আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা

বাংলা ভাষার জন্য আত্মত্যাগকারী

সকল মহান ভাষা শহীদগণের প্রতি,
এবং ভাষা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত

সকল ভাষা সৈনিক
ও বীর বাঙ্গালীদের জানাই অশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলী,
সেইসাথে সকলকে জানাই

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা।

বিষয় সূচী

সাহিত্য (60) অন্যান্য কবিতা (53) ভালোবাসার পদবিন্যাস ( প্রেম সম্পর্কিত রচনা বিশেষ ) (53) আমার লেখা প্রবন্ধ-নিবন্ধ (37) কবিতা (35) দেশ নিয়ে ভাবনা (33) ফিচার (33) বাংলাদেশ (29) সমসাময়িক (28) খন্ড কাব্য (26) হারানো প্রেম (22) সংবাদ (18) কাল্পনিক প্রেম (16) ইতিহাস (15) প্রতিবাদ (15) সুপ্রভাত প্রবাসী বাংলাদেশ (15) Online Money Making Links (14) দেশাত্মবোধক কবিতা (13) আমার জীবনের দিনপঞ্জী (12) ধর্ম (12) প্রেমের কবিতা (11) ব্যক্তিত্ব (11) রাজনীতি (11) ধর্মীয় আন্দোলন (10) প্রবাসের কবিতা (10) খন্ড গল্প (9) জীবন গঠন (9) বর্ণমালার রুবাঈ (9) ইসলাম (8) প্রগতি (8) মানুষ ও মানবতা (8) হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ (8) VIDEOS (7) আমার লেখালেখির অন্তরালে (7) ইসলামী জাগরণ (7) মানব মন (7) ট্র্যাজেডি (6) শোক সংবাদ (6) সম্প্রীতি (6) নারী স্বাধীনতা (5) প্রেমের গল্প (5) বিজয় দিবসের ভাবনা (5) মৃত্যুপথ যাত্রী (5) সংবাদ মাধ্যম (5) স্মৃতিকথা (5) ঈদ শুভেচ্ছা (4) প্রবাস তথ্য (4) রমজান (4) শুভেচ্ছা (4) Computer Programer (3) আমার ছবিগুলো (3) আমার রাইটিং নেটওয়ার্ক লিংক (3) পর্দা (3) ফটিকছড়ি (3) বাংলাদেশের সংবিধান (3) বিশ্ব ভালবসা দিবস (3) শিক্ষা (3) শিক্ষার্থী (3) স্লাইড শো (3) News (2) VERIETIES POEMS OF VERIOUS POETS (2) আষাঢ় মাসের কবিতা (2) আষাঢ়ের কবিতা (2) ইসলামী রেনেসাঁ (2) ছাত্র-ছাত্রী (2) থার্টি ফাস্ট নাইট (2) নারী কল্যান (2) নারী প্রগতি (2) নির্বাচন (2) বর্ষার কবিতা (2) মহাসমাবেশ (2) শবেবরাত (2) শরৎকাল (2) শাহনগর (2) শ্রদ্ধাঞ্জলী (2) সত্য ঘটনা (2) সত্য-মিথ্যার দ্বন্ধ (2) সফলতার পথে বাংলাদেশ (2) Bannersআমার ছবিগুলো (1) DXN (1) For Life Time Income (1) For Make Money (1) Knowledge (1) Student (1) অদ্ভুত সব স্বপ্নের মাঝে আমার নিদ্রাবাস (1) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (1) আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত(সুন্নী) (1) উপন্যাস (1) কবি কাজী নজরুল ইসলাম (1) কোরআন - হাদিসের কাহিনী (1) গল্প (1) চট্টগ্রাম (1) চিকিৎসা ও চিকিৎসক (1) জমজম (1) জাকাত (1) তরুন ও তারুণ্য (1) নারী জাগরণ (1) পরকিয়ার বিষফল (1) ফটিকছড়ি পৌরসভা (1) বন্ধুদিবস (1) বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম (1) বিবেক ও বিবেকবান (1) বিশ্ব বাবা দিবস (1) বিশ্ব মা দিবস (1) ভ্রমণ (1) মন্তব্য (1) মাহফুজ খানের লেখালেখি (1) রবি এ্যাড (1) রমজানুল মোবারক (1) রেজাল্ট (1) রোগ-পথ্য (1) লংমার্চ (1) শহীদ দিবস (1) শুভ বাংলা নববর্ষ (1) শৈশবের দিনগুলো (1) সমবায় (1) সস্তার তিন অবস্থা (1) সাভার ট্র্যাজেডি (1) সিটি নির্বাচন (1) স্বপ্ন পথের পথিক (1) স্বাধীনতা (1) হ্যালো প্রধানমন্ত্রী (1) ২১ ফেব্রোয়ারী (1)

APNAKE SHAGOTOM

ZAKARIA SHAHNAGARIS WRITING

সকলকে বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা

বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে আমরা আর বাংলা ভাষায় কথা বলতে চাইনা । নিজের মাতৃভাষাকে যখন-তখন যেখানে সেখানে অবমাননা করে তৎপরিবর্তে ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করতে অভ্যাস্থ হয়ে যাচ্ছি বা হয়ে গেছি ।
আরও একটু এগিয়ে গেলে বলতে হয় - আমরা আজ বাঙ্গালী হয়ে বাঙ্গালী জাতিসত্বা ভুলে গিয়ে ইংরেজী জাতিসত্বায় রক্তের ন্যায় মিশে গেছি !

অথচ একদিন আমরা বাঙ্গালী জাতি একতাবদ্ধ হয়ে রাষ্ট্রীয় ভাষা উর্দুকে ত্যাগ করে নিজেদের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা তথা বাংলা ভাষাকে সর্বত্র প্রচলন করতে প্রাণ দিতে বাধ্য হয়েছিলাম ! ফলে বিজাতীয় ভাষা উর্দূকে অপসারন করে নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলার স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলা ভাষাকে ধারন করেছিলাম । যখন আমরা বাংলার সর্বত্র বাংলা ভাষায় কথা বলা শুরু করেছিলাম ,তখন কিন্তু বিশ্বায়নের যুগটা অনুপস্থিত ছিল তা নয় , বিশ্বায়নের যুগটা তখনও ছিল বিধায় আমরা ইংরেজী শিক্ষায় তখনও বাধ্য ছিলাম । অর্থাৎ যে জন্যে আজ আমরা ইংরেজী শিখছি সেইজন্যে তখনও ইংরেজী শিক্ষার প্রচলন ছিল । ছিল ইংরেজী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাও । তাই বলে সে সময় বর্তমান সময়ের মত মাতৃভাষা বাংলাকে অবমাননা করা হয়নি । মানুষ সে সময় বাংলায়ই কথা বলেছিল । শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেই সে সময় ইংরেজী ব্যাবহার করেছিল বাঙ্গালী জাতি

conduit-banners

Powered by Conduit

ফ্লাগ কাউন্টার

free counters

MZS.ONLINE MONEY MAKING WAY

PLEASE CLICK ON MY BANNERS. VISIT MY AFFILIATE SITE "MZS.ONLINE MONEY MAKING WAY ( অনলাইনে অর্থোপার্জনের একটা মাধ্যম )" I HOPE IT WILL BE HELPFUL FOR YOU. Create your own banner at mybannermaker.com!

শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১২

কোরআন ও হাদিসের আলোকে রমজান


কোরআন ও হাদিসের আলোকে রমজান
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
----------------------

আল কোরআনে মাহে রমজান ও রোযা সম্পর্কীয় কিছু আয়াত ঃ

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন -

১। “হে মু'মিনগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে,যেমনি ফরয করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর; যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার’’। (সূরা বাকারা: ১৮৩)।
২। “রমজান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হিদায়াতের জন্য।” (সূরা বাকারা- ১৮৫)।
৩। “কদরের রাত, হাজার মাস থেকেও উত্তম।” (সূরা কদর: ৩)।
৪। “তোমরা খাও পান কর, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না’’। (সূরা আ'রাফ: ৩১)।
৫। “তোমাদের জন্য রোযার বিধান দেয়া হল,যেমন বিধান ছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য,যেন তোমরা নিজেদেরকে রক্ষা করতে শিখ অশুভের হাত থেকে।”(সূরা বাকারা: ১৮৩)।
৬। “নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কী জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’’ (সূরা আল-কদর, আয়াত ১-৫)।
৭। “রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎ পথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।’’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৫)।
৮। “তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এ (সিয়াম) যাদের অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদ্ইয়া—একজন মিসকিনকে অন্নদান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎ কাজ করে, তবে সেটা তার পক্ষে অধিকতর কল্যাণকর। তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। আর কেউ পীড়িত থাকলে অথবা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যেটা সহজ সেটাই চান এবং যা তোমাদের জন্য ক্লেশকর, তা চান না এ জন্য যে তোমরা সংখ্যা পূরণ করবে।’’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪-১৮৫)।
৯। “তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হবে না, যখন তোমরা মসজিদে ইতিকাফে থাকবে।’’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৭)।
১০। “যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎ কাজ করে, তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর যদি তোমরা উপলব্ধি করতে, তবে বুঝতে রোযা পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রদ।’’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪)।
১১। “শপথ আত্মার এবং যিনি তা সুঠাম করেছেন তাঁর, অতঃপর তাঁকে পাপাচারের ও ধার্মিকতার পথ শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং সে সফলকাম, যে আত্মশুদ্ধি অর্জন করে। আর সে ব্যর্থ, যে নিজেকে কলুষিত করে।’’ (সূরা আশ-শামস, আয়াত: ৭-১০)।
১২। “আর তোমরা পানাহার করো, যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রাত্রি পর্যন্ত রোযা পূর্ণ করো।’’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৭)।
১৩। “রমজান মাসে মানুষের পথপ্রদর্শক এবং সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী রূপে আল কোরআন নাজিল হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে।'’ (বাকারা : ১৮৫)।
১৪। “সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ ব্যাধিগ্রস্ত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এটা যাদেরকে অতিশয় কষ্ট দেয়, তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদ্রা একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎ কাজ করে এটা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন তথা রোযারাখাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ যদি তোমরা জানতে।” (সুরা বাক্বারা ১৮৩-১৮৪)।


মাহে রমজান ও রোযা বিষয়ক কিছু হাদীস ঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন -

১। “তোমাদের নিকট বরকতময় মাস রমজান এসেছে, যার সিয়াম আল্লাহ তোমাদের উপর ফরয করেছেন’’। (সুনান নাসায়ী: ২০৭৯)।
২। “এক রমজান তার পূর্ববর্তী রমজানের মধ্যবর্তী সময়ের সকল সগীরা গুনাহ মিটিয়ে দেয়।” (সহীহ মুসলিম: ৩৪৪)।
৩। “সবরের মাসে সাওম পালন ও প্রত্যেক মাসে তিনদিন সাওম পালন অন্তরের অস্খিরতা দূর করে।” (মুসনাদ আহমাদ: ৭২৬১)।
৪। “যখন রমজান আগমন করে তখন খুলে দেয়া হয় জান্নাতের দরজাসমূহ এবং বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের প্রবেশ পথগুলো। আর শৃকôখলিত করা হয় শয়তানদের।” (সহীহ মুসলিম: ১৭৯৩)।
৫। “এ মাসের প্রত্যেক রাতেই আল্লাহ তার কতিপয় বান্দাহকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।” (সুনান তিরমিযী: ৬১৮)।
৬। “রমজান মাসের সিয়াম দশ মাসের সমতূল্য এবং শাওয়ালের ছয় দিনের সিয়াম দুই মাসের সমতুল্য। এ যেন সারা বছরের সিয়াম।” (মুসনাদ আহমাদ: ২১৭৮)।
৭। “এ মাসের প্রতি রাতেই আহ্বানকারী ঘোষণা দেয়, হে কল্যাণ কামনাকারী,কল্যাণের দিকে আস। হে অকল্যাণ কামনাকারী থেমে যাও।” (সুনান তিরমিযী: ৬১৮)।
৮। “রমজান মাসে কৃত প্রত্যেক মুসলমানের দোয়া কবুল হয়ে থাকে।” (মুসনাদ আহমাদ: ৭১৩৮)।
৯। “তোমাদের নিকট বরকতময় মাস রমজান এসেছে, যার সিয়াম আল্লাহ তোমাদের উপর ফরয করেছেন।” (সুনান নাসায়ী: ২০৭৯)।
১০। “সাওম পালনকারীদেরকে রাইয়ান নামক দরজা হতে ডাকা হবে।” (সহীহ বুখারী: ১৭৬৪)।
১১। “তোমাদের কারোর যুদ্ধক্ষেত্রের ঢালের ন্যায় সাওমও জাহান্নামের ঢালস্বরূপ।” (সুনান নাসায়ী: ২২০০)।
১২। “কিয়ামতের দিনে সাওম ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে।” (মুসনাদ আহমাদ: ৬৩৩৭)।
১৩। “কোন ব্যক্তির ফিতনা তার পরিবার, জান, মাল, সন্তান ও প্রতিবেশির মাঝে। যাকে মিটিয়ে দেয় সালাত, সাওম,সাদাকাহ, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ।” (সহীহ বুখারী ৪৯৪)।
১৪। “কেবল সাওম ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেক আমল তার জন্য; সাওম আমার জন্য আমি নিজে এর প্রতিদান দিব।” (সহীহ বুখারী: ১৭৭১)।
১৫। “যার হাতে আমার জীবন তার কসম, রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তা'আলার নিকট মিশকের ঘন্সাণের চেয়েও অধিক উত্তম।” (সহীহ বুখারী: ১৭৬১)।
১৬। “যে মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।” (সহীহ বুখারী: ১৭৭০)।
১৭। “কত সাওম পালনকারী রয়েছে যারা অনাহার ছাড়া আর কিছু পায় না।” (মুসনাদ আহমাদ: ৯৩০৮)।
১৮। “সাওম ঢাল স্বরূপ।তোমাদের কেউ যেন সাওম পালনের দিনে অশ্লীল আচরণ ও শোরগোল না করে। যদি তাকে কেউ গালি দেয় বা তার সাথে ঝগড়া করে তখন সে যেন বলে ‘আমি রোযাদার'।” (সহীহ বুখারী: ১৭৭১)।
১৯। “নবীজী (স·) ছিলেন মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি দানশীল। তিনি সবচেয়ে বেশি দান করতেন রমজান মাসে।” (সহীহ বুখারী: ৫)।
২০। “যে ঈমান ও সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজানের রাতে সালাত আদায় করে তার অতীতের পাপসমূহ মা করে দেয়া হয়। (সহীহ বুখারী: ৩৬)।
২১। "সাওম ও কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে।" (মুসনাদ আহমাদ: ৬৩৩৭)।
২১। “যে ব্যক্তি রমজান মাসে পেয়েও তার পাপ ক্ষমা করাতে পারেনি তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক।” (সুনান তিরমিযী: ৩৪৬৮)।
২২। “রমজান মাসে উমরা আদায় আমার সাথে হজ্ব আদায়ের সমতূল্য। (সহীহ বুখারী: ১৭৩০)।
২৩। “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন’’ (সহীহ বুখারী: ১৮৮৫)।
২৪। “যে কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে সে রোযাদারের অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে, তবে তাতে রোযাদারের সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কমবে না।' (সুনান তিরমিযী: ৭৩৫)।
২৫। “রমজান মাসে কৃত প্রত্যেক মুসলমানের দোয়া কবুল হয়ে থাকে’’।(মুসনাদ আহমাদ: ৭১৩৮)।
২৬। “তোমরা সাহরী খাও, কারণ সাহরীতে বরকত রয়েছে।” (সহীহ বুখারী: ১৭৮৯)।
২৭। “মু'মিনের উত্তম সাহরী হল খেজুর।” (সুনান আবু দাউদ: ১৯৯৮)।
২৮। “তোমরা তাড়াতাড়ি ইফতার কর এবং দেরিতে সাহরী কর’’।(আসসিলসিলাতুস সহীহা: ১৭৭৫)।
২৯। “আমাদের রব তাবারাকা ওয়া তা'আলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আছ! যে আমার নিকট দোয়া করবে আমি তার দোয়া কবুল করব। কে আছ! যে আমার নিকট চাইবে আমি তাকে দান করব। কে আছ! যে আমার কাছে মা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব।” (সহীহ বুখারী: ১০৭৭)।
৩০। “মানুষ যতদিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন কল্যাণের সাথে থাকবে।” (সহীহ বুখারী: ২৮২১)।
৩১। “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের পূর্বে তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর পাওয়া না যেত তবে শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুর পাওয়া না যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন।” (সুনান আবু দাউদ: ২০০৯)।
৩২। “তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়, ন্যায়পরায়ণ নেতা,রোযাদার যখন ইফতার করে,নির্যাতিত ব্যক্তি।” (সুনান তিরমিযী: ২৪৪৯)।
৩৩। “যে কোরা রোযাদারকে ইফতার করাবে সে রোযাদারের অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে, তবে তাতে রোযাদারের সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কমবে না।” (সুনান তিরমিযী: ৭৩৫)।
৩৪। “যে মিথ্যা কথা ও অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করেনি তার পানাহার ত্যাগ আল্লাহর কোন কাজে আসবে না।” (সহীহ বুখারী: ১৭৭০)।
৩৫। রাসূলুল্লাহ (স·)বলেন, যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন-

“পিপাসা নিবারণ হল, শিরা-উপশিরা সিক্ত হল এবং প্রতিদান সাব্যস্ত হল ইনশাআল্লাহ ’’।(সুনান আবু দাউদ: ২০১০)।
৩৬। আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন-

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা অবস্খায় তাকে চুম্বন করতেন এবং রোযা অবস্খায় আলিঙ্গন করতেন।” (সহীহ মুসলিম: ১৮৫৪)।
৩৭। “রাসূলুল্লাহ (স.) যখন রমজানের শেষ দশকে পৌঁছতেন তখন লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নিতেন (প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন), রাত্রি জাগরণ করতেন,পরিবারবর্গকে নিদন্সা থেকে জাগিয়ে দিতেন’’। (সহীহ বুখারী: ১৮৮৪)।
৩৮। “রাসূলুল্লাহ (স.) রমজানের শেষ দশকে ইবাদত-বন্দেগীতে যে পরিশন্সম করতেন অন্য সময় তা করতেন না।'’ (সহীহ মুসলিম: ২০০৯)।
==================

স্বাগতম মাহে রমজানুল মোবারক



স্বাগতম মাহে রমজানুল মোবারক 

মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী 

---------------------- 

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম।

আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা মুহাম্মাদানিন্নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়ালা আলিহী ওয়াছহাবিহী ওয়াবারিক ওয়াছাল্লিম।

রমজান মাসের পরিচয়,মাহাত্ম্য,প্রয়োজনীয়তা এবং রোযা পালন নিয়ম ঃ

স্বাগতম মাহে রমজানুল মুবারক। একটি বছর ঘুরে আবারও অসংখ্য নিয়ামত ও সুসংবাদের বার্তা নিয়ে আমাদের দরজায় এসে উপস্থিত হলো মানবজাতির ইহলৌকিক কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির দিকদর্শন গ্রন্থ পবিত্র আল কুরআন অবতীর্ণের মাস, আত্মিক প্রশান্তি লাভের মাস, ইসলামের বিজয়ের মাস, বরকতের মাস, গুনাহ মাফের মাস, হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত ক্বদরের রাত বিশিষ্ট মাস, দোয়া কবুলের মাস, ধৈর্য ধারণের মাস, সাহায্য-সহযোগিতা-সমবেদনা-সহমর্মিতা প্রদর্শনের মাস, মঙ্গল ও কল্যাণের প্রতি আহ্বানের মাস, সাম্য–মৈত্রী-ঐক্য-ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের মাস, রোজা পালনের মাস, স্বর্গদ্বার সমূহ উন্মুক্ত এবং নরকদ্বার সমূহ বন্ধের মাস, নিয়ামতপূর্ণ মোবারকময় মাস, নরক থেকে মুক্তির মাস, পবিত্র মাস, সংযম সাধনার মাস, স্থিতিশীলতা–শান্তি-সমপ্রীতি–নিরাপত্তার মাস, দশমাস রোজা পালনের সমপরিমাণ সাওয়াব বিশিষ্ট মাস, আত্মশুদ্ধির মাস, আত্মবিশ্লেষণের মাস, সমবেদনা প্রকাশের মাস, রিজিক বাড়ার মাস, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাস, তাকওয়া অর্জনের মাস, আত্মোন্নয়নের মাস, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস এবং মুসলমানের শান্তির সওগাত পবিত্র মাহে রমজান।



ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের তৃতীয় স্তম্ভটি হচ্ছে সিয়াম বা রোযা। রোযা অর্থ আত্মসংযম। মাহে রামাদান বা রমজান মাস মুসলমানদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে এক বিশেষ রহমত স্বরুপ। এই রমজান মাস আল্লাহর তরফ থেকে বান্দার জন্য রহমত-বরকত-মাগফেরাত হিসেবে অভির্ভূত হয়ে থাকে। মানুষের দেহ ও মনকে সংযমের শাসনে রেখে ইসলামি শরিয়ত বা জীবনবিধানের পরিপন্থী যাবতীয় অসামাজিক ও অমানবিক কাজ পরিহার করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও তাকওয়া অর্জনের কঠোর সিয়াম সাধনাই হচ্ছে মাহে রমজানের মূলকথা। রোযা পালনের মধ্য দিয়ে মানুষের ইচ্ছাশক্তির বিকাশ, সংযম ও আত্মোন্নয়ন ঘটে। যা কিছু কল্যাণকর তার সঙ্গে রয়েছে এই পবিত্র মাসের সম্পর্ক।

মানুষের কথাবার্তায়, আচার-আচরণে, কাজকর্মে ও চলাফেরায় ধৈর্য ধারণের মাধ্যমেই সিয়াম সাধনা পরিপূর্ণ হয়। এটি এমন এক মাস যে মাসে মানুষ নিজেকে পরিশুদ্ধ করার সুযোগ পায়। পরিশুদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের তওফিক অর্জন করে।

এটি এমন এক মাস যে মাসে পাপ থেকে ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ ঘটে। কোরআন এবং হাদীসে এই রমজান শরীফ সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিধান আবর্তিত হয়েছে এবং প্রতিটি সক্ষম মুসলমানের উপর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সাথে সাথে এর অসংখ্য ফজিলতও বর্ণনা করা হয়েছে। রোজাদারের পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে প্রদান করবেন বলে ঘোষনা করা হয়েছে। রমজান হলো কৃচ্ছ্রসাধন করে আখিরাতের সম্বল সংগ্রহের এক উত্তম সময়। জাগতিক ধন-সম্পদ উপার্জনে যেমন বিশেষ মৌসুম ও উপলক্ষ আছে, তেমনি রমজান মাসও সৎকর্ম ও আখিরাতের নেকি লাভের উত্তম মৌসুম। আর এসব আমলের প্রতিদান হলো বেহেস্ত। পবিত্র রমজান মাস আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা ও মার্জনালাভের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট মাস। রমজান মাসের সাধনা একজনকে কালগত দুটি দিকের সাথেই সম্পৃক্ত করে। একদিকে আমরা অতীতের সাথে সম্পৃক্ত হই কৃত মন্দ কাজগুলোর এবং অমনোযোগিতা, ব্যর্থতা ও অবহেলার খতিয়ানের জন্য। সেজন্য আমরা ক্ষমা প্রার্থী হই আল্লাহর নিকট। অপরদিকে, নিজেদেরকে প্রস্তুত করি ভবিষ্যতের জন্য। রোযা কেবল খাবার ও সম্ভোগ থেকে বিরত থাকাকে বুঝায় না, সব রকমের অন্যায়-অশুভ চিন্তা, আকাঙ্ক্ষা ও কাজ থেকে দূরে থাকাও বুঝায়। মানুষের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উন্নয়নে রোযা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নিজেকে পরিশুদ্ধ করার, শোভামণ্ডিত করার, আল্লাহর সাথে ও অন্যদের সাথে নিজেকে আরও ঘনিষ্ঠ করার সাধনার এ মাসে আমরা আমাদেরকে চিন্তা, মনন, বাচন, আচরণ ও কর্মে আরও উন্নত করতে পারবো এবং সামনের দিনগুলো আমরা আরও সুন্দরভাবে যাপন করতে শিখব এই আশা করতে পারি নিজের জন্য এবং সকল সিয়াম সাধকদের জন্য।

মাহে রমজানের রোজার উদ্দেশ্য হচ্ছে পশু প্রবৃত্তিকে দমন করা এবং ঈমানি শক্তিতে বলীয়ান হওয়া। মাহে রমজানে সিয়াম সাধনা বা রোযাব্রত পালন মানব জীবনকে পূতপবিত্র ও সুন্দরতর করে গড়ে তোলার একটি অত্যন্ত কার্যকরী পন্থা। মানুষের আত্মশুদ্ধির একটি বলিষ্ঠ হাতিয়ার সিয়াম পালন বা রোযা। বিশেষত, মাহে রমজানে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মানুষ তার পাশবিক প্রবৃত্তিকে সংযত এবং আত্মিক শক্তিকে জাগ্রত ও বিকশিত করে তোলার পরিপূর্ণ সুযোগ লাভ করে। কুপ্রবৃত্তির হাতিয়ার বা অস্ত্রকে দুর্বল করে বশে আনার লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলা সিয়াম সাধনার অপূর্ব সুযোগ দিয়েছেন। মাহে রমজানের রোযা আত্মশুদ্ধি ও চরিত্র উন্নয়নের এক বিশেষ প্রক্রিয়া। সিয়াম বা রোযা দ্বারা শরীর, মন ও আত্মা বিধৌত হয়। দেহ যখন সংযমের শাসনের অধীন থাকে, আত্মা তখন সবল হয়ে ওঠে। সত্যকে গ্রহণ ও ধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করে। রোযা বা সিয়াম সাধনার চর্চায় মানুষ এক অমিয় সুধা লাভ করে। এতে মানুষ জাগতিক লোভ-লালসা, অতিরিক্ত ধনসম্পদ অর্জনের মারাত্মক ব্যাধি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সুযোগ পায়। আর অন্তরের বিশুদ্ধতা বা আত্মশুদ্ধির হাতিয়ার রোযা দ্বারাই অর্জিত হয়। মাহে রমজান আত্মশুদ্ধির মাস। এ মাসে মানবীয় মন্দ স্বভাবগুলো থেকে বিরত থাকা রোযা আদায়ের জন্য শর্তারোপ করা হয়েছে। তাই পবিত্র রমজান মানুষকে এসব মন্দ স্বভাব পরিহার করে সৎ স্বভাব অর্জন করতে শিক্ষা দেয়। সিয়াম সাধনায় পাশবিক প্রবৃত্তি যখন দমে যায়, তখন মানবাত্মার তেজ ও প্রাণশক্তি বাড়তে থাকে। রোযার দ্বারা মানুষের আত্মার উন্নতি সাধিত হয়।

এ রমজান মাসে যারা ধৈর্যের সঙ্গে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন, মহান আল্লাহ তাদের সাহায্য করবেন। সিয়াম বা রোযা ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে ত্যাগের মাধ্যমে ধৈর্য ধারণের অভ্যাস গড়তে শেখায়। এ মাস মানুষকে ধৈর্যশীল হওয়া ও সংযমবোধ শেখায়। ঈমান ও সৎকর্ম চালু রাখা এবং সত্য-ন্যায়ের সংরক্ষণ ব্যক্তি ও সমাজের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ। এ কঠিন কাজ সম্পাদনের জন্য যে ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রয়োজন, তা মাহে রমজানের দীর্ঘ সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব। মাহে রমজানে কঠোরভাবে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে ধৈর্য ও সহনশীলতার যে মানবিক গুণটি অর্জিত হয়, তা শুধু ব্যক্তি পর্যায়ের গুণই নয় বরং এ মহৎ গুণটি কারও মধ্যে সৃষ্টি হলে ঈমানদারের সমষ্টিগত জীবনে অপরের জন্য তা উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে, মানুষকে কঠিন ও দুর্গম পথপরিক্রমায় চলতে শক্তি জোগায়। রোযা পালনের মাধ্যমে অর্জিত ধৈর্য ও সহনশীলতা ঈমান ও তার ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সাধনায় প্রচুর নিয়ামক শক্তি সঞ্চার করে। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জিত সহনশীলতা তাই শুধু ব্যক্তিগত কল্যাণই বয়ে আনে না, বরং মুসলমান সমাজের জন্য একটি দলগত কল্যাণ বয়ে আনে।

আল্লাহ পাক তাঁর অসীম দয়া, ক্ষমা ও পরিত্রাণ প্রাপ্তির জন্য মাসব্যাপী রোজা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যেন সংযমের মাধ্যমে বান্দারা আত্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিশুদ্ধি অর্জন করেন। রোজার উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মসংযম, আত্মসংশোধন ও কৃচ্ছ্র সাধন। মানবজীবনকে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিশুদ্ধ করে গড়ে তোলার একটি অত্যন্ত কার্যকরী দৈহিক ইবাদত রোযা। শারীরিক রোযার মূল ভিত্তি হচ্ছে অন্তরের রোযা। তাই রোযার জন্য নিজেদের মন-মানসিকতা, চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা ও প্রবৃত্তিকে দমন ও কলুষমুক্ত হতে হবে। সৎ নিয়ত, স্বচ্ছ চিন্তা-পরিকল্পনা, একনিষ্ঠতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিশুদ্ধতা হচ্ছে অন্তরের মূল কথা।

রোযা মানুষকে আত্মনিয়ন্ত্রণ লাভের শিক্ষা দেয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেহির খাওয়া, ইফতার করা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা, জামাতে খতমে তারাবি পড়া প্রভৃতি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে নিয়মানুবর্তিতাও শেখায়। মাহে রমজানে ইফতার থেকে সেহরী পর্যন্ত যে রুটিন অনুযায়ী দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম ধর্মীয় কার্যক্রম পালন করতে হয়, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ। মাহে রমজান মানুষকে সৎ, নির্লোভ ও আত্মসংযমী হতে শেখায়। কাজকর্মে, ব্যবসা-বাণিজ্যে, সর্বোপরি এমন এক আলোকিত মানুষ হতে শেখায়, যিনি ঘুষ-দুর্নীতি ও অপকর্ম থেকে মুক্ত। কাম, ক্রোধ, লোভ-মোহ, পরচর্চা, মিথ্যাচার, যেকোনো ধরনের অনিষ্টকর ও পাপ কাজ ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। রোজাদার ব্যক্তি তাঁর জাগতিক লোভ-লালসার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও প্রবণতার সব খারাপ দিককে দূরে সরিয়ে রাখেন এবং নির্ধারিত পদ্ধতিতে কৃচ্ছ্র সাধন করে নিজেকে সর্বোত্তম মানুষে রূপান্তরিত হওয়ার এ সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগান। ফলে তিনি নম্রতা, সংযম, উদারতা, শিষ্টতা ইত্যাদি সৎগুণ চর্চার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতিনিধিরূপে নিজেকে পরিপূর্ণতা দিতে পারেন। মানুষের জন্য তাই সিয়াম সাধনা একটি উৎকৃষ্ট আত্মশুদ্ধির কর্মকৌশল, যে কৌশল অবলম্ব্বনে একদল পরিশুদ্ধ মানুষ সব কলুষতার ঊর্ধ্বে উঠে, পূতপবিত্র পরিশীলিত মন নিয়ে নিজেকে মানবসেবায় উৎসর্গ করতে পারে।

মাহে রমজানে সিয়াম সাধনা মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও সাম্য সৃষ্টি করে। মাহে রমজানে সিয়াম সাধনা বা রোযাব্রত পালন সমাজে সাহায্য-সহযোগিতা, সমবেদনা তথা সহমর্মিতা প্রদর্শনের অন্যতম মাধ্যম। মাহে রমজান সামাজিক ঐক্য ও নিরাপত্তা বিধানে এবং একটি সংঘাতমুক্ত গঠনমূলক আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। রমজান মাসে কঠোর সিয়াম সাধনার মাধ্যমে রোজাদার ব্যক্তিরা অপরের বদনাম ও কূটনামি থেকে বিরত থাকেন। তাঁরা সকল প্রকার ঝগড়া-বিবাদ, ফিতনা-ফ্যাসাদ, অযথা বাগিবতণ্ডা ও যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকেন। তাঁদের মুখ থেকে কোনো প্রকার অশ্লীল কথা বের হয় না। যদি কোনো রোযাদার লোককে কেউ গালিগালাজ ও ঝগড়া-বিবাদে প্ররোচিত করতে চায়, তখন সেই রোযাদার যদি উত্তেজিত না হয়ে ঝগড়া-বিবাদ ও গালিগালাজ থেকে দূরে সরে যান, তাহলে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট হয় না এবং একটি আদর্শ নৈতিকতাপূর্ণ সহনশীল সমাজ গড়ে ওঠে। মাহে রমজানে সমাজের স্থিতিশীলতা, শান্তি, সমপ্রীতি ও নিরাপত্তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিদ্যমান। সমাজের প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মানুষ যদি মাহে রমজানের মতো অন্যান্য মাসেও আত্মসংযমের সঙ্গে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল-মতনির্বিশেষে সব ধরনের বিরোধ এড়িয়ে যান, তাহলে কোনোরূপ সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় না। তাই সমাজ জীবনে পরস্পরের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে এবং সাম্য, মৈত্রী, ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের ক্ষেত্রে রোযার ভূমিকা অনস্বীকার্য। মাহে রমজান প্রকৃত অর্থেই যেন মানুষের মনের পশুত্ব, আত্মঅহমিকা, হিংস্রতাসহ সব অমানবিক দোষ-ত্রুটি জ্বালিয়ে ভস্ম করে ও ধৈর্য-সহনশীলতা বিকশিত করে।

মুসলিম উম্মাহর জন্য রমজান মাসের শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত আল্লাহর বাণী আল কোরআনুল কারিম। এই মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়। মানব জাতির পথ-প্রদর্শক হিসেবে আল্লাহ এই মহাগ্রন্থ নাজিল করেন। মাহে রমজান হচ্ছে পবিত্র কোরআন মজিদের শিক্ষা অর্জন ও বিস্তারের মাস।
রোযাদারেরা যেন রোযা পালন ও পবিত্র কোরআনের মহিমাময় আদর্শের পরিপূর্ণ অনুশীলনের মাধ্যমে মাহে রমজানে প্রশিক্ষণ লাভ করতে পারেন এবং জীবন-দর্শন হিসেবে আল-কোরআনের আলোকে নিজেদের চরিত্র গঠন করতে পারেন,পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে নিজেদের প্রশিক্ষিত করার জন্য মাহে রমজানই উত্তম। এই মাহে রমজানে সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানের আল-কোরআনের চর্চা ও অনুশীলনে আত্মনিয়োগ করা বাঞ্ছনীয়। পবিত্র কোরআনের মর্মবাণী উপলব্ধি করে ইসলামের বিধান অনুসারে জীবনযাপন করতে পারলেই মাহে রমজানের যথার্থ হক আদায় হবে। রমজান মাস আমাদের জন্য কোরান অনুযায়ী নিজেকে গড়ার বিশেষ প্রশিক্ষণ কাল এবং আমাদেরকে কোরান দানের জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা বিশেষভাবে প্রকাশের কাল। রমজান মাসে আল্লাহ কোরান অবতীর্ণ করা শুরু করেন।

যে রাতে প্রথম কোরান নাজিল হয় সে রাতকে আল্লাহ মহিমান্বিত রাত ও মর্যাদার রাত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ রাতের মহিমা ও মর্যাদা কোরানের জন্যই, কোরানের মহিমা ও মর্যাদার জন্য। আল্লাহ কোরানের মাধ্যমে ঘোষণা করেছেন নিজের এবং জগতে মানুষের মহিমা ও মর্যাদা। কাজেই এ রাত হয়ে উঠেছে প্রকৃত প্রস্তাবে আল্লাহ ও মানুষের মহিমা আর মর্যাদার রাত। কোরান এসেছে মানুষের পথ-নির্দেশনার জন্য। এ রাতেই শুরু হয়েছিল মানুষের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞা পূর্ণ বিষয়াদির নিষ্পত্তি এবং মানুষের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় শান্তির সম্প্রসারিত বার্তা। এ রাত তাই আমাদের কাছে সহস্র মাসের চেয়েও উত্তম রাত। এ রাত রমজান মাসের রাত এবং রমজান মাসের শেষ দশ দিনের কোন এক বেজোড় রাত। কাজেই রমজান মাস এবং এ মাসের শেষ দশ দিন আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রমজান মাস এবং কদরের রাত মানব জাতির ইতিহাসে মানুষের সাথে তার প্রতিপালকের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ যোগাযোগের মাস ও রাত।

আল্লাহ এ মাসকেই বেছে নিয়েছেন মানুষের জন্য বিশেষ সাধনার মাস হিসেবে। এই সাধনাই সিয়াম সাধনা। তদুপরি, এ মাসের শেষের দশ দিন আমরা পালন করি আরও কঠোর সাধনা যাকে বলা হয় এতেকাফ। উদ্দেশ্য একটিই আর তা হলো তাকওয়া অর্জন। তাকওয়ার অর্থ হলো - সচেতনতা, সংযম, বিচারশীলতা, সতর্কতা। এ সচেতনতা যেমন আল্লাহ সম্বন্ধে, তেমনই নিজের সম্বন্ধে, তেমনই জীবনে দায়িত্বের গুরুভার সম্বন্ধে।

মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা বা রোযাকে দেহের জাকাত স্বরূপ বলা হয়েছে। জাকাত আদায় করলে যেমন মানুষের উপার্জিত সব ধনসম্পদ পবিত্র হয়, তেমনি রমজান মাসে রোজা পালন করলে সারা শরীর পবিত্র হয়ে যায়।বস্তুর পবিত্রতা হাসিলের জন্য যেমন জাকাত দিতে হয়, তেমনি মানুষের শরীর তথা আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য সত্যিকারের সিয়াম বা রোযা পালন করতে হয়।

জাকাত দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়ের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও রমজান মাসই জাকাত আদায়ের সর্বোত্তম সময়। মাসব্যাপী রোযা রেখে রোজাদার লোকেরা পরস্পরের প্রতি সহমর্মী ও সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন। ফলে বিত্তবানেরা বেশি বেশি দান-খয়রাত, সাদকা, জাকাত দিতে উৎসাহিত হন। কেননা রমজান মাসে যেকোনো ধরনের দান-সাদকা করলে অন্য সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সওয়াব হাসিল হয়। তাই রমজান মাসে রোজাদার মুমিন বান্দারা একসঙ্গে জাকাত ও ফিতরা আদায় এ দু’টি আর্থিক ইবাদত করে থাকেন।

মাহে রমজানসহ সারা বছর নিজের ও পরিবারের যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে যদি কোনো মুসলমানের কাছে নিসাব পরিমাণ অর্থাৎ বছরের আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যদি কমপক্ষে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্য অথবা সমমূল্যের ধন-সম্পদ থাকে, তবে তার সম্পদের শতকরা আড়াই টাকা হিসাবে আল্লাহর নির্ধারিত খাতে গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বণ্টন করতে হয়, আর এটাই হলো জাকাত। যার ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে, তাকে অবশ্যই জাকাত দিতে হবে। আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক ধন-সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ অসহায় গরিব-দুঃখীদের জাকাত প্রদান করে রোজাদার আত্মিক প্রশান্তি লাভ করে থাকেন।

জাকাত গরিবের প্রতি ধনীর অনুগ্রহ নয়, বরং তা গরিবের ন্যায্য অধিকার। এভাবে জাকাতের মাধ্যমে ধনী রোজাদারেরা গরিবদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করেন। ধনী রোজাদার লোকেরা যদি ঠিকমতো জাকাত আদায় করেন, তাহলে সমাজে কোনো অন্নহীন, বস্ত্রহীন, আশ্রয়হীন, শিক্ষাহীন লোক থাকতে পারে না। মাহে রমজানে যে জাকাত-ফিতরা প্রদান করা হয়, কতিপয় ধনী লোক গরিবদের প্রতি তা দয়া বা অনুগ্রহ বলে মনে করেন। আর গরিব-দুঃখীদের মনে করা হয় করুণার পাত্র। কিন্তু ধনীর অর্থ-সম্পদে দরিদ্র অসহায়দের অধিকার রয়েছে। রমজান মাসে ধনী লোকেরা জাকাত-ফিতরা দিয়ে সেই দায়িত্বমুক্ত হচ্ছেন মাত্র। আর জাকাত-ফিতরা আদায় না করলে তিনি নিজের দায়িত্ব পালন করেননি বলে দোষী সাব্যস্ত হবেন। জাকাত-ফিতরা বা দান-খয়রাত করুণার বিষয় নয়, এগুলো হলো বান্দার হক। রোজা পালনকারী প্রত্যেক ধনী ব্যক্তিরই আল্লাহকে ভয় করে কড়ায়-গন্ডায় জাকাত আদায় করা উচিত।

রমজান মাসে বঞ্চিতদের অধিকার রক্ষায় ও সমাজের ধনী-দরিদ্রের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে জাকাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। জাকাতের প্রকৃত হক্বদার হচ্ছে তারা, যারা কর্মক্ষমতাহীন এবং যারা কর্মক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও উপার্জনহীন অথবা পর্যাপ্ত পরিমাণে উপার্জন করতে পারছে না। এমতাবস্থায় দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দুর্বিপাকে ধনী লোকেরা যদি রমজান মাসে অগ্রিমও জাকাত আদায় করেন, তাহলে সব ধরনের অভাবী, দুর্দশাগ্রস্ত, দুর্গত মানুষের অভাব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধান ও পুনর্বাসন করা সহজ হতে পারে। মাহে রমজানে জাকাতকে সঠিক খাতে এবং সহায়-সম্বলহীন দুস্থ এতিমদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে ব্যবহার করতে পারলে সমাজ থেকে সহজেই অভাব-অনটন ও দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব হবে।

মানুষের সুপ্রবৃত্তিগুলো মানব মনে ইসলাম-নির্দেশিত শান্তি, শৃঙ্খলা, ঐক্য, সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব, প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা প্রভৃতি মহৎ কাজের প্রতি অনুরাগ এনে দেয়। আর কুপ্রবৃত্তি বা কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য এ ষড়িরপুসমূহ মানবজীবনে অনৈক্য, হিংসা, বিদ্বেষ, অন্যায়, অত্যাচার, ব্যভিচার, নির্মমতা, পাশবিকতা, হত্যাকাণ্ড, ধনসম্পদের লোভ-লালসা, আত্মসাৎ প্রবণতা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, ঘুষ-দুর্নীতি, অশান্তি, বিশৃঙ্খলা প্রভৃতি অনৈসলামিক ও অমানবিক কার্যকলাপের উদ্ভব ঘটায়।
মানুষের কুপ্রবৃত্তির এ তাড়না থেকে আত্মশুদ্ধির উপায় এবং উন্নততর জীবনাদর্শের অনুসারী হওয়ার জন্যই মাহে রমজানে রোজা রাখার বিধান করা হয়েছে।

রোজার মাধ্যমে কুপ্রবৃত্তির ওপর বিবেকের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়, এর দ্বারা মানুষের পাশবিক শক্তি অবদমিত হয় এবং রুহানি শক্তি বৃদ্ধি পায়। রমজান মাসের প্রশিক্ষণের ফলে একজন ধর্মভীরু মানুষ হালাল খানাপিনা এবং জৈবিক রিপুর তাড়না ও কামনা-বাসনা থেকে দূরে থাকতে সক্ষম হন।প্রতিটি রোযাদারের মধ্যে যখন মানবিক গুণাবলি বিকশিত হবে, প্রতিটি মানুষ যখন হবে প্রকৃত মানুষ, থাকবে না হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি, হানাহানি, সন্ত্রাস, ঘুষ-দুর্নীতি, অরাজকতা, সামপ্র্রদায়িকতা ও মানুষে মানুষে ভেদাভেদ। চূর্ণ হবে মানুষের অহমিকা ও আমিত্ববোধ, যা সব অন্যায় ও অনাচারের জন্মদাতা। সৃষ্টি হবে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি। এ অশান্ত পৃথিবীর বুকে বয়ে চলবে শান্তির সুশীতল বায়ু। এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েই প্রতিবছর মাহে রমজান মুসলিম উম্মাহর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়।

রোজার মূল লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি আর রোযার ব্যবহারিক উদ্দেশ্য হলো কুপ্রবৃত্তি দমন, আত্মসংশোধন, আত্মসংযম ও খোদাভীতি অর্জন। রমজান মাসের রোযার মাধ্যমে রোযাদার খোদাভীতি অর্জন করেন, সৃষ্টিকর্তার শোকর আদায় করতে শেখেন এবং আল্লাহর হুকুমের কদর বুঝতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে সব কাজকর্মের মধ্য দিয়ে রোযাদার মানুষ মূলত আল্লাহর আদেশ-নিষেধগুলোকে মেনে চলার চেষ্টা করেন। রোযা রাখার কারণে মানুষ নিজের নফস বা আত্মাকে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ প্রভৃতি কুপ্রবৃত্তি থেকে পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে। মানুষ তার সমস্ত কামনা-বাসনা ও লোভ-লালসা পরিত্যাগ করে বিভিন্ন যাতনা ও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে খোদাভীতি অর্জনে ব্রতী হয়।

দেহকে আত্মনিয়ন্ত্রণে আনতে হলে দৈহিক প্রেরণাকে সংযত করতে হয়। আত্মিক শক্তিকে সমৃদ্ধ করতে হয়। দৈহিক কামনা-বাসনাকে সংযত করার জন্য একদিকে ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্ট সহ্য ও রিপুর তাড়নাকে পরিত্যাগ করতে হয়, অন্যদিকে জিহ্বা ও মনের চাহিদা এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এভাবে দৈহিক আকাঙ্ক্ষা ও প্রেরণাকে যত সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, অন্য কোনোভাবে তা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্যবিশারদগণ বলেন - শরীরটাকে ভালো রাখতে চাও তো রোযা করো। নীরোগ, দীর্ঘজীবী ও কর্মক্ষম সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে বছরের কিছুদিন উপবাসের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। খাদ্যাভাব বা আরাম-আয়েশের জন্য মানুষের শরীরের যে ক্ষতি হয়, রোযা তা পূরণ করে দেয়।

মাহে রমজানে একজন রোযাদার সারা দিনের ক্লান্তি, অবসাদ ও কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে সিয়াম সাধনা করে উন্নত মানবিক গুণাবলি অর্জনে সক্ষম হন। মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার মধ্যে রোযাদারদের জন্য রয়েছে অশেষ কল্যাণ ও উপকার। স্বাস্থ্যগতভাবে এবং মানসিক উৎকর্ষ সাধনের ক্ষেত্রেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। রোযার মাধ্যমে মানুষের আত্মিক ও নৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। লোভ-লালসা, হিংসা-ঈর্ষা, প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত হয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিশ্ব মানবসমাজ ও সম্প্রদায়কে সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য মাহে রমজান এক নিয়ামক শক্তি। রোযার মধ্যে এমন একটি অপ্রতিরোধ্য আধ্যাত্মিক চেতনাশক্তি আছে, এমন এক বরকতময় ও কল্যাণকর উপাদান আছে, যা মানুষকে সব রকমের পাপাচার, অনাচার থেকে ঢালস্বরূপ রক্ষা করে, তেমনি তাকে পাপের কালিমামুক্ত এক পবিত্র, পরিশুদ্ধ খাঁটি মানুষ করে তোলে।

রমজান মাসে শুধু রোযাদারই নন বরং আল্লাহর সব সৃষ্টি তাঁর অশেষ রহমতলাভে ধন্য হয়। এ নিয়ামতপূর্ণ মোবারকময় মাসে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিনের অপার রহমতের দরজাগুলো তাঁর নেক বান্দাদের জন্য খুলে দেয়া হয়। দরজা খোলার অর্থ হচ্ছে, রমজান মাসে আল্লাহর অসীম রহমত উম্মতের ওপর অবিরাম বৃষ্টির মতো বর্ষিত হতে থাকে। সৎকাজ ও নেক আমলগুলো আল্লাহতায়ালার দরবারে পেশ করা এবং দোয়া কবুল হয়।

মানবজীবনের সামগ্রিক কল্যাণ লাভের প্রত্যক্ষ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা রমজান মাসের সিয়ামের মধ্যে নিহিত রয়েছে। রোযার মৌলিক উদ্দেশ্যই হচ্ছে জীবনকে পবিত্র ও পরিশীলিত রাখা। আর একটি পবিত্র ও পরিশীলিত জীবন সর্বদাই সমাজ ও মানবতার জন্য নিবেদিত হয়ে থাকে। রোযাদার মাহে রমজানের মাসব্যাপী নফসের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করেন, যার ফলে পরিশুদ্ধতার সৌকর্য-শোভায় তিনি সুশোভিত হওয়ার সুযোগ লাভ করেন। রোযা পালনের মধ্য দিয়ে মানুষ পরিশুদ্ধতার শীর্ষে পৌঁছাতে পারে।
মাহে রমজানের আরেক অর্থ জ্বালিয়ে ফেলা, ভস্ম করা। এবারের মাহে রমজান প্রকৃত অর্থেই যেন মানুষের পশুত্ব, আত্মঅহমিকা, হিংস্রতাসহ সব অমানবিক দোষ-ত্রুটি ভস্ম করে, ধৈর্য-সহনশীলতা, প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা-হূদ্যতা বিকশিত করে এবং মানবিক গুণাবলি অর্জন করে যেন আমরা মুত্তাকি হয়ে নিজেদের মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করতে পারি।
রমজান মাস যেন মানুষে মানুষে সমপ্র্রীতি ও ভালোবাসা গড়ে ওঠার অবলম্বন হয়। সমাজ থেকে যেন সব ধরনের অরাজকতা-অনাচার দূরীভূত হয়, মানুষ যেন খুঁজে পায় সত্য, সুন্দর ও মুক্তির পথ। আল্লাহ তাআলা আমাদের যথাযথভাবে মাহে রমজানের গুরুত্ব উপলব্ধি করার এবং এ মাসের মূল উদ্দেশ্য মানবজীবনকে সুন্দর-সুশৃঙ্খল ও পরিশীলিত করার জন্য বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন! আমীন।

রোযা পালনের সংক্ষিপ্ত নিয়ম

যাদের উপর রোযা ফরয ঃ

ক) মুসলিম নর-নারীর উপর রোযা ফরয।
খ) প্রাপ্ত বয়স্ক নর-নারীর উপর রোযা ফরয।
গ) সুস্থ মস্তিক সম্পন্ন নর-নারীর জন্য রোযা ফরয।
ঘ) মুকিম নর-নারীর উপর রোযা ফরয।
ঙ) সামর্থ্যবান নর-নারীর উপর রোযা ফরয।
চ) মাসিক বন্ধ এমন নারী।

যাদের উপর রোযা ফরয নয় ঃ

ক) অপ্রাপ্ত বয়স্কের উপর রোযা ফরয নয়।
খ) পাগলের উপর রোযা ফরয নয়।
গ) মুসাফিরের উপর রোযা ফরয নয়।
ঘ) সামর্থ্যহীন লোকের উপর রোযা ফরয নয়। (যেমন অতি বার্ধক্যের কারণে যে ভাল-মন্দের পার্থক্য করতে পারে না এমন ব্যক্তি। যে অসুস্থতার কারণে রোযা রাখতে সামর্থ নয় এমন ব্যক্তি। গর্ভবতী ও দুগ্ধদান কারী নারী নিজের ও সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা করলে রোযা ছাড়তে পারবে। পরে কাযা আদায় করে নিবে)।

যে সব কারনে রোযা ভঙ্গ হয় ঃ

ক) রোযার সময়ে ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার বা পানীয় গ্রহণ করা। (চাই তা স্বাস্খ্যের জন্য উপকারী হোক বা তিষ্ঠার জন্য।) যেমন ধুমপান,তামাক পান ইত্যাদি।
খ) রোযা অবস্খায় যৌন মিলন ঘটানো। (এতে কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে।)
গ) জাগ্রত অবস্খায় চুম্বন, স্পর্শ, হস্তমৈথুন, আলিঙ্গন, সহবাস ইত্যাদির মাধ্যমে বীর্যপাত ঘটানো।
ঘ) পানাহারের বিকল্প হিসেবে রক্তগ্রহণ, স্যালাইনগ্রহণ, এমন ইনজেকশন নেয়া বা আহারের কাজ করে, যথা- গ্লুকোজ ইনজেকশন ইত্যাদি নেয়া। অনুরূপ রক্তরণ মিটানোর জন্য ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্ত প্রদান করা।
ঙ) ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা। তবে অনিচ্ছাকৃত বমি করলে তাতে রোযা ভঙ্গ হবে না।
চ) মহিলাদের হায়েজ (ঋতুস্রাব) ও নিফাস (প্রসবজনিত রক্তক্ষরণ) হওয়া।

যে সব কারনে রোযা ভঙ্গ হয় না ঃ

ক) ভুলবশত পানাহার বা স্ত্রী সহবাস করা।(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কেউ যদি রোযা অবস্খায় ভুলবশত: পানাহার করে সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে; কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।)
খ) শরীর বা কাপড়ে সুগন্ধি ব্যবহার করা। এমনকি নাকে মুখে ঘন্সাণযুক্ত তেল ব্যবহার করা। চোখে সুরমা ব্যবহার করা।
গ) রোযা অবস্খায় স্বপ্নদোষ হওয়া। এমনকি কারো প্রতি অসৎ দৃষ্টি নিক্ষেপের কারণে বীর্যপাত ঘটা। অনুরূপ কোন রোগের কারণে উত্তেজনা ব্যতীত বীর্যপাত ঘটা।
ঘ) স্বাভাবিক কোন কারণে যেমন কেটে যাওয়া, দাঁত উঠানো, নাকের রোগ ইত্যাদিতে রক্ত বের হলে রোযা ভাঙ্গবে না।
ঙ) স্বামী-স্ত্রী চুম্বন-আলিঙ্গন। তবে শর্ত হল - বীর্যপাত না ঘটা। (তবে যে ব্যক্তি চুম্বন-আলিঙ্গনের পর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না বলে আশংকা রয়েছে, তার জন্য এরূপ করা সঠিক হবে না।)
চ) অপবিত্র অবস্থায় সকাল করা। এমনকি তাতে সারাদিন গড়িয়ে গেলেও রোযা নষ্ট হবে না।
ছ) সাওম পালন অবস্থায় মিসওয়াক করা।
জ) খাবারের স্বাদ পরীক্ষা করার জন্য জিহ্বায় তার স্বাদ গ্রহণ করা। (তবে তা যেন পেটে চলে না যায়।)
ঝ) অসুস্থতার কারণে গ্যাস জাতীয় স্প্রে ব্যবহার করা। ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিন ব্যবহার করা।
ঞ) পরীক্ষার জন্য রক্ত প্রদান করা।
ট) কুলি করার সময় অনিচ্ছাকৃত মুখে পানি ঢুকে যাওয়া।
ঠ) সূর্য ডুবে গেছে অথবা ফজর এখনো হয়নি ভেবে পানাহার করা।
ড) এমন ইনজেকশন নেয়া যা খাবারের সহায়ক নয়। যেমন পায়ুপথে ডুশ ব্যবহার করা অথবা রোগে ইনজেকশন নেয়া।

যেসব কারণে রমজান মাসে রোযা ভঙ্গ করা যেতে পারে, কিন্ত পরে কাজা আদায় করতে হবে ঃ

ক) মুসাফির অবস্থায়।
খ) রোগ বৃদ্ধির বেশি আশঙ্কা থাকলে।
গ) গর্ভের সন্তানের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে।
ঘ) যদি এমন তৃষ্ণা বা ক্ষুধা হয়, যাতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতে পারে।
ঘ) শক্তিহীন বৃদ্ধ হলে।
ঙ) কোনো রোযাদারকে সাপে দংশন করলে।
চ) মেয়েদের হায়েজ-নেফাসকালীন রোযা ভঙ্গ করা যায়।

রোযা ভঙ্গের কাফফারা ঃ

শরিয়তে কঠোর নিষেধ থাকা সত্ত্বেও বিনা কারণে কেউ রোযা ভঙ্গ করলে তার উপর কাজা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব। যতটি রোযা ভঙ্গ হবে ততটি রোযা আদায় করতে হবে। কাজা রোযার ক্ষেত্রে একটির পরিবর্তে একটি।

কাফফারা আদায় করার তিনটি নিয়ম।

ক) এক একটি রোযা ভঙ্গের জন্য একাধারে ৬০টি রোযা রাখতে হবে। কাফফারা ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোযাই রাখতে হবে, মাঝে কোনো একটি রোযা ভঙ্গ হলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।
খ) যদি কারও জন্য ৬০টি রোযা পালন সম্ভব না হয়, তাহলে সে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা খানা দেবে। অপরদিকে কারও অসুস্থতাজনিত কারণে রোযা রাখার ক্ষমতা না থাকলে ৬০ জন ফকির, মিসকিন, গরিব বা অসহায়কে প্রতিদিন দুই বেলা করে পেট ভরে খানা খাওয়াতে হবে।
গ) গোলাম বা দাসী আজাদ করে দিতে হবে।
===============================