বৃষ্টি দিনের ভালোবাসার কথন : পর্ব-০২
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
------------------------
১৪।
আমাকে
একজন প্রশ্ন করলো -আচ্ছা
তুমি যে সেদিন বৃষ্টি নিয়ে এত লেখা লিখেছ ,তোমাদের ওখানে কি বৃষ্টি হয়
?
আমি
জবাব দিলাম -আমাদের
এখনে যে বৃষ্টি তা কেউ দেখতে পায়না। যে বৃষ্টিতে ভিজে সয়লাব হয়ে যায় বালিশের সর্বাঙ্গ। ভাগ্য ভাল ফোমের বালিশ চুষে
নেয় ,তাই রাস্তার স্রোত হয়ে বহেনা ।
১৫।
দুদিন
আগে যখন শরীরটা খুব খারাপ লাগছিল ,তখন হঠাৎ একটা ম্যাসেজ আসল
ফোনে। তাতে লেখা - মনে আছে তোমার সেই দিনটি ,আমরা শিম্পাঞ্জী দেখতেছিলাম
,হঠাৎ আসলো বৃষ্টি ! দু'জনে দৌড় দিলাম ,আর সবুজ ঘাসে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম আমি। তুমি টেনে তুলে দু'হাতের উপর আমায় শুইয়ে দিলে দৌড় ! আর আমি চেয়ে থাকলাম তোমার মুখের দিকে। দেখিনি তোমার মুখে কোন কষ্টের ছাঁপ।
দেখেছি শুধুই আনন্দের হাসি। তোমার সেই হাসিতে বুকটা ভরে যায় আমার এক অনাবিল আনন্দে , একরাশ ভালবাসায়।
আশ্চর্যাম্বিত
আমি।
এতগুলো
বছর পেরিয়ে আজ একি দেখছি আমি ! আমাদের এ কথাটা আমরা দু'জন ছাড়া আর কেউতো জানেনা !
তবে
-কার ম্যাসেজ ?ভালভাবে দেখলাম আবার
ম্যাসেজটি। না ঠিকই আছে। কিন্তু কে পাঠালো ?সে নয়তো ? ১৯ বছর পর নতুন করে আবার কি করে এলো সেই বসন্তের ডাক ?
১৬।
১৯৯৩
এর একদিন।
লালমাটিয়া
মহিলা কলেজের গেইটে দাড়ানো আমি। অপেক্ষার অন্ত নেই। সে আসবে মিরপুর সেকসন ৬ থেকে। সেদিন ছিল তার
ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষার প্রথম দিন।গুটি গুটি বৃষ্টিতে ভেজা জনপদ। ইতস্তত থাকাতে থাকলাম আমি । না দেখা নেই। হঠাৎ ই নজরে পড়লো ফারুক
ভাইয়ের দিকে। টেক্সী
থেকে নামছে তারা দু'জন। সেই-ই আমাকে ইশারা করলো ,ফারুক ভাই একটু দূরে
অবস্থান নিল আমাদের সুযোগ করে দিয়ে। আর মাত্র দশ মিনিট। যা বলার বলে ফেল ,ডুকে যেতে হবে হলে। বললাম ,আজ রাতে জরুরীভাবে চট্টগ্রাম যাচ্ছি ,দু'দিন পর ফিরে আসব।
ছল ছল নয়নে একবার দেখলো সে আমার দিকে। তারপর কোন কথা না বলে হন হন করে চলে গেল
গেইটের ভিতর দিয়ে। টিকেট নিতে হবে তাই আর সেদিন অপেক্ষা করা হলোনা। দু'দিন পর যখন চট্টগ্রাম থেকে ফেরত আসলাম ,আসরের পর চিড়িয়ানার গেইটে দেখা হলো দু'জনের -সেই কি তুমুল বৃষ্টি ,আহ্ !
১৭।
"তার আর পর "!
কেন
যেন বৃষ্টি ভাল লাগতো দু'জনেরই। " আষাঢ়ে মেঘের" তর্জন গর্জনে প্রকম্পিত
ঢাকা নগরী । এরই মাঝে আমরা বেরিয়ে পড়তাম
ডেটিং এ। রাস্তা থাকতো ফাঁকা। হতো তুমুল ধারে বৃষ্টি। রিক্রাওয়ালা চেয়ে থাকতো মীরপুর সেকসন ৬ এর
সেই ছোট্ট গলিটার দিকে। কখন ডাক পড়বে তার তাই প্লাষ্টিক জড়িয়ে রেডি থাকতো সে। আমাকে বলতো ভাইয়া ,আর কটু সবুর করন ,আমি টের পাচ্ছি এখনই চলে
আসবেন আপা।
রিক্সাওয়ালা
আগেই রেডি থাকতো আমার জন্য সে সেকসন ৬ এর গলির মুখে। তার আপা নাকি আমার সাথে ফোনে আলাপ হবার পর
পরই বলে দিতো তাকে রেডি থাকতে। রিক্সাওয়ালা ও হিসাব করে গলি মুখে এসে আমার জন্য দাঁড়াত। আমাকে যখন দেখতো ,চিৎকার করে ডাক দিয়ে বলতো -ভাইয়া আমি এখানে ! আমার আর কষ্ট হতোনা তাকে খুঁজে পেতে।
সেদিনও সে রেডি । আমি পৌঁছলেই ডেকে নিলো রিক্সায় । বললো সে -ভাইয়া বলছিলাম না ,চিন্তা কইরেননা। ঐ দেখেন। মাথা বের করে দেখলাম। কাছেই চলে এসেছে সে। হাতটা ধরে রিক্সায় টেনে তুলে নিলাম তাকে।
চলতে শুরু করলো রিক্সা।
ঝম ঝম করে কিছুক্ষণ পর শুরু হয়ে গেল বৃষ্টি। বললাম -আজ যেন একটু শীত শীত লাগছে। বললো সে - তবে তো একটা কাজ করতে হয়। আমি বললাম -কি ? সে বললো দেখোইনা কি করি ! এ কথা বলেই সে বাড়িয়ে দিলো তার হাত বৃষ্টির দিকে। বৃষ্টিতে হাত বিজিয়ে আমার সার্টটা ফাঁক
করে তার হাতটা আমার বুকে লাগিয়ে রাখল। বললাম -এটা কি হচ্ছে ? সে বললো শরীরে তাপ দিচ্ছি যাতে সর্দি না
আসে !
==========================
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন