-: মুখবন্ধ :-
আশা ও ভালোবাসাই মানবজীবনের চলতি পথের প্রতিটি কর্মে প্রেরণা জোগায় । মানুষের চলার গতিবেগ সঞ্চারিত হয় প্রেমের তাড়না এবং ভালোবাসার শক্তিতেই । প্রেম - হতে পারে তা নারীর প্রতি নরের কিংবা হতে পারে মানুষের নিজ জীবন কিংবা আপন স্বত্তার প্রতি ।
মানুষ সৃষ্টিশীল কর্মে তখনই আত্মনিয়োগ করে , যখন কোন ব্যক্তি - বস্তু - বিষয়ের প্রতি তার আকর্ষনের প্রবল বেগ ধারণ করে । মানবজীবনের আকর্ষিত দিককে প্রস্ফুটিত করার মানসেই মানুষ বিবিধ উপায় অবলম্বনের মাধমে উপযুক্ত পথ সৃষ্টি করে । আর সে পথেই মানুষ তার অভিষ্ঠ্য লক্ষ্যে পৌঁছতে চেষ্টা করে । সে পথেই মানুষ পৌঁছে যায় স্ব স্ব লক্ষ্যস্থলে । তেমনই নর-নারী একে অপরকে কাছে পাবার লক্ষ্য নিয়েই অবলম্বন করে নিত্য নতুন উপকরণ । সৃষ্টি করে নতুন নতুন পথ । আর সে পথ ধরেই একসময় তারা হয়ে যায় একে অপরের । সুতরাং , ধরে নেয়া যায় যে , মানুষ প্রয়োজনের তাগিদেই সৃষ্টশীল কর্মে আত্মনিয়োগ করে । আর ঠিক একই কারনে , প্রয়োজনের তাগিদে , জীবনের বিরহে কাতর সময়গুলো পেরোনোর লক্ষ্যে , হতাশা - দুশ্চিন্তা - মনের গুমোট ভাব - একাকিত্বের জ্বালা প্রশমন ইত্যাদির তাগিদেই আমার হাতে কলম ধরা । মৃতপ্রায় জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চারের মাধ্যমে প্রিয়তমার সান্নিধ্যে সুখকর - আনন্দময় সময় কাটানোর অদম্য ইচ্ছা , মানুষ হিসাবে পৃথিবী নামক রঙ্গশালায় আরো কিছুদিন মেতে থাকার একান্ত বাসনায় কলমের ডগায় কাগজের প্যাডে সময় ক্ষ্যাপনের মাধ্যমে একটি সৃষ্টিশীল কর্মে আমার আত্মনিয়োগ ।
নিতান্তই আপন খেয়ালে , সামান্য শব্দভান্ডার পূঁজি করে জীবনের শখ ও প্রবল কৌতুহল সঙ্গী করে কলম ও কাগজ নিয়ে এই সৃষ্টিশীল ( ? ) কর্মে আমার পদচারণা । প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে আমার নেই বললেই চলে । এ কর্মে আমাকে হাতেখড়িও দেয়নি কখনো । সম্পূর্ণ নবাগত - অনভিজ্ঞ - আপন প্রচেষ্ঠায় লেখার জগতে এ প্রথমই আমার পদচারণা ।
কৈশোরকাল থেকেই সাহিত্যের প্রতি ঝুঁকটা ছিল আমার ভীষন প্রবল । বিভিন্ন পত্রিকার সাহিত্য পাতা দেখে দেখে কবিতা পড়তাম ,পড়তাম - গল্প - প্রবন্ধ - ছড়া - উপন্যাস ইত্যাদি । এসব থেকেই সারনির্যাস স্বরূপ গ্রহণ করে নিয়েছিলাম মনের অলিন্দ্যে কিছু শব্দ - কিছু বাক্য - কিছু অলঙ্কার আর কিছু অভিজ্ঞতা । এ সব অভিজ্ঞতা সম্বল করেই করেছিলাম বিভিন্ন দেয়াল পত্রিকায় , বিভিন্ন পত্রিকার চিঠিপত্র বিভাগ , বিভিন্ন পত্রিকার সাধারণ পাঠকদের লেখার মুক্তমঞ্চগুলোতে অংশগ্রহন । এগুলোর সংমিশ্রনে তৈরী করেছিলাম আমার ক্ষুদ্র লেখনি জগত । এ লেখনিজগতের উৎসাহেই আমার এই কঠিন কর্মচর্চা । “ আমি নিজেই একটা কবিতা লিখবো ’’ এই অদম্য প্রবল মনোভাবের ফলই আমার আজকের এই সৃষ্টি ।
যদিও আমার একাগ্র চেতনায় এ সৃষ্টকর্মের শুরু । তথাপি পরোক্ষভাবে সহযোগিতা স্বরূপ প্রেরণা জুগিয়েছে কোন এক নারী । সেই নারীর প্রতি দূর্বলতার কারনেই আমার আজকের এই প্রয়াস ।
পৃথিবীতে যত সাহিত্য - যত কবিতা - যত গল্প - যত উপন্যাস রচিত হয়েছে তার মূলেই রয়েছে এক একজন নারী । নারী মানস সামনে নিয়েই কবিরা গেঁথেছেন শব্দের মালা । রচিত হয়েছে অমর যত প্রেমকাব্য , তেমনি এক অমর কাব্য - রুবায়াতে ওমর খৈয়্যাম । শিল্পীরা এঁকেছেন তুলির আঁচড়ে নারীর রূপ ক্যানভাস , তেমনি এক ক্যানভাস - পৃথিবীর অনবদ্য সৃষ্টি মোনালিসা । জন্ম নিয়েছে শব্দালঙ্কারে অমর সব প্রেমকাহিনী , তেমনি এক প্রেমকাহিনী লায়লা-মজনু । কন্ঠশীলনেও পীছপা হননি বিশ্ববিখ্যাত কন্ঠশিল্পীরা নারীর স্মরণ নিয়ে । পৃথিবীতে যত সঙ্গীত রচিত হয়েছে সবের মূলেই নারী ।
তেমনই , আমার সৃষ্টিকর্মের মানসপটে একজন নারীর ছিল নিত্য আনাগোনা । যার উপস্থিতিতে রচিত হয়েছে আমার এই রচনার ক্যানভাস । সম্ভব ছিলোনা আমার এই আয়োজন ঐ নারীর অনুপস্থিতিতে । কেহই পারেনি নারীকে বাদ দিয়ে কোন বড় কিছু সৃষ্টি করতে। পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে তার মূলে রয়েছে নর-নারী উভয়েরই ফিফটি পার্সেন্ট শেয়ার । তাই তো আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে হয় -
“ এই পৃথিবীতে মহান যা কিছু সৃষ্টি চির কল্যানকর ,
তার অর্ধেক করিয়াছে নারী , অর্ধেক তার নর । ’’
সুপ্রিয় পাঠক সমাজ ! লক্ষ্য করে থাকবেন , আমার এ সৃষ্টি একটি আত্মজীবনীমুলক , তথাপি এর মধ্যে পাঠক মহলের জন্য কিছুটা মনের খোরাক আছে বলে মনে করি । তাই , নবীন এ লেখকের লেখার উপর সমালোচনার দৃষ্টিতে একবার দৃষ্টি দানের জন্য পাঠক সমাজের কাছে অনুরোধ রইল ।
আমার এ নব্য সৃষ্টকর্মে ভুল ও নিয়ম বহির্ভূত তথ্য থাকা একান্তই স্বাভাবিক । লেখার জগতে নবীন হিসাবে সম্মানীত পাঠকদের সুদৃষ্টিই আমার একান্ত কাম্য । সেই সাথে সুপ্রিয় পাঠকের দৃষ্টিতে গোচরীভুত “ ভুলে ভরা অংশ ’’ টি সংশোধনের নিমিত্তে এ অধমকে জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো ।
সকলকে ফুলেল শুভেচ্ছা ।
- লেখক , মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী ( সৌরভ )
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন