ভুমিকা :সৎকাজের আদেশ দান এবং অসৎকাজে বাধা দান – এ দু’টি মূল স্তম্ভের উপরই সমাজ সংস্কারের মূলভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। এ দু’টি মূল স্তম্ভের আলোকে আলোচনা বা সৎকাজের প্রতি মানব সমাজের আগ্রহ সৃষ্টি, প্রেরণা দান, উৎসাহ জোগানো এবং অসৎ কাজর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি, অসৎ কাজ থেকে লোকসমাজকে ফিরিয়ে রাখার স্বার্থে বিবিধ উদাহরণ ও বাস্ত ধারণা দিয়ে আদেশ - উপদেশ – পরামর্শ দানের মাধ্যমে জনসমাজকে অন্ধকার থেকে আলোকের পথে টেনে আনার কর্মই হলো কলমধারীদের “সমাজ সংস্কার’’।
সমাজের এক একটি নষ্ট দিক নিয়ে আলোচনা করে সমাজের সব নষ্ট পথের গলি সংস্কার করনের জেহাদে কলমধারী যুদ্ধা তথা মুজাহিদগণের অবতীর্ণ হবার মধ্য দিয়ে যে সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি হয়, তাই-ই পরিণত হয় কলমধারীদের সমাজ সংস্কারের এক একটা পদক্ষেপ হিসাবে।
সমাজ সংস্কারমূলক লেখায় সকল কলম সৈনিক, বাতিলের বিরুদ্ধে সোচ্ছারিত মুজাহিদ এমনভাবে তাঁদের আলোচনা উপস্থাপন করতে স্বচেষ্ঠ থাকবেন, যাতে জনসমাজ আলোচিত বিষয়ের সঠিক দিক সহজেই অনুধবন করতে পারে। সঠিক দিক অবলম্বনে উৎসাহ পায়। যেন বুঝতে পারে আলোচিত বিষয়ের সমুহ লাভ-ক্ষতির বিষয়ে। অপরপক্ষে, লোক সমাজ ক্ষতির দিক অনুধাবনের মাধ্যমে সেদিক থেকে যেন সহজেই নিরুৎসাহিত হতে বাধ্য হয়।
এক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ে আলোচনার সর্বাঙ্গ জুড়ে যদি বাস্তব প্রমাণ দাঁড় করানো যায়, তবে ফলাফল নব্বই শতাংশে এসে দাঁড়াবে বলে মনে করি। কারণ, একজন ছাত্র থিউরিক্যাল ক্লাস করে যতটা উপকৃত হয়, তার চেয়ে বেশী উপকৃত হয় প্রাক্টিক্যাল ক্লাস করে। অর্থাৎ, মানুষ অবাস্তব বা অদেখা বিষয়ের উপর যতটা জ্ঞানার্জন করতে পার, তার চেয়ে বেশী জ্ঞানার্জন করতে পারে বাস্তব বা চোখে দেখা বিষয়ের উপর।
যেহেতু, মনের চোখে দেখার চেয়ে চরর্মচক্ষে দেখাতেই ইস্পিত বিষয়ে বেশী আকর্ষণ করে, সেহেতু মানুষ অবাস্তব ধারণার চেয়ে বাস্তব ধারণাতেই বেশী আকর্ষিত হতে বাধ্য। যেমন – বর্তমান যুগের সবচেয়ে বেশী আকর্ষিত গণমাধ্যম হল ইন্টারনেট। যার সৌন্দর্য – উৎকৃষ্টতম – নিকৃষ্টতম দিক সম্পর্কে পরো বিশ্বের মানুষই কমেশী অবগত। অথচ, যরা এ ইন্টারনেট দেখেছে, ইন্টারনেটের ভিতরে যারাই প্রবেশ করেছে তারা সেদিক থেকে আর কোনদিকে ফিরছেনা। দুনিয়া চলে যাক চোখ তাদের ইন্টারনেটে। আর যারা এ ইন্টারনেট জগতকে এখনো দেখেনি তারা বলছে – ইন্টারনেট নিয়ে যারা বসে রয়েছে তারা এক একটা বদ্ধ পাগল ! কোন মানুষ এভাবে না খেয়ে না পরে কি রাত দিন ইন্টারনেট নিয়ে বসে থাকতে পারে ?
এই হলো বাস্তব ও অবাস্তব ধারণা। যারা ইন্টারনেট সম্পর্কে বাস্তব ধারণা পেয়েছে, তারা রাত-দিন ইন্টারনেট নিয়ে বসে আছে, আরা যারা বাস্তব ধারণা পায়নি তারা বাস্তব ধারণারণার অধিকারীদের বলছে পাগল। আর তেমনই হলো , আমাদের বর্তমান সমাজের অবস্থা। মানুষ বর্তমানে নষ্ট দিকগুলোর বাস্তব ধারণা বেশী পেয়েছে বলেই পড়ে আছে তারা সেইসব নষ্ট পথের গলিতে। এখন তাদেরকে সেইসব নষ্ট পথের গলি থেকে ফেরাতে হলে প্রয়োজন উৎকৃষ্ট পথের দিশা স্বরূপ এক একটা ইন্টারনেট ওয়েব সাইট। যেগুলোতে দেখতে পাবে মানুষ মনোরম সকল দৃশ্য। জানতে পারবে মানুষ যে সাইটগুলো থেকে নতুন এক শান্তির জগতকে।
তাই, বর্তমান নাজুক পরিস্থিতিতে সমাজকে সংস্কার করতে প্রতিদিন কলমযোদ্ধাদের অত্যাধুনীক গণমাধ্যমের দৃশ্যপঠে হাজির হতে হবে ইন্টারনেটের নোংরা সাইটগুলোর মত শক্তিশালী ও জনপ্রিয়তার লক্ষ্যে এক একটি সমাজ সংস্কার মূলক ওয়েবসাইট নিয়ে।
বর্তমান সমাজের নোংরা গলিতে সেইরূপ কতইনা নিত্য নতুন ওয়েব সাইটের ঠিকানা। প্রদর্শিত হচ্ছে যাতে বিবিধ নোংরা প্রদর্শনী। অথচ, এসব নোংরা সাইটের বিরুদ্ধে সমাজ সংস্কারমুলক তেমন সাইট পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। ফলে ইন্টারনেট বিশ্ব হয়ে পড়ছে সভ্যতা বিধ্বংসী কর্ম নির্ভর এক বিশ্ব ফ্ল্যাটফরম রূপে। আর এই সভ্যতা বিধ্বংসী বিশ্ব ফ্ল্যাটফরমকে সভ্য রূপে রূপায়ীত করতে প্রয়োজন কলমধারীদের সভ্য সব লেখা দিয়ে ভরিয়ে দেবার। আলোচ্য “সমাজ সংস্কার’’ হোক তেমনই একটা উদ্যাগ। সমাজের নোংরা গলিতে বিচরণকারীদের জন্য “সমাজ সংস্কার’’ হোক কম্পিউটারের মণিটর সদৃশ। যাতে চোখ দিলে লোক সমাজ দেখতে পাবে নতুন নতুন এক একটি ওয়েব সাইট থেকে নতুন নতুন এক একটি সভ্য জগত।
আশাকরি প্রত্যেক কলম সৈনিক তাঁদের সমাজ সংস্করমূলক লেখায় সমাজের এক একটি নষ্ট দিক সম্পর্কে বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটাতে স্বচেষ্ট থাকবেন। সেই সাথে সমাজ সংস্কার মূলক বিভিন্ন সাইট খুলে সেগুলোর মাধ্যমে সমাজ সংস্কার মূলক বিভিন্ন তথ্য দিয়ে ইন্টারনেটকে একটি বিশ্ব সভ্যতার বিশ্ব ফ্ল্যাটফরম হিসেবে রূপ দিতে সকলেই এগিয়ে আসবেন।
এ অধম সমাজ সংস্কার ও আত্মসংস্কারের অভিপ্রায় নিয়ে “সমাজ সংস্কার” মূলক এ লেখাটি সকলের সম্মুখে উপস্থাপন করলাম। নাকের ডগায় প্রদর্শিত সভ্য সমাজে আক্রান্ত একটা বিষব্যধি , নষ্ট সভ্যতার একটা নোংরা আয়োজন, বিশ্বকে কলুষিত ও কলঙ্কিত করার একটা বিশেষ দিন “বিশ্ব ভালোবাসা দিবস” আয়োজনের প্রতিবাদে উপস্থাপিত “সমাজ সংস্কার” মূলক আমার আজকের লেখার বিষয় হলো – “প্রেম বা ভালোবাসা”।
(ক) যা বলতে চাই
সাধারণভাবে বলতে গেলে, প্রেম বা ভালোবাসা হলো – মানবহৃদয়ের একটা টান বা আকর্ষনীয় দিক। একে অপরের প্রতি অনুরক্ত হওয়া। ভালোভাবে যুগোপযোগী ভাবনার আলোকে বুঝাতে গেলে, প্রেম বা ভালোবাসা হলো – দু’টি নরনারীর বিশেষ রূপে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত হবার আকুল বাসনার প্রকাশ্য পদচারণা। যা সাধারণতঃ আমাদের দেশের ভার্সিটি এলাকায় আর পার্কগুলোতে ঘুরতে গেলে দেখা যায় ! দেখা যায় ভালবাসা দিবস নামের বিশেষ দিনের নির্লজ্জতা ও সভ্য মানুষদের অসভ্য কর্মের উৎসবে। যে প্রেম মানুষকে নিয়ে যায় অধঃপতনের শেষ প্রান্তে। যে প্রেমে সুখ – শান্তির আড়ালে লুকিয়ে থাকে দুঃসহ যন্ত্রণা।
আর সভ্যতার পরিভাষায় প্রেম বা ভালোবাসা হলো – একটা চিরন্তন শ্বাশত সত্য কথা। প্রেম বা ভালোবাসা সাময়িক একটা প্রাণচাঞ্চল্যতার বহিঃপ্রকাশই নয়, বরং এটা মানুষের নৈতিক – দৈহিক ও মানষিক বিষয়েরও প্রচুর উন্নতির সোপান বিশেষ, যা মানুষকে এক সময় মহান করে তোলে। এ প্রেমই মানুষকে তার সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যে যেতে সহায়তা করে। তাই এ প্রেম বা ভালবাসা মহান সৃষ্টিকর্তার এক বিশেষ নেয়ামত।
কিন্তু অধুনা যুগে যে প্রেম নামক সংক্রামক ব্যধীটা এই মানব সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছোঁয়াছে রোগের মত ছড়িয়ে পড়ছে, সেই প্রেম কখনোই সৃষ্টিকর্তার নেয়ামত হিসাবে ধর্তব্য বা গণ্য হবার নয়। কারণ, অধুনা যুগের এই সর্বনাশা প্রেম কাম বা রিপুর একটা সাময়িক চাঞ্চল্যের বহিঃপ্রকাশ তথা দেহজ তাড়না নির্ভর একটা অসভ্য কর্ম ব্যতিত আর কিছু নয়। এই প্রেম বা ভালবাসা সভ্য সমাজকে আক্রান্তকারী একটা বিশেষ ব্যধি, যার সংক্রমণে দেখা দিয়েছে সর্বত্র অসভ্যতার সব প্রতিফলন। আর এই প্রেমকে বিশ্ব স্বীকৃতি দিতে করা হয় নষ্ট সভ্যতার একটা নোংরা আয়োজন। সমগ্র বিশ্বকে কলঙ্কিত ও কলুষিত করার একটা বিশেষ দিন হিসাবে ১৪ই ফেব্রোয়ারীকে ঘোষনা করা হয় বিশ্ব ভালবাসা দিবস হিসাবে। যেদিন সংঘটিত হয় উম্মত মাতালদের মত বেশীর ভাগ তরুন - তরুনীদের মাঝে প্রেমের নামে দেহ আদান – প্রদানের অসভ্য কর্ম।
এই সেই প্রেম ! যাহা স্রেফ কাম – শিহরণ – বেডরুমের কোমল বিছানায়, মহানগরীর কোলাহলমুখর স্থানে গড়ে উঠা অভিজাত আবাসিক হোটেলের বদ্ধ কক্ষে , অভিজাত এলাকার অভিজাত গেষ্ট হাউজের রঙ্গমঞ্চে, রাস্তার পাশে গড়ে উঠা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মত পার্কের গাছের চিপায় বা নির্জন স্থানে, জাতীয় জাদুঘরের স্মরণীয়-বরনীয় ক্যাপসানের আড়ালে – চুমাচুমি, দেহ বিনিময় আর নাইট ক্লাবের প্রমোদবিহারেই সীমাবদ্ধ। আর এটাইতো এই সভ্যযুগের (?) প্রেম বা ভালবাসা ! যদি তা নাই-ই হতো , তবে এই প্রেম বা ভালবাসা মানুষদের সুন্দর জীবনকে অসুন্দর, কলষময় ও বিষাদময় করে তুলতোনা, গড়ে তুলতোনা মানুষদের মহান করে গড়ে তোলার স্থানে সমাজের এক নিকৃষ্ট জীব হিসাবে পরিগণিত করতে, মানব সমাজের কল্যান বয়ে আনার স্থলে অশান্তির দাবানল ছড়াতোনা, মানুষদের নৈতিক-দৈহিক ও মানষিক বিকাশের পরিবর্তে বিপর্যয় ঘটাতোনা।
আজকের এই প্রেম সমাজের প্রতিটি স্তরে একটা সংক্রামক রোগের কীট হিসাবে সকল কিশোর-কিশোরী, তরুন-তরুনী, যুবক-যুবতী সহ পরিণত বয়সের সকল মানুষের নির্দাঘ জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে। যার ফলে প্রায়ই সকলেই উক্ত প্রেম নামক সংক্রামক রোগের ছোঁয়ায় নিজেদের তীলে তীলে ধ্বংসের পাদপীঠে উপনীত করছে। নিজেদের নির্মল জীবনকে খুঁকড়ে খুঁকড়ে খাওয়াচ্ছে প্রেম নামক সংক্রামক ব্যাধির কীটকে। ফলশ্রুতিতে সমাজের প্রতিটি শাখা প্রশাখায় অশান্তির আগুন ধাউ ধাউ করে জ্বলছে।
মনের ভাবাবেগের উম্মত্ততায় বিকল্প পথহীন প্রেম বা ভালবাসা নামক মরণ ফাঁদে পা দিয়ে প্রেমের ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন দেখে অধুনা যুগের প্রায়ই কিশোর-কিশোরী, তরুন-তরুনী, যুবক-যুবতী সহ পরিণত বয়সের কিছু বিশেষ শ্রেণীর জনগোষ্ঠী। যে প্রেমের একমাত্র মুখ্য উদ্দেশ্য ও গতানুগতিক ভাবধারাই হচ্ছে একটা দেহাতীত প্রেম, যা দেহের সাময়িক উত্তেজনা প্রশমনের মধ্যেই সীমিত। দেহজ উত্তেজনা প্রশমনের পরপরই উক্ত মানবশ্রেণীর প্রায়ই নর-নারী জীবনের বৃহত্তম ফাউলটিই করে বসে। নিষিদ্ধ কর্মের অথৈ সাগরে ডুব দিয়ে এ মানবশ্রেনী নিজ নিজ ব্যক্তিস্বত্তার সকল কিছুই জলাঞ্জলী দিয়ে হতাশায় আচ্ছাদিত হয়। তমসাচ্ছন্ন অন্ধকার গলিতে ঘুরপাক খেতে থাকে। প্রতারণার বিপদ সঙ্কুল পথে পা রেখে পিছলে পড়ে মসৃণ সরল রেখার জীবন পথে। কান্নাভরা জীবনের আঁখিযুগল থেকে নোনতা জল গিয়ে পড়ে জন্ম দেয় বেদনার মহাসরোবরে। যে সরোবর পাড়ি দেবার পথ খুঁজতে গিয়ে প্রায়ই এ মানবশ্রেণী গৃহছাড়া হয়, সমাজচ্যুত হয়। মরণপথের অচিন গলিতে এ মানবশ্রেণী প্রতিনিয়ত পদক্ষেপ ফেলছে। নেশার নীল রাজ্যের অধিবাসী হয়ে জীবন্ত লাশ হিসাবে পৃথিবীতে জীবনের ঘানী টানছে। জারজ সন্তান গর্ভে নিয়ে সমাজের অবাঞ্চিত কীট হিসাবে মুখে চুনকালী মেখে ঘুরছে সমাজপতিদের ধারে ধারে। আহ্ ! কতইনা জ্বালা !! কতইনা অশান্তি !!! কতইনা নরকযন্ত্রনার অনলদহন !!!!
প্রেম নামক দেহের জ্বালা সারতে না পেরে প্রেমিক নামক পশুরা এ্যাসিড দিয়ে ঝলসে দিয়েছে কতনা মায়াময় মুখ, যারা আজ বিকৃত রূপ নিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে, গুঙ্গাচ্ছে ! আহ্ ! কিই না নির্যাতন সইতে হয় এই সভ্য সমাজের অবিনাশী প্রেমে !!
নেশাগ্রস্থ হয়ে রাস্তার নিয়নবাতির আলোয় দুলছে মা-এর বুকের ধন ! পিতা-মাতার একমাত্র আদরের মেয়েটি তাদের মুখে চুনকালী লাগিয়ে হয়েছে প্রেমের টানে ঘরছাড়া !! স্বামীর প্রিয়তমা স্ত্রী পরকিয়া প্রেমে মত্ত হয়ে আপন গর্ভজাত তিন সন্তান ফেলে এক কচি ছেলের হাত ধরে বেরিয়ে গেছে অজানায় !!! পাঁচ সন্তানের পরিণত বয়সী পিতার সাথে ধনীর ঘরের আদরের দুলালী ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছে !!!!
আহ্ ! কিই না রুচি আজকের যুগের মহাগ্রাসী প্রেমে ! কতই না সভ্য বর্তমান সভ্য সমাজের মানুষেরা !! প্রেমের স্বীকৃতি না পেয়ে আদরের সন্তান নীজ পিস্তলের গুলি বুকে ডুকিয়ে দুলছে !! রূপবতী একমাত্র মেয়েটি সতীত্ব বিসর্জন দিয়েও প্রেম প্রত্যাখাত হয়ে স্লিপীং পিল খেয়ে আত্মহত্যা করছে !!! ঘর বাঁধার স্বপ্ন ভঙ্গের কারনে প্রেমিক জুটি বিয়ের আসর থেকে লুকিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিচ্ছে !!! প্রেম প্রত্যাখান করায় বাসর ঘরে খুন হচ্ছে নব বর-বধু !!!! এসব কত অহরহ ঘটনাইতো ঘটছে বর্তমান যুগের এ প্রেম নামের সংক্রামক ব্যাধির কারণে !!!!!
বর্তমান যুগের এ প্রেম তাই অবৈধ, অশান্তির দাবানল, নিশ্চিত মরণ ফাঁদ, বিষধর সর্প, জীবন নাশক কটা সংক্রামক ব্যাধি, সমাজের বিনষ্টের একটা দুষ্ট কীট আর জাতীয় দুষমন – এহেন প্রেম। অধুনা যুগের এ প্রেম বা ভালবাসা হচ্ছে – দেশের মুল্যবান জনশক্তির ক্ষতিকর এক মারণাস্ত্র।এক নষ্ট সভ্যতার করুন রূপ। তাই, এ প্রম পরিত্যাজ্য, এ প্রেম অস্বীকার্য, এ প্রেম অমানানশীল ও অগ্রহণীয়।
যদি প্রেম করার এতই শখ জাগে, তবে মানানসই এক গ্রহণীয় প্রেমের সন্ধান করতে হবে। অনস্বীকার্য, গঠনশীল , সামাজিক প্রেম বাচাই করতে হবে। অপরিত্যাজ্য প্রেমের জগত সৃষ্টি করতে হবে ।কিন্তু, কোথায় সে প্রেম ?
হ্যাঁ, সে প্রেম এখনো জীবিত, শাশ্বত ও চিরন্তন। চিরজীবন্ত, গ্রহণীয় সেই প্রেম। চির অম্লান, অনস্বীকার্য সেই প্রেমই হলো – ইসলামী অবকাঠামোয় গঠিত প্রেম। যে প্রেমকে সমাজবদ্ধ মানুষ বিনা দ্বিধায় আজও স্বীকৃতি দান করে।
ইসলামী অবকাঠামোর প্রেম – ভালবাসা – বন্ধুত্বের একটা নিরধারাত গণ্ডি রয়েছে। ইসলামে প্রেম – ভালবাসা – বন্ধুত্ব প্রধানত দু’টি প্রকারেই দৃশ্যমান। তার মধ্যে প্রথমটি হলো - আল্লাহ বা আপন সৃষ্টিকর্তার সহিত প্রেম বা ভালবাসা ও বন্ধত্ব এবং দ্বিতীয়টা হলো – মাখলুক বা আল্লাহর সৃষ্টিকুলের সহিত প্রেম বা ভালবাসা ও বন্ধুত্ব।
প্রথম প্রকারের প্রেম বা ভালবাসা - আল্লাহর সহিত প্রেম :- ইহাই প্রকৃত প্রেম বা ভালবাসা। যে ভালবাসায় স্বর্গের পরশমাখা সুখানুভুতি শিহরণ জাগায় মানব মনে। আল্লাহ্ , যিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা , রিযিকদাতা , তাঁকেই আমাদের আপন ছেলে-মেয়ে, মাতা-পিতা, স্বামী-স্ত্রী সবার চেয়ে বেশী ভালবাসতে হবে। তাঁর সাথেই সকলের চেয়ে বেশী প্রেম করতে হবে। তাঁর সাথেই সবচেয়ে বেশী বন্ধু্ব করতে হবে। প্রেম করে যদি মরতেই হয় একমাত্র তাঁরই মরতে হবে। তাঁরই জন্য সমাজ ছাড়তে হবে। তাঁরই জন্য পরিবার ত্যাগ করতে হবে। তাঁরই জন্য পিতামাতার অবাধ্য হতে হবে। তাঁরই জন্য পথে পথে উন্মাদ হয়ে ঘুরতে হবে। তিনি ব্যাতিত অন্য কারো জন্যই এসব করা যাবেনা। তাইতো মহান আল্লাহ বলেন – “যারা ঈমান্দার আল্লাহর জন্য ভালবসা তাদেরই সবচেয়ে প্রকট।’’
আল্লাহকে ভালবাসার নিদর্শন হচ্ছে , তার আদেশ নিষেধ মেনে চলা। তাঁর নবীকে ভালবাসা। তাঁর নবীকে অনুসরণ করা। আর এটাই আল্লাহর আদেশ। বিশেষ করে তাঁর নবী মুহাম্মদ(সঃ) কে ভালবাসতে হবে। তাঁর অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। তাই আল্লাহ পাক বলেন – “ হে নবী ! বলুন- যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো , তাহলে আমাকেই অনুসরণ করো’’।
অতএব, আল্লাহকে ভালবাসার ব্যাপারে যার দাবী যতটুকু সত্যি হবে, হযরত মুহাম্মদ(সঃ) কে অনুসরণ ও অনুকরণে সে ততটুকু যত্নবান হবে, তাঁর শিক্ষার আলোকে সে জীবনের পথ অবলম্বন করবে।
দ্বিতীয় প্রকারের প্রেম বা ভালবাসা – মাখলুক বা আল্লাহর সৃষ্টিকুলের সহিত ভালবাসা ঃ- এ প্রেম বা ভালবাসা আবার দুই প্রকার। যথা – ক) মানুষ জাতির প্রতি প্রেম বা ভালবাসা। খ) কোন প্রাণী বা বস্তুর প্রতি প্রেম বা ভালবাসা।
ক) প্রথমতঃ মানুষ জাতির প্রতি প্রেম বা ভালবাসা :- এ প্রেম ও কয়েকটি স্তরে বিভক্ত।যেমন –
১) নবী-রাসূলগণের প্রতি আত্মার বিশ্বাসের প্রেম।
২) মাতা-পিতার প্রতি ভক্তি ও মায়া এবং আত্মার প্রেম।
৩) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার আত্মার ও নিবীড় ভালবাসা এবং দৈহিক বন্ধনের প্রেম।
৪) সন্তান-সন্ততির প্রতি স্নেহ ও আদরের প্রেম।
৫) আপন ভাই-বোনের প্রতি মায়া ও মমতার প্রেম।
৬) রক্ত সম্পর্কীয় বন্ধনের প্রতি আত্মার প্রেম।
৭) আপন আত্মীয়-স্বজনের প্রতি আত্মার প্রেম।
৮) পাড়া-প্রতিবেশীর প্রতি আত্মার প্রেম।
৯) অন্যান্য আত্মীয়ের প্রতি আত্মার প্রেম।
১০) এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের আত্মার ও ধর্মীয় প্রেম।
১১) উস্তাদ-সাগরেদের মধ্যকার আত্মার ও শিক্ষার প্রেম।
১২) পীর-মুরীদের মধ্যকার আত্মার ও শিক্ষার প্রেম।
১৩) নিজ ধর্ম ব্যতিত অন্য ধর্মের মানুষদের প্রতি মানব প্রেম।
উপরোক্ত তেরো স্তরের প্রেম বা ভালবাসার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও প্রকৃত ভালবাসা হচ্ছ, প্রথম স্তরের প্রেম অর্থাৎ নবী-রাসূলগণের প্রতি আত্মার ও বিশ্বাসের প্রেম। আবার নবী-রাসূলগণের প্রতি প্রেমের মধ্যে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ(সঃ) এর প্রতি প্রেম-মহব্বত-বন্ধুত্ব-ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপনই সর্বশ্রেষ্ট, যার অবস্থান উভয় জাহানে সমভাবে স্থায়িত্বশীল। ইহাই প্রকৃত প্রেম। এ প্রেমই বর্তমান দুনিয়ার সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য একটা উৎকৃষ্টতম প্রেম।
দ্বিতীয় উৎকৃষ্টতম প্রেম বা ভালবাসা হল, দ্বিতীয় স্তরের প্রেম - মাতা-পিতার প্রতি ভক্তি ও মায়া ও আত্মার প্রেম। আল্লাহ ও রাসূলের পর নিজ পিতা-মাতার প্রতি প্রেমের সুনিবীড় সম্পর্ক স্থাপন একটা উৎকৃষ্টতম প্রেম হিসাবে আল্লাহ ও রাসূলের কাছে গণ্য। তাই আল্লাহ ও রাসুলের পর আপন পিতা-মাতাকেই বেশী ভালবাসতে হবে।
তৃতীয় উৎকৃষ্টতম প্রেম বা ভালবাসা হলো, তৃতীয় স্তরের প্রেম – স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার আত্মার ও নিবীড় ভালবাসা এবং দৈহিক বন্ধনের প্রেম। মাতা-পিতার প্রতি প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের পর স্বামীর প্রতি স্ত্রীর এবং স্ত্রীর প্রতি স্বামীর প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনই হলো উৎকৃষ্টতম প্রেম বা ভালবাসা। যার দ্বারা নতুন একটা সুন্দর পরিবার গঠিত হয়। দৈহিক প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য একমাত্র মাধ্যম স্বামী–স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক। কোন নারী বা কোন পুরুষের জন্য প্রেমের (দৈহিক) সম্পর্ক স্থাপনের জন্য শর্ত হলো – তারা এই স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনে বা বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। নয়তো কোন নারীর সহিত নরের এবং কোন নরের সহিত নারীর দৈহিক বন্ধনে আবদ্ধ হবার বা প্রেমে বন্দী হবার কোন বৈধতা নেই।
চতুর্থ উৎকৃষ্টতম প্রেম বা ভালবাসা হলো, চতুর্থ স্তরের প্রেম - সন্তান-সন্ততির প্রতি স্নেহ ও আদরের প্রেম। স্বামী-স্ত্রীর প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের পর আপন সন্তান-সন্ততিদের প্রতি প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনই হল উৎকৃষ্টতম প্রেম। যা একটি পরিবারের সুন্দর ও নীবিড়ভাবে টিকে থাকার জন্য খুবই জরুরী।
পঞ্চম উৎকৃষ্টতম প্রেম বা ভালবাসা হলো, পঞ্চম স্তরের প্রেম - আপন ভাই-বোনের প্রতি মায়া ও মমতার প্রেম। আপন সন্তান-সন্ততির প্রতি প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের পর আপন ভাই-বোনের প্রতি প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনই উৎকৃষ্টতম প্রেম। যা একটি পরিবারের সৌন্দর্য রক্ষা ও পারিবারিক উন্নতি এবং কল্যানে বৃহৎ শক্তি জোগায়।
ষষ্ট উৎকৃষ্টতম প্রেম বা ভালবাসা হলো, ষষ্ট স্তরের প্রেম - রক্ত সম্পর্কীয় বন্ধনের প্রতি আত্মার প্রেম। রক্তসম্পর্কীয় বন্ধনের মধ্যে আপন দাদা এবং তার পরিবার, চাচা এবং তার পরিবার, চাচাজাত ভাই-ভগ্নি এবং তাদের রক্তজাত সিলসিলার মানুষগুলো, ফুফু এবং তার পরিবার, ফুফুজাত ভাই-ভগ্নি এবং তাদের রক্তজাত সিলসিলার মানুষগুলো , আপন ভাই-বোনের সন্তান-সন্ততি এবং তাদের পরিবার, আপন ভাই-বোনের সন্তান-সন্ততিদের রক্তজাত সিলসিলার মানুষগুলো , নানা ও নানী এবং তাদের রক্তজাত সিলসিলার মানুষগুলো। আপন ভাই-বোনের প্রতি প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের পর এদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করাই উৎকৃষ্টতম প্রেম। যার দ্বারা একটা রক্ত সম্পর্ক চির অম্লান ও চির জীবন্ত থাকতে বহুদূর ব্যাপী কাজ করে এবং একটা রক্ত সম্পর্কীয় বিস্তৃত পরিবার গঠনে সহায়তা করে। আর এ প্রেমের মাধ্যমেই গড়ে উঠতে পারে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের হিংসা-জিঘাংসা-শত্রুতাবিহীন এক একটি বিশাল পরিবার। গঠিত হতে পারে এ প্রেমের মধ্য দিয়ে এক একটি সভ্য সমাজ। যার মাধ্যমেই রচিত হতে পারে এক একটি শান্তির সাম্রাজ্য। এই রক্ত সম্পর্কীয় বন্ধনের প্রতি প্রেমই প্রতিষ্টিত করতে পারে, বিশ্বকে একটা শান্তির জগত রূপে।
সপ্তম উৎকৃষ্টতম প্রেম বা ভালবাসা হলো, সপ্তম স্তরের প্রেম - আপন আত্মীয়-স্বজনের প্রতি আত্মার প্রেম। আর এ আত্মীয় স্বজনের মধ্যে আপন চাচীর বাবা ও মা ও তাদের পরিবার ও তাদের রক্তজাত সিলসিলার মানুষগুলো ও তাদের পরিবার, সৎ মা ও সৎ বাবা এবং তাদের বাবা ও মা ও তাদের পরিবার ও তাদের রক্তজাত সিলসিলার মানুষগুলো ও তাদের পরিবার, আপন ভাগিনা-ভাগিনীর পরিবার ও তাদের পরিবারভুক্ত মানুষগুলো। আপন ভাতিজা-ভাতিজীর পরিবার ও তাদের পরিবারভুক্ত মানুষগুলো, আপন মামা-মামী ও তাদের পরিবারভুক্ত মানুষগুলো, আপন খালা-খালু ও তাদের পরিবারভুক্ত মানুষগুলো। আপন ফুফি-ফুফা ও তাদের পরিবারের মানুষগুলো, চাচাত, খালাত, ফুফাতো, মামাতো এবং সৎ ভাই-বোনদের পরিবার ও তাদের পরিবারভুক্ত মানুষগুলো। রক্ত সম্পর্কীয় বন্ধনের প্রতি আত্মার প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের পর এদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করাই উৎকৃষ্টতম প্রেম।
অষ্টম উৎকৃষ্টতম প্রেম বা ভালবাসা হলো, অষ্টম স্তরের প্রেম – পাড়া-প্রতিবেশীর প্রতি আত্মার প্রেম। আপন আত্মীয়-স্বজনের প্রতি প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের পর পাড়া-প্রতিবেশীর প্রতি আত্মার প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন একটা উৎকৃষ্টতম প্রেম হিসেবে বিবেচ্য। এ প্রেম নিজেদের পারিপার্শিক নিরাপত্তা রক্ষায় বিশেষ ভুমিকা পালন করে।
নবম উৎকৃষ্টতম প্রেম বা ভালবাসা হলো, নবম স্তরের প্রেম – অন্যান্য আত্মীয়ের প্রতি আত্মার প্রেম। অন্যান্য আত্মীয়ের মধ্যে পাড়া- প্রতিবেশীদের আত্মীয়, আপনজনদের পরিচিত ও বন্ধুদের আত্মীয়, আপন বন্ধু তাদের বন্ধুদের আত্মীয় অর্থাৎ যাদের দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় বলে ধরা হয় সেসব আত্মীয়। এদের সহিত আত্মীক প্রেমের সম্পর্কও একটা উৎকৃষ্টতম প্রেম। যা দ্বারা একটা বৃহৎ ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি হয়।
দশম উৎকৃষ্টতম প্রেম বা ভালবাসা হলো, দশম স্তরের প্রেম – এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের আত্মার ও ধর্মীয় প্রেম। হাদীসে আছে – “প্রত্যেক মুসলমান একে অপরের ভাই’’। তাই এক মুসলমানের সাথে অন্য মুসলমানের আত্মীক ও ধর্মীয় প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন একটা উৎকৃষ্ট ও আবশ্যকীয় বিষয়। যা দ্বারা মুসলমানদের মধ্যে একাত্মতার সৃষ্টি হয়।
একাদশ উৎকৃষ্টতম প্রেম বা ভালবাসা হলো, একাদশ স্তরের প্রেম – উস্তাদ-সাগরেদের মধ্যকার আত্মার ও শিক্ষার প্রেম। মুসলমানের সহিত মুসলমানের প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের পর উৎকৃষ্টতম প্রেম হলো – উস্তাদ ও সাগরেদের মধ্যে গড়ে উঠা আত্মীক ও সাধারণ জ্ঞান আদান-প্রদানের প্রেম। যা দ্বারা দু’টি মানুষের জ্ঞান আহরনে বিশেষ ভুমিকা রাখে।
দ্বাদশ উৎকৃষ্টতম প্রেম বা ভালবাসা হলো, দ্বাদশ স্তরের প্রেম – পীর-মুরীদের মধ্যকার আত্মার ও শিক্ষার প্রেম। উস্তাদ-সাগরেদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের পর উৎকৃষ্টতম প্রেম হলো – পীর-মুরীদের মধ্যকার আত্মার ও ইহলৌকিক এবং আধ্যাত্বিক শিক্ষার লক্ষ্যে একে অপরের ঘনিষ্ট সহচর হিসাবে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন। যা দ্বারা মুরিদ পীরের কাছ থেকে জাগতিক ও আধ্যাত্বিক জ্ঞান অর্জন করে একজন খাঁটি মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
ত্রয়োদশ উৎকৃষ্টতম প্রেম বা ভালবাসা হলো, ত্রয়োদশ স্তরের প্রেম – নিজ ধর্ম ব্যতিত অন্য ধর্মের মানুষদের প্রতি মানব প্রেম। পীর-মুরীদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের পর উৎকৃষ্টতম প্রেম হলো – মানব প্রেম বা মানুষের প্রতি মানুষের মানবতা সুলভ আচরণ। যদিও জগতের সকল মানুষ এ প্রেমে অন্তর্ভুক্ত। জগতের সকল মানুষকে এই প্রেমের চোখে দেখতে হবে যে , তারাও আল্লাহর প্রিয় সৃষ্টি। তাঁদের যখন আল্লাহ পাক পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রেখেছেন , প্রতিবেশী হিসাবে তাদের সুখ-দুঃখ-নিরাপত্তার বিধানে তাদের দিকে মানুষ হিসাবে সম্মানের দৃষ্টি দিতে হবে। আল্লাহর নির্দেশীত পথে চলার জন্য তাদেরকে আহ্বান করতে হবে। যদি তারা আল্লাহর নির্দেশীত পথে যেতে রাজি না হয়, তবে তাদেরকে জোর করা যাবেনা। সে জন্য তাদের উপর জুলুম করা যাবেনা। তাদের সাথে প্রতিবেশী সুলভ আচরণ করতে হবে।
অবশ্য তারা যদি আল্লাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাবে যুদ্ধ ঘোষনা করে , তবে মুসলমানদের উচিত হবে তাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া। আল্লাহর জন্যই তখন মুসলমানদের জন্য জরুরী হয়ে যাবে, এসব অমুসলীমদের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার।
উপোক্ত তেরোটি স্তরের প্রেম ছাড়া অন্য কোন প্রেম মানুষের জন্য বৈধ নয়।
খ) দ্বিতীয়তঃ কোন প্রাণী বা বস্তুর প্রতি প্রেম বা ভালবাসা ঃ- মানুষ ব্যতিত কোন প্রাণী বা বস্তুর সাথে প্রেম বা ভালবাসা স্থাপন একটা উৎকৃষ্টতম প্রেম বলে বিবেচিত হবে। যেমন – কেউ তার ঘোড়া কিংবা ঘড়িকে ভালবাসে।
প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য স্মরণ রাখা একান্ত কর্তব্য যে, উপরোক্ত ভালবাসার পাত্র সমষ্টির সবগুলোর সাথেই যেখানে যেভাবে বলা হয়েছে সে নিয়মানুষারে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন বৈধ। সমাজে গ্রহণীয়। তাই উপরোক্ত নিয়ানুষারে যার যত ইচ্ছা প্রেম করুন।
কিন্তু মনে রাখতে হবে – কোন মুসলীম মেয়ের সাথে যেমন কোন অমুসলীম ছেলের বিয়ে নামের দৈহিক মেলামেশার সামাজিক বৈধ স্বীকৃতি প্রেমের বন্ধন নিষিদ্ধ, তেমনি কোন মুসলীম ছেলের সাথে কোন অমুসলীম মেয়ের বিয়ে নামের দৈহিক মেলামেশার সামাজিক বৈধ স্বীকৃতি প্রেমের বন্ধন নিষিদ্ধ। আর মুসলীম হোক বা অমুসলীম কোন অবিবাহিত ছেলের সহিত কোন অবিবাহিত মেয়ের যেমন বিয়ের বন্ধন ব্যতিত দৈহিক মেলামেশার প্রেমের বন্ধন নিষিদ্ধ , তেমনি মুসলীম হোক বা অমুসলীম কোন অবিবাহিত মেয়ের সহিত কোন অবিবাহিত ছেলের বিয়ের বন্ধন ব্যতিত দৈহিক মেলামেশার প্রেমের বন্ধন নিষিদ্ধ।
বিশেষ করে প্রেমের নামে মুসলীম অবিবাহিত, বেগানা নর-নারীর মধ্যে ঘনিষ্টভাবে চলাফেরা অবৈধ। কেননা, তা ইসলাম মনোনীত নয়। সমাজ নীতিতেও তা পরিত্যাজ্য। আর এ অবৈধ প্রেম প্রতিরোধ কল্পেই ইসলামে পর্দার বিধান প্রবর্তীত হয়েছে। সমাজ নিয়মে বালক-বালিকা ও নর-নারীকে দেখা সাক্ষাতে বিধি-বিধান আরোপ করা হয়েছে। যাতে এভাবে তাদের চলাফেরাকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বাধা প্রদান করা হয়েছে।
নর-নারী উভয়ের জন্যই সততা, সতীত্ব এবং ব্যক্তিত্ব সংরক্ষনের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনা হচ্ছে – পর্দা ব্যবস্থা। নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা দমন এবং নর-নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে আল্লাহ পাক বলেন –“মু’মীনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে। তাদের যৌনাঙ্গ হেফাজত করে’’।
স্বয়ং স্রষ্টাই মানবজাতীকে নর ও নারী দু’টি শ্রেনীতে বিভক্ত করে সৃজন করে একের প্রতি অপরের আকর্ষণ দিয়েছেন অবিচ্ছেদ্যভাবে। এ থেকে বাহ্যতঃ মুক্তিলাভের কোন ব্যবস্থা নেই, চাই এ দুই শ্রেণী একত্রে থাকুক কিংবা পৃথকভাবে বসবাস করুক। নরের প্রতি নারীর এবং নারীর প্রতি নরের এ আগ্রহ ও আকর্ষণ চিরন্তন। নর-নারী মানবজাতীর অভিন্ন স্বত্তা হলেও তারা পৃথক স্বতন্ত্র শ্রেণীর। এদের মধ্যে সহজাত তীব্র আকর্ষণ বিদ্যমান। আর সে কারণে রয়েছে অঘটনের নানা উপছায়া উপস্থিত। এ আকর্ষণজনিত দূর্ঘটনা থেকে নর-নারীকে রক্ষা কল্পে পর্দা প্রথার অপরিহার্য। আর এ পর্দা দু’ভাবে পালনীয়। যথা :
১) ভিতরের পর্দা বা মনের পর্দা :- নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই এ পর্দা অপরিহার্য। এটা মানব মনের জন্য একটা আবরণ বিশেষ। এ পর্দায় নারীর মনে চেতনা থাকবে যে, সে কোন পরপুরুষের দৃষ্টি সীমানায় যাবেনা। ভিন্ন পুরুষের খেয়াল তার মনে জাগাবেনা। তার ইজ্জত আবরু ভিন্ন পুরুষ থেকে রক্ষা করতে সচেষ্ঠ থাকবে। আর এ পর্দায় নরের মনে চেতনা থাকবে যে, সে কোন পরনারীর দিকে চোখ তুলে তাকাবেনা। কোন পরনারীকে নিয়ে মনে কোনরূপ জল্পনা-কল্পনা করবেনা। কোন পরনারীর দিকে দৃষ্টি পড়লে সাথে সাথে তার দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিবে।
২) বাহিরের পর্দা বা হিজাব :- বিশেষতঃ এ পর্দা নারীকেন্দ্রীক। এ পর্দার বিধান হচ্ছে – নারী কখনো পর্দাহীনভাবে ( চেহারা, বুক, পেঠ, পীঠ, চতর প্রভৃতি খোলা রেখে) পুরুষের সামনে যাবেনা। প্রয়োজন ব্যতিরেকে ঘর থেকে বের হবেনা। অন্তঃপরে বসবাস করবে। পুরুষদের সহিত পর্দাহীনভাবে অফিস করবেনা। পারঙ্গম অবস্থায় বাজার-মার্কেটে যাবেনা। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-ভার্সিটি-যানবাহনে পুরুষের পাশাপাশি বসবেনা। জরুরী প্রয়োজনে বাড়ির বাহিরে যেতে হাত-পা সহ আপাদমস্তক বোরকা বা স্পষ্ঠমান অঙ্গ ঢাকা যায় এমন কাপড় দ্বারা আবৃত করবে। কোন পরপুরুষের সাথে জরুরী প্রয়োজনে কথা বলতে পর্দার আড়াল থেকে কর্কশ ভাষায় কথা বলবে ইত্যাদি।
পর্দা ভিতর ও বাহিরের দু’টোই রক্ষা করে চলতে হবে। এ দু’দিকের পর্দাই হলো প্রকৃত পর্দা। যে সমাজে এ পর্দা প্রথার প্রচলন হবে, সে সমাজে কোন ব্যভিচার থাকবেনা, অন্যায় – অপকর্ম থাকবেনা। নারীগণ নির্যাতিত হবেনা। পর্দা রক্ষা করা নর-নারী উভয়েরই প্রয়োজন।
পর্দা প্রথার কারণেই নারীরা দেয়ালের ভিতরে থাকবে। তাই তারা ঘরের ভিতরে থাকার উপযোগী। তাদের কর্মক্ষেত্র হচ্ছে - ঘরের আভ্যন্তরীন জগত। তারা ঘরের ভিতরে থেকে একদিকে করবে ঘরের যাবতীয় ব্যবস্থাপনা। অন্যদিকে করবে গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব-লালন-ভবিষ্যতের উপযুক্ত নাগরীক গড়ে তোলার কাজ। তাই রাসূল(সাঃ) বলেন- “নারী-স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের পরিচালিকা, রক্ষণাবেক্ষনকারিনী ও কর্ত্রী”।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন