরুনী, যুবক-যুবতী এবং সর্বস্তরের নারী-পুরুষ অবৈধ প্রেমে জড়িয়ে আছেন, প্রেম নামের সর্বনাশা হোলি খেলায় মত্ত্ব , তাদের কাছে সবিনয় অনুরোধ, আপনারা ফিরে আসুন সঠিক পথে। দেশ আজ আপনাদের উজ্জল ভবিষ্যতের পথের দিকে চেয়ে আছে, প্রেম নামক সর্বনাশা মরণফাঁদ থেকে ফিরে বৈধ প্রেমের রাজত্ব গড়ে তুলুন। বিয়ে করুন। তারপর স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে নিয়ে যত ইচ্ছা প্রেম করুন, ভালবাসুন, বন্ধুতব করুন। কারন, আল্লাহ পাক বলেন – “ আল্লাহর কুদরতের অন্যত নিদর্শন এইযে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের স্ত্রীগণকে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা যেন তাদের নিকট থেকে প্রশান্তি লাভ করতে পার। আর তোমাদের মধ্যে প্রেম-ভালবাসা-মায়া-মমতা সৃষটি করেছেন। নিশ্চয় এতে আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল লোকদের জন্য’’। রাসূল (সাঃ) বলেন – “স্বামী ও স্ত্রী যখন পরষ্পরের দিকে ভালবাসার দৃষ্টিতে তাকায়, তখন আল্লাহ পাক তাদের দিকে অনুগ্রহের দৃষ্টিতে তাকান। তারপর স্বামী যখন তার স্ত্রীর হাত ধারণ করে, তখন তাদের আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে গুনাহগুলো ঝরে যেতে থাকে”।
তাই, স্বামী-স্ত্রীর প্রেমই নর-নারীর মধ্যকার দৈহিক মিলনের সার্বজনীন স্বীকৃত ও বৈধ পন্থার প্রকৃত প্রেম, যা আল্লাহর সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের একটি সোপান বিশেষ। আর মুসলমানদের আদর্শই হচ্ছে বিবাহের পরই নর-নারী একে অপরের সহিত প্রেম করা, ভালবাসা, বন্ধুত্ব করা। কারণ, স্বামীর একটু আলতু স্পর্শ, স্ত্রীর একটু স্বলাজ ভঙ্গি, একটুকরো মিষ্টি হাসি, দু’জনার এক পলকের দৃষ্টিতে দু’জনার মাঝে যে প্রেম-ভালবাসার জন্ম দেয়, তা উভয়ের মাঝেই পরিপূর্ণতা নিয়ে আসে। এ প্রেম সমাজে শান্তির জন্ম দেয়।
পক্ষান্তরে, অবিবাহিতা নারী ও অবিবাহিত পুরুষের প্রেমের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে শয়তান এসে উপস্থিত হয়। সে তাদের মাঝে কুমন্ত্রণা দিয়ে শেষ পর্যন্ত দৈহিক ম্পর্কের ইন্ধন জোগায়। এ প্রসঙ্গে রাসূল(সাঃ) বলেন-“কোন পুরুষ যখন কোন নারীর সাথে একান্তে থাকে, তখন তাদের মাঝে তৃতীয় জন হিসেবে উপস্থিত হয় শয়তান। সে উভয়ের ভাবাবেগকে উৎসাহিত করে এবং উভয়ের মনে খারাপ ও কুমন্ত্রণা দিতে থাকে”। ফলশ্রুতিতে উক্ত দু’জনের মনে জাগে একে অপরকে পুরোপুরি সমর্পন করারা সর্বনাশা ইচ্ছা। এর ফলে ঘটে যায় উভয়ের দেহের মিলন। ঐ মিলন সমাজে পরিচিতি পায় “জেনা”হিসাবে। সমাজবিরোধী ও অবৈবধ মিলনের ফল স্বরূপ নারী দেহের অভ্যন্তরে জন্ম নেয় আরেক মানবজীবন। প্রকাশ হয়ে পড়ে সমাজে ঐ নারীর কুকীর্তির কথা। সমাজ বিচারের ব্যবস্থা করে। উভয়ের জন্য শাস্তি নির্ধারিত হয়। সামাজিক নিয়মানুষারে শাস্তি নির্ধারিত হলে সর্বোচ্ছ শাস্তি হয়, সমাজ বিচ্যুতের মাধ্যমে। আর আল্লাহর নিয়মে শাস্তি দিতে হলে, আল্লাহ পাক বলেন- “জিনাকারিনী নারী ও জিনাকারী নর বা পুরুষ (যদি অবিবাহিত হয় উভয়কে) একশত করে বেত্রাঘাত করো”। আর রাসূল (সাঃ) বলেন- “তাদের প্রাণদন্ড দাও, প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদন্ড দাও”।
সমাজের অবৈধ না হলে এ প্রেম স্বীকৃতি পেত সমাজে। অথচ তা স্বীকৃতি পেল অবৈধ রূপে। তাই, বিবাহপূর্ব প্রেম অবৈধ, অগ্রাহ্য। ইসলামী দৃষ্টিতে যে প্রেম-ভালবাসা , তাতে রয়েছে মানব সমাজের জন্য কল্যানকর ও নিরাপদ জীবনের গ্যারান্টি। তাই, ইসলাম বিয়ের পর প্রেম-ভালবাসায় জড়িত হতে বলে। সমাজ বিয়ের পরের প্রেমকে নির্দ্বিধায় স্বীকৃতি দেয় বলেই সমাজ নিজ উদ্যোক্তায় ঐ প্রেম শুরু করার জন্য দু’টি নর-নারীকে একই বন্ধনে একই ঘরে সমাজের অভ্যান্তরে অবস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বৈধতার সনদ প্রদান করে সমাজ বিয়ে নামের একটি জৌলুসপূর্ণ আয়োজনের মাধ্যমে। উক্ত নর-নারী সমাজে অবস্থানের মাধ্যমে প্রেমের ভুবন গড়ে তোলে। তাই, বিয়ের পরের প্রেমই বৈধ। আর এ প্রেমই প্রকৃত প্রেম। আর এ প্রেমের পরিসমাপ্তি স্বরগের উদ্যানে। এ প্রেমেরই উদাহরণ দিতে গিয়ে কবি বলেন- “স্বর্গ থেকে আসে প্রেম, আবার স্বর্গে যায় চলে”।
তাই সকল বয়সী নর-নারীদের প্রতি অনুরোধ, শালীনতা রক্ষা করে চলুন। কারণ, লজ্জা ঈমানের অঙ্গ বিশেষ। লজ্জাহীনতাই দেশ ও জাতিকে বেহায়াপনার দিকে ঠেলে দেয়। যদি আজ আমাদের মাঝে লজ্জা নামের অংশ বিশেষও থাকত, তবে আমরা প্রেম নামক মুক্তবাজ প্রেমখেলা খেলতামনা। রাস্তায়, ড্রেনে, ডাস্টবিনে, সাগরের জলে নিষ্পাপ মানবশিশুকে ভাসিয়ে দিতামনা। সমাজের ভয়ে, মুখে চুনকালী লাগার লজ্জাতে, পথে-ঘাটের কুকুর হবার ভয়ে জলজ্যান্ত আদম সন্তানকে গলা টিপে হত্যা করতামনা, করতামনা জ্যান্ত কবরস্থ।
আজ বিশ্ব দেখছে আমাদের বেহায়াপনা, আমাদের এই অশালীনতার নোংরা রূপ। দেশ ও জাতির নিকৃষ্টতম কর্মের এই পরিণতি নিউজ পেপারের হেডলাইন হয়ে বিশ্বের আনাচে কানাচে কখনো পৌঁছতনা। সর্বনাশা প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে দেশ ও জাতিকে বেহায়াপনার দিকে ঠেলে না দিয়ে মনের আবেগকে সমাজ ও ঘরের চারদেয়ালে আঁটকে রাখুন। সর্বনাশা কীট প্রেমের ফাঁদে পা দিবেননা। 143 (I LOVE YOU) এর মত সস্তা ও অবৈধ ভালবাসা করবেননা। সুন্দর জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবেননা। মানুষের মত মানুষ হয়ে বাঁচতে শিখুন। সমাজের ফুল হয়ে প্রস্ফুটিত হোন। আল্লাহর দেয়া বিবেককে কাজে লাগান। দেখবেন, কঠিনতর সবকিছুই সহজ।
ইসলামী অনুশাসন মেনে চলুন। বাস্তবতার আলোকে জীবন পরিচালনা করুন। ইসলামী সভ্যতাই সকল সভ্যতার রাজা। তাই ইসলামী অনুশাসন মেনে চলে সভ্য হোন। সময়ের সদ্ব্যবহার করুন। ধর্ষণ নয় দর্শনের ভিত্তিতে ক্ষণিক জীবনের সময়গুলো কাজে লাগান। ইসলামী আদর্শে জীবন গড়তে চেষ্ঠা করুন। কয়েকটি ইসলামী উপদেশ জীবন চলার পথে সম্বল করুন। যথা –
চলতি পথে চোখের দৃষ্টি নত রাখুন।
নারী বা পুরুষ একে অন্যকে দেখার সাথে সাথেই চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিন।
রাস্তার ডানদিকে চলুন।
মুসলমান তথা আল্লাহর সৃষ্টিজগতের হক আদায় করুন।
রাস্তা থেকে মানুষের কষ্টদায়ক বস্তু উঠিয়ে নিন।
পুরুষগণ স্ত্রী ছাড়া অন্যান্য নারীদের মা ও বোন হিসাবে ভাবতে শিখুন।
নারীগণ স্বামী ছাড়া অন্য সকল পুরুষকে বাপ বা ভাই হিসাবে ভাবতে শিখুন।
আল্লাহ ও রাসূলে(সাঃ)র আদেশ নিষেধ মেনে চলুন।
কারো ঘরে যেতে ইসলাম মনোনীত তিন সময় মেনে চলুন অর্থাৎ ফজর নামাজের পূর্বে,দুপুরের বিশ্রাম গ্রহণের সময় এবং এশার নামাজের পরে এই তিন সময়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। উক্ত তিন সময়ে যেতে হলে আগে অনুমতি নিয়ে নিন।
কারো ঘরে প্রবেশ করতে সালাম দিন, তারপর প্রবেশের অনুমতি নিন।
কারো ঘরে প্রবেশ করে কোন নারীর সাথে কথা বলতে হলে দৃষ্টি নত রেখে পর্দা রক্ষা করে কথা বলুন।
সকল অন্যায় কর্ম ও পথ পরিহার করুন।
সালামের জবাব দিন।
সৎকাজের আদেশ দিন, সৎকাজ করুন এবং অসৎ কাজে বাধা দিন, অসৎ কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
নারীদের ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন – “তোমরা তোমাদের ঘরে থাক এবং বাহিরে খোলামেলা হয়ে বের হয়োনা”।
পুরুষদের ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন – “তোমরা যখন তাদের (নারীদের) নিকট কিছু চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে”।
নারী-পুরুষ উভয়ের প্রত আল্লাহ পাক বলেন- “নিঃসন্দেহে ইসলামের বিধিবিধান পালনকারী পুরুষ ও নারী, ঈমান্দার পুরুষ ও নারী, আনুগত্যকারী পুরুষ ও নারী, সভ্য পরায়ন পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনীত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও নারী, যৌনাঙ্গ হেফাজতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহর অধিক জিকিরকারী পুরুষ ও নারীদের জন্য রয়েছে – আল্লাহর ক্ষমা, মাগফিরাত ও উত্তম পুরস্কার।
(খ) পিতা, মাতা ও অভিভাবকগণের প্রতি
পিতা, মাতা ও অভিভাবকগণের প্রতি অনুরোধ, নিজ নিজ সন্তানদের আদর্শবান করে গড়ে তুলুন, তার জন্য ইসলামী শিক্ষার সাহায্য নিন। তাদের দিকে অতন্দ্র প্রহরীর মত তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখুন, যাতে তারা খরাপের পথে পা না বাড়ায়, খারাপের সাথে মিশতে না পারে। একমাত্র ইসলামী শিক্ষাই সন্তানকে আদর্শবান করে গড়ে তুলতে পারে। তাই ইসলামী শিক্ষা দিয়ে তাদের রক্ষা করুন।
আল্লাহ পাক পিতা-মাতার উদ্দেশ্য বলেন- “হে মুসলীমগণ ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকেজাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা কর”। প্রয়োজনে তাদেরকে হুঁশিয়ারী সংকেত দিন। হাদীসে আছে – “ঘরের এমন স্থানে একটা বেত টাঙ্গিয়ে রাখ, যাতে সবার নজরে পড়ে, প্রয়োজনে শাসনও করবে”।
সন্তানদের আদর্শবান করে গড়ে তোলার ব্যাপারে রাসূল(সাঃ) বলেন – “কোন পিতা-মাতা সন্তানকে উত্তম আদব-কায়দা শিক্ষাদান অপেক্ষা ভাল কোন দান দিতে পারেনা”।অভিভাবকগণের উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাক বলেন – “হে পুরুষগণ ! তোমরা তাদের (নারীদের) কে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে বের করে দিওনা। আর তারাও যেন বের না হয়। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে আল্লাহর সীমা লঙ্গন করবে সে নিজের জানের উপর জুলুমকারী সাব্যস্থ হবে”। শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে রাসূল (সাঃ) বলেন – “তোমার দ্বারা যদি আল্লাহ একজন মানুষকে হেদায়েত দেন, তা তোমার জন্য লাল উষ্ট্রী অপক্ষা উত্তম সম্পদ”।
(গ) সরকারের প্রতি
দেশের সরকারের প্রতি অনুরোধ, দেশের সকল বিদ্যাপীঠ থেকে (নারী-পুরুষের সহাবস্থানের) সহ শিক্ষার প্রচলন বাতিল করুন। জিনার বিকল্প পথ স্বরূপ সহশিক্ষার প্রচলনই দেশ ও জাতিকে বেহায়াপনার দিকে ঠেলে দিবার মুল চাবিকাঠি। যদি তা নাই হতো, তবে দেশের সর্বোচ্ছ বিদ্যাপীট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখে সুবহে সাদিকের পর শুভ প্রভাতে কাপড় প্যাঁচানো আদম শিশুর লাশ পড়ে থাকতোনা। রমনার লেকের পানিতে সদ্যজাত শিশুর মরা লাশ ভাসতোনা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পঁচা গলিত মানব শিশুর হাঁড় মিলতোনা। জাহাঙ্গীর নগর ভার্সিটিতে ধর্ষনের সেঞ্চুরী ঘটতোনা।
তাই, সকল প্রকার বিদ্যাপীঠ থেকে সহশিক্ষার প্রচলণ উঠিয়ে নিন। রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, ইডেন হল সহ সকল ছাত্রী হোষ্টেল ধ্বংস করুন। নারী শিক্ষার প্রয়োজনে আলাদা বিদ্যাপীঠ স্থাপন করুন। তারা যাতে ঘর থেকে আসা-যাওয়া করে পড়া-লেখা করতে পারে সে ব্যবস্থা নিন। যদি তা না করা হয়, দেশব্যাপী অহরহ ধরষণের সেঞ্চুরী ঘটতে থাকবে। সমগ্র দেশ মানুষ পঁচা গন্ধে ছেঁয়ে যাবে। দেশের পরিবেশ নষ্ট হবে। মৃত্যু না আসলেও আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগবে।
তাই, ইসলামী নীতিমালায় দেশ পরিচালনা করুন, দেখবেন সকল অঘটন-ঘটনা শুনা থেকে মুক্তি পাবেন। দেশ শান্ত হবে। সমাজের অশান্তির দাবানল আস্তে আস্তে নিভতে থাকবে। চারদিকে ফত্ ফত্ করে উড়তে থাকবে মহাজোট সরকারের বিজয় কেতন।
তথ্যসুত্র :
ক) আদর্শ নারী , অক্টোবর-২০০১, মার্চ- ২০০২, এপ্রিল-২০০২ সংখ্যা।খ) ইনকিলাব উপহার, ২২শে মার্চ – ২০০২,
গ) ইসলামী জীবন পদ্ধতি, আল্লামা শায়খ জামিল জাইনু।
বিঃ দ্রঃ এ লেখাটি সম্ভবতঃ ২০০২ সালে আদর্শ নারীতে পাঠানো হয়েছিল, তবে প্রকাশ হয়েছিল কিনা জানিনা। লেখাটি ঈষৎ সংশোধন করে এখানে প্রকাশ করা হল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন