মে দিবসের ভাবনা
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
-----------------------------
আজ ১লা মে । বিশ্ব মে দিবস ।
সকলকে জানাচ্ছি মে দিবসের সংগ্রামী শুভেচ্ছা ।
সেই সাথে স্মরণ করছি মে দিবস
তথা শ্রমিক আন্দোলনের সেইসব মানুষদের যাঁরা বিশ্ব শ্রমিক সমাজের কল্যানে ১৮৮৬
সালের ১লা মে নিজেদের আত্মোৎসর্গ করেছিলেন । তাঁদের জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলী ।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সমাজের
অধিকার আদায় এবং মর্যাদা রক্ষার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বিশ্বের সকল মেহনতী জনতা
আজকের এই দিনটি “ আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস ’’ হিসাবে পালন করে আসছে । তাই এ
দিনটি নিয়ে শ্রমিক স্বার্থের দিকে দৃষ্টি দিয়ে আমার আজকের বিশেষ এই লেখনী । সকলকে
একবার চোখ বুলিয়ে নিতে অনুরোধ করছি ।
মে দিবস কি ?
১৮৮৬ সালের ১লা মে আমেরীকার
শিকাগো শহরের হে মার্কেটের চত্বরে সংঘটিত শ্রমজীবি মানুষের উপর অতর্কীত হামলা
চালিয়ে বিশ্বশ্রমিকের অধিকার আদায় ও মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের
নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার দিনটাকে স্মরণ এবং তাদের সেই চেতনায় নতুন ভাবে উদ্ধুদ্ধ
হয়ে শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষনের লক্ষ্যে জাগ্রত থাকার শপথ গ্রহণের একটা বিশেষ দিন এই
মে দিবস ।
নানাবিধ উপাধিতে আজকের
দিনটিতে এই দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় । মে দিবসকে বলা হয় – আন্তর্জাতিক
শ্রমিক সংহতি দিবস । তাছাড়া ও এ দিবসটি – আন্তর্জাতিক শ্রমিক হত্যা দিবস , লেবার
ডে , ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কার ডে ইত্যাদি । মেহনতি জনতার আন্তর্জাতিক সংহতি ও
সংগামের স্মৃতিস্মারক এই দিবস । বিশ্বের শ্রমজীবি মানুষের অধিকার আদায়ের দিন এ
দিবস ।
মে দিবস কেন ?
শ্রমিকদের অধিকার আদায় এবং
মর্যাদা সমুন্নত রাখতে এ দিবসের আয়োজন । মালিক – শ্রমিক সম্পর্ক , দায়িত্ব ও
কর্তব্যকে স্মরণ করার জন্য এ দিবস । মালিক পক্ষের শোষণ , বঞ্চনা থেকে শ্রমিকদের
মুক্তির আকান্খা নিয়ে ১৮৮৬ সালের ১লা মে’র সেই সংগ্রামের স্মৃতি ও চেতনায় নতুন
ভাবে জাগ্রত হবার লক্ষ্যে এ দিবসের আয়োজন ।
মে দিবসের সংক্ষিপ্ত ইতিাস ঃ
১২৬ বৎসর পূর্বে ১৮৮৬ সালের
১লা মে আমেরীকার শিকগো শহরের শ্রমিকরা ৮ ঘন্টা কর্মদিবস ও কর্মক্ষেত্রে মানবতার
আইন প্রতিষ্ঠার দাবী নিয়ে হে মার্কেটের চত্বরে সমাবেশ করতে গেলে রাস্ট্রশক্তির
নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়ে শিকাগোর হে মার্কট চত্বরে পুলিশের বন্দুকের গুলি
বুকে ধারণ করে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ১১ জন শ্রমিক বিশ্ব শ্রমিক জাতিকে
নতুনভাবে বাঁচবার পরণা ও শিক্ষা দিয়ে চলে যান পৃথিবী থকে চিরদিনের জন্য ।
প্রতিষ্ঠা করে যান আজকের মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস ।
এ ঘটনার পূর্বে শ্রমিকদের
করতে হতো দৈনিক ৯ থেকে ১৮ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম । করতে হতো তাদের মানবেতর জীবন
যাপন । মিলতো নগণ্য পারিশ্রমিক । দাসত্ব জীবন ছিল কারো কারো । মালিক পক্ষের ইচ্ছায়
শ্রমিকদের উপর চলতো নানাবিধ নিষ্ঠুর নির্যাতন ।
সে সময় ছিলনা বিশ্বের কোথাও
শ্রমিক আইন । শ্রমিকদের মানবিক অধিকার , অর্থনৈতিক অধিকার বতে কিছুই ছিলনা । ছিলনা
তাদের স্বাধীনতা । ছিলনা চাকরীর স্থায়িত্ব ও ন্যায় সঙ্গত পারিশ্রমিকের কোন
নিশ্চয়তা ।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে এইসব
মানবতা বিরোধী কর্মের অবসান এবং শ্রমিকদের ৮ ঘন্টা কর্মদিবস নির্ধারণ , প্রাপ্য
অধিকার আদায় , মর্যাদা সমুন্নত রাখতে তথা মেহনতি মানুষদের জন্য মানবতার আইন
প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৮৮৪ সালে শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক আন্দোলন শুরু করেন । তাদের
এ দাবী কার্যকর করার জন্য তারা ১৮৮৬ সালর ১লা মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন ।
তাদের এ দাবী মালিক পক্ষ
মেনে না নিলে ১৮৮৬ সালের ৪ঠা মে সন্ধ্যায় শিকাগোর হে মার্কেট চত্বরে আমেরীকা ও
কানাডার প্রায় তিন লক্ষ শ্রমিক জোটবদ্ধ হয়ে সমাবেশ করে । শ্রমিকদের সমাবেশের মুল
কার্যক্রম শুরু হবার অল্প কিছুক্ষণ পরই অদূরে দন্ডায়মান পুলিশ বাহিনীর নিকটে হঠাৎ
বোমা বিস্ফোরিত হলে এক পুলিশ তাতে নিহত হয় । সাথে সাথেই পুলিশ বাহিনী সমাবেশের উপর
অতর্কীত হামলা চালিয়ে গুলিবর্ষণ করতে থাকলে তাতে ১১ জন শ্রমিক মৃত্যুর কোলে ঢলে
পড়েন । পুলিশ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয় আরো ৮ জনকে শ্রমিককে ।
১৮৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর এক
প্রহসনমুক বিচার আয়োজনের মাধ্যমে উক্ত ৮ জনের মধ্য থেকে ৬ জনের ফাঁসী কার্যকর করা
হয় । বাকী দুইজনের মধ্যে একজনকে দেয়া হয় ১৫ বৎসরর কারাদন্ড , আর অপর জন কারাগারের
ভিতরেই আত্মহত্যা করেন । বোমা বিষ্ফোরণকারীর পাওয়া যায়নি কোন হদিস ।
১৮৮৯ সালের ১৪ই জুলাই
প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বিশ্ব শ্রমিক সম্মেলনে ১লা মে‘কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক
দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । সেই থেকে প্রতিবৎসর ১লা মে’কে মে দিবস বা
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবে পালন করে আসছে বিশ্ববাসী ।
পরবর্তীতে ১৮৯৩ সালের ২৬শে
জুন পুলিশ হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত উক্ত ৮ জন শ্রমিককে নিরাপরাধ বলে ঘোষনা দেয়া হয়
।
ইসলামের দৃষ্টিতে মে দিবস ঃ
ইসলামের দৃষ্টিতে ১২৬ বৎসর
পূর্বের মে দিবসের ঘটনা ও চেতনা ইসালামী শ্রমিক স্বার্থ ও মর্যাদার প্রেক্ষীতে
কিছুই নয় । শ্রমিক স্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট মে দিবসের ঘটনায় শ্রমিকদের স্বার্থ
সংরক্ষিত হয়েছে বললে ভুল হবে । কেননা , শ্রমিক স্বার্থ পুরোটাই সংরক্ষিত হয়েছিল
১৪০০ বৎসর পূর্বে ইসলাম আগমনের সাথেই । মে দিবসের চেতনা বিধর্মীদের গণতান্ত্রিক
চেতনা , যা পালন করা মুসলমানদের জন্য ধর্মহীনতা ব্যতিত কিছু নয় । কারন , এই
চেতনাটা ১৪০০ বৎসর পূর্বেই রাসূল ( সঃ ) কর্তৃক মুসলমানদের মাঝে বিশ্ব কল্যানের
লক্ষ্যে ঘোষিত হয়েছিল । তাই মুসলমানদের জন্য মে দিবস পালন অবৈধ , অপ্রয়োজনীয় ,
অপ্রসাঙ্গিক ।
যদি শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের
দিন হিসাবে কোন দিনকে মুসলমানদের পালন করতে হয় তবে রাসূল ( সঃ ) কর্তৃক ঘোষিত
দিনটিকেই পালন করতে হবে । আর সেই দিনটি হলো ইসলামের পরিপূর্ণতার দিন , যেদিন রাসূল
( সঃ ) বলেছিলেন – “ আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন ( জীবন চলার পথ ) কে পরিপূর্ণ
করে দেয়া হলো ’’।
ইসলামে শ্রমিকের অধিকার ,
মর্যাদা ও স্বার্থ সংরক্ষণ ঃ
শ্রমিকের অধিকার , মর্যাদা ও
স্বার্থ সংরক্ষণ বিষয়ে ১৪০০ বৎসর পূর্বে রাসূল ( সঃ ) কর্তৃক যে সব ঘোষনা দেয়া
হয়েছিল , সেগুলোই ইসলামী দৃষ্টিতে শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণের চেতনা হিাবে পরিগণিত ও
পালনযোগ্য , মুসলমান তথা বিশ্ব শ্রমিক সমাজে গ্রহণযোগ্য চিরন্তন চেতনা। আর এসব
চেতনাবলীতে রাসূল ( সঃ ) ঘোষনা দিয়েছিলেন – শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই ।
রাসূল ( সঃ ) মালিকদের সতর্ক
করে দিয়েছিলেন এইভাবে – “ প্রত্যেকেই রক্ষক , তাকে তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করা হবে ’’।
শ্রমজীবি মানুষদের পরিশ্রম
সম্পর্কে আল্লাহ পাক আল কোরানে ঘোষনা করেন – “ নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি
শ্রমজীবি করে ’’।
শ্রমিকের পারিশ্রমিক প্রদান
সম্পর্কে রাসূল ( সঃ ) ঘোষনা করেছিলেন – “ শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর পূর্বেই তার
পারিশ্রমিক দিয়ে দাও ’’।
শ্রমিকর মর্যাদা রক্ষায়
রাসুল ( সঃ ) এর ঘোষনা – “ কারো জন্য নিজের উপার্জন অপেক্ষা উত্তম আহার্য আর কিছু
নেই । আর আল্লাহর নবী দাউদ ( আঃ ) নিজে জীবিকা নির্বাহ করতেন ’’।
শ্রমিকের অধিকার সম্পর্কে
রাসুল ( সঃ ) র ঘোষনা – “ মহান আল্লাহ তাআলা বলেন – কিয়ামতের দিন তিন বক্তির
বিরূদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হবে । তাদের মধ্যে একজন হল – যে শ্রমিকের নিকট থেকে
পূর্ণ শ্রম গ্রহণ করে , অথচ পূর্ণ পারিশ্রমিক দেয়না ’’।
শ্রমিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য
সম্পরকে রাসূল ( সঃ ) এর ঘোষনা – “ আল্লাহ ঐ শ্রমিককে ভালবাসেন , যে সুন্দরভাবে
কর্ম সম্পাদন করে ’’।
তিনি এ বিষয়ে আরও ঘোষনা দেন –
“ তিন শ্রেনীর লোকের দ্বিগুন সাওয়াব প্রদান করা হবে । তাদের এক শ্রেনী হল – ঐ
শ্রমিক , যে নিজ মালিকের হক্ব আদায় করে এবং আল্লাহর হক্ব ও আদায় করে ’’।
এভাবেই ইসলামে শ্রমিকের
স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়েছে ।
মে দিবসের ভাবনা ঃ
মে দিবস যদিও শ্রমিকদের
অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার প্রত্যয় নিয়ে প্রতিবৎসর বিশ্ববাপী পালিত হয়ে আসছে
, তবুও বিশ্ববাপী আজও শ্রমিকরা তাদের প্রকৃত অধিকার ও মর্যাদা প্রাপ্তি থেকে
বঞ্চিত রয়েছে ! এখনও বিশ্বের প্রায়ই সর্বত্র শ্রমিকদের উপর চলছে নির্যাতনের
ষ্টীমরোলার । চলছে এখনও কোন কোন দেশে দৈনিক ৯ থেকে ১৮ ঘন্টা পরিশ্রম । এখনও
শ্রমিকদের দাস রূপে ব্যবহার করা হয় কোন কোন দেশে । ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তি থেকে
তাদের রাখা হচ্ছে বঞ্চিত ।
চলছে শিশুশ্রম । আরবদেশে
শিশুদের বানানো হচ্ছে উঠের জকি । মাথায় ঝুড়ি নিয়ে কুলির কাজ করছে অবুঝ শিশুরা ।
সারাদিন তারা শ্রম দেবার পরও মিলছেনা তাদের যথাযোগ্য পারিশ্রমিক । মানা হচ্ছেনা
মানবতার আইন ।
বিভিন্ন কলকারখানায়
শ্রমিকদের কোন সুযোগ সুবিধা তো দেয়াই হচ্ছেনা , ন্যায্য বেতন পরিশোধ করতেও দেয়া
হচ্ছে ভোগান্তি । এখন মালিক পক্ষ মনে করছে শ্রমিকরা কোন মানুষ নয় , তাদের কেনা
গোলাম । শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে অর্জিত অর্থ কেড়ে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন অজুহাতে
। কোন কোন দেশে দাসের মত ২৪ ঘন্টা শ্রমিকদের ন্যায পাওনা দিতে করছে গড়িমসি ।
ইন্স্যুরেন্সের নাম দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিবছর শ্রমিকদের কষ্টার্জিত বিপুল
পরিমাণ অর্থ । ওয়ার্ক পারমিট / রেসিডেন্ট পারমিট নবায়নের সময় মালিক পক্ষ দাবী করছে
শ্রমিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ । যা না দিলে দেখানো হয় চাকরিচ্যুতির ভয় । এ
ক্ষেত্রে আরব দেশ গুলো রয়েছে শীর্ষে ।
আরব দেশগুলোতে শ্রমিকদের
ক্ষেত্রে কোন প্রকার আইন মানা হচ্ছেনা । না মানা হচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রম আইন আর না
মানা হচ্ছে মানবাধিকার আইন । বিদেশী শ্রমিকদের তারা দাসের মত ব্যবহার করছে । সকল
প্রকার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখে ন্যায্য পাওনা নিয়েও করছে গড়িমসি । ৮ ঘন্টা
শ্রমের বদলে তারা শ্রমিকদের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে ৯ থেকে ১৮ ঘন্টা শ্রম ।
শ্রমিকরা মালিক পক্ষের কথা মত না চললে পাঠিয়ে দো হচ্ছে তাদের স্বদেশে । বিভিন্ন
ভুয়া অভিযোগের ভিত্তিতে চালান করে দেয়া হচ্ছে জেলখানায় । শ্রমিকদের উপর বিভিন্ন
ভাবে টর্চার চালিয়ে মানবতার আইন লঙ্গন করছে বেশীর ভাগ আরব দেশ সমুহ , বিশেষ করে
সৌদি আরব ।
সৌদি আরবে নিত্য নতুন আইন
হচ্ছে বিদেশী শ্রমিকদের মানষিক যন্ত্রণার উদ্ভবে । অথচ এই সব বিদেশী শ্রমিকদের
কল্যানে কোন আইন পরিলক্ষিত হচ্ছেনা । তারা মানছেনা আন্তর্জাতিক শ্রম আইন । দৈনিক
কর্ম সময়ের কোন নিদ্রিষ্টতা নেই এখানে , নেই বড়তি কাজের জন্য কোন ওভারটাইম
প্রদানের ব্যবস্থা । যে যেভাবে পারছে বিদেশী শ্রমিকদের খাটিয়ে নিচ্ছে । বঞ্চিত
রাখছে তারা বিদেশী শ্রমিকদের চিত্তবিনোদন থেকেও । বিদেশী শ্রমিকরা হাড়ভাঙ্গা
পরিশ্রম করলেও এখানে উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাচ্ছেনা বহুলাংশ শ্রমিক । বিশেষ করে হাউজ
ড্রাইভার , দারোয়ান , গৃহপরিচারিকাদের অবস্থা তো অত্যান্ত করুন । এসব শ্রমিকদের
তারা ২৪ ঘন্টা দাসের মত খাটিয়ে মালিক পক্ষ উপযুক্ত পারিশ্রমিক তো দিচ্ছেইনা ,
ন্যায্য প্রাপ্তি প্রদানের সময়ও তারা শ্রমিকদের সময়মত তা প্রদান না করে হয়রানী
করছে । করছে বিভিন্ন সুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত ।
সর্বোপরি বলতে হয় ,
শ্রমিকদের পারিশ্রমিক , কর্মসময় , সুযোগ – সুবিধা মে দিবসের পথ ধরে বিভিন্ন দেশে
পরিবর্তন সাধিত হলেও বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশে এ পরিবর্তন আসেনি । ইউরোপ ,
আমেরীকা সহ বিশ্বের অনেক দেশে শ্রমিকদের অধিকার আইন দ্বারা আংশিক সংরক্ষিত হলেও এখনো বাংলাদেশ , সৌদি আরব
সহ অধিকাংশ দেশ সমুহে শ্রমিকদের মর্যাদা সম্পর্কে মালিক পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির তেমন
কোন পরিবর্তন ঘটেনি ।
শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে
যে সব কলকারখানা , প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হয়েছে , হচ্ছে সেইস প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ
উক্ত শ্রমিকদের নিয়ে কখনো ভাবেনি , ভাবেনা , ভাবতে চাননা । ফলে সেইসব শ্রমিকদের
জীবনমানের কোন উন্নয়ন ঘটেনি , ঘটছেনা। অধিকাংশ শ্রমিকের শ্রমিকের মিলেনি শ্রমিকের
স্বীকৃতিও। রিক্রা শ্রমিক , গৃহশ্রমিক , নারী শ্রমিক , শিশু শ্রমিক , নির্মাণ শ্রমিক , কৃষি শ্রমিকসহ এমনতর বহুবিধ শ্রমিকের
শ্রমিক হিসাবে মিলেনি স্বীকৃতি । শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য
রেখে বাড়ানো হচ্ছেনা শ্রমিকদের বেতন অবকাঠামো ।
এইসব অসঙ্গতি দেখে মনে হচ্ছে
আরো একটা মে দিবসের সুচনা অধিক প্রয়োজনীয় হয়ে দেখা দিয়েছে । আরো একবার শ্রমিকের
মর্যাদা ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ডাক দিতে হবে শীঘ্রই । না হলে আসবেনা শ্রমিকদের
কাছে তাদের ন্যায্য অধিকার , সংরক্ষিত হবেনা তাদের মর্যাদা ।
সবশেষে বলতে হয় , মে দিবস
শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে । তাই শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ সহ মানব
সমস্যার যাবতীয় সমাধানে মানব রচিত কোন মতবাদই উপযুক্ত নয় । শ্রমিকদের মর্যাদা
রক্ষায় রাসূল ( সঃ ) কর্তৃক ঘোষিত ১৪০০ বৎসর পূর্বের সেই ইসলামী শ্রম আইন
বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আসবে শমিকদের প্রকত মুক্তি ও কল্যান । আর রাসূল ( সঃ ) এর
নির্দেশীত পথেই আসবে মানব সমস্যার সমপূর্ণ সমাধান । ইসলামী শ্রমনীতির বাস্তবায়ন
ছাড়া যেমন কখনো শ্রমিক সমাজের মুক্তি আসবেনা , তেমনি ইসলামী মানবতার আইন ছাড়া মানব
সমাজের কখনো শান্তি আসবেনা ।
তাই মানব সমাজ ও শ্রমিক
সমাজের উচিৎ ইসলামী মানবতার আইন এবং ইসলামী শ্রমিক আইনের বাস্তবায়নে যথাশীঘ্র সকল
প্রকার কার্যক্রম শুরু করা ।
মহান আল্লাহ পাক পৃথিবীর এই
ক্রান্তিলগ্নে আমাদের মন – মগজ – মননে উত্তম বিবেক দান করতঃ সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে
ক্ষমতা দান করুন । আমীন ।।
===============================================
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন