অধ্যাবসায় সফলতা প্রাপ্তির
মুলমন্ত্র
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
--------------------------
আজ কি বিষয় নিয়ে লেখব , কি
লেখব , কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলামনা । হঠাৎই মনে হলো কম্পিউটার আবিস্কারের কথা ।
যদি কম্পিউটার দিয়ে পুরা
দুনিয়া ঘুরে আসা যায় , যদি কম্পিউটারে পৃথিবীর যাবতীয় তথ্য ধরে রাখা যায় , যদি
কম্পিউটার থেকে সকল বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা যায় , যদি কম্পিউটার দিয়ে সবকিছুই করা
যায় , তবে আমার ব্রেইন বা মস্তিস্ক কম কিসে ? কম্পিউটারতো মানুষেরই ব্রেইন দিয়ে তৈরী
। আর কম্পিউটার
তো মানুষের ব্রেইনের কাছে কছুই নয় ।
আমিও তো মানুষ । যদি একজন
মানুষ তার ব্রেইন দিয়ে কম্পিউটার নামক একটা শূন্যস্থানে দুনিয়ার সবকিছু ভরে দিতে
পারে – তবে আমি কেন পারবনা ? আমি কেন পারবনা খাতার দু’টি খালি পৃষ্ঠা ভরিয়ে দিতে ?
যদি না পারি তবে আমি কেমন মানুষ ? মানুষ হিসাবে কেন আমার মানুষের মাঝেই বসবাস ?
আসলে আমিও মানুষ , ঠিক তাঁরই
মত যিনি কম্পিউটার সৃষ্টি করে নিজেকে মানুষ রূপে পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন । যিনি
মানুষের ক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছেন তাঁর ক্ষুদ্র ব্রেইন দিয়ে । যিনি তাঁর মানবিক জ্ঞান
দিয়ে সূর্যের আলোর ন্যায় পৃথিবী ব্যাপী সমগ্র মানব মনে আলোর ঝলসানো রূপ ঢেলে
দিয়েছেন ।
আমার গায়ের শক্তিও সেই
মানুষটির চেয়ে কোন অংশে কম নয় । আমার বাকশক্তিও তাঁর চেয়ে নিম্ন নয় । আমার
খাদ্যগ্রহণও তাঁর চেয়ে কম নয় । আমার চলার শক্তিও তাঁর চেয়ে ধীর নয় । আমার
বুঝশক্তিও তাঁর চেয়ে কম হতে পারেনা । আমার স্মরণ শক্তিও তাঁর কাছে নত হতে পারেনা ।
আমার জ্ঞান শক্তিও চাইলে করতে পারি তাঁরই মত । যদি সেই মানুষটি পৃথিবীকে আলোকিত
করতে পারে , তবে আমি কেন পারবনা ?
প্রত্যেক মানুষ বিধাতা
প্রদত্ত একই ক্ষমতা ও শক্তির অধিকারী । একজন মানুষ যা পারবে অন্য মানুষও তাই পারবে
, যদি তারা চেষ্ঠা করে,আরাধনা করে,অধ্যবসায় করে । কারণ , সকলের কাছেই সেই ক্ষমতা
রয়েছে যা অন্যজনের কাছে রয়েছে । যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়না । যা লুকানো রয়েছে আমাদের
অভ্যান্তরেই । সবাই চেষ্ট করেনা বলেই সবার কাছে সেই শক্তি ধরা দেয়না । তাই এই
সুপ্ত প্রতিভা বা লুকিয়ে থাকা শক্তিকে খুঁজে বের করতে চেষ্টা করতে হবে । সেই
ক্ষমতা অর্জনে করতে হবে অধ্যবসায় ।
অথচ আমরা সেই চেষ্টা করি না
। আমরা গড়তে চেষ্টা করিনা , আমরা ভাঙ্গতে চেষ্টা করি । আমরা ঐক্য হতে চেষ্টা করিনা
, আমরা বিভাজন হতে চেষ্টা করি । আমরা গর্তে পড়া মানুষকে উঠাতে চেষ্টা করিনা ,
মানুষকে গর্তে ফেলে দেবার চেষ্টা করি । আমরা বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে চেষ্টা
করিনা , আমরা বন্ধনকে ছিন্ন করার চেষ্টা করি । আমরা মানুষ হবার চেষ্টা করিনা ,
অমানুষ হবার চেষ্টা করি । আমরা সভ্য রূপ দিয়ে নিজেদের সাজাতে চেষ্টা করিনা ,
অসভ্যতার রূপ দিয়ে সাজতে চেষ্টা করি । আমরা কিছু সৃষ্টি করতে চেষ্টা করিনা ,
সৃষ্টিকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করি । আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চেষ্টা করিনা , অজ্ঞতা
দিয়ে অন্ধ থাকতে চেষ্টা করি । আমরা কল্যান মূলক কর্ম করতে চেষ্টা করিনা ,
অকল্যানমূলক কর্ম দিয়ে নিজেদের ধ্বংস করতে চেষ্টা করি ।
আমরা যা চেষ্টা করি তা হচ্ছে
শুধুমাত্র একে অপরকে দমানোর চেষ্টা । আমরা যা চেষ্টা করি তা শুধু একে অপরের চেয়ে
বড় হবার চেষ্টা । আমরা যা চেষ্টা করি তা শুধু অপরের সম্মানহানীর চেষ্টা । আমরা যা
চেষ্টা করি তা শুধু নিজে বেঁচে থেকে অপরকে মারার চেষ্টা । আমরা যা চেষ্টা করি তা
শুধু অপরের মুখে কালিমা লেপনের চেষ্টা । আমরা যা চেষ্টা করি তা শুধু সভ্যতা
ধ্বংসকরে অসভ্যতাকে ধারণ করার চেষ্টা । আমরা যা চেষ্টা করি তা শুধু উন্নয়নে
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে অনুন্নয়নের চেষ্টা । আমরা যা চেষ্টা করি তা শুধু সৎকর্মের
বিরোধীতা করে অসৎ কর্ম সম্পাদনের চেষ্টা । আমরা যা চেষ্টা করি তা শুধু মানুষ মেরে
অমানুষের পরিচয় দেয়ার চেষ্টা ।
আমরা যা চেষ্টা করি তা দিয়ে
কেবল প্রকাশ করি - আমাদের শক্তির অপচয় , আমাদের কাপুরুষতা , আমাদের অজ্ঞতা ,
আমাদের নির্লজ্জতা , আমাদের মনের কালিমা , আমাদের অসভ্যতা , আমাদের দস্যুতা ,
আমাদের অপারগতা , আমাদের অবাধ্যতা , আমাদের অলসতা , আমাদের শত্রুতা , আমাদের
হিংস্রতা , আমাদের অমানুষতা ।
এই যদি আমাদের চেষ্টা হয় তবে
আমাদের সুপ্ত প্রতিভা বা লুকায়িত শক্তি প্রকাশ হবে কিভাবে ? আমাদের যা শক্তি
প্রকাশ্য তাই যদি আমরা ধ্বংস করার চেষ্টা করি , আমাদের লুকায়িত শক্তি অর্জনের
চেষ্টা করার সময় কিভাবে হবে আমাদের ? মানুষ টাকা বিনিয়োগ করে লাভের আশায় ,
লোকশানের আশায় নয় । তেমনি আমাদের যা শক্তি আমাদের কাছে বর্তমান তা বিনিয়োগ করতে
হবে নতুন শক্তি অর্জনে , তাকে ধ্বংস করে শূণ্য হতে নয় । বর্তমান শক্তি কাজে
লাগিয়েই আমাদের নতুন শক্তি অর্জনে স্বচেষ্ট তে হবে ।
মানুষদের মধ্যে যাঁরা অলৌকিক
ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন , যে আলোতে তাঁরা পৃথিবীকে আলোকিত করেছেন , তাঁদের সেই
শকতি অর্জনের লক্ষ্যে আমাদেরকে তাঁদেরই পথে ধাবিত হতে হবে । তাঁদেরই চিন্তায়
আমাদেরকে চিন্তিত হতে হবে । তাঁদেরই দীক্ষায় আমাদেরকে দীক্ষা নিতে হবে ।
একটা মানুষের কাছে একটা
হিংস্র বাঘ এসে তার দুই পাও সম্মুখে দিয়ে মাথাটি তার পদদ্বয়ের উপরে রেখে ঐ মানুষটির
কাছে বাঘটি তার বশ্যতা স্বীকার করে ! আর ঐ বাঘটিকে দেখে অন্য মানুষ ভয়ে পালায় ! কি
সেই শক্তির জোরে ঐ মানুষটি বাঘটিকে নিজের অধিনস্থ করে বন্ধু করে নিয়েছে ? আমাদের
ভাবতে হবে , এ ভাবনার ফলেই বেরিয়ে আসবে বাঘকে বশিভুত করে অধিনস্থ করার শক্তি ।
এটা বিষধর সাপ নিয়ে সাপুড়ে
তার শক্তির জোরে খেলা দেখায় ! সাপটি সাপুড়ের হাতের ইশারায় নাচে তারই কথামত ! অথচ
সেই সাপটিকে অন্যেরা দেখলেই তাদের জান যাবার মত অবস্থা হয় ! কি সেই শক্তি সাপুড়ের
কাছে ? ভাবতে হবে সেই শক্তি নিয়ে । বেরিয়ে আসবে সেই শক্তির সুত্র ।
প্রথম কম্পিউটার নির্মাতা
কম্পিউটার নির্মান করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন ! করে দিয়েছেন আলোকিত
বিশ্বভূবন ! আজ সেই কম্পিউটার দিয়েই আমেরীকা মিশাইল ছুড়ছে আফগানিস্তানে বসে
ইয়েমেনে । সেই কম্পিউটার দিয়েই দখল করে নিয়েছে পৃথিবীর সকল মানুষ পৃথিবীর সকল জনপদ
। কোন সেই শক্তির জোর ছিল প্রথম কম্পিউটার নির্মাতার ? ভাবতে হবে সেই শক্তি নিয়ে ।
বেরিয়ে আসবে কম্পিউটার নির্মাতার সেই শক্তির খণি ।
দুই ভাই যখন হাওয়াই জাহাজ
বানিয়ে আকাশে উড়ালেন , তখন বিশ্ব চমকে গিয়েছিল ! তাঁদের কি শক্তি ছিল হাওয়াই জাজ
বানানোর মূলে ? ভাবতে হবে সেই শক্তি নিয়ে । এসে যাবে বিমান আবিস্কারের কৌশল শক্তি
নিজেদের আয়ত্বে ।
একটা মানুষ পানির উপর দিয়ে
হেঁটে যাচ্ছে কোন প্রকার বাহন ছাড়াই ! কি সেই শক্তি মানুষটির কাছে ? ভাবতে হবে সেই
শক্তি অর্জনে কি করতে হবে ?
একটা মানুষ রয়েছে বাংলাদেশ আর
সেই তাওয়াফ করছে মক্কার বাইতুল্লাহয় ! কোন সেই শক্তির বলে ঐ মানুষটি এ অলৌকিক
কাজটি করছেন ? ভাবতে হবে এ ক্তি অর্জনে তাঁরই মত ।
একটা মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত
আর অন্য একজন মানুষ তাঁর হাতের ইশারায় তাকে জীবন দানে সাহায্য করছে । আর মৃত্যুমুখ
থেকে উঠে আসছে ঐ ব্যক্তি তৎক্ষণাৎ ! কোন সেই শক্তির জোরে এ দূরুহ কাজটি সফল হয়েছে
? ভাবতে হবে এ শক্তি অর্জনে , সেই মানুষটি ঠিক যেভাবে ঐ শক্তি অর্জন করেছিলেন
সেভাবে । এভাবেই মানুষের ভিতরে লুকিয়ে থাকা সকল সুপ্ত প্রতিভাকে ধাপে ধাপে জাগিয়ে
তুলতে হবে ।
মানুষের কল্যানেই মানুষ ,
মানুষের অকল্যানে নয় । মানুষের কল্যানে যে মানুষ এক ধাপ অগ্রসর হবে , সে মানুষ
দুইধাপ পরিমাণ সফলতা অর্জন করবে । যে মানুষ মানুষের অকল্যানে এক ধাপ অতিক্রম করবে
, সেই মানুষ দুই ধাপ সমান অগ্রসর হতে পিছিয়ে যাবে । এটাই মানব জীবনের রীতি ।
আজ আমরা মানুষের কল্যানে নয় ,
মানুষের অকল্যানেই আমাদের তাবৎ কর্ম । তাই আমরা সর্বত্রই হচ্ছি অসফল । আমাদের
সবখানেই হতে হচ্ছে নাজেহাল । আমাদের জীবন যাপনে আসছে দুর্ভোগ – দুর্যোগ – দুর্গতি
। যেদিন থেকে আমরা মানুষের অকল্যান ভাবনা ছেড়ে কল্যান ভাবনায় আত্মনিয়োগ করতে পারব
, সেদিন থেকেই আমাদের জীবন যাপন হয়ে উঠবে সুন্দর – সুষমামন্ডিত। যেদিন থেকে আমরা
মানুষদের অকল্যানের চেষ্টা ছেড়ে কল্যানমুখী চিন্তা-চেষ্টায় নিজেদের নিয়োজিত করতে
পারব , সেদিন থেকেই আমাদের কাছে আসতে শুরু করবে সফলতা । যেদিন থেকেই আমাদের
সৃষ্টিশীল কর্মে মনোনিবেশ হবে , সেদিন থেকেই আমাদের লুকায়িত শক্তি সুপ্ত প্রতিভা
জাগ্রত হতে থাকবে । যেদিন থেকেই আমাদের জ্ঞান মানবোপকারে বিতরণ হতে থাকবে , সেদিন
থেকেই আমাদের অলৌকিক জ্ঞান অর্জিত হতে থাকবে ।
আমাদের লুকায়িত শক্তি অর্জনে
, সুপ্ত প্রতিভা জাগ্রত করনে আমাদের প্রতিটি বিষয়ে চেষ্টা করতে হবে , হতে হবে
অধ্যবসায়ী । যে কোন শক্তি অর্জনে আমাদের ঐ শক্তি অর্জনের লক্ষ্যে প্রাণপণ চেষ্টা
চালিয়ে যেতে হবে । তবেই হবে , হওয়া যাবে সেই চেষ্টায় সফল ।
বলছিলাম – আজ কি বিষয়ে লিখব
, কি লিখব বুঝে উঠতে পারছিলামনা । এতক্ষণ যা লিখলাম তা যে লিখতে পারব সেটাও ভাবতে
পারিনি । ওই যে বললাম – কম্পিউটারের জন্মদাতা হচ্ছে মানুষ বা মানুষের মাথা বা
মস্তিস্ক বা ব্রেইন । যেখানে কম্পিউটার সব পারে , সেখানে কম্পিউটারের জন্মদাতা
মানুষ সব পারবেনা কেন ? আমিও আজ দেখিয়ে দিলাম – যা পারবনা বলে ভেবেছিলাম , তা আমি
পেরেছি । যে হাতে লেখা আসছিলনা , সে হাতে লিখে এ নাতিদীর্ঘ রচনা সৃষ্টি করতে
পেরেছি !
মানুষ চেষ্টা করলে সব পারে ।
বিধাতা প্রদত্ত জ্ঞান ও শক্তি যতটুকু মানুষের মাঝে বিদ্যমান ঠিক ততটুকুই মানুষ তা
ব্যবহার করতে পারবে । এর বেশী নয় । যে জ্ঞান ও শক্তি বিধাতা তার নিজ হাতে রেখে
দিয়েছেন , সেগুলো ছাড়া মানুষ সবগুলোই অর্জন করতে পারবে । আমি , আপনি সবাই তা পারব
। যদি ত অর্জনের চেষ্টায় নিয়োজত রাখা যায় ।
তাই বলতে হয় – চেষ্টায়ই
সফলতার সোপান । অধ্যাবসায় সফলতা প্রাপ্তির মুলমন্ত্র । সাধনার ফলই সফলতা । লেগে
থাকতে হবে কর্মপীঁছু । সফলতা দেখা দেবে তবেই ।
======================================
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন