আমার এই দিনপঞ্জী লেখার কোন তারিখ নেই । জীবনের মেমোরীতে যে সকল দৃশ্য ধারণ করা আছে , সেইসব পর্যায়ক্রমে জনসম্মুখে দৃশ্যমান হবে এই দিনপঞ্জীর মাধ্যমে । জীবনের এই দিনপঞ্জী লিখতে গিয়ে হয়তো বেরিয়ে আসতে পারে কারও কারও জীবনের বাস্তব চিত্রগুলোও । তাই আমার এই লেখার মাঝে যাদের জীবনের বাস্তব চিত্র এসে যাবে তাদের কাছে অগ্রীম ক্ষমা প্রর্থনা থাকলো ।
আমি মনে করি প্রতিটি মানুষের দিনপঞ্জীতে লিপিবদ্ধ থাকে অন্য মানুষদের জন্য শিক্ষাপাঠ । কারণ , জীবনের দিনপঞ্জীতে মানুষের জীবনের চিত্রগুলো প্রদর্শিত হয় । মানুষের সফলতা - বিফলতা - উন্নতি - অবনতি - ভালো - মন্দ - আশা - হতাশাগুলো পরিলক্ষিত হয় এই জীবনের দিনপঞ্জীতে ।
তাই , সকলের উচিত সকলের দিনপঞ্জীতে চোখ বুলানো , যাতে উক্ত দিনপঞ্জী থেকে মানুষ নিজ জীবন পরিচালনার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে । গ্রহণ করতে পারে উপযুক্ত জীবন পরিচালনা পদ্ধতি ।
আমার ধারণা , যিনি নিজ জীবনের ডাইরী লিখে জনসম্মুখে প্রদর্শন করে যান , তিনি আর কিছু না হোন একজন মহৎ হৃদয়ের অধিকারী । কেননা , তিনি নিজ জীবনের সুখ - দুঃখ - জয় - পরাজয় - আশা - নিরাশা - আনন্দ - খুশি - সৎকর্ম - অসৎকর্ম - দোষ - গুণ ইত্যাদ জনসম্মুখে প্রকাশ করে নিজ নিজ জীবন সংশোধনের নিমিত্তে একটি মহৎ কাজের আঞ্জাম দিয়ে যান । এতে তাঁর জীবন নিয়ে মানুষ ঠাট্টা-বিদ্রুপ করবে , তাঁকে নিয়ে নিয়ে মানুষ কি বলবে , সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তিনি তাঁর জীবনের সবকিছু মানুষের সামনে প্রকাশ করে যান , যাতে তাঁর জীবনের কর্মসমূহ থেকে মানুষ উৎকৃষ্ঠ পথে পরিচালিত হতে পারে । অর্থাৎ , একটা মানুষের জীবনের দৃষ্টান্ত দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের সুন্দর জীবন গঠনের শিক্ষাদানের মাধ্যমই হলো - জীবন ডাইরী , জীবনী বা জীবনের দিনপঞ্জী লেখা বা প্রকাশ ।
যাঁরা নিজেদের জীবনের দিনপঞ্জী প্রকাশ করেন , তাঁরা নিজেদের জীবনের অপ্রকাশ্য বিষয় অপরকে জানানোর মধ্য দিয়ে অন্যের উপকার করনে নিজেদের জীবনকে বলিদান দেন । তাই , প্রত্যেক জীবনী লেখক এক একজন মহৎ হৃদয়ের অধিকারী ।
আমাদের সমাজে এমন কিছু লোক আছে , যারা নিজেদের জীবনকে সুন্দর রুপে বিকষিত করে তুলেছে । কিন্তু , অন্যদেরকে তারা তাদের সফলতার পথ পরিচয় করাতে চায় না । তারা মনে করে যদি সবাই সফল হয় , তবে তাদের মূল্য কি থাকবে ! তারা আবার মুখে বলে বেড়ায় তারা সভ্য সমাজের বাসিন্দা । আমি বলি , যারা সভ্য হয়ে গেছে তাদের কি অসভ্যদের সভ্য করনে কোনই চিন্তা নেই ? যদি সভ্য লোকদের অসভ্যদের সভ্য করার চিন্তা না থাকে , তবে সভ্যদের মৃত্যুর পর সভ্য সমাজের অস্থিত্ব টিকে থাকবে কি ?
এহেন চিন্তাধারী সভ্যলোকেরা আসলেই কি সভ্য ? নাকি সভ্য সমাজের খোলস পরা এক একটা নরকের কীট ? যারা মানব সমাজের উন্নয়ন চায়না , মানবতার উন্নয়ন চায়না , তারা চায় নিজেদের সভ্য পরিচয় দিয়ে যতদিন জীবিত থাকবে ততদিন মানুষের মাঝে তারা আধিপত্য বিস্তার করে নিজেদের দাপট দেখিয়ে যাবে , নিজেদের মহামূল্যবান রত্ন হিসাবে মানুষের কাছে পরিচয় প্রদান করে যাবে ! তারা মনে করে অন্যরা গোল্লায় যাক তাতে তাদের কি সমস্যা ? এই ধরণের চিন্তার ধারক - বাহকরা যতই নিজেদের সভ্য ভাবুক না কেন , তারা কখনো সভ্য নয় অসভ্যই । তারা কখনো সমাজের বাসিন্দা নয় । তারা সভ্য সমাজের সভ্য রপী এক একটা অসভ্য কীট । যারা সমাজের এক একটা দুষ্টগ্রহ ।
যারা প্রকৃত সভ্য তারা সবসময় চাইবে অসভ্য যারা তাদের সভ্য করে তোলার জন্য । সভ্য সমাজ টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তাদের প্রধান কাজ তাই অসভ্যদের সভ্য সমাজের বাসিন্দা রূপে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্ঠা ।
আমাদের শিক্ষিত সমাজের অনেক শিক্ষিত আজকাল সভ্য হয়েও অসভ্যতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে । তারা অশিক্ষিতদের শিক্ষিত করে তোলা দূরে থাক , তারা অশিক্ষিতদের অশিক্ষিত - মূর্খ - গোঁয়াড় ইত্যাদিতে গালি দিয়ে যাচ্ছে । তাদের মাথার উপর হাত বুলিয়ে তাদের ঠকিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ভাবে শিক্ষিত নামধারী কুশিক্ষিতরা । অশিক্ষিত বলে তাদেরকে সমাজের বিভিন্ন কর্মকান্ড থেকে কোনঠাসা করে রাখছে কুশিক্ষিতরা । আসলে এসব শিক্ষিতরা শিক্ষিত নামের কলঙ্ক । তারা শিক্ষালাভ করেও হয়ে আছে শিক্ষিত মূর্খ রূপে , কুশিক্ষিত বা শিক্ষিত গোঁয়াড় রূপে ।
আমি জানি , আমার জীবনের দিনপঞ্জীতে এমন কোন উল্লেখযোগ্য সুন্দর ও অনুকরনীয় দৃশ্য নেই , যার মাধ্যমে কোন মানুষ উপকৃত হতে পারে । তবে আমি মনে করি , আমি মানুষ । আমারও একটা জীবন আছে । আমার জীবন সময়ে যা ঘটেছে , ঘটছে সেগুলো মানুষের অনুকরনীয় না হোক , মানুষ আমার জীবন থেকে সেই শিক্ষায়ই লাভ করবে , যা জীবনযুদ্ধে পরাজিত একজন সৈনিক কেন , কিভাবে পরাজয় বরণ করেছিল ? আর জীবনযুদ্ধে আমার মত পরজয় বরণ করতে না চাইলে তাদের কি করতে হবে ? তাদের চিন্তা শক্তিতে তা উঠে আসবে ।
আমরা জানি , ইতিহস মানুষের কোন উপকার করেনা । ইতিহাস মানুষকে শিক্ষা প্রদান করে থাকে সম্মুখে সুন্দর রূপে পথ চলার জন্য । আমার জীবন একটা ইতিহাস । এই ইতিহাস থেকে মানুষ কোন উপকার লাভ করবেনা । কিন্তু , এই ইতিহাস থেকে কোন কোন মানুষ তাদের জীবন পরিচালনার উৎকৃষ্টতম কোন পথ আবিস্কার করতে পারবে বলেই আমি মনে করি । তাই , আমার এই জীবনের দিনপঞ্জী পাঠে স্বাগতম জানাচ্ছি ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন