গতকাল একটা প্রবাসী সংগঠনের আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে তাদের এক অনুষ্টানে যোগ দিয়েছিলাম। আমরা প্রায় ৮০/৯০ জন তাতে অংশগ্রহণ করি। অনুষ্টানটি মুলতঃ বিজয় মাসের বরণ উপলক্ষ্যে আহবান করা হয়েছিল। যদিও আমি ঐ সংগঠনের কেউনা। তবুও দাওয়াত পেয়ে বন্ধুত্ব রক্ষার তাগিদে যেতে হয়েছিল। অনেকে অনেক ভাবে বিজয় দিবস নিয়ে এবং যুদ্ধকালীন স্মৃতির উপর আলোচনা করেন। শেষে এক বন্ধু বলে উঠল - এখানে একজন ভাই আছেন যিনি লেখালেখির সাথে যুক্ত। যদিও তিনি আমাদের সংগঠনের কেউ নন। আমার মনে হয় ওনার মুখ থেকে কিছু না শুনলে আজকের অনুষ্টানটা পরিপূর্ণ হবেনা। বুঝতে পারলামনা ঐ লোকটা কে ? আমি তখন অন্য রুমে একজনের সাথে কথা বলছিলাম।
কি আর করা "যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়" এ পরিস্থিতিতে নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করব ঠিক করে নিয়ে উঠে গেলাম মঞ্চে। শুরু করলাম ওয়াজের মত করে। দেখুন আমার ভাষনটা কেমন হলো -"
আম্মা বাদ- আউজু বিল্লাহিমিনাশশায়ত্বানির রাজীম। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। ক্বালাল্লাহ তাআলা -
আলিফ লাম মীম। যালিকাল কিতাবু লা রায়বা ফিহি হুদাল্লিল মুত্তাক্বীন। আল্লাজিনা ইউ'মিনুনা বিলগাইবি ওয়ুক্বিমুনাস্সালাতা ওয়ামিম্মা রাজাকনাহুম ইউনফিকুন। ওয়াল্লাজীনা ইউ'মিনুনা বিমা উনযিলা ইলায়কা ওয়মা উনযিলা মিন ক্বাবলিকা ওয়াবিল আখিরাতিহুম ইউক্বিনুন। উলায়িকা আলা হুদাম্মিররাব্বিহীম ওয়াউলায়িকা হুমুল মুফলিহুন।ওক্বালা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - ইন্নামাল আম'মালু বিন্নিয়্যাত।
আমি প্রথমেই হামদ্ ও নাতের পর আলকোরান থেকে সুরা বাক্বারার পাঁচটি আয়াত এবং আল হাদীসের অগণিত হাদিস থেকে একটি হাদিস পাঠ করেছি। আপনারা হয়তো মনে মনে ভাববেন লোকটারে বলতে বললাম কি আর সে বলে কি ! তারে কইলাম বিজয় দিবসের আলোচনা করতে আর সে কিনা করে ওয়াজ ! আপনাদের মনের এই জল্পনা দূরী করণে প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আসলে আমি কি বলতে কি বলছি মোটেই জানিনা। এ ধরণের বক্তব্য দানে আমি অভিজ্ঞ নই। তাই এই অবস্থা। আশা করছি আমাকে ক্ষমা করবেন। কিছু বলতে যখন এখানে উঠেছি, কিছু না বলে নেমে গেলে সেটা শোভনীয় হবেনা। তাই চেষ্টা করব অন্তত কিছু বলতে। তার আগে শ্রদ্ধা জানাই সেইসব শহীদ - বীর মুক্তিযোদ্বাদের, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীন (?)।
আমি যখন ইংরেজী শিক্ষা থেকে বের হয়ে তাবলীগে কিছুদিন সময় দিই, তখন আমাকে এক বিশেষ চিন্তার সাগরে ডুব দিতে হয়, যে চিন্তা আমাকে নিয়ে যায় মাদ্রাসা লাইনে। ভর্তি হই মাদ্রাসায়। তখন দারুন কোরান শামসুল উলুম মাদ্রাসা, চৌধুরী পাড়া, ঢাকায় হোষ্টেলে থেকেই শুরু করি আরবী পড়া। সেখানে উক্ত মাদ্রাসাসার মুহতামিম জনাব মাওলানা ইসহাক ফরিদী হজুরের তত্বাবদানে পরিচালিত হত বক্তৃতা শিক্ষার কোর্স। যাতে সকল ছাত্রকেই অংশ নিতে হত। সেই কোর্স থেকেই আমার বক্তৃতা শিক্ষা। আর তাই আমার আলোচনার শুরুটা ওয়াজের মত হয়ে গেল।
সে যাক, আমি উক্ত আয়াত ও হাদীসের আলোকে বিজয় দিবসের আলোচনাকে একটু ভিন্নতা দেয়ার চেষ্ঠা করছি। তাই বলে আমার এই আলোচনা ওয়াজ হিসেবে মনে করলে ভুল হবে। আমার পাঠকৃত আয়াত সমুহের বাংলা হলো - " আলিফ-লাম মীম। এই সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নাই, এ সাবধানীদের জন্য পথ নির্দেশক। (সাবধানী ওরাই ) যারা অদৃশ্যে বিশ্বাষ করে, সালাত কায়েম করে এবং তাদের যা দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। এবং যারা তাতে বিশ্বাষ করে যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তোমার পুর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, আর পরকালের প্রতি যারা দৃঢ় আস্থা রাখে। তারাই তাদের প্রতিপালকের নির্দেশিত পথে রয়েছে এবং তারাই পূর্ণ সফলকাম।" আর হাদিসটির বাংলা হলো - "প্রত্যেক কর্মই নিয়তের উপর নির্ভর্শীল।"
এখন আসুন আমরা বিজয় দিবস নিয়ে কিছু আলাপ করার চেষ্ঠা করি। যদি আমরা বিজয় দিবসের আলোচনা করতে যাই তবে উঠে আসে আমাদের স্বাধীনতার কথা। বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস দুটোই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে না পড়লে আমরা বিজয় দিবস পেতামনা। তাই স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস একসাথেই আমাদের আলোচনায় উঠে আসে। বিজয় দিবসের কথা বলতে গেলেই বলতে হয় স্বাধীনতার কথাও।
আমরা বাংলাদেশীরা স্বাধীন জাতি। রয়েছে আমাদের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে বিজয় অর্জনের গৌরব। আমরা একটা বৃহৎ শোষক গোষ্টির পরাধীন থেকে নির্যাতন-নীপীড়নের অসহনীয় জ্বালায় অতীষ্ট হয়ে তাদের শৃন্খল থেকে নিজেদের ক্ষুদ্র শক্তি দিয়ে যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে স্বাধীন হয়েছি। এটা আমদের কম গৌরবের কথা নয়।
কিন্তু সেই বিজয়ের গৌরব সেই স্বাধীনতার স্বাদ আমরা ঠিক কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি বা আদৌ অর্জন করতে পেরেছি কিনা তা আমাদের ভাববার বিষয়। যদি এই গৌরব ও স্বাদ অর্জন করতে না পারি, তবে কেন পারলামনা - তা একটা প্রশ্নাধীন বিষয় বৈকি। আজ আমরা যদি ভাবি স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছর পরও দেখতে পাব আমরা কখনো স্বাধীন ছিলামনা। আমরা যে স্বাধীনতা চেয়েছি তা আমরা পাইনি। আমরা বিজয়ের গৌরবে গৌরান্বিত হতে পারিনি। এক ভিনদেশী শোষক গোষ্টির নির্যাতন সেল থেকে আমরা পরিবর্তিত হয়ে স্বদেশী শোষক গোষ্টির নির্যাতন সেলে স্থানান্তর হয়েছি। সেটা স্বাধীনতা নয়। সেটা বিজয় নয়। সেটা এক জেল থেকে অন্য জেলে স্থানান্তরের মত ঘটনা মাত্র। অথবা এক কারারক্ষীর মৃত্যুর পর নতুন আসা কারারক্ষীর অধীন সেলের আমরা বন্ধী ।
সেদিন আমরা যে নিয়তে দেশ স্বাধিনের যুদ্ধে নেমেছিলাম। আমাদের সে নিয়ত ঠিক ছিলনা বিধায় আমরা আমরা স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত। যেহেতু রাসুলের হাদীস - "প্রত্যেক কর্মই নিয়তের উপর নির্ভর্শীল।" নিয়ত ঠিক থাকলে সেই স্বাদ পাওয়া থেকে আমরা বঞ্চিত থাকতামনা। সেই নিয়তটি মুলতঃ নির্যাতকদের নির্যাতনের নতুন একটা ফর্মূলা। দেশের মানুষদের মুক্তিদান সে সময়কার নেতৃত্বের বাহিরের খোলস ছিল, সেই নেতৃত্বের আভ্যন্তরে ছিল যুদ্বে পরাজিত শোষকদের ন্যায় সেইসব নেতাদের স্বার্থসিদ্ধির একটা ইচ্ছা বা নিয়ত। ফলে, আমরা আজও রয়ে গেছি সেই একই শ্রেনীর শোষকগোষ্টির পেষন যন্ত্রের বলি হয়ে।
তাছাড়া, আমরা স্বাধারণ মানুষ সেদিন আমরা ভুল পথে পা বাড়িয়েছিলাম। আজও আমরা সেই ভুলপথ ধরেই হাঁটছি। ফলে আমরা আমাদের অভিষ্ঠ্য লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছিনা। আর যতদিন আমরা সেই ভুল পথ ধরে হাঁটবো, ততদিন সেই অভিষ্ঠ্য লক্ষ্যে পৌঁছা আমাদের দ্বারা সম্ভব হবেনা। কারন, মানবজাতির স্রষ্টার বিধান অমান্য করে কখনো সেই মানুষ নিদ্রিষ্ট লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে সফলকাম হবেনা। তাই স্রষ্টা তার মানবজাতি পরিচালনার বিধানগ্রন্থে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন - "এই সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নাই, এ সাবধানীদের জন্য পথ নির্দেশক। (সাবধানী ওরাই) যারা অদৃশ্যে বিশ্বাষ করে, সালাত কায়েম করে এবং তাদের যা দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। এবং যারা তাতে বিশ্বাস করে যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তোমার পুর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, আর পরকালের প্রতি যারা দৃঢ় আস্থা রাখে। তারাই তাদের প্রতিপালকের নির্দেশিত পথে রয়েছে এবং তারাই পূর্ণ সফলকাম।"
অতএব, আমাদেরকে চলতে হবে বিজয় ও স্বাধীনতার মূলপথে। খুঁজে নিতে হবে আমাদের সেই মুলপথ। মানতে হবে সেই মুল পথের দিক নির্দেশককে এবং স্রষ্টার সর্বশ্রষ্টে, সর্বত্র ও সার্বজনীন রূপে গ্রহণযোগ্য সেই বিধানকে। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে দুনিয়ায় স্বাধীন থাকার মুল বিধানের আলোকে চলতে সহায়তা করুন। আমীন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন