বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হোক
সুচিন্তিত বিশ্বায়নের মন্ত্র বলে
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
-----------------------------------
ফেব্রোয়ারী শেষ হয়ে এলো । একুশের বইমেলার আর একদিন বাকি । দীর্ঘ একমাসের বই মেলায় বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন ও বাংলা সাহিত্যের বিশ্ব বাজারে প্রচারের লক্ষ্যে গুরুত্বপুর্ণ কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি ।
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা বিশ্বদরবারে স্বীকৃতি পাবার কয়েক বৎসর কেটে গেলেও এখনও স্থান করে নিতে পারেনি বিশ্ব সংসদের ভাষাগুলোর সারিতে । তাই বলতে হয় - আমাদের বাংলা ভাষা বিশ্ব দরবারে এখনও অবহেলিত । আর এ অবহেলিত হবার কারণ আমরাই । আমরা বিশ্বদরবারে আমাদের পরিচয় করাতে কোন উদ্যোগ নিচ্ছিনা , আমরা বিশ্বায়নের শ্লোগান দিলেও আমাদের বিশ্বায়নের যথার্থ কার্যাবলী গ্রহন করছিনা ।
দীর্ঘ একমাসের জাতীয় বইমেলায় আমরা বিদেশী সাহিত্যের অনেক বই বাংলায় অনুবাদ করে নিজেদের জ্ঞানকে বিদেশী জ্ঞানের কাছে নতজানু করতে পেরেছি । কিন্তু আমাদের বাংলা সাহিত্যের কোন বই বিশ্বমানের লক্ষ্যে ইংরেজীতে অনুবাদ করে আমাদের জ্ঞানকে বিদেশী জ্ঞানের কাছে সমুন্নত করতে চেষ্ঠা করা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই ।
আমাদের বাংলা সাহিত্যের অনেক বড় বড় সাহিত্যিক , অমর সাহিত্যিক , নাম করা সাহিত্যিকদের পরিচিতি থাকলেও তাদের কোন বই বিশ্বমানের করা হয়েছে কিনা বা বাংলা সাহিত্যিকদের বিশ্বায়নের লক্ষ্যে কোন কর্মসুচি গ্রহন করা হয়েছে কিনা বুঝতে পারছিনা। আমাদের দেশে বিদেশী বই অনুবাদ করে যে হারে বিদেশী সাহিত্যের বিশ্বায়নের মনোভাব দেখতে পাচ্ছি , সে হারে যদি আমাদের বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত বইগুলো ভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে বিশ্বায়নের উপযোগী করা হতো আমার মনে হয় , বিদেশী জ্ঞানের কাছে আমাদের জ্ঞানকে নতজানু করতে হতোনা ।
তাই এখন যাঁরা বিদেশী সাহিত্য অনুবাদ করে , দেশে বিদেশীদের জ্ঞান প্রচারে স্বচেষ্ঠ রয়েছেন , তাঁরা দেশী সাহিত্য অনুবাদ করে বিশ্ব দরবারে দেশীদের জ্ঞান প্রচারে স্বচেষ্ঠ হলে বাংলা সাহিত্যের মূল্যায়ন বিশ্ব দরবারে অনেক গুণে বেড়ে যেতো । বাংলা সাহিত্য শুধুমাত্র বাঙ্গালীদের কাছে কোনঠাসা হয়ে পড়ে থাকতোনা ।
আজকে আমরা যেমন আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে বিদেশী ভাষার ( ইংরেজী , উর্দু , ফার্সী ) পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে পাঠদান করছি , তেমনি বিদেশীরাও আমাদের ভাষার পাঠ্য বইয়ের তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান করত । কারণ আমি মনে করি আমাদের জ্ঞান বিদেশীদের জ্ঞানের চেয়ে কম নয় । পার্থক্য আমরা শুধু নিতেই জানি , দিতে জানিনা ।
পুরোটা বিশ্ব যখন GIVE AND TAKE পদ্ধতিতে চলছে , আমাদের জ্ঞান শুধু আমাদের কাছেই থাকবে কেন ? আমরা যদি বিদেশীদের জ্ঞান নিতে পারি , বিদেশীরা আমাদের জ্ঞান নিতে পারবেনা কেন ? বিদশীরা যদি আমাদেরকে দিতে পারে , আমরা কেন তাদের দিতে পারবনা ? তাদের খাদ্য যদি আমরা খেতে পারি , তারা কেন আমাদর খাদ্য খেতে পারবেনা ?
সবশেষে বলতে হয় - বিশ্বায়ন কি শুধুমাত্র উলঙ্গপণা আমদানীর নাম , নাকি বিশ্বায়ন সমগ্র পৃথিবীর মানুষদের চিন্তা - বুদ্ধি - জ্ঞান - মন বিনিময়ের আয়োজনের নাম ? বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হোক সুচিন্তিত বিশ্বায়নের মন্ত্র বলে ।
=======================================
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন