আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা

বাংলা ভাষার জন্য আত্মত্যাগকারী

সকল মহান ভাষা শহীদগণের প্রতি,
এবং ভাষা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত

সকল ভাষা সৈনিক
ও বীর বাঙ্গালীদের জানাই অশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলী,
সেইসাথে সকলকে জানাই

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা।

বিষয় সূচী

সাহিত্য (60) অন্যান্য কবিতা (53) ভালোবাসার পদবিন্যাস ( প্রেম সম্পর্কিত রচনা বিশেষ ) (53) আমার লেখা প্রবন্ধ-নিবন্ধ (37) কবিতা (35) দেশ নিয়ে ভাবনা (33) ফিচার (33) বাংলাদেশ (29) সমসাময়িক (28) খন্ড কাব্য (26) হারানো প্রেম (22) সংবাদ (18) কাল্পনিক প্রেম (16) ইতিহাস (15) প্রতিবাদ (15) সুপ্রভাত প্রবাসী বাংলাদেশ (15) Online Money Making Links (14) দেশাত্মবোধক কবিতা (13) আমার জীবনের দিনপঞ্জী (12) ধর্ম (12) প্রেমের কবিতা (11) ব্যক্তিত্ব (11) রাজনীতি (11) ধর্মীয় আন্দোলন (10) প্রবাসের কবিতা (10) খন্ড গল্প (9) জীবন গঠন (9) বর্ণমালার রুবাঈ (9) ইসলাম (8) প্রগতি (8) মানুষ ও মানবতা (8) হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ (8) VIDEOS (7) আমার লেখালেখির অন্তরালে (7) ইসলামী জাগরণ (7) মানব মন (7) ট্র্যাজেডি (6) শোক সংবাদ (6) সম্প্রীতি (6) নারী স্বাধীনতা (5) প্রেমের গল্প (5) বিজয় দিবসের ভাবনা (5) মৃত্যুপথ যাত্রী (5) সংবাদ মাধ্যম (5) স্মৃতিকথা (5) ঈদ শুভেচ্ছা (4) প্রবাস তথ্য (4) রমজান (4) শুভেচ্ছা (4) Computer Programer (3) আমার ছবিগুলো (3) আমার রাইটিং নেটওয়ার্ক লিংক (3) পর্দা (3) ফটিকছড়ি (3) বাংলাদেশের সংবিধান (3) বিশ্ব ভালবসা দিবস (3) শিক্ষা (3) শিক্ষার্থী (3) স্লাইড শো (3) News (2) VERIETIES POEMS OF VERIOUS POETS (2) আষাঢ় মাসের কবিতা (2) আষাঢ়ের কবিতা (2) ইসলামী রেনেসাঁ (2) ছাত্র-ছাত্রী (2) থার্টি ফাস্ট নাইট (2) নারী কল্যান (2) নারী প্রগতি (2) নির্বাচন (2) বর্ষার কবিতা (2) মহাসমাবেশ (2) শবেবরাত (2) শরৎকাল (2) শাহনগর (2) শ্রদ্ধাঞ্জলী (2) সত্য ঘটনা (2) সত্য-মিথ্যার দ্বন্ধ (2) সফলতার পথে বাংলাদেশ (2) Bannersআমার ছবিগুলো (1) DXN (1) For Life Time Income (1) For Make Money (1) Knowledge (1) Student (1) অদ্ভুত সব স্বপ্নের মাঝে আমার নিদ্রাবাস (1) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (1) আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত(সুন্নী) (1) উপন্যাস (1) কবি কাজী নজরুল ইসলাম (1) কোরআন - হাদিসের কাহিনী (1) গল্প (1) চট্টগ্রাম (1) চিকিৎসা ও চিকিৎসক (1) জমজম (1) জাকাত (1) তরুন ও তারুণ্য (1) নারী জাগরণ (1) পরকিয়ার বিষফল (1) ফটিকছড়ি পৌরসভা (1) বন্ধুদিবস (1) বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম (1) বিবেক ও বিবেকবান (1) বিশ্ব বাবা দিবস (1) বিশ্ব মা দিবস (1) ভ্রমণ (1) মন্তব্য (1) মাহফুজ খানের লেখালেখি (1) রবি এ্যাড (1) রমজানুল মোবারক (1) রেজাল্ট (1) রোগ-পথ্য (1) লংমার্চ (1) শহীদ দিবস (1) শুভ বাংলা নববর্ষ (1) শৈশবের দিনগুলো (1) সমবায় (1) সস্তার তিন অবস্থা (1) সাভার ট্র্যাজেডি (1) সিটি নির্বাচন (1) স্বপ্ন পথের পথিক (1) স্বাধীনতা (1) হ্যালো প্রধানমন্ত্রী (1) ২১ ফেব্রোয়ারী (1)

APNAKE SHAGOTOM

ZAKARIA SHAHNAGARIS WRITING

সকলকে বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা

বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে আমরা আর বাংলা ভাষায় কথা বলতে চাইনা । নিজের মাতৃভাষাকে যখন-তখন যেখানে সেখানে অবমাননা করে তৎপরিবর্তে ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করতে অভ্যাস্থ হয়ে যাচ্ছি বা হয়ে গেছি ।
আরও একটু এগিয়ে গেলে বলতে হয় - আমরা আজ বাঙ্গালী হয়ে বাঙ্গালী জাতিসত্বা ভুলে গিয়ে ইংরেজী জাতিসত্বায় রক্তের ন্যায় মিশে গেছি !

অথচ একদিন আমরা বাঙ্গালী জাতি একতাবদ্ধ হয়ে রাষ্ট্রীয় ভাষা উর্দুকে ত্যাগ করে নিজেদের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা তথা বাংলা ভাষাকে সর্বত্র প্রচলন করতে প্রাণ দিতে বাধ্য হয়েছিলাম ! ফলে বিজাতীয় ভাষা উর্দূকে অপসারন করে নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলার স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলা ভাষাকে ধারন করেছিলাম । যখন আমরা বাংলার সর্বত্র বাংলা ভাষায় কথা বলা শুরু করেছিলাম ,তখন কিন্তু বিশ্বায়নের যুগটা অনুপস্থিত ছিল তা নয় , বিশ্বায়নের যুগটা তখনও ছিল বিধায় আমরা ইংরেজী শিক্ষায় তখনও বাধ্য ছিলাম । অর্থাৎ যে জন্যে আজ আমরা ইংরেজী শিখছি সেইজন্যে তখনও ইংরেজী শিক্ষার প্রচলন ছিল । ছিল ইংরেজী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাও । তাই বলে সে সময় বর্তমান সময়ের মত মাতৃভাষা বাংলাকে অবমাননা করা হয়নি । মানুষ সে সময় বাংলায়ই কথা বলেছিল । শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেই সে সময় ইংরেজী ব্যাবহার করেছিল বাঙ্গালী জাতি

conduit-banners

Powered by Conduit

ফ্লাগ কাউন্টার

free counters

MZS.ONLINE MONEY MAKING WAY

PLEASE CLICK ON MY BANNERS. VISIT MY AFFILIATE SITE "MZS.ONLINE MONEY MAKING WAY ( অনলাইনে অর্থোপার্জনের একটা মাধ্যম )" I HOPE IT WILL BE HELPFUL FOR YOU. Create your own banner at mybannermaker.com!

বৃহস্পতিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৩

বিলুপ্তাধীন বাংলাদেশ : গর্জে উঠ দেশ-জনতা

বিলুপ্তাধীন বাংলাদেশ : গর্জে উঠ দেশ-জনতা
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
-----------------------

শুরু হয়েছে যুদ্ধ। চারিদিকে চলছে গোলাগুলি , ফুটছে বোমা , জ্বলছে সর্বত্র ধাউ ধাউ করে আগুন, হচ্ছে স্বাধীন দেশের সবুজ রাজপথ রক্তরঞ্জিত,ঘটছে সর্বত্র ধর্ষণের ঘটনা, চলছে নারীদের উপর নির্যাতন অহরহ। এ যেন ১৯৭১ এর সেই যুদ্ধকালীন সময়েরই একটা পরিস্থিতি। বিরাজ করছে সর্বত্র নৈরাজ্য।
নাহ্ ! এ কোন পাকিস্তানী তাড়াতে এদেশের মানুষদের স্বাধীনতার যুদ্ধ নয়। এ যুদ্ধ গৃহযুদ্ধ। ঘরের মানুষদের সথে ঘরের মানুষদের যুদ্ধ। এ নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা কোন পাকিস্তানী নয়, এদেশেরই মানুষ। এসব ধর্ষনকারী , নারীদের উপর অত্যাচারীরা কোন রাজাকার নয় এদেশেরই সোনার সন্তান নব্য রাজাকার। এ যুদ্ধ দমনকারী সরকার পক্ষ পাকিস্তানের সেই লুন্ঠনকারী সরকার নয়, এদেশের জনগণের স্বার্থ দেখার ম্যান্ডেট নিয়ে আসা ক্ষমতাধর জনগণের স্বার্থহরণকারী আর শান্তি বিনষ্টের মুল আয়োজক দেশপ্রেমের আড়ালে দেশ ধ্বংসী সরকার।
১৯৭১ এর যুদ্ধের দ্বিতীয় সংস্করনে সংঘটিত এই যুদ্ধে আস্তে আস্তে জড়িয়ে পড়ছে সমগ্র দেশের মানুষ । বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ নামক এই ছোট্ট ভুখন্ডটি এই গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে। যদি এই গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে বিলুপ্তাধীন এদেশকে বাঁচানোর ইচ্ছা থাকে তবে জনগণকে নতুন ভাবনায় ঘুরে দাঁড়াত হবে এখনই। দেশের মানুষদেরই গর্জে উঠতে হবে বাংলাদেশকে দলীয় সরকারের আবহ থেকে মুক্ত করতে। দেশের মানুষকেই দেশের সব রক্তচোষা দল ধ্বংসে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। দেশকে গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচানোর একটাই পথ - দেশকে রক্তচোষা সকল দল থেকে মুক্ত করতে নেমে পড়া।
=================

মঙ্গলবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৩

ছলা-কলায় ভালবাসা দেয়না ধরা (ইসলামী খেলাফতের একটা সত্য ঘটনা)

ছলা-কলায় ভালবাসা দেয়না ধরা
(ইসলামী খেলাফতের একটা সত্য ঘটনা)
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
----------------------

ইসলামী খেলাফতের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর বিন আব্দুল আজীজ (রাঃ) এর শাসনকাল। ইসলামী শাসনের স্বর্ণযুগের তৃতীয় অধ্যায়। যে স্বর্ণযুগের শাসনের ন্যায়-নীতির ইতিহাস এখনো ইতিহাসের পাতায় পাতায় স্বর্ণালী অক্ষরে ঝলঝল করছে। যে ন্যায়-নীতির শাসনে শাসিত হয়ে খোদ খলিফারই প্রাণপ্রিয় পুত্র আবু শাহমা দরবার কক্ষেই পিতৃ চাবুকের আঘাতে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। সেই ন্যায়-নীতির শাসনে শাসিত সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থলেই ছিল আনসারদের বসতি।


আনসারদের ঐ বসতিতে ছিল এক উশৃন্খল যুবতীর বাস। রূপে গুণে ছিল সে অনন্যা। কিন্তু, নিজ ইজ্জত আবরুর দিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপই ছিলনা। সর্বদা সে উদাসী, অশ্লীল ও উশৃন্খলভাবে যত্রতত্র চলাফেরা করত। বেপর্দায় উদ্ভাসিত ছিল তার উশৃন্খল জীবন। হঠাৎ একদিন যুবতীটি খলিফার দরবারে উগ্রবেশে গিয়ে উপস্থিত হল। খলিফার দরবর তখন লোকে লোকারণ্য। আমীর-ওমরাগণ নিজ নিজ আসনে সমাসীন।

যুবতীটির ফরিয়াদ প্রকাশের নির্দেশ দিলেন খলিফা। যুবতীটি কালবিলম্ব না করেই চিৎকার করে জানাতে শুরু করল তার ফরিয়াদ - “ আমীরুল মু’মেনীন ! এক আনসারী যুবক আমার ক্ষতি করেছে। আমার সম্ভ্রম নষ্ট করেছে। আমার সঙ্গে জোর করে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করেছে। এই দেখুন তার কুকর্মের নিদর্শন’’- এই বলেই যুবতীটি পর্দালঙ্গন করে তার একটি নিদ্রিষ্ট অঙ্গের দিকে ইশারা করল !

সভাসদবর্গের সকলে হতবাক ! নিস্তব্ধ খেলাফত মজলিস। আমীরুল মু’মেনীন উদ্ধিগ্ন। উপস্থিত সকলেই পরস্পর পরস্পরের দিকে তাকাতে লাগলেন। কার কোন শব্দ নেই। যুবতীটি দাঁড়িয়ে। মনের মাঝে সৃষ্টি হলো তার খুশির ফোয়ারা। হাস্যোজ্জ্বল তার মুখাবয়ব।

নীরবতা ভাঙ্গলেন আমীরুল মু’মেনীন। মজলিসে উপস্থিত মহিলা সভাসদদের মধ্য থেকে কয়েকজন মহিলাকে ফরিয়াদীর অভিযোগটি প্রমাণের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিলেন। যুবতীটিকে অন্দরমহলে নিয়ে যাওয়া হল। ভালভাবে পরীক্ষা করে দরবারে উপনীত হলেন পরীক্ষকগণ। যুবতীকেও আনা হল। পরীক্ষকরা তাঁদের প্রমাণ দাখিল করলেন এই বলে – “ যুবতীটির শরীর ও কাপড়ে শুক্রের নিদর্শন লক্ষ্য করা গেছে’’।

আমীরুল মু’মেনীন প্রমাণের ভিত্তিতে যুবকটিকে অপরাধী সাব্যস্ত করলেন। আনসার যুবকটিকে দরবারে ডেকে আনা হল।বিচারের কাঠগড়ায় উপনীত হল যুবকটি। সুদর্শন, লাজুক চেহারা ও সভ্য স্বভাবের নিষ্পাপ যুবকটির চতুর্দশী চাঁদের মত উজ্জ্বল প্রভাকর রূশনীতে আলোকিত হয়ে গেল খলিফার দরবার কক্ষ। কারো কাছেই বিশ্বাস হচ্ছেনা এ যুবক তেমন একটা গর্হিত কর্মে জড়িত হতে পারে !

যুবকটি দরবারের অভ্যান্তরে পা’ রেখে খলিফার দিকে তাকিয়ে সকলের প্রতি সালাম প্রদান করল। তারপর অবনত মস্তকে জিজ্ঞেস করল খলিফার কাছে , কেন তাকে দরবারে ডেকে আনা হয়েছে ? তারপর চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। খলিফা যুবকের দিকে দৃষ্টি রাখলেন। অগ্নিশর্মা খলিফার চোখ যেন কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। আদেশ দিলেন যুবকটির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তাকে শুনানোর জন্য। যুবতীটির অভিযোগ তাকে শুনানো হল।

যুবকটি অভিযোগ শুনে হয়ে গেল কিংকর্তব্যবিমূঢ় ! লজ্জা ও হতাশায় কালো হয়ে গেল সহসা তার দীপ্তি ছড়ানো মুখ। দরবারের উজ্জ্বল আলোকরশ্মি ধপ্ করে নিভে গেল হঠাৎ যেন ! সহজ-সরল যুবক। জীবনে কোনই অন্যায়-অপরাধ করেনি। অপরাধের ধারে কাছেও যায়নি সে কখনো। অথচ, আজ তার নামে এত ড় একটা মিথ্যা অভিযোগ ! মহা অপরাধে অপরাধী সে। জাগ্রতমান তার মনে কঠিন সব প্রশ্নমালা।

খলিফা কর্তৃক তার উপর শাস্তির বিধান জারী করা হল। এমতাবস্থায় যুবকটি কি করবে ভেবে পাচ্ছিলনা। সে কাতরকন্ঠে বলতে লাগল – “ হে আমীরুল মু’মেনীন ! আপনি আমার দিকে কটু মহত্বের দৃষ্টি দিন। আমার বিষয়ে একটু ভাবুন। মহান আল্লাহর কসম ! আমি মোটেও কখনো অশ্লীল পথে পা’ বাড়াইনি। জীবনে এ পর্যন্ত কোন বেগানা নারীর দিকে চোখ তুলে তাকাইনি। মহানুভব ! যুবতীটির কাছে গমনতো আমার পক্ষে মোটেই সম্ভবপর ছিলনা। ঐ নারী আমার বিরূদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র করেছে। আমি নিজে আমার আত্মপক্ষে আমার নির্দোষীতার আর্জি পেশ করছি”।

যুবকটির আর্জি শুনে সভাসদগণ সকলেই আশ্চর্যাম্বিত ! খলিফা তার আর্জি শুনে বিব্রত হয়ে পড়লেন। ভেবে পাচ্ছেননা তিনি কি করবেন ? কিভাবে বিচারের রায় দিবেন বুঝতে পারছেননা। এক সংকটময় সমষ্যার বেড়াজালে বন্ধী সবাই। অথচ প্রমাণসর্বস্ব অভিযোগ নিয়ে দণ্ডায়মান। সময় ক্ষ্যাপনের পরিস্থিতি নেই। একটা কিছু করতেই হবে।

আমীরুল মু’মেনীন হযরত আলী (রাঃ) কে লক্ষ্য করে বললেন – “ হে আবুল হাসান ! এ বিষয়ে আপনার মতামত ব্যক্ত করুন’’। হযরত আলী (রাঃ) কিছুণ নীরব ও স্থীর থাকলেন। ভাবলেন কিছুক্ষণ। তারপর মেয়েটির কাপড় তীক্ষ্ন দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলেন। তারপর কিছু গরম পানি আনার নির্দেশ দিলেন। গরম পানি আনা হল। গরমপানি যুবতীটির কাপড়ে লেগে থাকা প্রমাণের উপর ঢালতে নির্দেশ দিলেন তিনি। কাপড়ে গরম পানি ঢালা হল। গরমপানি লেগে কাপড়ে লেগে থাকা সফেদ জিনিসটি জমাটবদ্ধ হয়ে গেল। হযরত আলী (রাঃ) প্রমাণটি হাতে নিয়ে ঘ্রাণ নিলেন নাক দিয়ে। আস্বাদন করে দেখলেন যে, জিনিসটি আসলেই ডিম। রহস্য উদঘাটিত হল। যুবতীটিকে তিনি মিথ্যা অভিযোগকারিনী হিসেবে অভিযুক্ত করলেন।

যুবতীটি তার ষঢ়যন্ত্রের কথা স্বীকার করে বলতে লাগল – “ আমীরুল মু’মেনীন ! আমি যুবকটির পাশের বাড়ীতে থাকি। একদিন যুবকটি আমার নজরে আসলে তাকে আমার ভাল লেগে যায়। অনেকদিন আগে থেকে তাকে আমি মনে মনে ভালবাসতে শুরু করি। আমার একপক্ষীয় ভালবাসা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, তাকে আমি অনকবার কাছে পাবার চেষ্ঠা করি। কিন্তু অনেক চেষ্ঠার পরও যুবকটির কোন সাড়া মেলেনি। তাই তাকে ফাঁদে ফেলানোর জন্য বিভিন্ন ভাবে চিন্তা করতে থাকি। অবশেষে এ বুদ্ধিটা আমার মাথায় আসে। তাই, ডিম নিয়ে তার কুসুম ফেলে দিই। তারপর ডিমের সাদা অংশটুকু আমার রানদ্বয়ে এবং কাপড়ে মেখে নিই। তারপর তড়িৎ গতিতে উদ্ভ্রান্তের মত দৌড়ে খলিফার দরবারে উপস্থিত হই। অভিযোগ করি যুবকটির বিরুদ্ধে। এইভাবে মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে যুবকটিকে কাছে পাবার শেষ চেষ্ঠা চালাই। মনে করেছিলাম এই অভিযোগই তাকে আমার কাছে টেনে আনবে।

হে মহানুভব ! আমি আমার অপরাধ স্বীকার করছি। মূলতঃ যুবকটি একান্তই নির্দোষ। তার মত সৎ ও পর্দাপরায়ন যুবক আর দ্বিতীয়টি আমি দেখিনি। তাকে এ অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়া হোক”।

এভাবেই মিথ্যা অভিযোগকারীরা পদে পদে লাঞ্চিত হয় আর সৎ মানুষরা তাদের সততার গুণ দিয়ে মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে মুক্তি লাভ করে।
====================

শনিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৩

চাই একজন বিদ্রোহী ও জাগরণের কবি

চাই একজন বিদ্রোহী ও জাগরণের কবি
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
----------------------

কবি ও কবিতায় সমগ্র বাংলদেশ তথা সমগ্র বিশ্ব আচ্ছাদিত। কিন্ত খুঁজে পাওয়া যায়না গণমানুষের কবি ও কবিতা।


যাঁরা কবি ও কবিতা লেখেন তাঁরা গণমানুষের দুঃখ-দূর্দশা মোছনে কতটুকু কাজ করতে পারছেন জানিনা। জাগরণের কবি ফররুখ আহমদ, বিদ্রোহী ও সাম্যবাদের কবি কাজী নজরুল ইসলাম , মানবতার কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলোর দিকে তাকালে আমরা নিশ্চয় বুঝতে পারবো, তাঁরা তাঁদের কবিতা দিয়ে গণমানুষের কত কাছাকাছি ছিলেন।

আমাদের বর্তমান কবিরা যেন প্রেম আবেগের কবিতা দিয়ে বিশ্বকে সাজিয়ে দিতে চান। বিশ্বকে ভরপুর করে দিতে চান শুধুই প্রেম দিয়ে। এটা একটা ভাল দিক বলতে পারি। কারণ একটি সমাজ গড়তে মানুষ মানুষে প্রেম অত্যাবশ্যক। কিন্তু এইযে মানব প্রেম তা বিতায় পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। কবিতায় যা দেখা যাচ্ছে তা শুধুমাত্র নর আর নারীর মধ্যকার প্রেম যা সভ্য সমাজ গড়তে কোন সাহায্য করছেনা। প্রকৃত মানব প্রেমের জন্য যে জিনিসটা প্রয়োজন সেই জিনিসটা এসব কবিতার মাধ্যমে কতটুকু সফলতা অর্জিত হচ্ছে তা বোধগম্য নয়।

ইতিহাস সাক্ষী – মানুষ ও মানবতার কবিতা লিখে অতীতের কবিরা হয়েছিলেন বিশ্ববরেণ্য। মানবমুক্তির লক্ষ্যে মানুষ ও মানবতার কবিতা লিখে তাঁরা নিজেরাই কারাবরণ করে মানুষদের মুক্তির পথ প্রসার করেছিলেন। ক্ষমতাশালীদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তাঁরা চালিয়েছিলেন মানবতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শাব্দিক শানিত তলোয়ার। তাঁদের সেই শাব্দিক শানিত তলোয়ারের আঘাতে কাঁপিয়েছিল স্বৈরাচারী সব সরকারের মসনদ।

কিন্তু আজিকার কবি ও কবিতায় সেই শাব্দিক তলোয়ারের আঘাত যেন নিষ্ক্রীয়। দিকে দিকে চলছে অন্যায়-অনাচার। স্বৈরাচারী সব শাসক পরিবেষ্টিত সমগ্র পৃথিবীর জনপদ। চুষে নিচ্ছে তারা বিশ্ব মানবতার রক্ত। বিশ্ব মানবতাকে করছে তারা হত্যা-বন্ধী। অথচ প্রতিবাদী কেহই নেই ! নেই প্রতিবাদের কোন সংগ্রামী আয়োজন। মানবতার ধারক কবি সাহিত্যিকরাও আজ যেন সেইসব স্বৈরশাসকের ভয়ে মুখে কলুপ এঁটে বসে আছে। তাঁদের প্রতিবাদী কন্ঠ আজ যেন স্তব্ধ । তাঁরা যেন আজ নির্বাক জড়পদার্থের মত নিশ্চল ! না ভয়ে কুঞ্চিত , না ঘুষ খেয়ে টলে পড়া এইসব প্রতিবাদী কন্ঠ বুঝা যাচ্ছেনা। মানবতার মুখপাত্র হয়ে যাঁরা মানবতা রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়বে তাঁরাই যদি হয় এমন ভয়কাতুরে বা স্বৈরশাসকদের আপনজন হয়ে তাদের পক্ষ নিয়ে চুপ থাকবে, তবে কি করে হবে মানবতার রক্ষা ? কি করে আসবে শান্তি অশান্তির সব জনপদে ?

বর্তমান বিশ্বের এই দূর্যোগপূর্ণ সময়ে দেখা দিয়েছে এক একজন বিদ্রোহী কবি ও জাগরণের কবির প্রয়োজনীয়তা। তাই, সকল কবিদের মধ্য থেকে চাই একজন বিদ্রোহী কবি আর একজন জাগরণের কবি, যাঁরা মানুষদের জাগ্রত করবেন তাঁদের শক্তি জাগানিয়া কাব্য দিয়ে। যাঁরা সকল প্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁদের কবিতা নামক শাব্দিক শানিত তলোয়ার দিয়ে সকল অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে মানুষদের লড়তে শক্তি জোগাবেন।

প্রেমকাব্য নয়, এখন সর্বাগ্রে প্রয়োজন বিদ্রোহী ও জাগরণী কাব্য। এই দুই কাব্য যখন একীভুত হয়ে অবস্থান করবে তখন প্রেম কাব্য আর লিখতে হবেনা। মানুষের মাঝেই এমনিতেই জন্ম নিবে প্রেম ও আদর্শিক সভ্যতা। তাই, প্রেমের কবি ও কবিতার জনপদ নয়, চাই জাগরণ ও বিদ্রোহী কবি ও কবিতার জনপদ।

এখানে শুধু একজন বিদ্রোহী কবির মানবতা বিষয়ক কিছু নিদর্শন পেশ করতে চাই, যাতে আমাদের বর্তমান কবিরা একটু হলেও মানুষ ও মানবতা নিয়ে কাজ করার প্রেরণা পেতে পারেন।

“ আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর চির জনমের হারানো গৃহলক্ষ্মী নার্গিসকে জীবনের শেষ ও একমাত্র পত্রে লিখেছিলেন, ‘তুমি এই আগুনের পরশমানিক না দিলে আমি অগ্নিবীণা বাজাতে পারতাম না—আমি ধূমকেতুর বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না।’ নজরুলের এই কথাগুলো যে কতখানি সত্য, তা অনুধাবনের জন্য খুব বড় গবেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই। নার্গিসের সঙ্গে প্রেম, পরিণয় ও বিচ্ছেদের দাহে দৌলতপুর-ফেরত কবি যখন জ্বলছেন অন্তরে-বাইরে, সেই সময় বেরুতে থাকে তাঁর অবিস্মরণীয় রচনাগুলো। একে একে প্রকাশিত হয় পলাতকা, আজান, দহনমালা, দুপুর অভিসার, বিজয়ের গান, মা, কার বাঁশি বাজিল, লক্ষ্মীছাড়া, অনাদৃতা, রণভেরী, বাদল দিনে, দিল দরদী, অকরুণ প্রিয়া, আগমনী, আনোয়ার, মরণ বরণ, খোকার বুদ্ধি, কামাল পাশা, হারা-মনি, চিরন্তনী প্রিয়া, অ-কেজোর গান, ছল কুমারী, ফাতেহা-ই-দোয়াজদহম (তিরোভাব), বিজয়িনী, বন্দী বন্দনা, নিশীথ প্রিতম, খোকার গল্প বলা, চিঠি আবাহন, অভিমানী, আরবী ছন্দ, ভাঙার গান, প্রলয়োল্লাস এবং বিদ্রোহীর মতো কবিতা। আর সজীব হয়ে উঠল বাংলা সাহিত্যের শ্মশান, গোরস্থান। ধামা ধরা, জামা ধরার দিন শেষ হয়ে এলো নতুন প্রভাত। নতুন এবং অনন্য সাধারণ। রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, ‘অগ্নিবীণা বাজাও তুমি কেমন করে? আকাশ কাঁপে তারার আলোর গানের ঘোরে। বিষম তোমার বহ্নিঘাতে বারে বারে আমার রাতে জ্বালিয়ে দিল নতুন তারা ব্যথার ভরে।’ আবুল কালাম শামসুদ্দীনের মতো বিদগ্ধ সাহিত্য সমালোচক আবিষ্কার করলেন, এক মহান ‘যুগ প্রবর্তক’ কবির আবির্ভাব হয়েছে। তিরিশের তিন কবির মনের অবস্থা জেনে নেয়া যেতে পারে। যার মধ্য দিয়ে ৯০ বছর আগের মানুষরা কীভাবে দেখেছিলেন বিদ্রোহীকে তারও সন্ধান পাওয়া যাবে। বুদ্ধদেব বসু তাঁর ‘কালের পুতুলে’ লিখেছেন ঃ ‘‘ ‘বিদ্রোহী’ পড়লুম ছাপার অক্ষরে মাসিকপত্রে—মনে হলো এমন কখনো পড়িনি। অসহযোগের অগ্নিদীক্ষার পরে সমস্ত মন-প্রাণ যা কামনা করছিলো, এ যেন তাই; দেশব্যাপী উদ্দীপনার এই যেন বাণী।’’ প্রেমেন্দ্র মিত্র লিখে গেছেন ঃ ‘বাংলা সাহিত্যে এই শতাব্দীর তৃতীয় দশকের গোড়ায় একবার কিন্তু এমনি অকস্মাত্ তুফানের দুরন্ত দোলা লেগেছিল। সে দোলা যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে সেদিন অনুভব করেননি তাদের পক্ষে শুধু লিখিত বিবরণ পড়ে সে অভিজ্ঞতার সম্পূর্ণ স্বাদ পাওয়া বোধ হয় সম্ভব নয়।... রবীন্দ্রনাথের কাব্য প্রতিভার তখন মধ্যাহ্ন দীপ্তি। দেশের যুবগণের মনে তাঁর আসনও পাকা। তারই মধ্যে হঠাত্ আর একটা তীব্র প্রবল তুফানের ঝাপটা কাব্যের রূপ নিয়ে তরুণ মনকে উদ্বেল করে তুলেছিলো— আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণি— আমি পথ-সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণি। কবিতার ছন্দে ও ভাষায় এটি উত্তাল তরঙ্গ। কার কণ্ঠে ধ্বনিত এ প্রচণ্ড কল্লোল? কিশোর জগতে একটা সাড়া পড়ে গিয়েছিল, জেগে উঠেছিল একটা রোমাঞ্চিত শিহরণ। মনে আছে, বন্ধুবর কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত একটি কাগজ কোথা থেকে কিনে নিয়ে অস্থির উত্তেজনার সঙ্গে আমার ঘরে ঢুকেছিলেন। কাগজটা সামনে মেলে ধরে বলেছিলেন, পড়। অনেক কষ্টে যোগাড় করেছি। রাস্তায় কাড়াকাড়ি পড়ে গেছে এ কাগজ নিয়ে। কি সে এমন কাগজ? নেহাত সাধারণভাবে ছাপা, যতদূর মনে পড়ছে ডবল ডিমাই সাইজ-এর সাপ্তাহিক কাগজ। পাতাগুলো আলগা, সেলাই করা নয়। দাম বোধ হয় চার পয়সা। সেই কাগজ কেনবার জন্য সারা শহর ক্ষেপে গেছে? কেন?... পড়লাম কবিতার নাম বিদ্রোহী। ... সেদিন ঘরে বাইরে, মাঠে ঘাটে রাজপথে সভায় এ কবিতা নীরবে নয়, উচ্চকণ্ঠে শত শত পাঠক পড়েছে। সে উত্তেজনা দেখে মনে হয়েছে যে, কবিতার জ্বলন্ত দীপ্তি এমন তীব্র যে ছাপার অক্ষরই যেন কাগজে আগুন ধরিয়ে দেবে। ...গাইবার গান নয়, চিত্কার করে পড়বার এমন কবিতা এদেশের তরুণরা যেন এই প্রথম হাতে পেয়েছিল। তাদের উদাস হৃদয়ের অস্থিরতারই এ যেন আশ্চর্য প্রতিধ্বনি। এ কবিতা যে সেদিন বাংলাদেশকে মাতিয়ে দেবে তাতে আশ্চর্য হবার কি আছে! [নজরুল সন্ধ্যা: নজরুল প্রসঙ্গে] কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তাঁর সেদিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে লেখেন ঃ ‘এ কে নতুন কবি? নির্জীব দেশে এ কার বীর্য বাণী? বাংলা সাহিত্য নয়, সমগ্র দেশ প্রবল নাড়া খেয়ে জেগে উঠলো। এমনটি কোনোদিন শুনিনি, ভাবতেও পারিনি। যেন সমস্ত অনুপাতের বাইরে যেন সমস্ত অঙ্কপাত্রেরও অতিরিক্ত।... গদ গদ বিহ্বল দেশে এ কে এলো উচ্চণ্ড বজ্রনাদ হয়ে। আলস্যে আচ্ছন্ন দেশ—আরামের বিছানা ছেড়ে হঠাত্ উদ্দণ্ড মেরুদণ্ডে উঠে দাঁড়াল। [জ্যৈষ্ঠের ঝড়] আসলেই নজরুলের বিদ্রোহী সাধারণ একটি কবিতা মাত্র নয়। বিদ্রোহী মানুষের হাতে শব্দ দ্বারা নির্মিত গর্ব, অহঙ্কার, পৌরুষ ও শিল্পের সর্বোচ্চ মিনার। ১৩৯টি পঙিক্ত দ্বারা গেঁথে তোলা এ কবিতা বাংলা কবিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট। মানুষ ও মানবতার সবচেয়ে বিশাল ও ঐশ্বর্যশালী সুরম্য ভবন। বাংলা কবিতা মাত্র একবারই সমুদ্রের ভয়াল গর্জন নিয়ে ফুঁসে উঠেছিল, মাত্র একবার বাংলা কবিতার মহিমাময় শির দেখে সম্ভ্রমে মাথা নুইয়ে দিয়েছিল হিমাদ্রীর শিখর,—আর তা বিদ্রোহীর মাধ্যমে। বাংলা কবিতার ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে দেহের ভিতরে যে এত তেজতপ্ত লাভা থাকতে পারে, ভাষা যে ডিনামাইটের মতো বিধ্বংসী ক্ষমতাসম্পন্ন হতে পারে, স্বর্গমর্ত্য টালমাটাল করা ভয়ঙ্কর গতিমান হতে পারে; হতে পারে দুর্দমনীয় দুঃসাহসী, হতে পারে বারুদ ও শিল্পের অনাস্বাদিত রসায়ন, নজরুলের জন্ম না হলে আমরা জানতে পারতাম না। তেমনই অবলীলায় বলা যায়, বিদ্রোহী রচনার পরদিন থেকে বিশ্বসাহিত্য ভাগ হয়ে যায় দু’ভাগে, একভাগ যারা বিদ্রোহী পড়েছে, অন্যভাগ যারা বিদ্রোহী পড়েনি। বিদ্রোহীর পতাকা হাতে নজরুলের আবির্ভাব না হলে বাংলা কবিতা আজও সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদের ‘দালাল’ হয়েই থাকত। সে পূর্ণ ‘মানুষ’ হতো না। সে মুক্তিযুদ্ধ করতে পারত না। স্বাধীন হতে পারত না। মানুষ ও মানবতার জন্য বিদ্রোহীর চেয়ে বেশি করে বিশ্বসাহিত্যে কোথাও কিছু লেখা হয়নি। সেজন্য একক কবিতা হিসেবে বিদ্রোহী শুধু বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবিতা নয়, বিশ্বসাহিত্যেরও সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। দুই যে বিদ্রোহী কবিতা বাংলা কবিতায় নিয়ে এসেছিল অবিস্মরণীয় প্রভাত, সেই বিদ্রোহী কবিতা কিন্তু লেখা হয়েছিল ১৯২১ সালে ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহের এক রাতে। তপ্ত লাভার উদ্গীরণ ঘটেছিল হাড় কাঁপানো শীতে। নজরুলের কাছে সে সময় কোনো ফাউনটেন পেন ছিল না। দোয়াতে বারে বারে কলম ডুবিয়ে লিখতে হতো তাঁকে। বিদ্রোহী কবিতার প্রথম পাঠক কমরেড মুজাফফর আহমদ এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘দোয়াতে বারে বারে কলম ডোবাতে গিয়ে তার মাথার সঙ্গে হাত তাল রাখতে পারবে না, এই ভেবেই সম্ভবত সে কবিতাটি প্রথমে পেন্সিলে লিখেছিল।’ অর্থাত্ বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবিতাটি কোনো কলম দিয়ে নয়, লেখা হয়েছিল পেন্সিলে, ৩/৪ তালতলা লেনের নিচের তলার দক্ষিণ-পূর্ব কোণের ঘরে, কলকাতায়। এই কবিতার দ্বিতীয় পাঠক ছিলেন, ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকার আফজালুল হক। তৃতীয় পাঠক ছিলেন ‘বিজলী’ পত্রিকার ম্যানেজার অবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্য। প্রথম ছাপার কথা ছিল মোসলেম ভারতে। কিন্তু মোসলেম ভারত ছিল অনিয়মিত মাসিক পত্রিকা। সে জন্য অবিনাশ বাবুর দাবির মুখে আরেকটি কপি চলে যায় ‘বিজলী’তে। বিজলীই ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি প্রথম বারের মতো বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচন করে বিদ্রোহীর দ্বার। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, বিদ্রোহী কবিতার পাণ্ডুলিপি হারিয়ে গেছে চিরতরে। চিরতরে বললাম, কারণ ৯০ বছর পরও কেউই এর হদিস দিতে পারেনি। ৬ জানুয়ারির কলকাতা শহরের অবস্থা কেমন ছিল, তা আজ অনুমান করা কঠিন। কিন্তু স্মৃতিচারণে তার ছিটেফোঁটা পাই মাত্র। সেই ছিটেফোঁটা থেকে জানা যায়, সেদিন কলকাতার মোড়ে মোড়ে তরুণরা দলে দলে সমবেত হয়ে উচ্চকণ্ঠে আবৃত্তি করতে থাকে বিদ্রোহী। হঠাত্ যেন পাষাণপুরীতে ফিরে আসে প্রাণ। সড়কে সড়কে দেখা দেয় ট্রাফিক জ্যাম। বিজলী পত্রিকা দুই বার ছাপতে হয়েছিল সেদিন। দুইবারে একটা সাপ্তাহিক পত্রিকা ছাপা হয়েছিল ২৯ হাজার। এটাও সে সময়কার বাংলায় একটা রেকর্ড। মুজাফফর আহমদের মতো সংযতবাক মানুষও স্বীকার করে গেছেন, সেদিন কমপক্ষে দুই লাখ মানুষ বিদ্রোহী পড়েছিল। বিদ্রোহীর এই অভূতপূর্ব সাফল্যের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে মোসলেম ভারতসহ প্রবাসী, সাধনা, বসুমতী ও ধূমকেতু তা পুনর্মুদ্রণ করে। এ ঘটনাও বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়বার দেখা যায়নি। বিদ্রোহের প্রতিক্রিয়ায় একে একে লেখা হতে থাকে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কবিতা। শ্রীমতি ইলামিত্র, সৈয়দ এমদাদ আলী, মোহিত লাল মজুমদার, সজনীকান্ত দাস, গোলাম মোস্তফা, হাবিবুর রহমান সাহিত্যরত্ন, নাজির আহমদ চৌধুরী, মোহাম্মদ আবদুল হাকিম, মোহাম্মদ গোলাম হোসেনসহ নাম জানা না জানা অনেকে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন। এর মধ্যে ধর্মীয় গোঁড়া রক্ষণশীল অংশটি নামে বিরোধিতায়, আর যুবক তরুণসহ শিক্ষিত সম্প্রদায় বিদ্রোহীকে প্রাণের বাণী হিসেবে আত্মায় ধারণ করে জেগে ওঠেন। সামগ্রিক অর্থেই নজরুল জাতির সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন আলোকবর্তিকার মতো। সেটা যেমন রাজনৈতিকভাবে, তেমনি সাহিত্যিকভাবেও। তিনি এই দুই দিক থেকেই ছিলেন ত্রাণকর্তা। ক্রান্তিকালের নায়ক। তিনি আমাদের মানবিকতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনারও প্রধান উদগাতা। ১৭৫৭ সালের পর বাংলাদেশ দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটা ধারা হলো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে সহযোগিতা, আপস ও দালালির ধারা। এই ধারার প্রধান কেন্দ্র ছিল কলকাতা। কলকাতার বণিক, মুত্সুদ্দি, কেরানীকুল, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত থেকে উদ্ভূত ভূইফোঁড় চরিত্রহীন জমিদার শ্রেণী ছিল সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ রক্ষার মূল শক্তি। অন্য ধারা ছিল মোকাবেলার ধারা, স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার ধারা। এই ধারা মীর কাসিমের পথ, ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহের রক্তমাখা উত্তরাধিকার। নজরুল ছিলেন এই মোকাবেলার পথের শ্রেষ্ঠ উপহার। নজরুল যে রকমভাবে তাঁর অবমানিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, পরাধীন জাতির মর্ম ব্যথা অনুভব করেছিলেন—অন্যদের পক্ষে সেটা সঙ্গত কারণেই সম্ভব ছিল না। এজন্যই বলা যায়, বিদ্রোহীর মধ্যেও যেমন স্বর্গমর্ত্য পাতালের সবকিছু আছে, তেমনি আছে ১৭৫৭ সালের পলাশীর প্রান্তরের শহীদের রক্ত, আছে ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহের ঘৃণা, আছে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের বারুদ, আছে আমাদের জাতিসত্তার ইতিহাস, আছে করণীয় কর্তব্য সম্পর্কে পথ নির্দেশ। আবারও বলি বিদ্রোহী শুধুমাত্র একটি কবিতা নয়। বিদ্রোহী মানুষ ও মানবতার আইফেল টাওয়ার, ইতিহাসখ্যাত কুতুবমিনার, আমাদের লাখো শহীদের ত্যাগের বিনিময়ে গড়ে ওঠা আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। বিদ্রোহী মানে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। বিদ্রোহী মানেই বাংলাদেশ। এক বিদ্রোহীর শব্দমালা হাতে নিয়েই বাংলাদেশ বিশ্বজয় করতে পারে। মনে রাখতে হবে, ইংল্যান্ডের জন্য যেমন শেক্সপীয়র, আমেরিকার জন্য যেমন হুইটম্যান, জাপানের যেমন নোগুচি, ইরানের যেমন ফেরদৌসী, নজরুল বাংলাদেশের জন্য তেমনি। নজরুল সত্যিকার অর্থেই আমাদের জাতীয় চেতনার মানবীয় প্রতিকৃতি। - কবি আ ব দু ল হা ই শি ক দা র দৈনিক আমারদেশ, সাহিত্য-সাময়িকী, ২৩.১২.২০১১ইং। (এই অনুচ্ছেদটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)।’’

আমাদের বর্তমান কবিদের কাছ থেকে পেতে চাই এই ধরণের চিত্ত জাগানিয়া বিদ্রোহী ও জাগরণের কবিতা -

" বিদ্রোহী কবিতা
বল বীর-
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারী' আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর!
বল বীর-
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি'
চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি'
ভূলোক দ্যূলোক গোলোক ভেদিয়া
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর-
আমি চির-উন্নত শির!
আমি চিরদুর্দম, দূর্বিনীত, নৃশংস,
মহাপ্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর,
আমি দূর্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি মানি না কো কোন আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!
আমি ধূর্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর
আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর!
বল বীর-
চির-উন্নত মম শির!
আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণি,
আমি পথ-সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’।
আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ,
আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।
আমি হাম্বীর, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,
আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’
পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’
ফিং দিয়া দেই তিন দোল্‌;
আমি চপোলা-চপোল হিন্দোল।
আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা’,
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা,
আমি উন্মাদ, আমি ঝঞ্ঝা!
আমি মহামারী, আমি ভীতি এ ধরীত্রির;
আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ণ চির অধীর।
বল বীর-
আমি চির-উন্নত শির!
আমি চির-দূরন্ত দুর্মদ
আমি দূর্দম মম প্রাণের পেয়ালা হর্দম্‌ হ্যায় হর্দম্‌ ভরপুর্‌ মদ।
আমি হোম-শিখা, আমি সাগ্নিক জমদগ্নি,
আমি যজ্ঞ, আমি পুরোহিত, আমি অগ্নি।
আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান,
আমি অবসান, নিশাবসান।
আমি ঈন্দ্রাণী-সুত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য
মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ তূর্য;
আমি কৃষ্ণ-কন্ঠ, মন্থন-বিষ পিয়া ব্যথা বারিধির।
আমি ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর।
বল বীর-
চির-উন্নত মম শির!
আমি সন্ন্যাসী, সুর সৈনিক,
আমি যুবরাজ, মম রাজবেশ ম্লান গৈরিক।
আমি বেদুইন, আমি চেঙ্গিস,
আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কূর্ণিশ।
আমি বজ্র, আমি ঈষাণ-বিষানে ওঙ্কার,
আমি ইস্রাফিলের শৃঙ্গার মহা-হুঙ্কার,
আমি পিনাক-পাণির ডমরু ত্রিশুল, ধর্মরাজের দন্ড,
আমি চক্র-মহাশঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ প্রচন্ড!
আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা, বিশ্বামিত্র-শিষ্য,
আমি দাবানল-দাহ, দহন করিব বিশ্ব।
আমি প্রাণ-খোলা হাসি উল্লাস, -আমি সৃষ্টি-বৈরী মহাত্রাস
আমি মহাপ্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু-গ্রাস!
আমি কভু প্রশান্ত, -কভু অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী,
আমি অরুণ খুনের তরুণ, আমি বিধির দর্পহারী!
আমি প্রভঞ্জনের উচ্ছাস, আমি বারিধির মহাকল্লোল,
আমি উজ্জ্বল, আমি প্রোজ্জ্বল,
আমি উচ্ছল জল-ছল-ছল, চল ঊর্মির হিন্দোল-দোল!-
আমি বন্ধনহারা কুমারীর বেনী, তন্বী নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি!
আমি উন্মন, মন-উদাসীর,
আমি বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা-হুতাশ আমি হুতাশীর।
আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয় লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের
আমি অভিমানী চির ক্ষূব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যাথা সূনিবিড়,
চিত চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর থর থর প্রথম পরশ কুমারীর!
আমি গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল ক’রে দেখা অনুখন,
আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তাঁর কাঁকণ-চুড়ির কন্‌-কন্‌।
আমি চির শিশু, চির কিশোর,
আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচর কাঁচুলি নিচোর!
আমি উত্তর-বায়ু মলয়-অনিল উদাস পূরবী হাওয়া,
আমি পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীণে গান গাওয়া।
আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি
আমি মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়াছবি!
আমি তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি, এ কি উন্মাদ আমি উন্মাদ!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!
আমি উত্থান, আমি পতন, আমি অচেতন চিতে চেতন,
আমি বিশ্বতোরণে বৈজয়ন্তী, মানব-বিজয়-কেতন।
ছুটি ঝড়ের মতন করতালী দিয়া
স্বর্গ মর্ত্য-করতলে,
তাজী বোর্‌রাক্‌ আর উচ্চৈঃশ্রবা বাহন আমার
হিম্মত-হ্রেষা হেঁকে চলে!
আমি বসুধা-বক্ষে আগ্নেয়াদ্রী, বাড়ব বহ্নি, কালানল,
আমি পাতালে মাতাল, অগ্নি-পাথার-কলরোল-কল-কোলাহল!
আমি তড়িতে চড়িয়া, উড়ে চলি জোড় তুড়ি দিয়া দিয়া লম্ফ,
আমি ত্রাস সঞ্চারি’ ভুবনে সহসা, সঞ্চারি ভূমিকম্প।
ধরি বাসুকির ফণা জাপটি’-
ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি’।
আমি দেবশিশু, আমি চঞ্চল,
আমি ধৃষ্ট, আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্ব-মায়ের অঞ্চল!
আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
মহা-সিন্ধু উতলা ঘুম্‌ঘুম্‌
ঘুম্‌ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্‌ঝুম
মম বাঁশরীর তানে পাশরি’।
আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী।
আমি রুষে উঠি’ ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোযখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া!
আমি বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া!
আমি শ্রাবণ-প্লাবন-বন্যা,
কভু ধরনীরে করি বরণীয়া, কভু বিপুল ধ্বংস ধন্যা-
আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ণু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা!
আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি,
আমি ধূমকেতু জ্বালা, বিষধর কাল-ফণী!
আমি ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!
আমি মৃন্ময়, আমি চিন্ময়,
আমি অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়!
আমি মানব দানব দেবতার ভয়,
বিশ্বের আমি চির-দুর্জয়,
জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য,
আমি তাথিয়া তাথিয়া মাথিয়া ফিরি স্বর্গ-পাতাল মর্ত্য!
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!!
============

সোমবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৩

এমন যেন না হয় কোন পুরুষের জীবন


এমন যেন না হয় কোন পুরুষের জীবন
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
----------------------


এক বিবাহিত পুরুষের সাথে একদিন এক অবিবাহিতা মেয়ের পরিচয় হল। এক মাস না যেতেই তাদের মধ্যে এমন বন্ধুত্ব হয়ে গেল যে মেয়েটি পুরুষটির বউ বাচ্চা রয়েছে জেনেও পুরুষটিকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিতে দ্বিধা করলনা। তখন পুরুষটি তারদিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল - তুমি কি সিরিয়াস ? মেয়েটি বলল - সিরিয়াস কিনা জানিনা , তোমার আমাকে বিয়ে করতেই হবে। পুরুষটি বলল- ওকে ,তবে আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দাও। মেয়েটি জিজ্ঞেস করল - প্রশ্নটা কি ? পুরুষটা বলল - তোমার মধ্যে এমন কি বেশী আছে যে , যা আমার বউয়ের কাছে নেই , যে জন্য বউ থাকা সত্বেও তোমাকে বিয়ে করতে হবে ? তখন মেয়েটি বলল - তোমার বউয়ের চেয়ে আমি তোমাকে বেশী ভালবাসব। তখন পুরুষটি বলল - ওকে , তবে একটা কথা বলত - ধর , আজ থেকে আমি অক্ষম হয়ে গেলাম , তোমাকে কোন দিক দিয়েই আমি সুখী করতে পারছিনা , তখনও কি তুমি আমাকে ভালবাসবে ? মেয়েটি বলল - অবশ্যই। তখন পুরুষটি মেয়েটিকে বিয়ে করে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে স্বামী স্ত্রী রূপে দিন কাটাতে লাগল। আর আগের বউ সন্তানের কোন খোঁজ খবর নিচ্ছিলনা। এভাবে কেটে গেল ৮টি বৎসর।
একদিন পুরুষটির এমন এক রোগ দেখা গেল , যে জন্য পুরুষটি তার পুরুষাঙ্গের শক্তি হারাল। কয়েকদিন পর রোড এক্সিডেন্টে হারাল দু’টি পা। এর কয়েকদিন পর গরম পানি চোখে পড়াতে হারাল দু’টি চোখ। এভাবে যখন সে অচল হয়ে গেল বেঁচে থাকার তাগিদে সে তার গ্রামের বাড়িটি বিক্রি করে খরচ করতে থাকল। একদিন বাড়ি বিক্রীর টাকাও যখন শেষ হয়ে গেল তখন মেয়েটি পুরুষটিকে অবহেলা করতে শুরু করল। ফ্ল্যাটে নিয়ে আসতে থাকল নিত্য নতুন পুরুষ সঙ্গী। পুরুষটির তখন এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে থাকল ।উপায়ন্তর না দেখে পুরুষটি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু ,মরার আগে প্রথম বউ ও বাচ্ছাদের একবার দেখার ইচ্ছা জেগে উঠল মনে। পুরুষটির এক বন্ধু তার সবসময় খোজ খবর নিত। বলতে গেলে সে অচল হয়ে যাবার পর এ বন্ধুটিই অন্ধের যষ্টির মত কাছে কাছেই থাকত। এ বন্ধুকেই সে পাঠাল প্রথম বউয়ের বাপের বাড়ি , যাতে তাদের একবারের জন্য তার কাছে নিয়ে আসে। পরদিন পুরুষটির প্রথম পরিবার তার কাছে চলে আসে। তার এ অবস্থা দেখে তারা আর ঠিক থাকতে পারলনা। প্রথম বউ আর বাচ্ছাদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
প্রথম বউ স্বামীর কাছ থেকে এক পলকের জন্যও নড়েনা। স্বামীর যাতে কোন প্রকার কষ্ট না হয় তীক্ষ্ন দৃষ্টি প্রথম বউয়ের। এভাবেই কেটে যায় বেশ কয়েকমাস। প্রথম বউয়ের আন্তরিক ভালবাসার কাছে হার মেনে পুরুষটি আত্মহত্যার কথা ভুলে যায়।
একদিন তার দ্বিতীয় বউকে তার কাছে আসতে বলে। যখন সে আসে তখন পুরুষটি তাকে জিজ্ঞেস করে - তুমি যখন আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলে তখন তোমাকে প্রশ্ন করেছিলাম - তোমার মধ্যে এমন কি বেশী আছে যে , যা আমার বউয়ের কাছে নেই , যে জন্য বউ থাকা সত্বেও তোমাকে বিয়ে করতে হবে ? তুমি বিয়ের আগে বলেছিলে তুমি আমাকে আমার এই বউয়ের চেয়ে বেশী ভালবাসবে। এখন তোমার সেই ভালবাসা কোথায় ? এখন বলতো - আমার এই বউয়ের চেয়ে তোমার কাছে কি বেশী আছে ? এই কথা বলার সাথে সাথেই পুরুষটি দ্বিতীয় বউয়ের গলা টিপে ধরল। বলতে থাকল - তোমাদের মত মেয়েদের জন্যই কত শত সুন্দর পরিবার আজ ধ্বংসমুখী। তোকে বাঁচিয়ে রাখলে আমার পরিবারের মত আরও শত শত পরিবারে নেমে আসবে বিপর্যয়। মেরেই ফেলব তোকে। তোকেও মারব , আমিও মরব। দ্বিতীয় বউ যতক্ষণ পর্যন্ত মরলনা ততক্ষণ পর্যন্ত সে গলাটিপে ধরে থাকল। মরণ নিশ্চিত হয়েছে জেনে সে তার গলা ছেড়ে দিয়ে নিজেই নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে দিল।

বিঃদ্রঃ এমন যেন না হয় , কোন পুরুষের জীবন।

শনিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৩

রং নাম্বার যখন আইনী প্যাঁচে

রং নাম্বার যখন আইনী প্যাঁচে
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
----------------------

সাউদি আরবে কে কে রং নাম্বারে মেয়েদের সাথে কথা বলেছেন হাত তুলুন। যেখানে মোবাইল ছাড়া কোন মেয়ের হাত কল্পনা করা যায়না , সেখানে কোন মেয়ের মোবাইলে রং নাম্বার যায় না। আর আমাদের বাংলাদেশের মেয়েদের যাদের কাছে মোবাইল আছে তারা রং নাম্বারে কথা বলতে বলতেই নীচের পানি ফেলে দেয় ! এ যেন রং নাম্বারের মাধ্যমে যৌনালাপন।


আমাদের দেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর অভাব নেই , তবে মোবাইল পরিচালনা জানা লোকের বড়ই অভাব। তাই মোবাইল ব্যবহার করতে গেলেই রং নাম্বারে কল চলে যায় সবসময় সর্বত্র।

আমি সৌদিতে মোবাইল ব্যবহার করছি প্রায় দশ বৎসর। এই দশ বৎসরে ভুলেও কখনো রং নাম্বারে আমার কল যায়নি। কারণ একটাই - ভয়। কোন্ প্যাঁচে পড়ে যাই কোন ঠিক নেই , কোন মেয়ে যদি আমার কল রিসিভ করে আমার নাম্বারের বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগ করে পোহাতে হবে ঝামেলা আগেই , সত্য প্রকাশ হবে ভোগান্তির পর। এই ভয়ে নাম্বার টেপার পর তিনবার দেখি নাম্বারটা ঠিকভাবে টিপলামতো ?


যদি এই ভয়টা আমাদের দেশেও থাকে তবে কি আর কোন রং নাম্বারে কল যাবে ? কোন মেয়ের সাথে কোন পুরুষের রং নাম্বারে কথা বলে কি কখনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে ?
===========

বুধবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৩

তিনজনের কাছে তিনটা প্রশ্ন



তিনজনের কাছে তিনটা প্রশ্ন
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
----------------------


একজন বললো -
ভাইয়া ! প্রেমের কবিতা চাই।
আমি বললাম - তিনদিন ধরে উপোষ
প্রেমের কথা কি ভাবা যায় ?

আর একজন বললো -
ভাইয়া ! আপনার কবিতাগুলো ভাল লাগে।
আমি বললাম - আমার কবিতা ভাল লেগে কি হবে,
যদি আমাকেই ভাল না লাগে ?

আর একজন বলল -
ভাইয়া ! আপনার লেখাগুলো খুবই সুন্দর।
আমি বললাম - আমার লেখা সুন্দর হলে কি হবে,
যদি আমার লেখার সুন্দর্যে অন্যেরা সুন্দর না হয় ?
=============

বৃহস্পতিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৩

ধর্ষণ এড়াতে মেয়েদের জন্য কয়েকটা প্রয়োজনীয় টিপস

ধর্ষণ এড়াতে মেয়েদের জন্য কয়েকটা প্রয়োজনীয় টিপস
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
---------------------


১। মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ নিন।
২। পোশাক আশাকে শালীনতা ধারণ করুন।
৩। অপরিচিত মোবাইল/ল্যান্ড ফোনকল গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
৪। আপন পিতা, আপন ভাই, আপন মামা , আপন চাচা , স্বামী, পুত্র ব্যতিত সকল পুরুষ সঙ্গ এড়িয়ে চলুন।
৫। আপন পুরুষদের সম্মুখে শরীরের শালীনতা বজায় রাখুন।
৬। জীবনের প্রয়োজনে অনেক সময় ভিন্ন পুরুষদের বন্ধু বানাতে হয় , এই সব বন্ধুদের সাথে দুরত্ব বজায় রাখুন। এবং তাদের যে কোন কথাকে বিবেক দিয়ে বিচার করুন তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
৭। নিজের বান্ধবীদের উপর পূর্ণ আস্থা রাখবেননা।
৮। নির্জন জায়গায় না দাড়িয়ে জনাকীর্ণ জায়গায় দাঁড়ান।
৯। কোন জায়গায় যেতে অত্যান্ত আপনজনের কাউকে সঙ্গে নিন।
১০। পথচলায় শালীনতা বজায় রাখুন , যতটুক পারা যায় শরীরের সর্বাঙ্গ ঢেকে নিন, অপরিচিতদের সাথে কর্কষ স্বরে কথা বলুন, সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং কালো চশমা চোখে দিন।
১১। গাড়ীতে চড়াকালীন নিজের শরীরকে অন্যদের সাথে স্পর্শ করা থেকে বাঁচিয়ে রাখুন।
১২। উচ্চস্বরে আলাপ করা ও হাসি দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
১৩। যে কোন কর্মে কথা কম বলার প্রশিক্ষণ নিন।
১৪। সম্ভব হলে লাইসেন্স যুক্ত কোন অস্ত্র সাথে রাখুন।
==============

বুধবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৩

মানুষের গুণাবলী না হোক , কামনা হোক - অন্তত আমরা যেন পশুদের গুণাবলী ধারণ করতে পারি

মানুষের গুণাবলী না হোক , কামনা হোক -

অন্তত আমরা যেন পশুদের গুণাবলী ধারণ করতে পারি
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
----------------------

আজ একটা কথা বলতে চাই - তা হচ্ছে সহাবস্থানের দেশ বাংলাদেশের মানুষদের মন মস্তিস্ক নিয়ে।



আমরা আমাদের দেশকে সহাবস্থানের দেশ হিসাবে দাবি করি। কিন্ত বাংলাদেশের জন্ম থেকে এ পর্যন্ত এ দাবী আমাদের মনমস্তিস্কে ধারণ করলেও আমাদের ব্যক্তিগত বা সামাজিক জীবনে যেন তা নিগৃহিত অবাঞ্চিত একটা বিষয়। ফলে আমাদের উক্ত দাবী যেন একটা হাস্যকর রসালো কৌতুকের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে । যদি আমাদের দেশ সহাবস্থানের দেশ হয় , মানুষে মানুষে তবে কেন এত মারামারি ? মানুষের সাথে মানুষের কেন এত শত্রুতা ? প্রতিবেশীর সাথে প্রতিবেশীর কেন এত জিঘাংসা ? আসলে কি আমরা আমাদের দেশকে সহাবস্থানের দেশ হিসাবে দাবী করতে পারি ?

অবশ্য আমরা যারা বিদেশে আছি তারা এতটুকু সুখ অন্তরে উপলব্ধি করতে পারি যে , সত্যিই আমরা সহাবস্থানের দেশের নাগরিক। কারণ , এখানে যারা আছি সবাই আমরা বলি আমরা বাংলাদেশী। আমরা ছাত্রলীগ নই , আমরা শিবির নই, আমরা আওয়ামী লীগ নই, আমরা বিএনপি নই, আমরা জাতীয় পার্টি নই, আমরা জামাত নই, আমাদের নেই অন্য কোন দলের পরিচয়। এখানে আমাদের একটাই পরিচয় - আমরা বাংলাদেশী। আর এই বাংলাদেশীদের মধ্যে অবস্থান করছি আমরা সকল পার্টির সকল প্রকার সদস্য , সাধারণ সদস্য থেকে নিয়ে কট্টরপন্থী সদস্য সহ ক্যাডার গ্রুপের সর্বোচ্ছ ডিগ্রীধারী লিডারগণও। কিন্তু আমাদের মাঝে নেই কোন হিংসা , নেই কোন মারামারি , নেই কোন শত্রুতা , নেই কোন জিঘাংসা চরিতার্থের লালসা। আমাদের মাঝে রয়েছে ভাই ভাইয়ের বন্ধন, আমাদের মাঝে রয়েছে আত্মার সাথে আত্মার সম্পর্ক। আমাদের মাঝে রয়েছে এমন এক প্রকার টান ,যে টানটি বাংলাদেশের রক্তের টান থেকেও শক্তিশালী। যদি প্রবসে বসে আমরা প্রত্যেক দলের প্রত্যেক প্রকার সদস্য একই ভ্রাতৃত্বের বন্দনে বন্ধী হয়ে থাকতে পারি , তবে আমরা দেশের ভিতরে বসে তা পারছিনা কেন ? তবে কি আমাদের সমষ্যা ?

আমরা কি একটুও ভাবতে পারিনা - আমরা মানুষ , আমরা যা চাই তাই আমরা করতে পারব , সেই ক্ষমতা স্বয়ং আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের দিয়েছেন ? আমরা কি শান্তির জন্য এতটুকু সেক্রিফাইস করতে পারিনা যে , আমরা শান্তির জন্য স্বার্থ ত্যাগে রাজি ? আমরা কি এতটুকু নীচে নামতে পারিনা যে , বস্তিতে কনকনে শীতের রাতে জবুতব হয়ে শুয়ে থাকা বণি আদমদের একটু দেখতে যেতে পারি ? আমরা কি এতটুকু ভাবতে পারিনা যে , আমার পশুদের চেয়ে উন্নত ?

কিছুদিন আগে একটা দেশের বৃহৎ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের একটা চিত্র দেখানো হয়েছিল - তা ছিল একটা স্থিরচিত্র। যাতে দেখানো হয়েছিল একটা বড় আকারের সাপকে অবলম্বন করে কিভাবে মানুষ প্লাবনের প্রবল স্রোতধারা থেকে রক্ষা পেয়ে স্থলে উঠতে সমর্থ হয়েছিল । আমরা কি সেই সাপের মানুষ বাঁচানোর ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে পারিনা ?

আমার বয়স যখন ১০/১২ হবে , তখনকার একটা ঘটনা আমার মনে পড়ে। আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ছোট্ট লেলাং নদী ছিল তখন ছিল বন্যার পানিতে ভরপুর,প্রবল স্রোত। আমি হাদি বাদশা আউলিয়ার মাঝারের কাছে একটা লোকের কাছে যাব যেখানে ধান বীজ বপনের কাজ করছিল আমার এক পাড়াস্থ ভাই। কিন্তু নদী পাড়ি দেবার মত কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তখনই একটা লোক দু'টি গরু নিয়ে আসল নদীটি পার হয়েই তিনি গরুগুলো নিয়ে যাবেন। তিনি গরু দু'টিকে পানিতে নামিয়ে দিলেন। একটা গরু সাতরিয়ে পার হয়ে গেল, বাকি গরুটা দাড়িয়ে থাকল। কোনমতেই লোকটি গরুটিকে নিতে পারছিলেননা। হঠাৎ তার কি মনে হলো জানিনা । তিনি আমাকে বললেন , তুমি পার হতে চাও ? আমি মাথা নেড়ে বললাম, হ্যাঁ । তখন লোকটি আমাকে গরুটির পীঠে তুলে দিয়ে তার লেজটা নাড়া দিল। আশ্চর্য , গরুটি আর কোন দ্বিমত করলনা , সাথে সাথেই আমাকে নিয়ে যাত্রা করল। যখন নদী পার হলাম লোকটি বলল- তোমাকে পার করার জন্যই আমার গরুটি নদী পার হতে চাচ্ছিলনা ! আমিও বললাম ঠিক বলেছেন। আমরা কি এ পশু চিহ্নিত গরুটি থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারিনা ?

এই অনুচ্ছদটা লেখা শেষ করার পর যোগ করতে মন চাইল সামান্য কথা , তাই পোষ্ট দেয়ার পরও আবার সংশোধন করলাম। যা বলতে চাইছি - আমার শেষ ঘটনা থেকে আমি দুটি শিক্ষা পাচ্ছি। তার একটা হলো একটা পশুর মালিকের হুকুম মানতে দ্বিধা না করা , আর দ্বিতীয়টা হল - অন্য পশুটির মালিকের হুকুম মানতে দ্বিধা করা। মানুষ যদি তার বিবেক দিয়ে ভাবে তবে দেখতে পাবে পশুদের মাঝেও রয়েছে বিবেক। কিন্ত স্রষ্টা তাদের বিবেক দেননি। এটাই সত্য কথা। যদি তাদের বিবেক জিনিসটি দিতেন তবে তারা পশু না হয়ে হয়ে যেত মানুষ। কারণ , স্রষ্টা মানুষের স্রেষ্টত্বের প্রমাণ হিসাবে দেখিয়েছেন মানুষের বিবেককে। যাই হোক, বলতে চাইছিলাম দু'টি শিক্ষা নিয়ে। প্রথম পশুটি তার মালিকের হুকুম মেনে নিয়েছে ঠিকই কিন্তু , কারো উপকার করে এক্সট্রা মার্ক অর্জন করতঃ তার শ্রেষ্টত্ব অর্জন করতে পারেনি। আর একটা পশু মালিকের হুকুম তো মেনেছেই সেই সাথে অন্যের উপকার করে এক্সট্রা মার্ক নিয়ে তার শ্রেষ্টত্বেরও প্রমাণ দিয়েছে, যাতে অর্জিত হয়েছে মালিকের সন্তুষ্ট এবং নিজের সাফল্যতা। অপর দিকে প্রথম পশুটি শুধুমাত্র মালিককে সন্ত্রুষ্টি করছে , তার নিজের জন্য জন্য কিছু অর্জিত হয়নি। আমাদের দেশে যারা সরকারের পদলেহন করে তারা শুধুমাত্র প্রথমোক্ত পশুটির ন্যায় সরকারের সন্তুষ্টি অর্জন করে যাচ্ছে। নিজেদেরকে শ্রেষ্টত্বের প্রমাণ দিয়ে জনতার প্রতিনিধি রূপে উপস্থাপন করতে তারা অপারগ। তাদের নিজেদের জন্য অর্জন তাদের কিছুই হচ্ছেনা। মানুষের বড় অর্জন তার সম্পদে নয় , মানুষের কাছে মহান রূপে প্রতিষ্ঠা করতে পারাই মানুষের বড় অর্জন।

আর বেশী কিছু বলতে চাইনা । আমরা মানুষ হয়েও যদি আমাদের মধ্যে মানুষের গুণটি ধারণ করতে না পারি , তবে অন্তত এইসব নির্বাক পশুদের সদগুণাবলী যেন আমরা ধারণ করতে পারি - এই হোক আমাদের কামনা।
================

বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৩

ঐ নতুনের কেতন উড়ে ...


ঐ নতুনের কেতন উড়ে ...
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
----------------------

মনে চায় অন্য কিছু -
নিত্য নতুনের সমারোহে নতুন ভাবনায়
নতুন আরাধনায় নতুন কর্মে নতুন যাত্রায়
যেন নতুনের মাঝেই খুঁজে পায়
জীবন তার না পাওয়া অন্য কিছু ।
নতুন বৎসরে নতুন হিসাবের খাতায় লিপিবদ্ধ হয়
নতুন সব জীবনের হিসাব ,
সকল খাতার পাতায় নতুন রূপে লিখিত হয়
নতুন জীবনের সব আশা আকান্খা ।
নতুন বৎসরে নতুন দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত হয় নতুন ভাবে
প্রেয়সীর মনকাড়া নতুন রূপে ।
নতুন যাত্রাপথে নতুন গতি নতুন ভাবে পথ চলা
নতুনের সন্ধানে লাগিয়েছি চোখে নতুন তৈরী দূরবীক্ষণ যন্ত্র।
যেন দেখছি সকল মানুষকে নতুন রূপে
নেই হিংস্রতা , নেই শত্রুতা , নেই কোন ধ্বংসাত্মক লীলাখেলা ,
এ যেন পৃথিবীর নতুন রূপ
নতুন সূর্যের আলোয় আলোকিত সমগ্র বিশ্ব ,
নতুন উৎসাহে নতুন উদ্দীপনায় নতুন সব মানুষ
পৃথিবীর সব মলিনতা দূর করার জন্য নিয়েছে সবাই দৃপ্ত শপথ !

বলতে ইচ্ছে হয় -
এসো হে পৃথিবীর সকল মানুষ
ঐ নতুনের কেতন উড়ে ,
দেখবো এবার শান্তির পারাবাত
এই বিশ্বজুড়ে ।
=============