আশাকরি সবাই ভাল আছেন । আজ সৌদিবাসী প্রবাসীদের সাপ্তাহিক ছুটির দিন । যদিও খুব কম লোকই আছেন যারা এই সাপ্তাহিক ছুটির দিনটা উপভোগ করতে পারেন । এই ছুটি বন্ডেড বা স্পন্সরের কাছে থাকা প্রবাসীদের বেশীর ভাগই উপভোগ করতে পারেননা । তবে যাঁরা স্পন্সর থেকে বের হয়ে কাজ করছেন তাঁরা বেশীর ভাগই এই ছুটি উপভোগ করতে পারছেন । যাঁরা আজকের এই সাপ্তাহিক ছুটি উপভোগ করবেন তাঁদের জন্য আজকের দিনটা ঈদের দিনের মতই একটা খুশির দিন ।
পুরো সপ্তাহ ব্যাপী যান্ত্রিক জীবনের কর্মমাঝে ফাঁক পেয়ে আজকের দিনটা প্রবাসীরা মুক্ত বাতাসে নির্মল প্রকৃতির অক্সিজেন গ্রহণ করবেন । আবার এক সপ্তাহের জন্য ধারণ করবেন শারিরীক কল্যানে প্রাকৃতিক অক্সিজেন । সবার সাথে মিলিত হবেন । প্রবাসী জীবনের সুখ দুঃখের অনুভুতি বিনিময় করবেন একে অপরের সাথে । বিনোদনের মাঝে ডুবে গিয়ে এক সপ্তাহের জন্য পূর্ণ উদ্যোমে কর্মে মেতে উঠার লক্ষ্যে নতুন ভাবে শারিরীক শক্তি সঞ্চয় করবেন । প্রবাস জীবনের একগুয়েমী মনোভাব পরিহার করে মনকে ফ্রেস করে নিবেন । তাই প্রবাসীদের জন্য তাঁদের শারিরীক কল্যানে আজকের দিনটা তথা ছুটির দিনগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
প্রবাসীদের যান্ত্রিক জীবনের মাঝে লাগামহীন কর্মসময় নিয়ে আসে তাঁদের জীবনের প্রতি ঘৃণা । বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তাঁরা শক্তি হারিয়ে ফেলেন । জীবনকে এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিন । জীবনকে ভাবতে থাকেন মূল্যহীন । ফলে অনেক প্রবাসীদের দেখা যায় দেউলিয়া হয়ে যেতে , সংসারবিমুখ হয়ে যেতে , তীলে তীলে জীবনকে ধ্বংস করতে । তাঁদের এ ধরণের জীবন বিমুখতা কেন কেউ জানতে চায়না । অন্তত এই মানবতাহীন পৃথিবীতে এই সব প্রবাসীদের নিয়ে কেউ ভাবতে চায়না ।
আন্তর্জাতিক শ্রম আইন নামে কোন আইন কাগজে কলমে থাকলেও কোন প্রবাসীদের জন্য এই আইন প্রয়োগ করা হয়না । ফলে প্রবাসীরা তাঁদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক না পেয়ে ও বিবিধ সুযোগ সুবিধা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে বেআইনী কর্মে জড়িয়ে যেতে বাধ্য হয় । পরিণতিতে প্রবাসীদের গ্রহণ করতে হয় বিভিন্ন প্রকার সাজা , দিতে হয় প্রবাসে জীবন বলি । এ জন্য দায়ী কে ?
সৌদি আরবে ৮ মার্ডার তথা আটজন বাংলাদেশীর শিরচ্ছেদ কেন হলো ? এ ঘটনার প্রকৃত তথ্য খুঁজতে গেলে বেরিয়ে আসবে সৌদি আরব কর্তৃক আন্তর্জাতিক শ্রম আইন লঙ্গনের মুল বিষয় । যদি সৌদি আরব আন্তর্জাতিক শ্রম আইন শ্রমিকদের উপর বলবত রাখতো তবে উক্ত বাংলাদেশী আটজনের শিরচ্ছেদ করে মানবাধিকার আইন লঙ্গন করতঃ বিশ্ববাসীর ঘৃণার তীর গ্রহণ করতে হতোনা । এভাবে কোন বাংলাদেশী তথা কোন প্রবাসীকে সৌদি আরবের উম্মুক্ত ময়দানে শীর কর্তনের মধ্য দিয়ে জীবনবলি দিতে হতোনা । আজকে সৌদি আরবে প্রবাসীরা যত প্রকার অপরাধই করুকনা কেন , তার মূল কারণ সৌদি আরব কর্তৃক আন্তর্জাতিক শ্রম আইন ও মানবাধিকার আইন লঙ্গন । যদি এ দুটি আইন সৌদি আরবে যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করাহয় , তবে সৌদি আরবে কোন প্রবাসী কর্তৃক কোন প্রকার অপরাধ সংঘটিত হবেনা বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস ।
আমরা প্রবাসীদের অপরাধগুলোই বড় করে দেখি । কিন্তু প্রবাসীরা অপরাধগুলো কেন করছে সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিইনা । ফলে প্রবাসীদের অপরাধগুলোই দৃষ্টিগোচর হয় , অপরাধের মুল কারণ গুলো আমাদের অজানাই থেকে যায় । আমার দৃষ্টিতে যারা প্রবাসে অপরাধ করছে এটা প্রবাসীদের একটা আইনী লড়াই আন্তর্জাতিক শ্রম আইন ও মানবাধিকার আইন লঙ্গনের বিরুদ্ধে। অন্তঃত এটাই এটাই আমার ধারণা । কারণ , যারাই অপরাধ করছে তারা তাদের প্রকৃত পারিশ্রমিক , বিবিধ সুযোগ - সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েই করছে । তারা প্রকৃত পারিশ্রমিক ও সুযোগ - সুবিধগুলো পেলে কখনোই অপরধ করতে ইচ্ছুক হতোনা । আমরাই সন্ত্রাসী বানাই , লালন করি আবার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করি - এমনই চলছে প্রবাসীদের বেলায় । প্রবাসীদের অপরাধের মুলে স্ব-স্ব দেশের শ্রমিক আইনের অকার্জকারিতা । আন্তর্জাতিক শ্রম আইন ও মানবাধিকার আইন লঙ্গন ।
তাই যেসব দেশে বিদেশী শ্রমিক কাজ করছে , সেসব দেশে আন্তর্জাতিক শ্রম আইন ও মানবাধিকার আইন যথাযতভাবে প্রয়োগ করা জরুরী , অন্যথায় যদি সেসব দেশে বিদেশী শ্রমিক কর্তৃক কোন প্রকার অপরাধ সংঘটিত হয় , তবে সে অপরধের জন্য কোন বিদেশী শ্রমিক দায়ী হবেনা , দায়ী হবে সে সব দেশ ও দেশের অকার্জকর আইন ।
আমাদের দেশের যে আটজন প্রবাসী সৌদি আরবে বিভিন্ন অপরাধের জন্য নিজেদের জীবন বলি দিয়েছেন , তাঁরা সেসব অপরাধের জন্য দায়ী নয় , দায়ী সে দেশের আন্তর্জাতিক শ্রম আইন । তাঁরা তাঁদের জীবনদানের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়ে গেছেন একজন বিদেশী শ্রমিকদের উপর সে দেশের কি করনীয় । অথচ তারা তা না করে মানবাধিকার আইন লঙ্গন নিয়েই ব্যস্ত ।
সৌদি আরবে একজন বিদেশী শ্রমিকের বেতন যদি হয় বর্তমানে ৮০০ শত রিয়াল , আর তার খাওয়া খরচ বর্তমানে ৫০০ রিয়াল এবং আনুসাঙ্গিক খরচ যদি হয় ৩০০ রিয়াল , এবং তাকে যদি অন্যত্র কোন কাজ করতে দো না হয় , তবে সে কি করবে ? কেউ কি ভাবছেন ? এমতাবস্থায় সে যদি দেশে পারিবারিক ভরণপোষনের জন্য সৌদি আরবে চুরি করতে বাধ্য হয় , কাউকে খুন করে অর্থ ছিনিয়ে নেয় , কোন নারীর আর্থিক প্রলোভনে পড়ে অনৈতিক কর্মে জড়িয়ে যায় - তবে তার জন্য দায়ী কে ? ঐ প্রবাসী , না ঐ প্রবাসীর নিজ দেশের সরকার , নাকি ঐ প্রবাসীর নিয়োগকর্তা , নাকি ঐ প্রবাসী যে দেশে কর্মী হয়ে এসেছে সে দেশের সরকার ? এ প্রশ্নগুলোর যথাযত উত্তর কেউ কি দিতে পারবেন ? যদি দিতে না পারেন তবে দয়া করে কোন প্রবাসীকে অপরাধী ভাববেননা । কারণ , তারা অপরাধী নয় , তাদেরকে অপরাধ করতে বাধ্য করা হয় ।
প্রবাসী বাংলাদেশ , মদিনা , সৌদি আরব থেকে বিশেষ ফেইসবুক কলাম আজ এ পর্যন্তই । সবাই ভালো থাকুন , প্রবাসী সকল বন্ধুদের জীবন নিরাপদ , সুন্দর , সুশীল ও সুস্থ থাক - এ কামনায় সুপ্রভাত প্রবাসী বাংলাদেশ ।
MOHAMMED ZAKARIA SHAHNAGARI
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন