এমনই এক অবস্থার সম্মুখীন আজকের বিশ্ব মুসলীম। তাদের কোনোব্যাঙ এর মত রূপ দেখে অজগর রূপী সাম্রাজবাদী আমেরীকা তাদের উপর লুলোপ দৃষ্টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করছে সমগ্র মুসলীম জনপদে। শিকার হচ্ছে তারা আমেরীকার উলঙ্গ থাবার। করতলগত হচ্ছে তারা সামাজ্যবাদী আমেরীকার। পরিণত হচ্ছে তারা সেই আমেরীকার ভোগ বিলাসের সামগ্রী রূপে।
এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ধর্ম যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। ইসলাম বিরোধী নানা ধরণের আয়োজনের মাধ্যমে মুসলমানদের উপর অত্যাচারের খড়ক দিয়ে মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসে হানছে আঘাত। বিভিন্ন অজুহাত খাড়া করে সাম্রাজ্য বিস্তারে মুসলীম জনপদে দিচ্ছে হানা। সমগ্র মুসলীম জনপদের জনতাদের করছে করতলগত। পরিণত করছে তাদের শিকার রূপে।
এমনই এক ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত হবার একটা বিশেষ আয়োজন - মুসলমানদের জন্য অবমাননাকর ও নিন্দনীয় বিষয়কে তুলে ধরা এবং হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) চরিত্রের ওপর কালিমা লেপন করার চরম দৃষ্টতার প্রদর্শন ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস বা মুসলমানদের অজ্ঞতা’ নামের ছবি বা চলচ্চিত্র নির্মাণ। এই ছবিতে ইসলামকে 'ক্যান্সার' হিসেবে চিত্রিত করা হয়। বিদ্রূপ , হেয় এবং চরিত্রের ওপর কালিমা লেপন করা হয় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর।
নবীর কোনো ধরনের চিত্র অঙ্কন বা তাঁর চেহারার উপস্থাপন মুসলমানদের কাছে নিষিদ্ধ। অথচ মুসলমানদের বিশ্বাসে আঘাত দিতে চলচ্চিত্রটিতে মহানবী (সা.)-কে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। এই চলচ্চিত্রে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম মুবারকে এক ব্যক্তিকে দেখানো হয়েছে, যাকে প্রতারক, নারী লোভী, সমকামী এবং যৌন হয়রানিকারী হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। (নাঊযুবিল্লাহ!)।
এক মার্কিন ইহুদির অত্যন্ত কাঁচা হাতে তৈরি এ চলচ্চিত্রটির একটি বিজ্ঞাপণ ২০১২ সালের জুলাই মাসে ইউটিউবে প্রথম প্রচারিত হয়। বিজ্ঞাপনটি শুরু হয়েছে মিসরীয় পটভূমিতে। প্রথম দৃশ্যেই দেখানো হয়, একদল মিসরীয় মুসলমান খ্রিষ্টানদের বাড়িঘর লুটপাট করছে এবং আগুনে জ্বালিয়ে দিচ্ছে, অথচ মিসরের নিরাপত্তা বাহিনী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। এরপর হঠাৎ করে মহানবী (সাঃ) কে ব্যঙ্গ করে তৈরি এক কল্পচিত্র শুরু হয়। এর বিভিন্ন দৃশ্যে মুসলমানদের জন্য অবমাননাকর বিষয় প্রচার করা হয়। আর এটি মুসলমানদের নজরে আসে এ সেপ্টেম্বরে। দুই ঘন্টার ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ নামের ইসলাম অবমাননাকর এ চলচ্চিত্রটি মার্কিন নাগরিক কুচক্রী ইহুদী স্যাম বেসিল ২০১১ সালে পরিচালনা ও প্রযোজনা করে।
ইউটিউবে যে ১৩ মিনিটের বিজ্ঞাপন চিত্রটি প্রচারিত হয়, তাতে দেখা যায়, জর্জ ধ্বনির জায়গায় ইসলামের নবীর নাম ব্যবহূত হয়েছে। এটি প্রথমবার এগার হাজার দর্শক দেখে। এর প্রচার আরও রগরগে করতে আরবীতে অনুবাদ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া হয়। এতে বিষয়টি আরো ৭০ হাজার দর্শকের নজরে আসে। স্বঘোষিত ইসলাম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত ইসরাইলি বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক স্যাম ভেসিলি (৫২) নামের এক ব্যক্তি এই বিজ্ঞাপন চিত্রটি ইউটিউবে তুলে দেয়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ওয়েবসাইটে বলা হয়, স্যাম একজন মার্কিন ইহুদি ইসরায়েলি আমেরিকান । ক্যালিফোর্নিয়ায় তাঁর ভবন নির্মাণের ব্যবসা। ওয়াল স্ট্রিটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্যাম দাবি করে, চলচ্চিত্রটি নির্মাণের জন্য সে ১০০ জন ইহুদি দাতার কাছ থেকে ৫০ লাখ ডলার পেয়েছে। ৫০ লাখ ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই ছবিতে অর্থায়ন করে এক প্রবাসী মিসরীয় খ্রিস্টান। এতে ইহুদি দাতাদেরও সহায়তা রয়েছে।
ইসলামবিদ্বেষী লেখক ও পরিচালক বাসিলের এ ছবিটি এখনো মুক্তি পায়নি। তবে এর অংশবিশেষ ইতিমধ্যেই অনলাইনে ভিডিও দেখার জনপ্রিয় মাধ্যম ইউটিউবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চলচ্চিত্রটির অন্যতম অভিনেত্রী দাবি করেছেন, পরিচালক ও নির্মাতারা তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছে। চলচ্চিত্রটি যে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে নির্মিত, তা তাঁকে একবারের জন্যও বলা হয়নি। ক্যালিফোর্নিয়ার বেকারসফিল্ডের অধিবাসী সিন্ডি লি গার্সিয়া চলচ্চিত্রটির একটি ছোট মুহূর্তে অভিনয় করেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে গার্সিয়া বলেন, ‘ওটা আমার কাছে ছিল একেবারে অসার, যা ধারণ করা হচ্ছিল তা ছিল খুবই অগোছালো। যারা কাজ করছিল, তাদের আচরণও ছিল সন্দেহজনক।’
সাক্ষাত্কারে গার্সিয়া আরও বলেন, ‘গত বছর গ্রীষ্মে লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি গির্জার ভেতরে চলচ্চিত্রটি ধারণ করা হয়। সে সময় অভিনেতারা একটি সবুজ পর্দার সামনে অভিনয় করেন, যাতে পরে পটভূমিতে ভিন্ন কিছু যুক্ত করা যায়।‘ তিনি আরও বলেন, ‘শুটিংয়ে প্রায় ৫০ জন অভিনেতা-অভিনেত্রী অংশ নিয়েছিলেন। নির্মাতারা তাঁদের বলেছিল, ডেজার্ট ওয়্যারিয়র নামের একটি ঐতিহাসিক আরব মরু অভিযানকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্রটি তৈরি হচ্ছে’। গার্সিয়া বলেন, দুই হাজার বছর আগের সামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে তাঁদের অভিনয় করতে বলা হয়েছিল। পরিচালক বলেছিল, ‘ধরে নাও, এখন এটা যিশুর সময়।’
এটি নিয়েই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভ। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ(সঃ)কে কটাক্ষ করে আমেরিকায় এ চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ চলছে। মঙ্গলবার রাতে মিশরের কায়রো ও লিবিয়ার বেনগাজিতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধরা। বেনগাজির হামলায় লিবিয়ায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার স্টিভেনসসহ চারজন নিহত হয়।
এ বিক্ষোভের পর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও বিক্ষোভ হয়েছে। তিউনিসিয়া, ফিলিস্তিন, মরক্কো ও সুদানে হাজার হাজার মানুষ মার্কিন বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। ফিলিস্তিনের গাজায় বিক্ষোভকারীরা জাতিসংঘ দপ্তরের সামনে জড়ো হয়ে মার্কিন পতাকায় আগুন দিয়েছে। মরক্কোর রাজধানী রাবাতে মার্কিন দূতাবাসের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।
ইয়েমেনের রাজধানী সানায় মার্কিন দূতাবাসে হামলা হয়েছে। রাজধানী সানায় বিক্ষোভকারী জনতাকে ঠেকানোর জন্য পুলিশ এলোপাথারি গুলি চালিয়েছে। এতে অন্তত এক বিক্ষোভকারী নিহত ও অপর অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। গুলির পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাস এবং পানি কামানও ব্যবহার করে পুলিশ। কিন্তু সহিংস আচরণ করেও তাদেরকে শেষ পর্যন্ত ঠেকানো যায়নি । বিক্ষুব্ধ লোকজন দূতাবাস চত্বরে ঢুকে পড়ে এবং সেখানে পার্ক করা বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ইরাক এবং ইরানেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। আরো কয়েকটি দেশে বিক্ষোভ করার ডাক দিয়েছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন। আমেরিকার এক ইহুদিবাদী বিশ্বনবী(স.)এর অবমাননা করে স্বল্প দৈর্ঘ্য সিনেমা তৈরি করেছে বলে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর গোটা মুসলিম বিশ্ব প্রতিবাদমুখর। একই কারণে ও লিবিয়ার পাকিস্তান মার্কিন দূতাবাসে হামলার আশঙ্কায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করছে। বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এবং কনস্যুলেটে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে নির্মাণ করা আমেরিকান চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে ভারত সরকার। চলচ্চিত্রটিকে ঘিরে দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধে সরকার এমন চিন্তাভাবনা করছে। চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ করতে ভারত সরকারের কাছে সংখ্যালঘু মুসলিমরা আবেদনও করেছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কোনোব্যাংঙের রূপধারণকারী মুসলীমরা এবার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বিশ্বমুসলিম কে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলে তাদের সেই কলঙ্কিত অধ্যায়ের সমাধি রচনা করবে। দেখিয়ে দিবে তারা মুসলীমদের ক্ষমতা। প্রদর্শন করবে ইসলামের অলৌকিক সেই মহাশক্তি। এ ধর্ম যুদ্ধে মুসলীমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমস্বরে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বণিতে বিশ্বকে করবে প্রকম্পিত। বাতিল শক্তিকে কাবু করে ঐশী শক্তি দিয়ে আল্লাহর অস্থিত্ব করবে সমুজ্জ্বল। ২০০ কোটি মুসলীম তাদের জনপদকে প্রসারিত করে দেখাবে সাম্রাজ্যবাদী আমেরীকা তাদেরই করতলগত। সাম্রাজ্যবাদী আমেরীকাকে অস্থিত্বহীন করে দেখিয়ে দেবে তারা আল্লাহর অস্থিত্ব।
সমগ্র বিশ্বের প্রায় ২০০কোটি মুসলীমের অন্তরে গর্জে উঠা আজকের এই বিক্ষুব্ধ ধ্বণি আর উত্থাল তাদের ঈমানী জোশ দেখে বলতে হয় - সেইদিন আর বেশী দূরে নয়, যেইদিন সমগ্র বিশ্বজনপদ হবে মুসলমানদের করতলগত - ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ মুসলমানদের সেই ঐশী ক্ষমতা দানে ঈমানের ভিত্তি মজবুত করে সকল মুসলমানকে বাতিলের মোকাবেলায় আল্লাহর সৈনিক রূপে গড়ে তুলুন। আমীন। (তথ্যসুত্র ঃ ইন্টারনেট)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন