আজ বিশ্ব বাবা দিবসে আমার কিছুই করার নেই।
আছে শুধু "রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানী সাগিরা
(হে আমার রব ! আমার পিতামাতা উভয়কে রহম কর,
যেমনিভাবে তারা আমাকে ছোটবেলায় লালন পালন করেছেন)"
এতটুকু বলে
আমার সেই বাবা-মা'কে একটু স্মরণ করে
চোখের জলে নিজেকে সিক্ত করা।
------------------------

FATHER'S DAY
আজ নাকি বিশ্ব বাবা দিবস। আজকাল কোন দিবসই আমার মনে থাকেনা। আজ টিভিতে দেখলাম বাবা দিবস চলছে। তাই স্মরণে এলো বাবার অনেকগুলো কষ্টের স্মৃতি। বাবার সেইসব কষ্টের স্মৃতিগুলো মনে উঠলেই চোখ দিয়ে ঝরতে থাকে অবিরাম ঝর্ণা স্রোত।
আমার বাবা ছিলেন একজন সৎ ব্যবসায়ী, ঢাকার নির্মাণ প্রতিষ্ঠাণগুলোর একজন সাব কন্ট্রাকটর, বিশেষ করে ইষ্টার্ণ হাউজিং লিমিটেড । প্রথমে তদানিন্তন বার্মার রেঙ্গুন এবং শেষ বিশ্বযুদ্ধের পর রেঙ্গুনের পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে গেলে সেখান থেকে সকল অবলম্বন ছেড়ে দেশে ফিরে যখন অসহায় হয়ে পড়েছিলেন, তখন আমাদের বাড়ীর সামনের দোকান্দার আমাদের ভাই সম্পর্কীয় মফজল আহমদ সওদাগর থেকে মাত্র দেড় টাকা ঋণ গ্রহণ করে ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি। 
সেই থেকে অনেক চড়াই উৎরায় পেরিয়ে তিনি ঢাকায় প্রতিষ্টিত হন। সেখানে তৃতীয় শ্রেনীর সরকারী লাইসেন্সধারী একজন কন্ট্রাক্টর হিসাবে আজিজুল হক এণ্ড সন্স নামে একটি প্রতিষ্টান দাঁড় করিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ওনার কষ্টের সামান্য অংশ আমি দেখেছি । আমি বুদ্ধিজ্ঞান অর্জন করার পর যে দিনগুলোতে আমি তাঁর সাথে মাঝে মাঝে যাতায়াত করতাম। স্মরণ পড়ে ওনার কষ্টকর একটা দিনের কথা। আমি ও বাবা একদিন রিক্সা করে যাচ্ছিলাম মগবাজার থেকে ৩/সি পুরানা পল্টনের আমাদের সাইটে স্নোসাম (বিল্ডিং রং করনের পাউডার) এর ড্রাম নিয়ে । বিজয়নগরে পৌছলেই রিক্সাটি উল্টে যায়। স্নোসেমের ড্রাম দু'টি আমার বাবার উপর। আর আমি ছিটকে পড়ি রাস্তার আইল্যান্ডে। বাবার সেদিনের কষ্টটা আমি সহ্য করতে পারিনি। এমনই বহু কষ্টের ঘটনাগুলো আমার চোখে ভাসছে আজ। তাঁর সুখের দিনগুলো যেন মলিন হয়ে গেছে তাঁর কষ্টের দিনগুলোর আবরণে। তাই বরাবরই তার সুখের দিনগুলো আমার চোখে ভাসেনা, ভাসে শুধু ওনার কষ্টের দিনগুলো।
স্মরণ করছি সেই বাবাকে যাঁর মাধ্যমে আমি দুনিয়া দেখেছি। যাঁর রক্তঝরা মেহনতে আমি লালিত হয়েছি, যারা সুখহারা জীবনের মাঝে আমি নির্লজ্জ - পাষাণের মত সুখলাভে মত্ত থেকেছি। সেই বাবাকে দিতে পারিনি আমি সুখের ছোঁয়া, দিয়েছি কেবলই দুঃখ , কেবলই কষ্ট। আজ আমার সেই বাবার অনুপস্থিতি, আমার বাবার শেষ দিনকার সময়গুলো যেন আমাকে নিয়ত কুঁকড়ে কুঁকড়ে খাচ্ছে।
কিন্তু কিছুই করার নেই। আছে শুধু "রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানী সাগিরা (হে আমার রব ! আমার পিতামাতা উভয়কে রহম কর, যেমনিভাবে তারা আমাকে ছোটবেলায় লালন পালন করেছেন)" এতটুকু বলে আমার সেই বাবা-মা'কে একটু স্মরণ করে চোখের জলে নিজেকে সিক্ত করা।