আমার লেখালেখির অন্তরালে ...
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
-----------------------------
“ শাহানাজ নামের মেয়েটি ’’ কবিতাটা লেখার পরদিন দুপুরে যখন আমি রেষ্ট নিতে যাব , তখন জানালায় টোকা পড়ল । দেখলাম শাহানাজ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে । সে জানালা খুলতে বললো ইশারায় ।
জানালা খুলে জিজ্ঞেস করলাম -
“ কি হয়েছে ? ’’
- “ কিছু হয় নাই , হবে । আজ আছরের পর একখানে আমার সাথে যেতে হবে ’’।
“ কোথায় ? ’’
- “ পার্কে ’’ !
আমি আশ্চর্যাম্বিত হয়ে গেলাম । বললাম -
“ কি বললে ? আবার বলো , আমি শুনি নাই ’’ ?
- “ পার্কে বেড়াতে যাবো দু’জন ’’।
“ লাজবতীর লজ্জা ভাঙ্গলো নাকি ? হঠাৎ আমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবার মানে কি ’’ ?
- “ আমাকে নিয়ে কবিতা লেখার শাস্তি ’’ !
“ মাথা খারাপ ! আমি তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাব ? অন্ততঃ তোমার মতো দস্যি মেয়ের সাথে মোটেই না ’’।
- “ কি ! আমি দস্যি মেয়ে ? দস্যিপনার কি দেখিয়েছি আমি ’’ ?
রাগ প্রকাশ হতে থাকলো তার চোখে মুখে । যেন সে ঝগড়া শুরু করেছে আমার সাথে । এই প্রথম তার ভিন্ন একটা চেহারা দেখলাম । সদা হাস্যমুখে যেন নেমে এলো মেঘের ঘনঘটা । এখনই শুরু হবে ঝড়ের তান্ডবলীলা । বললাম -
“ তুমি যা করছো , দস্যিপনা ছাড়া তা আর কি হতে পারে ? শাস্তি দেয়ার জন্য আমাকে পার্কে নিয়ে যাওয়া মানেই তো সবার সামনে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে আমার পর অত্যাচার - সেটা তোমার দস্যিপনা নয় ’’ ?
এবার যেন মেঘটা কেটে গেলো তার মুখ থেকে । বললো সে ,
- “ এ দস্যিপনা না দেখালে যে তোমাকে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবেনা মশাই । আমি আর কিছু শুনতে চাইনা , আছরের পর রেডী থাকবে ’’ ।
এবার মনে মনে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম । এই সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না । তাই বললাম -
“ যেতে পারি এক শর্তে ’’ !
- “ কি শর্ত ’’ ?
“ আমার যতক্ষণ থাকতে ইচ্ছা করবে থাকবো , তুমি চলে আসার জন্য বলতে পারবেনা ’’।
- সেটা হবেনা , মাগরীবের আগেই ঘরে আসতে হবে ।
মনে মনে আমিও তাই চাইছি । কিন্তু সেটা বুঝতে না দিয়ে তাকে নাচানোর উদ্দেশ্যে বললাম -
“ সেটা হবেনা , শাস্তি যখন পেতেই হবে , দেখি তুমি কতক্ষণ শাস্তি দিতে পারো , আর আমি কতক্ষণ শাস্তি ভোগ করতে পারি ? তাই , তোমার ইচ্ছাতেই যখন আমি যাচ্ছি , আমার ইচ্ছাতেই তোমার আসতে হবে , রাজি ’’ ? - আমার শাস্তি দেয়া মাগরিবের আগেই হয়ে যাবে । এর বেশী শাস্তি দিতে হবে না ’’।
“ তার মানে - তুমি ভীতু , সন্ধ্যার পরে আমার সাথে থাকতে তোমার ভয় , তাই না ’’ ? - “ ভয় লাগবে কেন ? ভয় লাগলে কি আর তোমার সাথে যাচ্ছি ? মাগরিবের আগে বাসায় না আসলে সবাই চিন্তা করবে তাই ’’।
এবার আমি তার কথায় রাজি হলাম । বললাম -
“ ঠিক আছে , তুমি রেডী হয়ে থেকো । আমি যখন তোমাকে ঘরের দরজায় দেখবো , আমি বের হবো । তুমি আমার আগেই মেইন রোডে গিয়ে দাঁড়াবে । পারলে রিক্সা নিয়ে বসে থাকবে রিক্সায় ’’।
কথামত আছরের পর আমরা বের হয়ে গেলাম । রিক্সায় গুলশান দুই নাম্বার আজাদ মসজিদের সামনের পার্কে এসে গেলাম । তখনও এ পার্কটি বর্তমানের ওয়ান্ডারল্যান্ডের রুপে পরিণত হয়নি । সেখানে ছিলো বসার জন্য কিছু বেঞ্চি , শিশুদের খেলনার জন্য কয়েকটা উপকরণ আর কিছু ফুলগাছ । সমগ্র পার্কটা ছিলো উম্মুক্ত একটা ফুল বাগান । রমনা পার্কের মতো ঘুরাফিরা করে গায়ে প্রকৃতির নির্মল হাওয়া লাগানোর স্থান । দুই টাকায় টিকেটের ব্যবস্থা ছিলো । যা হোক , গুলশান পার্কে ডুকে আমরা কিছুক্ষণ হাঁহাঁটি করলাম । রঙ্গীন সব ফুলের সাহচর্য নিলাম । লাগালাম গায়ে প্রকৃতির নির্মল হাওয়া । তারপর একটা বেঞ্চিতে বসে দুজনের কথোপকথন শুরু করলাম । এই প্রথম দু’জন দু’জনার কাছে আসলাম । বললাম -
“ বলো এবার আমার কি শাস্তি ’’ ?
- “ শাস্তি তো হয়েই গেছে । তোমার সাথে এভাবে এখানে এসে কিছুক্ষণ বেড়ানোই ছিলো তোমার শাস্তি । সে যাক , আসলে আমি জানতামনা তুমি এতো সুন্দর লিখতে পারো । তাই বলেছিলাম - তুমি কি লিখবে সেটা আমি জানি । কিন্তু তোমার লেখাটি যখন দেখলাম , আমি মন হারিয়ে ফেললাম তোমার তোমাতে । অনেক সুন্দর লাগলো তোমার লেখা । জানো , তোমার কবিতাটা আজ আমার বান্ধবীদের দেখিয়েছি । তারাও বলেছে - লেখাটি খুব সুন্দর । তারা নাকি তোমাকে দেখতে আসবে ’’।
“ বাহ্ ! তবে তো আমি লেখক হয়ে গেলাম । যদি ওরা আমাকে দেখতে আসে তবে তো একটা কলম লাগবে তাদেরকে অটোগ্রাফ দেবার জন্য । কলমটা কিনে রেখো ’’ ।
- “ চমৎকার ! লেখক তুমি , বিখ্যাত হলে তুমি , দেখতে আসবে তোমাকে , জয়গান গাইতে আসবে তোমার , অটোগ্রাফ দিবে তুমি , তোমার জন্য আমি কেন কলম কিনব ? তাতে আমার কি লাভ ’’ ?
“ তোমার কি লাভ মানে ? তোমার বান্ধবীরা যেখানে খুশি , সেখানেই তোমার গৌরব । এটা তোমার লাভ নয় ? সুতাং কলমটা তোমাকেই কিনতে হবে ’’ ।
- “ তুমি তো খুবই কৃপণ দেখছি , একটা কলম কিনতেও তোমার গায়ে লাগছে ’’ !
“ এখানে কৃপণতার কি দেখলে ? তোমার বান্ধবীদের খুশি করলে আমার কি লাভ ’’ ?
- “ ঠিক আছে , বুঝতে পারছি তুমি তোমার কলম ব্যবহার করতে চাওনা । ওকে , সময় হলে দেখা যাবে । কলমের প্রয়োজন হলে আমিই দেবো ’’ ।
“ এই তো লক্ষ্মী মেয়র মতো কথা । ক্যাচাল কি ভালো লাগে ? সে যাক , দেখি এবার তোমাকে ভালোভাবে । এতোদিন তো দূর থেকে দেখেছি । এবার একটু কাছ থেকে দেখি । একটু দাঁড়াও তো সামনে ’’।
সে দাঁড়াতে চাচ্ছিলোনা , জোর করে উঠিয়ে দিলাম । তার আপাদমস্তক ভালো করে দেখে বললাম -
“ একটা কবিতা লিখলে কেমন হয় এখন ’’ ?
- “ মন্দ হয় না । আমি দেখতে পারবো তোমার মেধার প্রকাশধারা ’’ ।
“ ঠিক আছে । তবে লেখা শুরু করা যাক ’’।
আমার পকেটে সব সময় কাগজ কলম থাকতো । যখন যা মনে আসতো , তখন তা নোট করে রাখাই ছিলো আমার অভ্যাস । সে ধারাবাহিকতায় পকেট থেকে কাগজ কলম বের করে শুরু করে দিলাম লিখা -
তুমি সেই শাহানাজ
--------------------
হে ললনা ! তুমি কি সেই ?
আমার হৃদয়টা তোলপাড় করেছে যেই ?
তাই তো !
নাম তো তোমার শাহানাজ ,
তবে , কেন তুমি কর লাজ ?
তুমি তো মোর হৃদয়ের রাণী ,
তবে , কেন তুমি
করতে চাও মোর জীবন হানি ?
এমন করোনা তুমি আমার সাথে -
এসো , কাছে এসো !
চুপে চুপে এসে বসো !
রাখো তোমারই হাত আমারই হাতে ।
===================================
চলমান > আমার লেখালেখির অন্তরালে ... ( পর্ব - ৭ )
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
===========================================
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন