আমার লেখালেখির অন্তরালে ...
( পর্ব - ৩ )
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
--------------------------------
কিছুদিন পর আর একটা ছন্দের দুটি লাইনের প্যারোডী রচনা করি । মেয়েটিকে একদিন না দেখে মনের কষ্টে এ প্যারোডী রচনা । মূল ছন্দটি ছিল -
“ ডালিম পাকিলে পরে নিজ ফেটে যায় ,
ছোট লোক বড় হলে বন্ধুকে কাঁদায় । “
আর আমি রচনা করেছিলাম -
চেনা লোক চলে গেলে স্মৃতি রেখে যায় ,
মনেতে দাগ লাগলে মুছেনা যে হায় ।
একদিন পর যখন মেয়েটি স্কুলে আসলো ক্লাস শেষে যাবার পথে সেটিও আগেরটার মতো তাকে দিয়ে দিই । বেশ ক’দিন পর মেয়েটি একদিন তাদের বাড়ির কাছে আমার পথ আগলে দাঁড়ালো । আমর সাথে ছিলো আরও তিনটা ছেলে । মেয়েটি আমার হাত ধরে টান দিলে ছেলে গুলো দাঁড়িয়ে যায় । তারা খ্যাঁপে যায় মেয়েটির উপর । মেয়েটিকে মারতে আসলে আমি তাদেরকে সরিয়ে দিই । তারপর মেয়েটি আমাকে নিয়ে কি করতে চায় তা দেখতে থাকি । “ তোরা হাঁটা দে , আঁই আইর “ ( তোমরা হাঁটা দাও , আমি আসছি ) এ কথা বলে আমি ছেলেগুলোকে যেতে বলি । তারা কিছুদূর চলে গেলে মেয়েটি আমাকে একটা আমগাছের নীচে নিয়ে যায় । তারপর বলে - “ বয় “( বস্ )। আমি বসলে মেয়েটিও আমার পাশে বসে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদতে থাকে। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল - “ তোরে ন দেইলি আঁর ভালা লাগেনা , এতদিন তোর ল কথা ন কই বহত কষ্ট পাই “ ( তোরে না দেখলে আমার ভালো লাগেনা , এতদিন তোর সাথে কথা না বলে অনেক কষ্ট পেয়েছি )। কথা শেষ করে সে তার ফ্রকের ভিতর থেকে একটা কাগজ বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে ঘরের দিকে চলে যায় । আমিও বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করি ।
কাগজটা বের করে খুলে দেখি পথেই । তাতে চারটি লাইন কাঠপেন্সিল দিয়ে লেখা - “ তোমার সাথে কথা বন্ধ করে অনেক কষ্ট পাচ্ছি । তোমার লেখাগুলো পড়েছি । খুব ভালো লেগেছে । এ রকম প্রত্যেকদিন একটা করে লেখা দিও । জানো , তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে । তোমাকে না দেখলে খুব কষ্ট লাগে - আমি তোমার সাথী “ ।
এভাবেই প্রতিনিয়ত শামসুন্নাহার নামের মেয়েটি আমার প্যারোডী রচনায় প্রেরণা জুগিয়েছিলো । ফলশ্রুতিতে ক্লাস ফাইভ শেষ করা পর্যন্ত রচনা করি কয়েকটি পদ্য । সবই দুই লাইনের মধ্যে । সেগুলোর মধ্যে যে গুলো সংরক্ষিত আছে তা নিম্নে তুলে ধরলাম -
০১ ) তোমার সঙ্গে দেখা হলে আমার মন যে কেমন করে ,
তোমায় কাছে পেলে আমার মনটা যায় যে ভরে ।
০২ ) কাল পরশু দু’দিন থেকে দেখছিনা যে তোমায় ,
মনটা আমার চায় যে শুধুই তোমায় কাছে পাই ।
০৩ ) তোমার বাড়ি অনেক দূরে রাত্রে যেত ভয় করে ,
কি করে যে থাকি আমি তোমায় ছাড়া এই ঘরে ?
০৪ ) চাঁদ সুন্দর ফুল সুন্দর আরও সুন্দর তুমি ,
তোমার দেখা না পেলে হয় মনটা আমার মরুভূমি ।
০৫ ) সবাই জানে আমার খবর তোমার সাথে কই যে কথা ,
বল বন্ধু আমায় নিয়ে কেন তাদের মাথা ব্যথা ?
০৬ ) পড়া লেখায় যায় না মন তোমার পানেই মন শুধু ,
যতই দেখি লাগে তোমায় দেখতে যেন চাকের মধু !
০৭ ) আর ক’টা দিন দেখবো তোমায় যাবো চলে সঙ্গ ছেড়ে ,
সঙ্গ ত্যাগে যেওনা ভুলে মনটা যে মোর নিলে কেড়ে !
০৮ ) ঝড়ের দিনে তোমার সাথে একই সাথে গেলাম যখন ,
লোকে দেখে বললো ঘরে ছেলেটি ঘরে আসে কখন ?
০৯ ) সঙ্গীরা সব আমায় এখন ঠাট্টা করে বেড়ায় শুধু ,
তুমিই নাকি আরও পরে হয়ে যাবে আমার বধু !
১০ ) এক সঙ্গী বললো আমায় কি দেখিলাম কি দেখিলাম !
সেদিনের সেই ঘটনাটি সে বললে - আমি লজ্জা পেলাম !
১১ ) আসবে তুমি কাল সন্ধ্যায় তোমাদের ঐ পুকুর পাশে ,
দেখবো তোমায় দু’চোখ ভরে ঐ পুকুরের ঘাটে বসে ।
১২ ) কেঁদোনা গো সাথী আমার তুমিও তো যাবে চলে ,
একখানেই তো থাকবো মোরা কথা বলবো দেখা হলে ।
১৩ ) নতুন স্কুল কেমন লাগছে জানাবে সাথী বলবে মোরে ,
অনেকদিন পর দেখা হবে ভাবতে আমার মাথা ঘুরে ।
১৪ ) আজকে তোমায় মারছে স্যারে দেখে আমি কষ্ট পেলাম ,
বুকের ভিতর ব্যথা করে তাই যে তোমায় দেখতে এলাম ।
১৫ ) স্কুলে তুমি আসবে সাথী ভালো করে পড়া শিখে ,
উঠতে যেন পারো তুমি উপর ক্লাসে এক-এ টিকে ।
১৬ ) রিডিং পড়ো ভালো করে শুনতে যেন ভালো লাগে ,
ভোরে উঠে পড়ো তুমি তখন পড়ার নেশা জাগে ।
১৭ ) চেষ্ঠা করবে সর্ব সময় ভালো করতে হাতের লেখা ,
অনবরত লিখতে থাকো তাতেই হবে লেখা শেখা ।
১৮ ) নিত্য নতুন শব্দ দিয়ে বাক্য গঠন করতে থাকো ,
বাক্য গুলো দিবে যে কাজ মনের মাঝে ভরে রেখো ।
১৯ ) সময়সূচি মেনে চলো পড়া লেখার মাঝে ,
করোনা কভু অবহেলা নিত্য আপন কাজে ।
২০ ) জীবনেরে সাজাও তুমি নিত্য নতুন সাজে ,
করোনা কভু এমন কাজ দেখতে যাহা বাজে ।
তখনকার সে পাগলামী আজও মনে দাগ কাটে । সেই থেকে চিন্তা জন্মালো মনে - কবি হবো । কবিতা লিখবো ।
---------------------------------------------------------------
চলমান > আমার লেখালেখির অন্তরালে ... ( পর্ব - ৪ )
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
==========================================
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন