[ একটা মানুষের জীবন জলাঞ্জলী দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের সুন্দর জীবন গঠনের শিক্ষাদানের একটা মাধ্যমই হলো - জীবন ডাইরী , জীবনী বা জীবনের দিনপঞ্জী লেখা বা প্রকাশ । ]
এক সময় ডাইরী লিখতাম । যখন স্কুলে পড়তাম । ক্লাস ফোর থেকে আমার ডাইরী লেখার শুরু হয়েছিলো তখনকার বাংলা খাতায় ।
ডাইরী লেখার বিষয় জানতে পেরেছিলাম ক্লাস ফোর-এ যখন পদার্পন করেছিলাম । তখনকার কোন এক পত্রিকা উল্টাতে গিয়ে দেখতে পেয়েছিলাম একজন বিখ্যাত ব্যক্তির ডাইরী লেখার কাহিনী । শিখেছিলাম ডাইরী কিভাবে লিখতে হয় সেখান থেকেই । ঐ কাহিনীটা পড়েই জেগেছিলো মনে ডাইরী লেখার সাধ ।
১৯৭৯ সালের কথা । সম্ভবতঃ পত্রিকাটি ছিলো দৈনিক ইত্তেফাক । কারণ , ঐ সময় মফজল দা ( ইনি পড়শী বড় ভাই সমতুল্য , যাঁর রয়েছে একটা গল্প । একটু পরেই তাঁর গল্পটি বলতে চেষ্ঠা করবো ) পত্রিকা পড়তেন । সপ্তাহে একদিন - বৃহষ্পতিবার । তিনি প্রতি বৃষ্পতিবার তিন মাইল দূরের বিবির হাট বাজার থেকে পত্রিকা এনে পড়তেন । একমাত্র তিনিই ছিলেন ঐ সময় আমাদের এলাকায় একমাত্র পত্রিকা পাঠক । তিনি পড়তেন ইত্তেফাক পত্রিকা । যদি ইত্তেফাক না আসতো অন্য পত্রিকা পড়তেন । তাই বলতে হয় ঐ পত্রিকাটা ছিলো ইত্তেফাক । যা আমার ডাইরী লেখার অনুপ্রেরণা ।
যা হোক , মফজল দা’র কাহিনীটা না বললেই নয় । মফজল দা ছিলেন আমাদের পড়শী বড় ভাই । সেই সাথে ছিলেন আমাদের বাড়ির সম্মুখের একজন মুদী দোকান্দার । আমার জন্মের পূর্ব থেকেই তিনি আমাদের বাড়ির সামনে তাঁর নিজস্ব জায়গায় নিজ মালিকানাধীন দোকানে তাঁর ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন । খুবই সহজ সরল একজন ভালো ও উপকারী লোক হিসাবেই তিনি পরিচিত । তাঁর এ পরিচিতির প্রমাণও পেয়েছিলাম আমার বাবার কাছ থেকে ।
আমার বাবা ছিলেন তখন একজন প্রবাসী । বার্মা ( বর্তমান মায়ানামার ) ‘র রেঙ্গুন ছিল তাঁর কর্মস্থল । জাপান - বৃটিশের যুদ্ধে যখন বার্মা হলো আক্রান্ত , আমার বাবা তখন সাঁইত্রিশ হাজার টাকার সমপরিমাণ জীবনের কামাই বার্মায় ফেলে প্রাণ বাঁচাতে চলে এসেছিলেন নিজ দেশে । দেশে ফিরে বাবা হয়ে পড়েছিলেন দিশেহারা । পরিবারের ভরণ-পোষনের মত কোন সহায়-সম্পত্তি ছিলোনা তাঁর । এ অবস্থায় যখন বাবা চোখে ষর্ষে ফুল দেখতে লাগলেন , তখন বাবার এ দূরাবস্থা দর্শনে এগিয়ে এসেছিলেন উক্ত মফজল দা । মফজল দা’র পরামর্শে বাবা একমত হয়ে মফজল দা’র কাছ থেকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাবার ভাড়ার টাকা নিয়ে বাবা দিশেহারা জীবন নিয়ে পাড়ি জমালেন ঢাকায় । বাবার নতুন জীবন শুরু হলো তার ঢাকায় পাড়ি জমানোর মধ্য দিয়ে । একজন সরকারী লাইসেন্সধারী কনষ্ট্রাকশন ফার্মের অধিকারী হয়ে সফল মানুষ হিসাবে আত্মপ্রতিষ্ঠা করলেন তিনি । দিশেহারা একজন মানুষ মফজল দা’র সহযোগীতায় আত্মপ্রতিষ্ঠিত হয়ে দিশারী হলেন অনেক দিক হারা মানুষের । মফজল দা’র কাহিনী এটাই যে , তিনি ছিলেন বিপদে পড়া মানুষদের একজন অকৃত্রিম বন্ধু । তাঁর একটুখানি সহযোগীতায় আমাদের পরিবারটি ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো ।
তাই , আমার এ দিনপঞ্জী লেখার সন্ধিক্ষণে কতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি সেই মফজল দা’কে ( যিনি বাদশাইয়া বর মফজল নামে এলাকার সর্বত্র পরিচিত ) । মহান আল্লাহ তাঁকে উত্তম প্রতিদান দান করুন - আমীন ।
যা হোক , বলছিলাম - আমার ডাইরী লেখার গল্প । কিন্তু , এসে গেলো মফজল দা’র গল্প । জীবনের ডাইরীতো এমনই হয় । সকলের সন্ধিতে সকল জীবনের আনাগোনা । মানুষ মাত্রই সামাজিক জীব । সমাজে বাস করতে হলে মানুষ মানুষের সাথে সম্পৃক্ত হবেই ।
একটা জীবনের গল্প বলতে গেলেই বহু জীবনের গল্প এসে যাবেই । তাই তো , মফজল দা’র জীবনের গল্প এসে গেলো । আমার বাবার জীবনের গল্প এসে জুড়ে গেলো আমার জীবনের গল্পের সাথে । এভাবে আরও কত মানুষের জীবনের গল্প যে এসে যাবে সম্মুখে অগ্রসর হলে তার ইয়ত্ত্বা নেই । কারণ , আমিও সমাজবদ্ধ মানুষ । সমাজে মিশতে গিয়ে ধাক্কা খেতে হয়েছে কত জীবনের সাথে , তা একসাথে বলতে না পারলেও ধাপে ধাপে , সময়ের প্রয়োজনে , জীবনের পরিচ্ছেদের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাবেই ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন