আমার লেখালেখির অন্তরালে ...
( পর্ব - ৫ )
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
-------------------------------
১৯৮১ সাল । বাবার ৩০ বৎসরের স্মৃতিময় মগবাজারের ভাড়া বাসা ছেড়ে চলে আসি শ-১৭২ ( পরবর্তীতে শ - ৭২ / এ ) , উত্তর বাড্ডায় , নিজেদের বাড়িতে । শুরু হয় নতুন পথ চলা । আমাদের বাড়িটায় ভাড়া দেয়ার জন্য কয়েকটা টিনের ঘর নির্মান করা হয়েছিলো । আর আমাদেরটা ছিল সেমিপাকা । আমাদের টিনের ঘর গুলোতে তখন কয়েকটা পরিবার ভাড়ায় থাকতো । তখনও আমাদের ওখানে ওয়াসার লাইন ছিলোনা । নলকুপ ছিলো পানি প্রাপ্তির মাধ্যম । নলকুপের সাথেই ছিলো আমার প্রিয় কামরাঙ্গার গাছ ।
সময়টা ছিল ১৯৮৫ সাল । আমাদের ভাড়াটিয়া একটা পরিবারের শাহনাজ নামের একটা মেয়েকে ভীষন ভালো লাগতো । তার , হাটা , চলাফেরা , কথা বার্তা মুগ্ধ করতো আমায় । সুন্দর ও ছিলো অশেষ । সব সময় সেজেগুঁজে থাকতো । খুবই চঞ্চল স্বভাবের ছিলো । পাখিদের মতো শুধু উড়াল দিতে চাইতো । স্কুল থেকে আসার পর চড়ুই পাখির মতো খিচির মিছির আওয়াজ দিয়ে দৌড়াদৌড়িই ছিল তার প্রধান কাজ । আর আমার রুমের জানালার কাঁচে টোকা দিয়ে আমাকে বিরক্ত করা যেন তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিলো ।
একদিন যখন সে আমার জানালায় টোকা দিতে আসলো , ধরে ফেললাম তাকে । বললাম - “ তোমার সব দুষ্টামী নিয়ে আমি একটা কবিতা লিখবো এবং সেটা সবাইকে পড়তে দেবো । তারপর দেখবো তোমার দুষ্টামী কোথায় যায় । ’’ সে বললো - “ তুমি যে কি লিখবে সেটা আমি জানি । আমার দুষ্টামী বন্ধ করতে চাচ্ছো তো ? আজ থেকে আরও বেশী করবো । এখন থেকে ঘুমাতেও দিবোনা । ’’ তার কথা শুনে আমার তাকে নিয়ে লেখার ইচ্ছাটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো । শুরু করলাম লেখা এভাবে -
শাহানাজ নামের মেয়েটি
---------------------------
একটা মেয়ে সে - নাম তার শাহানাজ ,
নিত্য সময় করে সে শরীরেতে সাজ ।
আমার দিকে চেয়ে সে দেয় মিস্টি মিস্টি হাসি ,
মাঝে মাঝে দেয় সে ফিফটি ফিফটি কাঁশী ।
আমাকে দেখলেই সে লাল ওড়নায় ঢাকে মুখ ,
চকিত চাহনী ফেলে দৌড়ে গিয়ে দেয় সে দরজায় হুক !
সাথে সাথে পুনর্বার বের হয়ে দেখে সে চারিদিক ,
ফরসা বদনে তার রোদ পড়ে করে ঝিকমিক ।
নলকুপের পানি নিতে যখন সে আসে নলকুপ ধারে ,
সুন্দর সুবচনে সে তার মুখবুলি ছাড়ে ।
মাঝে মাঝে দেয় সে গলা খাঁখারী ,
কামরাঙ্গা পাড়তে গিয়ে দেয় সে গাছ ঝাঁখাড়ী ।
তীর্যক দৃষ্টিতে দেখে দেখে আমায় সে কামরাঙ্গা তোকায় ,
চোখাচোখি হয়ে গেলে নীচ দিকে দেয় সে মাথাটা ঝুঁকায় ।
ভিন্ন দিকে ফিরে আমি যখন আঁড়চোখে তারে দেখি ,
মুখ ভেংচি দিয়ে সে লাগায় মোরে ভেলকি !
তার কান্ডকীর্তন দেখে যখন হই আমি বোকা ,
লুকিয়ে এসে দেয় সে মোর জানালায় টোকা !
**********************************************
কবিতাটি লিখেই তাদের টয়লেটে যাবার রাস্তার ধারের ওয়ালে গাম দিয়ে সেটে দিলাম যাতে তার নজরে পড়ে ।
=================================================
চলমান > আমার লেখালেখির অন্তরালে ... ( পর্ব - ৬ )
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
=================================================
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন