আল কোরআনে মাহে রমজান ও রোযা সম্পর্কীয় কিছু আয়াত ঃ
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন -
১। “হে মু'মিনগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে,যেমনি ফরয করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর; যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার’’। (সূরা বাকারা: ১৮৩)।
২। “রমজান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হিদায়াতের জন্য।” (সূরা বাকারা- ১৮৫)।
৩। “কদরের রাত, হাজার মাস থেকেও উত্তম।” (সূরা কদর: ৩)।
৪। “তোমরা খাও পান কর, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না’’। (সূরা আ'রাফ: ৩১)।
৫। “তোমাদের জন্য রোযার বিধান দেয়া হল,যেমন বিধান ছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য,যেন তোমরা নিজেদেরকে রক্ষা করতে শিখ অশুভের হাত থেকে।”(সূরা বাকারা: ১৮৩)।
৬। “নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কী জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’’ (সূরা আল-কদর, আয়াত ১-৫)।
৭। “রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎ পথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।’’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৫)।
৮। “তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এ (সিয়াম) যাদের অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদ্ইয়া—একজন মিসকিনকে অন্নদান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎ কাজ করে, তবে সেটা তার পক্ষে অধিকতর কল্যাণকর। তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। আর কেউ পীড়িত থাকলে অথবা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যেটা সহজ সেটাই চান এবং যা তোমাদের জন্য ক্লেশকর, তা চান না এ জন্য যে তোমরা সংখ্যা পূরণ করবে।’’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪-১৮৫)।
৯। “তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হবে না, যখন তোমরা মসজিদে ইতিকাফে থাকবে।’’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৭)।
১০। “যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎ কাজ করে, তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর যদি তোমরা উপলব্ধি করতে, তবে বুঝতে রোযা পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রদ।’’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪)।
১১। “শপথ আত্মার এবং যিনি তা সুঠাম করেছেন তাঁর, অতঃপর তাঁকে পাপাচারের ও ধার্মিকতার পথ শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং সে সফলকাম, যে আত্মশুদ্ধি অর্জন করে। আর সে ব্যর্থ, যে নিজেকে কলুষিত করে।’’ (সূরা আশ-শামস, আয়াত: ৭-১০)।
১২। “আর তোমরা পানাহার করো, যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রাত্রি পর্যন্ত রোযা পূর্ণ করো।’’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৭)।
১৩। “রমজান মাসে মানুষের পথপ্রদর্শক এবং সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী রূপে আল কোরআন নাজিল হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে।'’ (বাকারা : ১৮৫)।
১৪। “সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ ব্যাধিগ্রস্ত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এটা যাদেরকে অতিশয় কষ্ট দেয়, তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদ্রা একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎ কাজ করে এটা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন তথা রোযারাখাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ যদি তোমরা জানতে।” (সুরা বাক্বারা ১৮৩-১৮৪)।
মাহে রমজান ও রোযা বিষয়ক কিছু হাদীস ঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন -
১। “তোমাদের নিকট বরকতময় মাস রমজান এসেছে, যার সিয়াম আল্লাহ তোমাদের উপর ফরয করেছেন’’। (সুনান নাসায়ী: ২০৭৯)।
২। “এক রমজান তার পূর্ববর্তী রমজানের মধ্যবর্তী সময়ের সকল সগীরা গুনাহ মিটিয়ে দেয়।” (সহীহ মুসলিম: ৩৪৪)।
৩। “সবরের মাসে সাওম পালন ও প্রত্যেক মাসে তিনদিন সাওম পালন অন্তরের অস্খিরতা দূর করে।” (মুসনাদ আহমাদ: ৭২৬১)।
৪। “যখন রমজান আগমন করে তখন খুলে দেয়া হয় জান্নাতের দরজাসমূহ এবং বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের প্রবেশ পথগুলো। আর শৃকôখলিত করা হয় শয়তানদের।” (সহীহ মুসলিম: ১৭৯৩)।
৫। “এ মাসের প্রত্যেক রাতেই আল্লাহ তার কতিপয় বান্দাহকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।” (সুনান তিরমিযী: ৬১৮)।
৬। “রমজান মাসের সিয়াম দশ মাসের সমতূল্য এবং শাওয়ালের ছয় দিনের সিয়াম দুই মাসের সমতুল্য। এ যেন সারা বছরের সিয়াম।” (মুসনাদ আহমাদ: ২১৭৮)।
৭। “এ মাসের প্রতি রাতেই আহ্বানকারী ঘোষণা দেয়, হে কল্যাণ কামনাকারী,কল্যাণের দিকে আস। হে অকল্যাণ কামনাকারী থেমে যাও।” (সুনান তিরমিযী: ৬১৮)।
৮। “রমজান মাসে কৃত প্রত্যেক মুসলমানের দোয়া কবুল হয়ে থাকে।” (মুসনাদ আহমাদ: ৭১৩৮)।
৯। “তোমাদের নিকট বরকতময় মাস রমজান এসেছে, যার সিয়াম আল্লাহ তোমাদের উপর ফরয করেছেন।” (সুনান নাসায়ী: ২০৭৯)।
১০। “সাওম পালনকারীদেরকে রাইয়ান নামক দরজা হতে ডাকা হবে।” (সহীহ বুখারী: ১৭৬৪)।
১১। “তোমাদের কারোর যুদ্ধক্ষেত্রের ঢালের ন্যায় সাওমও জাহান্নামের ঢালস্বরূপ।” (সুনান নাসায়ী: ২২০০)।
১২। “কিয়ামতের দিনে সাওম ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে।” (মুসনাদ আহমাদ: ৬৩৩৭)।
১৩। “কোন ব্যক্তির ফিতনা তার পরিবার, জান, মাল, সন্তান ও প্রতিবেশির মাঝে। যাকে মিটিয়ে দেয় সালাত, সাওম,সাদাকাহ, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ।” (সহীহ বুখারী ৪৯৪)।
১৪। “কেবল সাওম ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেক আমল তার জন্য; সাওম আমার জন্য আমি নিজে এর প্রতিদান দিব।” (সহীহ বুখারী: ১৭৭১)।
১৫। “যার হাতে আমার জীবন তার কসম, রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তা'আলার নিকট মিশকের ঘন্সাণের চেয়েও অধিক উত্তম।” (সহীহ বুখারী: ১৭৬১)।
১৬। “যে মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।” (সহীহ বুখারী: ১৭৭০)।
১৭। “কত সাওম পালনকারী রয়েছে যারা অনাহার ছাড়া আর কিছু পায় না।” (মুসনাদ আহমাদ: ৯৩০৮)।
১৮। “সাওম ঢাল স্বরূপ।তোমাদের কেউ যেন সাওম পালনের দিনে অশ্লীল আচরণ ও শোরগোল না করে। যদি তাকে কেউ গালি দেয় বা তার সাথে ঝগড়া করে তখন সে যেন বলে ‘আমি রোযাদার'।” (সহীহ বুখারী: ১৭৭১)।
১৯। “নবীজী (স·) ছিলেন মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি দানশীল। তিনি সবচেয়ে বেশি দান করতেন রমজান মাসে।” (সহীহ বুখারী: ৫)।
২০। “যে ঈমান ও সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজানের রাতে সালাত আদায় করে তার অতীতের পাপসমূহ মা করে দেয়া হয়। (সহীহ বুখারী: ৩৬)।
২১। "সাওম ও কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে।" (মুসনাদ আহমাদ: ৬৩৩৭)।
২১। “যে ব্যক্তি রমজান মাসে পেয়েও তার পাপ ক্ষমা করাতে পারেনি তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক।” (সুনান তিরমিযী: ৩৪৬৮)।
২২। “রমজান মাসে উমরা আদায় আমার সাথে হজ্ব আদায়ের সমতূল্য। (সহীহ বুখারী: ১৭৩০)।
২৩। “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন’’ (সহীহ বুখারী: ১৮৮৫)।
২৪। “যে কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে সে রোযাদারের অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে, তবে তাতে রোযাদারের সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কমবে না।' (সুনান তিরমিযী: ৭৩৫)।
২৫। “রমজান মাসে কৃত প্রত্যেক মুসলমানের দোয়া কবুল হয়ে থাকে’’।(মুসনাদ আহমাদ: ৭১৩৮)।
২৬। “তোমরা সাহরী খাও, কারণ সাহরীতে বরকত রয়েছে।” (সহীহ বুখারী: ১৭৮৯)।
২৭। “মু'মিনের উত্তম সাহরী হল খেজুর।” (সুনান আবু দাউদ: ১৯৯৮)।
২৮। “তোমরা তাড়াতাড়ি ইফতার কর এবং দেরিতে সাহরী কর’’।(আসসিলসিলাতুস সহীহা: ১৭৭৫)।
২৯। “আমাদের রব তাবারাকা ওয়া তা'আলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আছ! যে আমার নিকট দোয়া করবে আমি তার দোয়া কবুল করব। কে আছ! যে আমার নিকট চাইবে আমি তাকে দান করব। কে আছ! যে আমার কাছে মা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব।” (সহীহ বুখারী: ১০৭৭)।
৩০। “মানুষ যতদিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন কল্যাণের সাথে থাকবে।” (সহীহ বুখারী: ২৮২১)।
৩১। “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের পূর্বে তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর পাওয়া না যেত তবে শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুর পাওয়া না যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন।” (সুনান আবু দাউদ: ২০০৯)।
৩২। “তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়, ন্যায়পরায়ণ নেতা,রোযাদার যখন ইফতার করে,নির্যাতিত ব্যক্তি।” (সুনান তিরমিযী: ২৪৪৯)।
৩৩। “যে কোরা রোযাদারকে ইফতার করাবে সে রোযাদারের অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে, তবে তাতে রোযাদারের সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কমবে না।” (সুনান তিরমিযী: ৭৩৫)।
৩৪। “যে মিথ্যা কথা ও অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করেনি তার পানাহার ত্যাগ আল্লাহর কোন কাজে আসবে না।” (সহীহ বুখারী: ১৭৭০)।
৩৫। রাসূলুল্লাহ (স·)বলেন, যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন-
“পিপাসা নিবারণ হল, শিরা-উপশিরা সিক্ত হল এবং প্রতিদান সাব্যস্ত হল ইনশাআল্লাহ ’’।(সুনান আবু দাউদ: ২০১০)।
৩৬। আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন-
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা অবস্খায় তাকে চুম্বন করতেন এবং রোযা অবস্খায় আলিঙ্গন করতেন।” (সহীহ মুসলিম: ১৮৫৪)।
৩৭। “রাসূলুল্লাহ (স.) যখন রমজানের শেষ দশকে পৌঁছতেন তখন লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নিতেন (প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন), রাত্রি জাগরণ করতেন,পরিবারবর্গকে নিদন্সা থেকে জাগিয়ে দিতেন’’। (সহীহ বুখারী: ১৮৮৪)।
৩৮। “রাসূলুল্লাহ (স.) রমজানের শেষ দশকে ইবাদত-বন্দেগীতে যে পরিশন্সম করতেন অন্য সময় তা করতেন না।'’ (সহীহ মুসলিম: ২০০৯)।
==================
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন