- এত জায়গা থাকতে রাতবিহারে এ স্থানটি বাচাই করলে কেন ?
- কেন, তোমার খারাপ লাগছে ?
- খারাপ লাগছেনা , জানার কৌতুহল।
- রূপালী জ্যোৎস্না নদীর ধারে যতটুকু সুন্দর লাগে অন্য কোনখানে তত সুন্দর লাগেনা। তাই তোমার আজকের আগমনকে স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য এই বিশেষ স্থান নির্ধারণ।
- সত্যিই তাই, খুবই সুন্দর লাগছে। এমন সুন্দর জ্যোৎস্না আর কখনো দেখা হয়নি। অনেক অনেক ধন্যবাদ এই বিশেষ স্থানে নিয়ে আসার জন্য।
- হাঁটতে হাটতে অনুভব হলো একটি মিষ্টি সুঘ্রান যেন আমোদিত করছে। তোমারও লাগছে নাকি ?
- লাগছে মানে ! আমি তো এই সুঘ্রানের জন্যই এখানে আসি বার বার। তুমি কি এখন খেয়াল করছ সেটা ?
- না , যখন ডানে মোড় নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম তখন থেকেই।
- ও তাই, তুমি কি জান কতটি চম্পা ফুলের গাছ পেরিয়ে এলাম ?
- তা আমি কিভাবে জানব ? আমি তো গাছের দিকে তাকাই-ইনি।
- তবে কোন দিকে তাকিয়েছিলে ?
- তাকিয়েছিলাম রূপালী চাঁদ, রূপালী নদ আর জ্যোৎস্নামাখা তোমার রূপালী মুখের দিকে। গাছ দেখার সময় কি আর পেলাম ?
- বাহ্ ! কবি হয়ে গেলে দেখছি !
- কবি হয়েছি কিনা জানিনা, তবে এমন মধুর ক্ষণে কবিতা না লিখতে পারলেও কবি হতে কার না ইচ্ছে করে ? যা হোক, বললে নাতো কয়টা চম্পা গাছ পেরিয়ে এলাম ?
- দশটা । আমার নিজেরই আছে ছয়টা।
- তবে তো এটা চম্পা ফুলের একটা বাগান। কিন্তু তোমার ছয়টা মানে বুঝলামনা। তুমি কি এখানে চম্পা ফুলের গাছ লাগিয়েছ নাকি ?
- হ্যা , এটাকে চম্পা ফুলের বাগানই ধরে নিতে পার। সব মিলিয়ে পঁচিশটা গাছ হলে তো একটা বাগানই। আমি জানিনা আমি গাছ লাগিয়েছি কিনা। তবে বাবা বলেছে আমার বয়স যখন তিন বৎসর তখন আমাকে এখানে নিয়ে এসে আমার হাত দিয়ে দশটা গাছ লাগানো হয়েছিল। দশটা গাছের মধ্যে বেঁচে আছে ছয়টা। তাই ওগুলো আমার গাছ হিসাবেই মনে করি যদিও মালিকানা স্বত্ব দবী করিনা।
- দারুন তো ! তোমার গাছগুলো দেখতে হবে।
- ঠিক আছে ফিরতি পথে দেখিয়ে নেব।
- আমরা আর কতদূর যাব ?
- চম্পা গাছ যতদূর পর্যন্ত আছে ততদূর , তারপর ফিরব।
- আর কতক্ষন হাঁটতে হবে ?
- হিসাব কর , আরও পনেরোটা গাছ অতিক্রম করতে হবে।
- গাছ হিসাব করলে তোমার আার হিসাব কখন করব ?
- মানে ?
- জ্যোৎস্না রাতের প্রেমের হিসাব !
- বুঝলামনা। সেটা কি রকম ?
- কচি খুকী, সব বুঝাতে হবে।
- না বুঝলে বুঝাতে হবেনা ?
- বুঝানোর কাম নেই , গাছ গুণতে এসেছি যখন গাছই গুণে যাই।
- রাগ করছ কেন , তোমার কি করার ইচ্ছা তাই বল।
- তুমি গাছ গুণতে বলে কেন ?
- মনে কর একটা অঙ্ক করতে দিলাম।
- এই ধরণের অঙ্ক এ সময় ভাল লাগেনা।
- কোন ধরণের অঙ্ক ভাল লাগে ?
- রোমান্টিক সময় রোমান্টিক অঙ্ক ?
- রোমান্টিক অঙ্ক ! সেটা কি রকম ?
- এই যেমন ধর , আই লাভ ইউ কতবার বলা হলো ? আগামী দিনের ডেটিং সময় কবে হবে ? এই ধরণের আর কি ?
- বাহ্ ! বেশ রোমান্টিক হয়ে গেলে মনে হচ্ছে ?
- রোমান্টিক হতে পারলাম আর কই ?
- পারলেনা কেন ?
- গাছ গুণতে দিলে কি আর রোমান্টিক হওয়া যায় ?
- কি করতে দিলে রোমান্টিক হওয়া যায় ?
- তা কি শিখাতে হবে ?
- বা রে , আমি কি জানি নাকি , রোমান্টিক কিভাবে হয় ?
- না জানলে থাক, অন্যদিন প্রাক্টিক্যাললি শিখিয়ে দেব।
- ঠিক আছে। আমাদের এখানেই শেষ , চল একটু বসি।
- হ্যাঁ , একটু বসলেই ভাল হয়। পাও ধরে গেছে।
- দেখ দেখ পানির ঢেউ কিভাবে আঁচড়ে পড়ছে !
- তুমি ঢেউ দেখছ ? আমি অন্য কিছু দেখেছি।
- কি ?
- রূপালী ইলিশ !
- কোথায় ?
- পানির সাথে একটা গর্তে ডুকেছে দেখেছি।
- এখানে তো তেমন কিছু দেখছিনা , তোমার ওড়নাটা দাওতো !
- আমার ওড়না দিয়ে কি করবে ?
- দেখই না কি করি ?
দেরী না করে ওড়নাটা নিয়ে খাদে নেমে গেলাম আমি । দৃষ্টি সরাইনি আমার। মাছটি রয়ে গেছে সেখানে এখনো। ওড়নাটা মেলে গর্তে হাত দিয়ে চেপে ধরলাম। যা ভেবেছি তাই । মাছটা ছুটে যেতে প্রাণপণ চেষ্টা করল। পারলনা পালাতে। ধরাশায়ী হলো দুটি হাতের কাছে । ওড়নাটা দিয়ে ভাবে পেঁচিয়ে নিলাম। তুলে আনলাম উপরে। প্রিয়া তার ওড়নার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকল। বলল :
- এ কি করেছ তুমি ?
- কি করেছি মানে ! দেখছনা রূপালী জ্যোৎস্নার রূপালী ইলিশ ধরে এনেছি।
- তুমি কি পাগল ?
- এই জ্যোৎস্নায় একটু পাগল না হলে কি মানায় ?
- তাই বলে তুমি আমার ওড়না দিয়ে মাছ ধরবে ?
- আরে তুমি ওড়নার চিন্তা করছ , লাভ কি করেছি সেটা তুমি দেখছনা ?
- দিলে তো আমার ওড়নাটা শেষ করে।
- একটা ইলিশের দাম কত জান ? তোমার ওড়নার তিনগুণ।
- ওড়না শেষ হয়েছে তো কি হয়েছে ? স্মৃতিটার ভিত্তি তো মজবুত হয়েছে। এই স্মৃতি কি ভুলতে পারবে ?
- ঠিক আছে , ওড়নার কথা বাদ দিলাম। কোন সাহসে খাদে নেমেছ ? যদি পীচলে গিয়ে পানিতে চলে যেতে কি হত ভেবে দেখেছ ?
- কেন , তুমি আমাকে বাঁচাতে নামতেনা ?
- নামলে কি হত ? দু'জনেই মরতাম।
- মরণকে ভয় করছ কেন ?
- কেন তুমি ভয় করনা ?
- আমি ভয় করলে কি আজ এই রূপালী ইলিশ ধরতে পারতাম ?
- তোমার সাহস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারছিনা।
- আর অবাক হবার দরকার নেই। চল , দেরী করার সময় নেই।
- চল , বাড়ি গিয়ে দেখো বাবা কি বলছে। প্রস্তুত থাক গালি শুনার জন্য।
- এই রূপালী ইলিশের কাছে হাজারো গালি কিছুই না।
- তুমি না একটা বদ্ধ উন্মাদ।
- তাই সই।
- তুমি একটা গাদা ।
- তাও মানতে রাজি।
- পাগল।
- পাগল হয়েই তো করতে পেরেছি মাছটা দখল। এবার তোমার গাছ দেখাও।
- ওই তো , ওখান থেকে আমার গাছগুলোর শুরু।
- বেশ বড় হয়েছে দেখছি।
- বড় হবে না ? চৌদ্দ বছর হয়ে গেছে বয়স ।
- দেখি লাইটা জ্বালাওতো মোবাইলের।
- কেন ?
- গাছগুলোতে কিছু একটা লেখা দেখা যাচ্ছে মনে হয় !
- এ দেখি সব আমার নাম লেখা। ব্যাপার কি ?
- আমি যতবারই আসি তোমার নামটা এসব গাছে লিখে দিই।
- কেন ?
- তোমাকে একদিন এই গাছগুলো দেখাব বলে।
- যদি আমি কখনো না আসতাম ?
- আমার ধারণা ছিল , তুমি একদিন আসবেই।
- এমন বিশ্বাস কেন হয়েছিল ?
- জানিনা।
- এ গাছটিতেই শুধু দেখলাম - "Z" IS MY LOVE. কার উদ্দেশ্যে এ লেখাটি ?
- এটাই তোমার জন্য আজকর শেষ অঙ্ক।
- মাছটা একটু ধর।
- কেন ?
- আমিও একটা কিছু লেখতে চাই।
ছুরি দিয়ে সামান্য জায়গার ছাল পরিস্কার করে খোদাই করে লিখে দিলাম প্রিয়ার সেই চম্পা গাছে - " আজকের এই রূপালী জ্যোৎস্নার রাতে রূপালী চাঁদের আলোয় আমাদের এই রাতবিহারের স্মৃতি অমলিন থাকবে - I LOVE YOU PRIYA."
============
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন