আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা

বাংলা ভাষার জন্য আত্মত্যাগকারী

সকল মহান ভাষা শহীদগণের প্রতি,
এবং ভাষা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত

সকল ভাষা সৈনিক
ও বীর বাঙ্গালীদের জানাই অশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলী,
সেইসাথে সকলকে জানাই

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা।

বিষয় সূচী

সাহিত্য (60) অন্যান্য কবিতা (53) ভালোবাসার পদবিন্যাস ( প্রেম সম্পর্কিত রচনা বিশেষ ) (53) আমার লেখা প্রবন্ধ-নিবন্ধ (37) কবিতা (35) দেশ নিয়ে ভাবনা (33) ফিচার (33) বাংলাদেশ (29) সমসাময়িক (28) খন্ড কাব্য (26) হারানো প্রেম (22) সংবাদ (18) কাল্পনিক প্রেম (16) ইতিহাস (15) প্রতিবাদ (15) সুপ্রভাত প্রবাসী বাংলাদেশ (15) Online Money Making Links (14) দেশাত্মবোধক কবিতা (13) আমার জীবনের দিনপঞ্জী (12) ধর্ম (12) প্রেমের কবিতা (11) ব্যক্তিত্ব (11) রাজনীতি (11) ধর্মীয় আন্দোলন (10) প্রবাসের কবিতা (10) খন্ড গল্প (9) জীবন গঠন (9) বর্ণমালার রুবাঈ (9) ইসলাম (8) প্রগতি (8) মানুষ ও মানবতা (8) হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ (8) VIDEOS (7) আমার লেখালেখির অন্তরালে (7) ইসলামী জাগরণ (7) মানব মন (7) ট্র্যাজেডি (6) শোক সংবাদ (6) সম্প্রীতি (6) নারী স্বাধীনতা (5) প্রেমের গল্প (5) বিজয় দিবসের ভাবনা (5) মৃত্যুপথ যাত্রী (5) সংবাদ মাধ্যম (5) স্মৃতিকথা (5) ঈদ শুভেচ্ছা (4) প্রবাস তথ্য (4) রমজান (4) শুভেচ্ছা (4) Computer Programer (3) আমার ছবিগুলো (3) আমার রাইটিং নেটওয়ার্ক লিংক (3) পর্দা (3) ফটিকছড়ি (3) বাংলাদেশের সংবিধান (3) বিশ্ব ভালবসা দিবস (3) শিক্ষা (3) শিক্ষার্থী (3) স্লাইড শো (3) News (2) VERIETIES POEMS OF VERIOUS POETS (2) আষাঢ় মাসের কবিতা (2) আষাঢ়ের কবিতা (2) ইসলামী রেনেসাঁ (2) ছাত্র-ছাত্রী (2) থার্টি ফাস্ট নাইট (2) নারী কল্যান (2) নারী প্রগতি (2) নির্বাচন (2) বর্ষার কবিতা (2) মহাসমাবেশ (2) শবেবরাত (2) শরৎকাল (2) শাহনগর (2) শ্রদ্ধাঞ্জলী (2) সত্য ঘটনা (2) সত্য-মিথ্যার দ্বন্ধ (2) সফলতার পথে বাংলাদেশ (2) Bannersআমার ছবিগুলো (1) DXN (1) For Life Time Income (1) For Make Money (1) Knowledge (1) Student (1) অদ্ভুত সব স্বপ্নের মাঝে আমার নিদ্রাবাস (1) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (1) আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত(সুন্নী) (1) উপন্যাস (1) কবি কাজী নজরুল ইসলাম (1) কোরআন - হাদিসের কাহিনী (1) গল্প (1) চট্টগ্রাম (1) চিকিৎসা ও চিকিৎসক (1) জমজম (1) জাকাত (1) তরুন ও তারুণ্য (1) নারী জাগরণ (1) পরকিয়ার বিষফল (1) ফটিকছড়ি পৌরসভা (1) বন্ধুদিবস (1) বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম (1) বিবেক ও বিবেকবান (1) বিশ্ব বাবা দিবস (1) বিশ্ব মা দিবস (1) ভ্রমণ (1) মন্তব্য (1) মাহফুজ খানের লেখালেখি (1) রবি এ্যাড (1) রমজানুল মোবারক (1) রেজাল্ট (1) রোগ-পথ্য (1) লংমার্চ (1) শহীদ দিবস (1) শুভ বাংলা নববর্ষ (1) শৈশবের দিনগুলো (1) সমবায় (1) সস্তার তিন অবস্থা (1) সাভার ট্র্যাজেডি (1) সিটি নির্বাচন (1) স্বপ্ন পথের পথিক (1) স্বাধীনতা (1) হ্যালো প্রধানমন্ত্রী (1) ২১ ফেব্রোয়ারী (1)

APNAKE SHAGOTOM

ZAKARIA SHAHNAGARIS WRITING

সকলকে বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা

বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে আমরা আর বাংলা ভাষায় কথা বলতে চাইনা । নিজের মাতৃভাষাকে যখন-তখন যেখানে সেখানে অবমাননা করে তৎপরিবর্তে ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করতে অভ্যাস্থ হয়ে যাচ্ছি বা হয়ে গেছি ।
আরও একটু এগিয়ে গেলে বলতে হয় - আমরা আজ বাঙ্গালী হয়ে বাঙ্গালী জাতিসত্বা ভুলে গিয়ে ইংরেজী জাতিসত্বায় রক্তের ন্যায় মিশে গেছি !

অথচ একদিন আমরা বাঙ্গালী জাতি একতাবদ্ধ হয়ে রাষ্ট্রীয় ভাষা উর্দুকে ত্যাগ করে নিজেদের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা তথা বাংলা ভাষাকে সর্বত্র প্রচলন করতে প্রাণ দিতে বাধ্য হয়েছিলাম ! ফলে বিজাতীয় ভাষা উর্দূকে অপসারন করে নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলার স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলা ভাষাকে ধারন করেছিলাম । যখন আমরা বাংলার সর্বত্র বাংলা ভাষায় কথা বলা শুরু করেছিলাম ,তখন কিন্তু বিশ্বায়নের যুগটা অনুপস্থিত ছিল তা নয় , বিশ্বায়নের যুগটা তখনও ছিল বিধায় আমরা ইংরেজী শিক্ষায় তখনও বাধ্য ছিলাম । অর্থাৎ যে জন্যে আজ আমরা ইংরেজী শিখছি সেইজন্যে তখনও ইংরেজী শিক্ষার প্রচলন ছিল । ছিল ইংরেজী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাও । তাই বলে সে সময় বর্তমান সময়ের মত মাতৃভাষা বাংলাকে অবমাননা করা হয়নি । মানুষ সে সময় বাংলায়ই কথা বলেছিল । শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেই সে সময় ইংরেজী ব্যাবহার করেছিল বাঙ্গালী জাতি

conduit-banners

Powered by Conduit

ফ্লাগ কাউন্টার

free counters

MZS.ONLINE MONEY MAKING WAY

PLEASE CLICK ON MY BANNERS. VISIT MY AFFILIATE SITE "MZS.ONLINE MONEY MAKING WAY ( অনলাইনে অর্থোপার্জনের একটা মাধ্যম )" I HOPE IT WILL BE HELPFUL FOR YOU. Create your own banner at mybannermaker.com!

বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১২

বৃষ্টি দিনের ভালোবাসার কথন : পর্ব-০২



বৃষ্টি দিনের ভালোবাসার কথন : পর্ব-০২
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
------------------------

১৪।
আমাকে একজন প্রশ্ন করলো -আচ্ছা তুমি যে সেদিন বৃষ্টি নিয়ে এত লেখা লিখেছ ,তোমাদের ওখানে কি বৃষ্টি হয় ? 
আমি জবাব দিলাম -আমাদের এখনে যে বৃষ্টি তা কেউ দেখতে পায়নাযে বৃষ্টিতে ভিজে সয়লাব হয়ে যায় বালিশের সর্বাঙ্গভাগ্য ভাল ফোমের বালিশ চুষে নেয় ,তাই রাস্তার স্রোত হয়ে বহেনা ।

১৫।
দুদিন আগে যখন শরীরটা খুব খারাপ লাগছিল ,তখন হঠাৎ একটা ম্যাসেজ আসল ফোনে। তাতে লেখা - মনে আছে তোমার সেই দিনটি ,আমরা শিম্পাঞ্জী দেখতেছিলাম ,হঠাৎ আসলো বৃষ্টি ! দু'জনে দৌড় দিলাম ,আর সবুজ ঘাসে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম আমিতুমি টেনে তুলে দু'হাতের উপর আমায় শুইয়ে দিলে দৌড় ! আর আমি চেয়ে থাকলাম তোমার মুখের দিকেদেখিনি তোমার মুখে কোন কষ্টের ছাঁপ। দেখেছি শুধুই আনন্দের হাসিতোমার সেই হাসিতে বুকটা ভরে যায় আমার এক অনাবিল আনন্দে , একরাশ ভালবাসায়

আশ্চর্যাম্বিত আমিএতগুলো বছর পেরিয়ে আজ একি দেখছি আমি ! আমাদের এ কথাটা আমরা দু'জন ছাড়া আর কেউতো জানেনা ! তবে -কার ম্যাসেজ ?ভালভাবে দেখলাম আবার ম্যাসেজটি। না ঠিকই আছেকিন্তু কে পাঠালো ?সে নয়তো ? ১৯ বছর পর নতুন করে আবার কি করে এলো সেই বসন্তের ডাক ?

১৬।
১৯৯৩ এর একদিনলালমাটিয়া মহিলা কলেজের গেইটে দাড়ানো আমিঅপেক্ষার অন্ত নেই। সে আসবে মিরপুর সেকসন ৬ থেকেসেদিন ছিল তার ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষার প্রথম দিনগুটি গুটি বৃষ্টিতে ভেজা জনপদইতস্তত থাকাতে থাকলাম আমি । না দেখা নেইহঠাৎ ই নজরে পড়লো ফারুক ভাইয়ের দিকেটেক্সী থেকে নামছে তারা দু'জনসেই-ই আমাকে ইশারা করলো ,ফারুক ভাই একটু দূরে অবস্থান নিল আমাদের সুযোগ করে দিয়ে। আর মাত্র দশ মিনিটযা বলার বলে ফেল ,ডুকে যেতে হবে হলেবললাম ,আজ রাতে জরুরীভাবে চট্টগ্রাম যাচ্ছি ,দু'দিন পর ফিরে আসব

ছল ছল নয়নে একবার দেখলো সে আমার দিকেতারপর কোন কথা না বলে হন হন করে চলে গেল গেইটের ভিতর দিয়েটিকেট নিতে হবে তাই আর সেদিন অপেক্ষা করা হলোনাদু'দিন পর যখন চট্টগ্রাম থেকে ফেরত আসলাম ,আসরের পর চিড়িয়ানার গেইটে দেখা হলো দু'জনের -সেই কি তুমুল বৃষ্টি ,আহ্ !

১৭।

"তার আর পর "! 
কেন যেন বৃষ্টি ভাল লাগতো দু'জনেরই" আষাঢ়ে মেঘের" তর্জন গর্জনে প্রকম্পিত ঢাকা নগরী । এরই মাঝে আমরা বেরিয়ে পড়তাম ডেটিং এ। রাস্তা থাকতো ফাঁকা। হতো তুমুল ধারে বৃষ্টিরিক্রাওয়ালা চেয়ে থাকতো মীরপুর সেকসন ৬ এর সেই ছোট্ট গলিটার দিকেকখন ডাক পড়বে তার তাই প্লাষ্টিক জড়িয়ে রেডি থাকতো সেআমাকে বলতো ভাইয়া ,আর কটু সবুর করন ,আমি টের পাচ্ছি এখনই চলে আসবেন আপা

রিক্সাওয়ালা আগেই রেডি থাকতো আমার জন্য সে সেকসন ৬ এর গলির মুখেতার আপা নাকি আমার সাথে ফোনে আলাপ হবার পর পরই বলে দিতো তাকে রেডি থাকতেরিক্সাওয়ালা ও হিসাব করে গলি মুখে এসে আমার জন্য দাঁড়াতআমাকে যখন দেখতো ,চিৎকার করে ডাক দিয়ে বলতো -ভাইয়া আমি এখানে ! আমার আর কষ্ট হতোনা তাকে খুঁজে পেতে

সেদিনও সে রেডি । আমি পৌঁছলেই ডেকে নিলো রিক্সায় । বললো সে -ভাইয়া বলছিলাম না ,চিন্তা কইরেননা। ঐ দেখেনমাথা বের করে দেখলাম। কাছেই চলে এসেছে সেহাতটা ধরে রিক্সায় টেনে তুলে নিলাম তাকে। চলতে শুরু করলো রিক্সা

ঝম ঝম করে কিছুক্ষণ পর শুরু হয়ে গেল বৃষ্টি। বললাম -আজ যেন একটু শীত শীত লাগছে। বললো সে - তবে তো একটা কাজ করতে হয়। আমি বললাম -কি ? সে বললো দেখোইনা কি করি ! এ কথা বলেই সে বাড়িয়ে দিলো তার হাত বৃষ্টির দিকেবৃষ্টিতে হাত বিজিয়ে আমার সার্টটা ফাঁক করে তার হাতটা আমার বুকে লাগিয়ে রাখল। বললাম -এটা কি হচ্ছে ? সে বললো শরীরে তাপ দিচ্ছি যাতে সর্দি না আসে !
==========================



পর্দা প্রগতির অন্তরায় নয়



পর্দা প্রগতির অন্তরায় নয়
মুহাম্মদ জাকারিয়া শাহনগরী
----------------------------

স্রষ্টা যখন মানবজাতিকে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠানোর ইচ্ছাপোষণ করলেন , তখন তিনি সেই মানবজাতি কিভাবে পৃথিবীতে বসবাস করবে তার একটি নিয়ম ও তিনি ঠিক করে দিয়েছিলেন । কারণ , সৃষ্টিকুলের মধ্যে একমাত্র মানব জাতিই সর্বদিক দিয়ে এগিয়ে , সৃষ্টির সেরা । আর সেরা হবার কারণে তারা তাদের সে মহত্বকে একজনের উপর আরেকজনের মহত্বকে প্রাধান্য দিয়ে বড় দেখানোর চেষ্ঠা করবে । ফলে তাদের মাঝে দেখা দিবে বিশৃন্খলতা । আর এই বিশৃন্খলতা সৃষ্টি করবে সর্বত্র অশান্তি ।
এই অশান্তির যাতে না হয় সে জন্য স্রষ্টা তার সর্বসেরা  সৃষ্টি মানবজাতকে তাদের জীবন পরিচালনার কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়ে দুনিয়ায় বসবাস করার জন্য পাঠান । প্রকৃতপক্ষে মানবজাতকে দুনিয়ায় পাঠানোর মুলে রয়েছে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্বকে মানুষের কর্মসমুহের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করা । তাই সর্বসেরা সৃষ্টি মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব হবার মুল উপাদান বিবেক দিয়ে মানুষকে তিনি তাদের শ্রেষ্টত্ব প্রমাণের লক্ষ্যে জীবন পরিচালনার জন্য দুটি রাস্তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন । আর বলে দিয়েছেন , বিবেকই তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের একমাত্র উপাদান , যারা সৃষ্টিকুলের সেরা হিসাবে নিজেদের প্রকাশ করতে পারবে । আর তা পারবে আটার হাজার সৃষ্টির মধ্যে সর্বসেরা সৃষ্টি একমাত্র মানুষরাই ।

এই বিবেক সম্পন্ন মানুষরা তাদের বিবেক দিয়ে নির্ধারণ করবে তারা কোন পথে যাবে । উক্ত দুটি রাস্তার মধ্যে একটা গিয়েছে অফুরন্ত সুখ শান্তি - সমৃদ্ধির দিকে । আর অন্যটি গিয়েছে অফুরন্ত অশান্তি দুঃখ অধঃপতনের দিকে । এখন যার যেভাবে খুশি সেভাবে তারা তাদের দুটি রাস্তার একটিকে নির্ধারণ করে তাদের জীবন পরিচালনা করবে । আর যে যে রাস্তা দিয়ে জীবন পথ অতিক্রম করবে , সে সে পথে গিয়ে স্রষ্টা প্রদত্ত্ব নির্ধারিত নিয়ামত প্রাপ্ত হবে ।

এ প্রসঙ্গে এক লেখকের ( বিশেষ কারণে লেখকের নামটি তুলে ধরতে পারছিনা বলে দুঃখিত ) একটা প্রবন্ধের সামান্য অংশ তুলে ধরতে চাই -
আজ আমাদের প্রত্যেকের মনে একটি জটিল প্রশ্ন অতিশয় তীব্রভাবে বারবার জাগ্রত হচ্ছে। তা এই যে,শান্তি কোথায় ? মানব জীবন আজ সকল প্রকার শান্তি হতে বঞ্চিত হলো কেন ? কেন আজ জাতিতে জাতিতে বিবাদ,রাজায় রাজায় ঘোর মনোমালিন্য,সবলের উৎপীড়ন ও নির্যাতনে দুর্বল আজ দুর্দশাগ্রস্ত ও নাজেহাল। বন্ধুত্ব বিশ্বাসঘাতকতায় পরিপূর্ণ,আর আমানতদারীর পরিবর্তে খেয়ানতের এতোটা প্রাবল্য কেন ? কেন মানুষের প্রতি মানুষ আস্থাহীন,ধর্মের নামে ধর্ম-ধ্বংসের বিরাট কারসাজিই বা কেন ? একই আদমের সন্তান হাজার গোত্রে বিভক্ত,এক গোত্রের সাথে অন্য গোত্রের ভয়ানক বিবাদ-বিসম্বাদ,মানুষের ভয়ে মানুষ সন্ত্রস্ত। এমনিভাবে অগণিত অপকর্মে কেন আজ আমাদের সুখময় জীবনের যাত্রাপথ সকল দিক দিয়ে বিপদ-সংকুল হয়ে উঠেছে। আরও চিন্তা করার বিষয় এই যে,সৃষ্টিলোকের অন্য কোনো ক্ষেত্রে কিন্তু কোনো প্রকার অশান্তি নেই,তারকারাজ্যে শান্তি বিদ্যমান, হাওয়ায় শান্তি,জলে শান্তি,স্থলে শান্তি  , এক কথায় মানুষ ছাড়া প্রাকৃতিক জগতের যে কোনো স্থানে শান্তি বিরাজমান ;শুধু মানুষই শান্তির সুশীতল ছায়া হতে বঞ্চিত। তাই মানব মনে আজ এটা এক জটিল সমস্যার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সমাধানের জন্য সমগ্র মানবজাতি অস্থির হয়ে উঠছে। আমি কিন্তু অতীব ধীরস্থিরভাবে উল্লেখিত জটিল প্রশ্নের সংক্ষেপে এ উত্তরই প্রদান করবো যে,মানুষ আজ তার শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের স্বভাবসিদ্ধ রীতিসমূহের বিরুদ্ধে চলতে গিয়েই পদে পদে অগণিত বিপদের সম্মুখীন হতে বাধ্য হয়েছে । আবার সে তার ভুল বুঝতে পেরে যখন আল্লাহর বিধানে বাধ্য হয়ে জীবনের যাত্রাপথ নির্ধারণে সচেষ্ট হবে,তখন তার হারানো শান্তি অবশ্যই ফিরে আসবে,অন্যথায় অশান্তি কখনো দূর হবে না,হতে পারে না। যেমন চলন্ত ট্রেনের দরজা ও তার পার্শ্ববর্তী রাস্তাকে যদি কেউ আপন ঘরের দরজা ও মেঝে মনে করে, তখন এ ভুল বুঝার জন্য ট্রেনের দরজা বা তৎপার্শ্ববর্তী রাস্তা কখনো তার থাকার ঘরের দরজা ও প্রাঙ্গণে পরিণত হবে না,পক্ষান্তরে,উল্লেখিত ভুল বুঝার শাস্তি স্বরূপ উক্ত অপচেষ্টাকারীর হয়তোবা পা ভাঙ্গবে,না হয় মাথা ফাটবে। এরপরও যদি উক্ত ব্যক্তি তার কৃতকর্মের ভুল বুঝতে সক্ষম না হয়,তবে ব্যাপারটা বড়ই দুঃখজনক ও লজ্জাকর হয়ে দাঁড়াবে। ’’

আজ বিবেকসম্পন্ন মানুষ বিবেকহারা । তাই তারা তাদের শ্রেষ্টত্বের গুণটি হারিয়ে ফেলেছে । ফলে তারা কোন রাস্তাটা ভাল , কোন রাস্তাটা খারাপ । কোন পথে গেলে তাদের ঠিক হবে , কোন পথে গেলে তাদের সমস্যা হবে , তা তারা বুঝতে পারছেনা । তাদের ভিতরের বিবেক কাজ করছেনা , তারা একজনের উপর আরেকজনের আধিপত্য বিস্তারের সংগ্রাম করছে। বিবেক হয়েছে তাদের ধ্বংস , সর্বসেরা সৃষ্টি পরিণত হতে যাচ্ছে সর্বনিকৃষ্ট সৃষ্টি হিসাবে । বিবেকহীন পশুদের কাজের চেয়েও সব নিকৃষ্ট কাজ করছে মানুষ , তাই মানুষের চেয়ে পশুদেরই শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে ভাবার সময় এসেছে।
পশুরা তার স্রষ্টার বিধান মেনে স্রষ্টার প্রভুত্ব স্বীকার করে তাদের জীবন পরিচালনা করে যাচ্ছে , আর মানুষ তাদের স্রষ্টার বিধান অমান্য করে স্রষ্টার বিকল্প হিসেবে নিজেদের প্রভু ভেবে জীবন পরিচালনা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে । তাই স্রষ্টার নিয়মানুষারে মানুষ অশান্তির দাবানলে জ্বলছে , আর পশুরা শান্তির সুখরাজ্যে বিচরণ করছে ।

ব্যক্তি,সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনা করার জন্য  স্রষ্টা যে কল্যাণকর ও পরিপূর্ণকমাত্র জীবন ব্যবস্থা প্রদান করেছেন,তিনি তার নাম  রেখেছেন ইসলাম। এ প্রসংগে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল কুরআনে ফরমান -নিশ্চয়ই ! আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হলো ইসলাম(সুরা আলে ইমরানঃ ১৯)।

যেদিন তিনি এই জীবন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করে দিলেন , সেদিন তিনি তাঁর প্রতিনিধির কাছে পাঠালেন এই জীবন ব্যবস্থা ইসলাম সম্পর্কে বলে দিলেন - আজ আমি তোমাদের জন্য জীবন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দিলাম,তোমাদের জন্য আমার পক্ষ থেকে সকল অনুগ্রহ সুসম্পন্ন করে দিলাম এবং ইসলাম কেই (আমার সকল নির্দেশ ও আইন-বিধানের আনুগত্য করে আমার দাসত্ব করার মাধ্যমে আমার কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করাকেই) তোমাদের জন্য একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হিসাবে মনোনীত করলাম (সুরা মায়েদাঃ ৩)।

সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতির সকলের উদ্দেশ্যে আল কুরআনে নির্দেশ প্রদান করেছেন- হে মানুষ সকল ! তোমরা সেই রব এর সকল নির্দেশ ও আইন-বিধানের আনুগত্য করে তাঁরই দাসত্ব (ইবাদাত) করো;যিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন,আশা করা যায় তোমরা (দুনিয়া ও আখিরাতের সকল ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারবে। যিনি তোমাদের জন্য যমিনকে বিছানা বানিয়েছেন, আকাশকে ছাঁদ বানিয়েছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে ফল ফসলাদি উৎপন্ন করে তোমাদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন,তোমরা এসব জানো। সুতরাং (সাবধান!)কাউকে তাঁর সমকক্ষ গণ্য করোনা (সুরা বাকারাঃ ২১-২২)।

পর্দা সংরক্ষণ সম্পর্কে সৃষ্টিকর্তা মহান রাব্বুল আলামীন ঘোষনা দেন - 
"হে নবী! তুমি তোমার পত্নী, তোমার কন্যা এবং মোমেনগণের পত্নীগণকে বল, যেন তাহারা তাহাদের চাদর নিজেদের উপর (মাথা হইতে টানিয়া মুখমণ্ডল পর্যন্ত) ঝুলাইয়া লয়। এতদ্বারা তাহাদের পরিচয় অত্যন্ত সহজ হইবে এবং তাহাদিগকে কষ্ট দেওয়া হইবে না। বস্তুতঃ আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল,পরম দয়াময়।"(সূরা আহযাবঃ ৬০)

এ সম্পর্কে তিনি আরও ঘোষণা দেন - 
"এবং তুমি মুমেন নারীদিগকে বল,তাহারাও যেন নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সমূহের হিফাযত করে এবং নিজেদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে ,কেবল উহা ব্যতিরেকে যাহা স্বাভাবিক ভাবেই প্রকাশ পায়;এবং তাহারা ওড়নাগুলিকে নিজেদের বক্ষদেশের উপর টানিয়া লয়,এবং তাহার যেন তাহাদের স্বামীগণ অথবা তাহাদের পিতাগণ অথবা তাহাদের স্বামীর পিতাগণ অথবা তাহাদের পুত্রগণ অথবা তাহাদের স্বামীর পুত্রগণ অথবা তাহাদের ভ্রাতাগণ অথবা তাহাদের ভ্রাতুষ্পুত্রগণ অথবা নিজেদের ভগ্নি পুত্রগণ অথবা তাহাদের সমশ্রেণীর নারীগণ অথবা তাহারা যাহাদের মালিক হইয়াছে তাহাদের ডান হাত অথবা পুরুষদের মধ্য হইতে যৌন কামনা বিহীন অধীনস্থ ব্যক্তিগণ অথবা নারীদের গোপন বিষয় সমূহ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালকগণ ব্যাতীত অপর কাহারও নিকট নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।" (সুরা নম্বর ২৪ , আয়াত ৩২ )

পর্দা রক্ষায় তাঁর আরও ঘোষণা - 
"তুমি মুমেনদিগকে বল,তাহারা যেন নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাহাদের লজ্জাস্থান সমূহের হিফাযত করে। ইহা তাহাদের জন্য অত্যন্ত পবিত্রতার কারণ হইবে। নিশ্চয় তাহারা যাহা করে সেই সম্বন্ধে আল্লাহ ভালভাবে অবগত আছেন।" (সুরা নম্বর ২৪ , আয়াত ৩২ )

পর্দা সংরক্ষনে স্রষ্টা রাব্বুল আলামীনের আরও ঘোষনা -সূরা আল আহযাবের ৫৯ নং আয়াতে উল্লেখ আছেঃ

হে নবী আপনি আপনার পত্নী গনকে ও কন্যা গনকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগনকে বলুন,তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজের বউপর টেনে নেয় এতে তাদের চেনা সহজ হবে,ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না ,আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু ’’


সূরা আন নূরের ৩১ নং আয়াতে উল্লেখে আছেঃ

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন,তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যেৌন অঙ্গের হেফাজত করে তারা যেন যা সাধারনতঃ প্রকাশমান ,তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে এবং তারা যেন তাদের মাথায় ওরনা বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী,পিতা,শ্বশুর ,পুত্র,স্বামীর পুত্র ,ভ্রাতা ,ভ্রাতুস্পুত্র ,ভগ্নি পুত্র ,স্ত্রীলোক অধিকার ভুক্ত বাদী ,যৌন কামনা মুক্ত পুরুষ ও বালক ,যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ ,তাদের ব্যতিত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে ,তারা যেন তাদের গোপন সাজ সজ্জা প্রকাশকরার জন্য জোরে পদচারনা না করে মুমিনগন ,তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর ,যাতে তোমরা সফলকাম হও ।’’


সূরা আন নূরের ৩০নং আয়াতে উল্লেখ আছেঃ

মুমিন দেরকে বলুন,তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে ,এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে । নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবঞিত আছেন ।


 তিনি আরও বলেন - হে নবি,তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে ,কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বল,তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজদের উপর ঝুলিয়ে দেয়,তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু। (সুরা আহযাব-৫৯)

তিনি আরও ঘোষনা দেন - আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। (সুরা আহযাব-৩৩)

স্রষ্টা রাব্বুল আলামীনের প্রেরিত মানবজাতির কল্যান পথের দিশারী ,মানবজাতির মুক্তিদূত , মানবতার সংরক্ষণের প্রতীক হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
তিনজন মানুষ সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা কর না। (অর্থাৎ তারা সবাই ধ্বংস হবে।) যথা :
ক. যে ব্যক্তি মুসলমানদের জামাত থেকে বের হয়ে গেল অথবা যে কুরআন অনুযায়ী দেশ পরিচালনকারী শাসকের আনুগত্য ত্যাগ করল, আর সে এ অবস্থায় মারা গেল।
খ. যে গোলাম বা দাসী নিজ মনিব থেকে পলায়ন করল এবং এ অবস্থায় সে মারা গেল।
গ. যে নারী প্রয়োজন ছাড়া রূপচর্চা করে স্বামীর অবর্তমানে বাইরে বের হল।(হাকেম,সহিহ আল-জামে : ৩০৫৮)

তিনি বলেন,
যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে বের হল,অতঃপর কোন জনসমাবেশ দিয়ে অতিক্রম করল তাদের ঘ্রাণে মোহিত করার জন্য,সে নারী ব্যভিচারিণী।(আহমদ, সহিহ আল-জামে : ২৭০১)

ইমাম আহমদ রহ. উসামা বিন জায়েদের সূত্রে বর্ণনা করেন,
দিহইয়া কালবির উপহার দেয়া,ঘন বুননের একটি কিবতি কাপড় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পরিধান করতে দেন। আমি তা আমার স্ত্রীকে দিয়ে দেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাকে বলেন, কি ব্যাপার, কাপড় পরিধান কর না ? আমি বললাম,আল্লাহর রাসূল,আমি তা আমার স্ত্রীকে দিয়েছি। তিনি বললেন, তাকে বল,এর নীচে যেন সে সেমিজ ব্যবহার করে। আমার মনে হয়,এ কাপড় তার হাড়ের আকারও প্রকাশ করে দেবে। (আহমাদ,বায়হাকি)

নামাজ রোজার মতই পর্দাও একটি ফরজ । অবশ্যই পালনীয় একটা কর্ম । পর্দা শুধু বাহিরে বোরকা বা কালো কাপড়ের আচ্ছাদন ও নেকাব জাতীয় পোষাক এর নাম নয়,এবং এটি শুধু বিশ্বাসী মহিলাদের জন্য পালনীয় ও নয় বরং বালেগ মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে ইসলাম ধর্ম মতে অনুমিত ব্যক্তিবর্গ (মাহরাম) ছাড়া যে কারো কাছ থেকে পুরুষের ক্ষেত্রে নিজের চিন্তা ও দৃষ্টি ,এবং মহিলারদের ক্ষেত্রে চিন্তা,দৃষ্টি ও অঙ্গ হেফাযত করাই পর্দার অন্তর্ভুক্ত।দেহের পর্দা সরে গেলে অন্তরের পর্দা সরে যেতে এবং অন্তরের চরিত্র নষ্ট হতে খুব বেশী সময় লাগে না। লোভে পরা আর লোভ দেখানো উভয়ই উভয়ের জন্যে ক্ষতিকর। অন্তরের পর্দার বা চরিত্রের অজুহাতে দেহের পর্দার বিষয়ে অজুহাত দেয়া উচিত নয়। উভয়ই দরকার।

পর্দা প্রগতির অন্তরায় ’’ বলে যে ধূয়া উঠেছে,তা আমাদের দুমুখো ও মুনাফেকী মনোবৃত্তিরই পরিচায়ক। কেননা এ ধরনের শ্লোগান আল্লাহ তাঁর রাসূলের নির্দেশের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপনেরই নামান্তর। এর পরিস্কার অর্থ এই দাঁড়ায় যে,আল্লাহ এবং রাসূল পর্দার ব্যবস্থা করে আমাদের উন্নতি ও প্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)।
পর্দা আরবী হিজাব’’ শব্দের বাংলা ও উর্দূ তরজমা। কুরআন মজীদের যে আয়াতে মুসলমানদের আল্লাহ তাআলা রাসূলে করীম (সা. ) -এর ঘরে নিঃসংকোচে ও বেপরোয়াভাবে যাতায়াত করতে নিষেধ করেছেন, তাতে এ হিজাব’’ শব্দই উল্লেখ করা হয়েছে। 
আল্লাহ তাআলা ঘোষনা ,
যদি ঘরের স্ত্রীলোকদের নিকট থেকে তোমাদের কোন জিনিস নেয়ার প্রয়োজন হয়,তাহলে তা হিজাবের আড়াল থেকে চেয়ো।’’ 
কুরআনের এ নির্দেশ থেকেই ইসলামী সমাজে পর্দার সূচনা হয়। আর এ প্রসঙ্গে আরও যত আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে , তার সমষ্টিকেই পর্দার বিধান বলা হয়েছে।
আল কোরআনের সূরায়ে নূর ও সূরায়ে আহযাবে এ সম্পর্কিত নির্দেশাবলী বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। এ সব আয়াতে বলা হয়েছে যে,মহিলারা যেন তাদের মর্যাদা সহকারে আপন ঘরেই বসবাস করে এবং জাহেলী যুগের মেয়েদের মতো বাইরে নিজেদের রূপ সৌন্দর্যের প্রদর্শনী করে না বেড়ায়। তাদের যদি ঘরের বাইরে যাবার প্রয়োজন হয়,তবে আগেই যেন চাদর (কাপড়) দ্বারা তারা নিজেদের দেহকে আবৃত করে নেয় এবং ঝংকারদায়ক অলংকারাদি পরিধান করে ঘরের বাইরে না যায়। ঘরের ভেতরেও যেন তারা মাহরাম (যার সংগে বিয়ে নিষিদ্ধ ) পুরুষ ও গায়রে মাহরাম পুরুষের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে এবং ঘরের চাকর ও মেয়েদের ব্যতীত অন্য কারো সামনে যেন জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরে না বেরোয়।

রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাখ্যা করে বলেছেন
মহিলাদের সতর হচ্ছে মুখমন্ডল, হাতের কব্জা ও পায়ের পাতা ব্যতীত দেহের অবশিষ্টাংশ। এই সতরকে মোহররম পুরুষ এমন কি পিতা, ভাই প্রভৃতির সামনেও ঢেকে রাখতে হবে। মেয়েরা এমন কোন মিহি কাপড় পরিধান করতে পারবে না যাতে তাদের দেহের গোপনীয় অংশ বাইরে থেকে দৃষ্টিগোচর হতে পারে। তাছাড়া তাদেরকে মোহররম পুরুষ ছাড়া অন্য কারো সাথে ওঠা বসা কিংবা ভ্রমণ করতে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করেছেন।

যে সমাজে পর্দা প্রথাকে বিসর্জন দিয়ে নারীকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দেয়া হয়েছে,সেখানে পুরুষের মনে সম্ভ্রমবোধ জাগা তো দূরের কথা,বরং নারীর মহান মর্যাদাকেই সেখানে নগ্নতা ও উলংগতার চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে পৌঁছানো হয়েছে। এমনকি,তাতেও যেখানে মানুষের যৌন লালসা নিবৃত্ত হয়নি,সেখানে প্রকাশ্য ব্যভিচারকেই উৎসাহ দেয়া হয়েছে।

তাই পর্দার রক্ষার বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিচ্ছেন , দয়া করে তারা ধৈর্য্য সহকারে ( ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত ) একজন সম্মানীতা নারীর এ প্রবন্ধটি পড়ে দেখুন

পর্দা কি প্রগতির অন্তরায় ?
লিখেছেন - সাইয়েদা পারভীন রেজভী
 ----------------------------------------------------------------------------

১৯৫৫ সনের ২রা মার্চ মুলতান মেডিকেল কলেজে অনুষ্ঠিত তৎকালীন পাকিস্তান আন্তকলেজ বিতর্ক প্রতিযোগিতা হয়েছিল। বিতর্কের বিষয়বস্তু ছিল পর্দা কি প্রগতির অন্তরায় ! এ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার লাভ করেছেন মুলতান কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সাইয়েদা পারভীন রেজভী। তিনি পর্দার আড়াল থেকে বক্তৃতা করতে চেয়েছিলেন। অনুমতি না পেয়ে গায়ে চাদর জড়িয়ে তার বক্তব্য পেশ করেছেন।

তিনি বিভিন্ন অকাট্য যুক্তি-প্রমাণাদির সাহায্যে প্রমাণ করেছেন যে,পর্দা কোন মতেই প্রগতির অন্তরায় তো নয়ই বরং মানুষের সার্বিক প্রগতিতে পর্দার বিশেষ ভুমিকা রয়েছে। বিচারকদের শতকরা নিরানব্বই ভাগ রায় তাঁর পক্ষে হয়েছে। এখানে বক্তব্যটি তুলে ধরা হল ।
( ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত )

পর্দার বিধান


পর্দা কি আমাদের জাতীয় ও রাষ্টীয় প্রগতির অন্তরায়? এ প্রশ্নের মীমাংসার পূর্বে একটি কথা উত্তমরূপে জেনে নেয়া আবশ্যক যে,প্রকৃতরুপে পর্দা কাকে বলে?কেননা এতদ্ব্যতীত আমরা পর্দার উদ্দেশ্যপ্রয়োজনীয়তা এবং তার উপকারিতা অপকারিতা সম্যকরূপে উপলব্ধি করতে সক্ষম হব না। অতপর আমাদেরকে এ-ও সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে,আমরা মূলত কোন্ ধরনের প্রগ্রতি অর্জন করতে চাই? কারণ এ বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে পর্দা তার অন্তরায় কি না তা যথার্থরূপে অনুধাবন করা সম্ভব হবে না।

পর্দা আরবী হিজাবশব্দের বাংলা ও উর্দূ তরজমা । কুরআন মজীদের যে আয়াতে মুসলমানদের আল্লাহ তায়ালা রাসূলে করীম (সা)-এর ঘরে নিঃসংকোচে ও বেপরোয়াভাবে যাতায়াত করতে নিষেধ করেছেন,তাতে এ হিজাবশব্দই উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন যে,যদি ঘরের স্ত্রীলোকদের নিকট থেকে তোমাদের কোন জিনিস নেয়ার প্রয়োজন হয়,তাহলে তা হিজাবের আড়াল থেকে চেয়ো।

কুরআনের এ নির্দেশ থেকেই ইসলামী সমাজে পর্দার সূচনা হয়। অতপর এ প্রসংগে আর যত আয়াতই নাযিল হয়েছে,তার সমষ্টিকে আহকামে হিজাববা পর্দার বিধান বলা হয়েছে। সূরায়ে নূর ও সূরায়ে আহযাবে এ সম্পর্কিত নির্দেশাবলী বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। ওসব আয়াতে বলা হয়েছে যে,মহিলারা যেন তাদের মর্যাদা সহকারে আপন ঘরেই বসবাস করে এবং জাহেলী যুগের মেয়েদের মতো বাইরে নিজেদের রূপ সৌন্দর্যের প্রদর্শনী করে না বেড়ায়। তাদের যদি ঘরের বাইরে যাবার প্রয়োজন হয়,তবে আগেই যেন চাদর (কাপড়) দ্বারা তারা নিজেদের দেহকে আবৃত করে নেয় এবং ঝংকারদায়ক অলংকারাদি পরিধান করে ঘরের বাইরে না যায়। ঘরের ভেতরেও যেন তারা মোহাররম (যার সংগে বিয়ে নিষিদ্ধ) পুরুষ ও গায়রে মোহাররম পুরুষের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে এবং ঘরের চাকর ও মেয়েদের ব্যতীত অন্য কারো সামনে যেন জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরে না বেরোয়।

অতপর মোহাররম পুরুষদের সামনে বের হওয়া সম্পর্কে ও এ শর্ত আরোপ করা হয়েছে যে,তারা বেরোবার পূর্বে যেন কাপড়ের আঁচল দ্বারা তাদের মাথাকে আবৃত করে নেয় এবং নিজেদের সতর লুকিয়ে রাখে। অনুরূপভাবে পুরুষদেরকেও তাদের মা-বোনদের নিকট যাবার পূর্বে অনুমতি গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে,যেন অসতর্ক মুহুর্তে মা-বোনদের দেহের গোপনীয় অংশের প্রতি তাদের দৃষ্টি পড়তে না পারে।

কুরআন মজীদে উল্লেখিত এই সমস্ত নির্দেশকেই আমরা পর্দা বলে অভিহিত করে থাকি। রাসূলে করীম (সঃ) এর ব্যাখ্যা করে বলেছেন,মহিলাদের সতর হচ্ছে মুখমন্ডল,হাতের কব্জা ও পায়ের পাতা ব্যতীত দেহের অবশিষ্টাংশ। এই সতরকে মোহররম পুরুষ এমন কি পিতা,ভাই প্রভৃতির সামনেও ঢেকে রাখতে হবে। মেয়েরা এমন কোন মিহি কাপড় পরিধান করতে পারবে না যাতে তাদের দেহের গোপনীয় অংশ বাইরে থেকে দৃষ্টিগোচর হতে পারে। তাছাড়া তাদেরকে মোহররম পুরুষ ছাড়া অন্য কারো সাথে ওঠা বসা কিংবা ভ্রমণ করতে রাসূলে করীম (সা) স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করেছেন।

কেবল তাই নয়,রাসূলে করীম (স) মহিলাদেরকে সুগন্ধি মেখেও ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন। এমনকি তিনি মসজিদে জামায়াতের সাথে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মহিলাদের জন্য পৃথক স্থান পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। নারী ও পুরুষকে মিলিতভাবে একই কামরায় বা একই স্থানে সালাত আদায়ের তিনি কখনো অনুমতি প্রদান করেননি। এমন কি সালাত শেষে খোদ নবী করীম (স) ও তাঁর সহাবাগণ মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে আগে বের হওয়ার সুযোগ দিতেন এবং যতক্ষন পর্যন্ত তারা মসজিদ থেকে সম্পূর্ণরূপে বের না হতেন ততক্ষণ পুরুষরা তাঁদের কামরার ভেতরেই অপেক্ষা করতেন।

পর্দার এই সমস্ত বিধান সম্পর্কে যদি কারো মনে সংশয় থাকে,তাহলে তিনি কুরআনের সূরায়ে নূর ও সূরায়ে আহযাব এবং হাদীসের বিশুদ্ধ ও প্রামাণ্য গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করে দেখতে পারেন। বর্তমান সময়ে আমরা যাকে পর্দা বলে অভিহিত করে থাকি,তার বাহ্যিক রূপে কিছুটা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে বটে,কিন্তু মূলনীতি ও অন্তর্নিহিত ভাবধারার দিক দিয়ে রাসূলে করীম (স) কর্তৃক মদীনার ইসলামী সমাজে প্রবর্তিত পর্দা ব্যবস্থারই অনুরূপ রয়ে গেছে। অবশ্য আল্লাহ ও রাসূলের নামে আপনাদের মুখ বন্ধ করা আমার অভিপ্রায় নয়,কিন্তু এ কথা আমি নিতান্ত সততার খাতিরেই বলতে বাধ্য যে,অধুনা আমাদের মধ্যে পর্দা প্রগতির অন্তরায় বলে যে ধূয়া উঠেছে,তা আমাদের দুমুখো ও মুনাফেকী মনোবৃত্তিরই পরিচায়ক। কেননা এ ধরনের শ্লোগান আল্লাহ তাঁর রাসূলের নির্দেশের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপনেরই নামান্তর। এর পরিস্কার অর্থ এই দাঁড়ায় যে,আল্লাহ এবং রাসূল পর্দার ব্যবস্থা করে আমাদের উন্নতি ও প্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)।

বস্তুত পর্দা সম্পর্কে আমাদের মনে যদি এই বিশ্বাসই বদ্ধমূল হয়ে থাকে,তাহলে নিজেদেরকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয়ারই বা আমাদের কি অধিকার আছে?আর যে আল্লাহ এবং রাসূল আমাদের ওপর এমনি একটি যুলুমমূলকব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছেন,তাঁদের বিরুদ্ধেই বা আমরা অনাস্থা জ্ঞাপন করি না কেন?বস্তুত এসব প্রশ্নকে এড়িয়ে গিয়ে এ কথা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না যে,আল্লাহ এবং রাসূল মূলতই পর্দার কোন নির্দেশ দেননি। কারণ একটু পূর্বেই আমি কুরআন ও হাদীস থেকে উদ্ধৃতি পেশ করে অকাট্যরূপে প্রমাণ করেছি এটা কোন মনগড়া জিনিস নয়- বরং এ আল্লাহ এবং তদীয় রাসূলেরই প্রদত্ত বিধান । এ বিষয়ে আরো বিস্তারিতরূপে কারো জানার আগ্রহ থাকলে তিনি কুরআন-হাদীস থেকেই সরাসরি জ্ঞান লাভ করতে পারেন। আর হাদীসের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে যদি কেউ পর্দার বিধান সম্পর্কে সংশয় পোষণ করতে চান,তাহলে তিনি কুরআন মজীদ থেকেই তার সংশয় নিরসন করতে পারেন। কুরআনে এ সম্পর্কে এত সুস্পষ্ট ও খোলাখুলিভাবে আলোচনা করা হয়েছে যে,তাকে কূটতর্কের বেড়াজাল দিয়ে কোন প্রকারেই আড়াল করে রাখা সম্ভব নয়।


পর্দার উদ্দেশ্য

ইসলামে যে পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে,তৎসম্পর্কে একটু তলিয়ে চিন্তা করলে আমরা তার তিনটি উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে পারিঃ প্রথমত,নারী ও পুরুষের নৈতিক চরিত্রের হেফাযত করা এবং নর নারীর অবাধ মেলামেশার ফলে সমাজে যেসব ত্রটি বিচ্যুতির উদ্ভব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে,সে সবের প্রতিরোধ করা। দ্বিতীয়ত,নারী ও পুরুষের কর্মক্ষেত্রকে পৃথক করা,যেন প্রকৃতি নারীর ওপর যে গুরুদায়িত্ব ন্যস্ত করেছে,তা সে নির্বিঘ্নে ও সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারে। তৃতীয়ত,পারিবারিক ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত ও সুদৃঢ় করা। কারণ জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে আর যত ব্যবস্থাই রয়েছে তার ভেতর পারিবারিক ব্যবস্থা শুধু অন্যতমই নয়;বরং এ হচ্ছে গোটা জীবন ব্যবস্থার মূল বুনিয়াদ। তাই যে দেশে বা যে সমাজে পর্দাকে বিসর্জন দিয়ে পারিবারিক ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টা চলেছে,সেখানে মেয়েদেরকে শুধু পুরুষদের দাসী ও পদসেবিকাই বানানো হয়েছে এবং তাদেরকে সমস্ত ন্যায্য অধিকার প্রদানের নামে পর্দার বাঁধন থেকে আযাদ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে পারিবারিক ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে গুরুতর বিশৃংখলা। এ ইসলাম নারীকে তার ন্যায্য অধিকার প্রদানের সংগে সংগে পারিবারিক ব্যবস্থাকেও সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করেছে। কাজেই যে পর্যন্ত নারীর অধিকার সংরক্ষণের জন্যে পর্দার ব্যবস্থা না থাকবে, সে পর্যন্ত ইসলামের উদ্দেশ্য মোটেই সফল হতে পারেনা।

আমি আমার মা-বোনদেরকে ইসলামের উপরোক্ত উদ্দেশ্যাবলী সম্পর্কে শান্ত মস্তিষ্কে ধীর স্থীরভাবে চিন্তা করতে অনুরোধ জানাচ্ছি। অবশ্য যদি কেউ নৈতিক চরিত্রের প্রশ্নটিকে বিশেষ গুরুত্বর্পূণ বিষয় বলে মনে না করেন ,তবে তার সে ব্যাধির কোন প্রতিষেধক আমার কাছে নেই। কিন্ত যিনি নৈতিকতাকে জীবনের অমূল্য সম্পদ বলে মনে করেন,তাঁর একথা গভীরভাবে চিন্তা করে দেখা উচিত যে,যে সমাজে মেয়েরা চোখ ঝলসানো -পোশাক পরিচ্ছেদ ও অলংকারাদিতে সুসজ্জিতা হয়ে প্রকাশ্যে নিজেদের রূপ যৌবনের প্রদর্শনী করে বেড়ায় এবং সর্বত্র পুরুষদের সাথে অবাধ মেলামেশা করার সুযোগ পায়,সেখানে তাদের চারিত্রিক মেরুদন্ড ধ্বংসের কবল থেকে কিরূপে রক্ষা করা যেতে পারে? আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে,আমাদের দেশে নারী-পুরুষের মধ্যে যারা নিয়মিত খবরের কাগজ পড়ে থাকেন,তারা অনায়াসেই আমার এই উক্তির যথার্থতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। সুতরাং এ বিষয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা নিষ্প্রয়োজন।

কেউ কেউ বলে থাকেন,আমাদের সমাজ জীবনে যেসব অনাচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে,তার মূলে নাকি রয়েছে পর্দাপ্রথা এবং পর্দার ব্যবস্থা না থাকলে মেয়েদের সম্পর্কে পুরুষদের নাকি মনে সম্ভ্রম ও শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হত। যারা এরূপ ধারণা পোষণ করেন,তারা যে নিতান্তই ভ্রান্তির মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছেন,তা আমি দৃঢ়তার সাথেই বলতে চাই। কারণ,যে সমাজে পর্দা প্রথাকে বিসর্জন দিয়ে নারীকে সম্পূর্ণ আযাদকরে দেয়া হয়েছে,সেখানে পুরুষের মনে সম্ভ্রম বোধ জাগা তো দূরের কথা,বরং নারীর মহান মর্যাদাকেই সেখানে নগ্নতা ও উলংগতার চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে পৌঁছানো হয়েছে। এমনকি,তাতেও যেখানে মানুষের যৌন লালসা নিবৃত্ত হয়নি,সেখানে প্রকাশ্য ব্যভিচারকেই উৎসাহ দেয়া হয়েছে। এর অনিবার্য প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সমাজের বিভিন্ন স্তরে কিরূপ ভাঙন ও বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে,তা আপনারা বৃটেন,আমেরিকা এবং তাদের অনুসারী তথাকথিত প্রগতিশীল দেশগুলোর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকেই সম্যক অনুধাবন করতে পারেন। আমার মা-বোনদের নিকট জিজ্ঞাস্য যে,পর্দা প্রথাকে বিসর্জন দিয়ে এহেন প্রগতিই কি তারা কামনা করেন?

বস্তুত এটা শুধু নৈতিক প্রশ্নই নয়;বরং এর সংগে আমাদের গোটা তাহযীব-তামাদ্দুন জড়িত রয়েছে। অধুনা দেশে নারী-পুরুষের মিলিত আচার অনুষ্ঠানের মাত্রা যত বেড়ে চলেছে,মেয়েদের পোশক-পরিচ্ছদ ও প্রসাধনী দ্রব্যের ব্যয় বাহুল্য ততই উর্ধমূখী হচ্ছে। এর ফলে একদিকে হালাল উপায়ে অর্থোপার্জনের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে ,অপরদিকে সুদ,ঘুষ আত্মসাৎ,চোরাকারবারী প্রভৃতি সমাজধ্বংসী পাপাচারেরও ব্যাপক প্রচলন হচ্ছে। বলাবাহুল্য এই সমস্ত হারামখুরীর অভিশাপেই আজ আমাদের সামাজিক কাঠামো ঘুণে ধরা কাঠের ন্যায় দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং এর ফলে আজ দেশে আইনেরশাসনও সঠিকভাবে চালানো সম্ভব হচ্ছে না। আমি আপনাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই,যারা নিজেদের ব্যক্তিগত লালসা -বাসনার ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ম -শৃংখলা মেনে চলতে অভ্যস্ত নয়,সামাজিক ব্যাপারে তারা কিরূপে নিয়ম-শৃংখলার অনুবর্তী হয়ে চলবে ? আর যে ব্যক্তি নিজের পারিবারিক জীবনেই কোন বিধি-বিধানের অনুবর্তী হতে পারে না,রাষ্ট্রীয় জীবনে তার কাছ থেকে আইনের আনুগত্যের আশা করাটা নিতান্তই বাতুলতা নয় কি?


নারী ও পুরুষের কর্মবন্টন

বস্তুত নারী ও পুরুষের কর্মক্ষেত্রকে খোদ প্রকৃতিই স্বতন্ত্র করে দিয়েছে। প্রকৃতি মাতৃত্বের পবিত্র দায়িত্ব সম্পূর্ণ নারীর উপর সোপর্দ করেছে এবং সেই সংগে দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত স্থান কোথায়,তাও বাতলিয়ে দিয়েছে। অনুরূপভাবে পিতৃত্বের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে পুরুষের ওপর এবং সেই সংগে মাতৃত্বের মতো গুরুদায়িত্বের বিনিময়ে তাকে আর যেসব কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে,তাও প্রকৃতি সুস্পষ্টরূপে নির্ধারণ করে দিয়েছে। পরন্তু এ উভয় প্রকার দায়িত্ব পালনের জন্য নারী ও পুরুষের দৈহিক গঠন,শক্তি সামর্থ ও ঝোঁক প্রবণতায়ও বিশেষ পার্থক্য সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রকৃতি যাকে মাতৃত্বের জন্য সৃষ্টি করেছে,তাকে ধৈর্য,মায়া মমতা,স্নেহ ভালবাসা প্রভৃতি কতকগুলো বিশেষ ধরনের গুণে গুণান্বিত করেছে। নারীর ভেতরে এসব গুণের সমন্বয় না হলে তার পক্ষে মানব শিশুর লালন পালন করা সম্ভবপর হত কি? বস্তুত মাতৃত্বের মহান দায়িত্ব যার ওপর অর্পণ করা হয়েছে; তার পক্ষে এমন কোন কাজ করা সম্ভব নয়,যার জন্যে রুক্ষতা ও কঠোরতার প্রয়োজন। এ কাজ শুধু তার দ্বারাই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে ,যাকে এর উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে এবং সেই সংগে পিতৃত্বের মতো কঠোর দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

আজকে যারা সমান অধিকারের নামে নারী ও পুরুষের এই প্রকৃতিগত পার্থক্যকে মিটিয়ে দিতে চান,তাদেরকে আমি অনুরোধ করবো,আপনারা এ পথে কোন পদক্ষেপ নেয়ার আগে মনে করে নিন যে,এ যুগে পৃথিবীর আদতেই মাতৃত্বের কোন প্রয়োজন নেই। আমি দৃঢ়তার সংগেই বলতে চাই যে,আপনারা যদি এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত পারেন, তাহলে আনবিক ও উদযান বোমার প্রয়োগ ছাড়াই অল্প দিনের মধ্যেই মানবতার চূড়ান্ত সমাধি রচিত হবে। পক্ষান্তরে আপনারা যদি এরূপ সিদ্ধান্ত করতে না পারেন এবং নারীকে তার মাতৃসুলভ দায়িত্ব পালনের সংগে সংগে পরুষের মতো রাজনীতি,ব্যবসায় বাণিজ্য ,শিল্পকার্য ,যুদ্ধপরিচালনা ইত্যাদি ব্যাপারেও অংশ গ্রহণ করতে বাধ্য করেন,তাহলে তার প্রতি নিসন্দেহে চরম অবিচার করা হবে।

আমি আপনাদেরকে ন্যায়নীতির খাতিরে একটু ধীর স্থীরভাবে চিন্তা করতে অনুরোধ জানাচ্ছি। নারীর ওপর প্রকৃতি যে দায়িত্ব ন্যস্ত করেছে,তা নিসন্দেহে মানবতার অর্ধেক সেবা এবং এই সেবাকার্য সে সাফল্যের সংগেই সাধন করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে পুরুষের নিকট থেকে সে বিন্দুমাত্র ও সহযোগিতা পচ্ছে না,অথচ অবশিষ্ট অর্ধেকের অর্ধেক দায়িত্ব ও আবার আপনারা নারীর ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। এর ফল এ দাঁড়াবে যে,নারীকে পালন করতে হবে মোট দায়িত্বের তিন চতুর্থাংশ এবং পুরুষের ওপর বর্তিবে মাত্র এক-চতুর্থাংশ। আমি আপনাদেরকে বিনীতভাবে জিজ্ঞেস করতে চাই নারীর প্রতি এ কি আপনাদের সুবিচার?

অবশ্য মেয়েরা এ যুলুম অবিচারকে মেনে নিচ্ছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে এ যুলুমের বোঝাকে স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নেয়ার জন্য লড়াই করছে তার মূল কারণ হচ্ছে এই যে,তারা পুরুষদের কাছে যথার্থ সমাদর পাচ্ছে না। ঘর সংসার ও মাতৃত্বের মতো কঠিন দায়িত্ব সঠিকরূপে পালন করা সত্ত্বেও আজ তারা সমাজে উপেক্ষিত ,অপাংক্তেয়। সন্তানবতী ও গৃহিনী মেয়েদেরকে আপনারা ঘৃণা করেন এবং স্বামী ও সন্তান-সন্ততির এত সেবা -যত্ন করা সত্ত্বেও আপনারা তাদের যথার্থ কদর করছেন না। অথচ এই সমস্ত কার্যে তাদের যে বিপুল ত্যাগ স্বীকার করতে হয় তা পুরুষদের সামাজিক,রাষ্ট্রীয়,অর্থনৈতিক ও যুদ্ধ বিগ্রহ সংক্রান্ত দায়িত্বের চাইতে কোন অংশেই কম নয়। বস্তুত এসব কারণেই মেয়েরা আজ অনন্যোপায় হয়ে দ্বিগুণ দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হচ্ছে। তারা পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে যে,পুরুষ-সুলভ কার্যে অগ্রসর না হলে সমাজে তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা নেই।


নারী ও প্রগতি

ইসলাম মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করার দরুন নারীকে শুধু পুরুষের সমান মর্যাদা দেয়নি,বরং কোন কোন পুরুষের চাইতেও বেশী মর্যাদা দিয়েছে। কিন্তু এটাকে আপনারা প্রগতির অন্তরায় বলে উপেক্ষা করছেন। আপনাদের দাবী হচ্ছে নারী মাতৃত্বের গুরুদায়িত্ব পালন করবে মাজিষ্ট্রেট হয়ে জেলার শাসন কার্যও পরিচালনা করবে এবং নর্তকী ও গায়িকা হয়েও আপনাদের চিত্তবিনোদনও করবে। কী অদ্ভুত আপনাদের খেয়াল।

বস্তুত আপনারা নারীর ওপর দায়িত্বের এরূপ দুরূহ বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন,যার ফলে সে কোন কাজই সুষ্ঠুভাবে সমাধা করতে পারছেনা। আপনারা তাকে এমন সব কাজে নিযুক্ত করছেন,যা জন্মগতভাবেই তার প্রকৃতি বিরুদ্ধ। শুধু তাই নয়,আপনারা তাকে তার সুখের নীড় থেকে টেনে এনে প্রতিযোগিতার ময়দানে দাঁড় করাচ্ছেন,যেখানে পুরুষের মুকাবিলা করা তার পক্ষে কোনক্রমেই সম্ভব নয়। এর স্বাভাবিক পরিণতি এই দাড়াবে যে,প্রতিযোগিতামূলক কাজে সে পুরুষের পেছনে পড়ে থাকতে বাধ্য হবে। আর যদি কিছু করতে সক্ষম হয় তবে তা নারীত্বের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যকে বিসর্জন দিয়েই করতে হবে। তথাপি এটাকেই আপনারা প্রগতি বলে মনে করেন আর এই তথাকথিত প্রগতির মোহেই আপনারা ঘর সংসার ও পারিবারিক জীবনের মহান কর্তব্যের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করছেন। অথচ এই ঘর-সংসারই হচ্ছে মানব তৈরীর একমাত্র কারখানা । এ কারখানার সাথে জুতা কিংবা পিস্তল তৈরির কারখানার কোন তুলনাই চলে না। কারণ এ কারখানা পরিচালনার জন্য যে বিশেষ ধরনের গুণাবলী,ব্যক্তিত্ব ও যোগ্যতা আবশ্যক,প্রকৃতি তার বেশীর ভাগ শক্তিই দিয়েছেন নারীর ভেতরে। এ কারখানার পরিসর বিস্তৃত-কাজও অনেক। যদি কেউ পরিপূর্ণ দায়িত্বানুভুতি সহাকারে এ কারখানার কাজে আত্মনিয়োগ করে ,তার পক্ষে বাইরের দুনিয়ায় নযর দেয়ার আদৌ অবকাশ থাকে না;বস্তুত এ কারখানাকে যতখানি দক্ষতা ও নৈপূন্যের সাথে পরিচালনা করা হবে,ততখানি উন্নত ধরনের মানুষই তা থেকে বেরিয়ে আসবে। কাজেই এ কারখানা পরিচালনার উপয়োগী শিক্ষা ও ট্রেনিংই নারীর সবচাইতে বেশী প্রয়োজন। এ জন্যেই ইসলাম পর্দাপ্রথার ব্যবস্থা করেছে। মোদ্দাকথা,নারী যাতে তার কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হয়ে বিপথে চালিত না হয় এবং পুরুষও যাতে নারীর কর্মক্ষেত্রে অন্যায়ভাবে প্রবেশ করতে না পারে,তাই হচ্ছে পর্দার লক্ষ্য।

আপনারা আজ তথাকথিত প্রগতির মোহে পর্দার এ বিধানকে ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। কিন্তু আপনারা যদি এ উদ্দেশ্যে অটল থাকতে চান,তাহলে এর পরে দুটি পথের একটি আপনাদের অবলম্বন করতে হবে,হয় ইসলামের পারিবারিক ব্যবস্থার সমাধি রচনা করে আপনাদের হিন্দু কিংবা খৃষ্টানদের ন্যায় নারীকে দাসী ও পদসেবিকা বানিয়ে রাখতে হবে,নতুবা দুনিয়ার সমস্ত মানব তৈরির কারখানা ধ্বংস হয়ে যাতে জুতা কিংবা পিস্তল তৈরীর কারখানা বৃদ্ধি পায়,তার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকতে হবে।

আমি আপনাদেরকে এ কথা দৃঢ়তার সাথে জানিয়ে দিতে চাই যে,ইসলামের প্রদত্ত জীবন বিধান ও সামাজিক শৃংখলা ব্যবস্থাকে চুরমার করে দিয়ে নারীর সামাজিক মর্যাদা এবং পারিবারিক ব্যবস্থাকে বিপর্যয়ের কবল থেকে বাচিঁয়ে রাখা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। আপনারা প্রগতি বলতে যাই বুঝে থাকুন না কেন,কোন পদক্ষেপ নেয়ার আগে আপনাদের সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন যে,আপনারা কি হারিয়ে কি পেতে চান। প্রগতি একটি ব্যপক অর্থবোধক শব্দ। এর কোন নির্দিষ্ট কিংবা সীমাবদ্ধ অর্থ নেই। মুসলমানরা এককালে বংগোপসাগর থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্ত বিশাল বিস্তৃত রাজ্যের শাসনকর্তা ছিল । সে যুগে ইতিহাস দর্শন ও জ্ঞান বিজ্ঞানে তারাই ছিল দুনিয়ার শিক্ষা গুরু। সভ্যতা ও কৃষ্টিতে দুনিয়ার কোন জাতিই তাদের সমকক্ষ ছিলনা। আপনাদের অভিধানে ইতিহাসের সেই গৌরবোজ্জল যুগকে প্রগতির যুগ বলা হয় কিনা জানি না। তবে সেই যুগকে যদি প্রগতির যুগ বলা যায় তাহলে আমি বলব : পর্দার পবিত্র বিধানকে পুরোপুরি বজায় রেখেই তখনকার মুসলামনরা এতটা উন্নতি লাভ করতে সমর্থ হয়েছিল।

ইসলামের ইতিহাসে বড় বড় বৈজ্ঞানিক,দার্শনিক,চিন্তানায়ক,আলেম ও দিগ্বীজয়ী বীরের নাম উজ্জল হয়ে রয়েছে। সেসব বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিগণ নিশ্চয়ই তাদের মূর্খ জননীর ক্রোড়ে লালিত পালিত হননি। শুধু তাই নয়,ইসলামী ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে আমরা বহু খ্যাতনামা মহিলার নামও দেখতে পাই। সে যুগে তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানে দুনিয়ায় অসাধারণ প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিলেন। তাঁদের এই উন্নতি ও প্রগতির পথে পর্দা কখনই প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়নি। সুতরাং আজ যদি আমরা তাঁদেরই পদাংক অনুসরণ করে প্রগতি অর্জন করতে চাই তাহলে পর্দা আমাদের চলার পথে বাধার সৃষ্টি করবে কেন?


পর্দাহীনতার পরিণতি

অবশ্য পাশ্চাত্যের জাতিসমূহের বল্গাহীন জীবনধারাকেই যদি কেউ প্রগতিবলে মনে করেন তাহলে তার সে প্রগতির পথে পর্দা নিসন্দেহে প্রতিন্ধক হয়ে দাঁড়াবে। কেননা পর্দার বিধান মেনে চললে পাশ্চাত্য কায়দার প্রগতি অর্জন করা আদৌ সম্ভব নয়। কিন্তু আপনারা জেনে রাখুন,এ তথাকথিত প্রগতির ফলেই পাশ্চাত্যবাসীদের নৈতিক ও পারিবারিক জীবন আজ চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। সেখানে নারীকে তার নিজস্ব কর্মক্ষেত্র থেকে টেনে এনে পুরুষের কর্মক্ষেত্রে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে নারীও তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্যকে বিসর্জন দিয়ে পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছে। এর ফলে-অফিস আদালত ও কল-কলখানার কাজে কিছুটা উন্নতি সাধিত হয়েছে বটে। কিন্তু সেই সংগে সেখানকার পারিবারিক জীবন থেকেও শান্তি শৃংখলা বিদায় নিয়েছে। তার কারণ,যে সকল নারীকে অর্থোপার্জনের জন্যে বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াতে হয় তারা কখনো পারিবারিক শৃংখলা বিধানের প্রতি মনোযোগ দিতে পারেনা,আর তা সম্ভবও নয়।

এ জন্যেই আজ পাশ্চাত্যের অধিবাসীরা পারিবারিক জীবনের চাইতে হোটেল,রেস্তোরা ও ক্লাবের জীবনেই বেশী অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। সেখানে বহু মানব সন্তান ক্লাব রেস্তোরাতেই জন্মগ্রহণ করে,আর ক্লাব-রেস্তোরাঁতেই জীবনের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। মাতা-পিতার স্নেহ মমতা তারা কোনদিনও উপভোগ করতে পারে না। অপরদিকে দাম্পত্য অশান্তি, বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং যৌন অনাচার সেখানে এরূপ প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে যে,আজ সেখানকার মনীষীরাই তাদের অন্ধকার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আতঁকে উঠছেন। মোদ্দাকথা,পশ্চিমা সভ্যতা বাহ্যিক চাকচিক্যের পশ্চাতে মানুষের জীবনধারাকে এমনি এক পর্যায়ে নিয়ে পৌঁছিয়েছে,যেখানে মানবতার ভবিষ্যত সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। এরূপ বল্গাহীন ও উচ্ছৃংখল জীবন ধারাকে যদি কেউ প্রগতির পরিচায়ক বলে মনে করেন,তবে তিনি তা সানন্দেই গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু ইসলাম এরূপ অভিশপ্ত জীবনকে আদৌ সমর্থন করে না।

এ ছাড়া দেখুন , নারীর মর্যাদা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন  বিষয়ে এ প্রবন্ধটিও -
( ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত )
------------------


ইসলামে নারীর মর্যাদা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন
লিখেছেন শাহ আব্দুল হান্নান
----------------------------

সমাজে নারীর অবস্থান এবং অধিকার নিয়ে আমরা নানা কথা শুনে থাকি ৷নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা বিষয়ে বর্তমানে যে কথাগুলো বলা হয় ,তার মধ্যে অনেকগুলোই গ্রহণযোগ্য ৷আবার কিছু কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করার অবকাশ আছে৷ নারী-পুরুষ সকলেরই অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়া অনস্বীকার্য ৷কারণ সমাজ দিনে দিনে সামনে এগুচ্ছে৷ তাই শুধু নারী বা পুরুষের নয়,বরং সকল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে হবে ৷

গত পঞ্চাশ বছরে সমাজ অনেকটা এগিয়েছে ৷এ সময়ে পুরুষের সাথে নারীরাও সমান-সমান না হলেও,এগিয়ে এসেছে ৷ বেগম রোকেয়ার সময়ে যে সমাজ ছিল ,সে সমাজকে আমরা অনেক পেছনে ফেলে এসেছি ৷ তিনি দেখেছিলেন যে,সে সময়ে মেয়েরা লেখাপড়ার কোন সুযোগই পেতনা ৷সে সময়ে বেগম রোকেয়া জন্ম না নিলে এবং নারী শিক্ষার ব্যাপারে সাহসী উদ্যোগ না নিলে আজ আপনারা নারীরা কেউই কিন্তু পড়ালেখা শিখতে পারতেন না ৷অবশ্য আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তখন অন্য কোন নারীকে পৃথিবীতে পাঠাতেন যিনি এই কাজটি করতেন ৷যা হোক,আমি সেদিকে গেলাম না৷ কারণ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমার আলোচনা শেষ করতে চাই ৷

সারা পৃথিবীতে,বিশেষ করে আমাদের দেশে মানুষের উপর,বিশেষ করে নারীর উপর যে অত্যাচার চলছে তার একটা ফাউন্ডেশন আছে ,ভিত্তি আছে৷ অত্যাচারটা আকাশ থেকে আসছে না ৷নারীর উপরে পুরুষের ,কোন কোন ক্ষেত্রে নারীর যে অত্যাচার তার 'আইডিওলজিক্যাল ফাউন্ডেশন'টা হলোঃ সাধারণভাবে মানুষ বিশ্বাস করে-বিশেষ করে পুরুষরা বিশ্বাস করে যে- নারী পুরুষের চেয়ে ছোট ,তাদের কোয়ালিটি খারাপ এবং তারা নিচু৷ এই বিশ্বাস অবশ্য নারীর মধ্যেও কিছুটা বিদ্যমান৷ মানুষের মধ্যে কতগুলো বিভ্রান্তি থেকে এ বিশ্বাসের জন্ম৷ আর এই বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে আছে নারীর উপর অবহেলা,বঞ্চনা এবং নির্যাতন ৷

এখন আমাদের দেশ থেকে যদি নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হয় ,তবে ইসলামকে বাদ দিয়ে তা করা যাবে না৷ আমি এটা খুব পরিষ্কারভাবে আপনাদের বলতে চাই যে ,ইসলামকে বাদ দিয়ে আমাদের মত দেশে ( যে দেশে মূলত নব্বই ভাগ মানুষ মুসলিম ) চলা যাবে না৷ যারা ইসলাম থেকে বিদ্রোহ করেছে তারা কিন্তু টিকতে পারেনি ,পারছে না৷ এক মহিলা বিদ্রোহ করেছিলেন -আমি নাম বলবো না -তার পরিণতি ভাল হয়নি৷ খারাপ হয়েছে ৷বিনীতভাবে বলতে চাই যে ,ইসলামের 'ফ্রেমওয়ার্ক '-এর মধ্যে আমরা যদি এগুতে পারি ,তবে তা সব চাইতে ভাল হবে৷ আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ,ইসলামে এরকম একটি 'ফ্রেমওয়ার্ক'আছে ,যা নারীদের সামনে এগিয়ে দিতে পারে ৷

আমি ইসলামকে বিকৃত করতে চাইনা ,বিকৃত করার পক্ষেও নই এবং ইসলামের কোনো টেম্পোরারী ব্যাখ্যা দেয়ার পক্ষে নই ৷ সত্যিকার অর্থেই ইসলাম নারীকে ক্ষমতায়িত করেছে এবং নারীকে সম্মানিত করেছে ৷ নারীকে অধিকার দিয়েছে ৷সেগুলো ব্যাখ্যা করার আগে আমি আইডিওলজিক্যাল ফাউন্ডেশন -এর নতুন ভিত্তি যেটা হতে পারে সেটা বলতে চাই ৷

কি সেই ভিত্তি ? যে ভিত্তির ওপর নারী -পুরুষের মৌলিক সাম্য বিদ্যমান ? আল্লাহ মানুষের চেহারা এক রকম করেন নাই ৷ সকল দিক থেকে রহ  in every dot যে কোনো দু'টি মানুষ সমান নয় ৷ ওজন ,উচ্চতা ,রঙ ,শিক্ষা ইত্যাদি সবকিছুতে একটি মানুষ থেকে আরেকটি মানুষ আলাদা ৷ কিন্তু মৌলিকভাবে প্রতিটি মানুষ সমান৷ আল্লাহ্র কাছে সমান৷ তার চারটি প্রমাণ আমি আপনাদের দিচ্ছি ৷

১. আল্লাহ তায়ালা এ কথা খুব স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন,মূল মানুষ হচ্ছে 'রূহ'৷ যাকে আমরা 'আত্মা'বলি ৷ মূল মানুষ কিন্তু শরীর না৷ দেহ তো কবরে পঁচে যাবে ৷ আমরা যারা ইসলাম বিশ্বাস করি তারা জানি ,মূল মানুষ হচ্ছে 'রূহ'৷আল্লাহ সকল মানুষকে,তার রূহকে একত্রে সৃষ্টি করেন,একই রকম করে সৃষ্টি করেন এবং একটিই প্রশ্ন করেন৷ আল্লাহর প্রশ্নের উত্তরও নারী-পুরুষ সকলে একই দিয়েছিল৷ আমি সূরা আরাফের একটি আয়াত বলিঃ ( বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম) 'ওয়া ইজা আখাজা রাব্বুকা'(যখন আল্লাহ তায়ালা বের করলেন),'মিম বানি আদামা'(আদমের সন্তানদের থেকে),'মিন জুহুরিহিম '(তাদের পৃষ্ঠদেশ থেকে-এটা একটা রূপক কথা ) 'জুররিয়াতাহুম '(তাদের সন্তানদেরকে ৷ অর্থাৎ সকল আত্মাকে) এবং সাক্ষ্য নিলেন তাদের ওপরে ,'আমি কি তোমাদের প্রভু নই ? 'তারা সকলে বললো - সকল পুরুষ এবং নারী বললো,'বালা '(হ্যাঁ ) ,'সাহেদনা '(আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আপনি আমাদের প্রভু ) ৷( আয়াত নং-১৭২,সূরা আরাফ ) তার মানে আল্লাহ্র সঙ্গে একটি পয়েন্টে সকল নারী এবং পুরুষের একটি চুক্তি হলো যে,আপনি আমাদের প্রভু;আমরা আপনাকে মেনে চলবো ৷এক্ষেত্রে পুরুষের চুক্তি আলাদা হয়নি ৷নারীর চুক্তি আলাদা হয়নি৷ সুতরাং আমরা দেখলাম ,আমাদের Ideological foundation এর প্রথম কথা হচ্ছে এই যে,মূল মানুষ হচ্ছে 'রূহ'এবং তা সমান৷ এই সাম্যের পরে যদি কোনো অসাম্য থেকে থাকে তাহলে তা অত্যন্ত নগন্য Insignificant, Very Small ;তার মানে হচ্ছে ,মানুষের আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব এক এবং সে মানুষ হিসেবে এক৷ এটি হলো নারী -পুরুষের সাম্যের প্রথম ভিত্তি ৷

২. আমরা পুরুষরা গর্ব করি যে,আমাদের শারীরিক গঠন বোধহয় নারীর তুলনায় ভালো,আল্লাহ বোধহয় আমাদেরকে তুলনামূলকভাবে শ্রেষ্ঠ করে বানিয়েছেন এবং মেয়েরা আনকোয়ালিফায়েড ৷কিন্তু আল্লাহ একটি কথা কোরআনে খুব পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন যে ,সকল মানুষের মধ্যে পার্থক্য আছে,কিন্তু প্রতিটি মানুষ ফার্ষ্ট ক্লাশ ৷যারা নামাজ পড়েন তারা এই আয়াতটা জানেন ,সূরা 'ত্বীন'-এ আল্লাহ বলছেন (বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম) 'লাকাদ খালাক্বনাল ইনছানা ফি আহছানি তাক্বওয়ীম'(নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম কাঠামোতে -পুরুষকে বলেন নাই ) ৷তার মানে আমাদের গঠনে পার্থক্য আছে ,আমরা এক না,আমরা ভিন্ন কাঠামোর ৷কিন্তু সবাই ফার্ষ্ট ক্লাস,সবাই ফার্ষ্ট ক্লাস ৷সুতরাং নারী -পুরুষের মৌলিক সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য,নতুন নারী আন্দোলনের জন্য অথবা নতুন মানব আন্দোলনের জন্য পুরুষদের এ কথা বলা ঠিক না যে ,মেয়েদের স্ট্রাকচার খারাপ ৷আল্লাহ্ তাতে অসন্তুষ্ট হবেন ৷আপনারা যারা মোমেন,যারা বিশ্বাসী-তারা এ কথা বলবেন না ৷সুতরাং নারী-পুরুষের মৌলিক সাম্যের এটা হলো দ্বিতীয় প্রমাণ ৷ মৌলিক এ কারণে বলছি যে ,নারী-পুরুষের মধে ছোটোখাটো পার্থক্য বিদ্যমান ৷

৩. আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে বলছেন যে,সকল মানুষ এক পরিবারের ৷আদম এবং হাওয়া পরিবারের ৷ সূরা নিসার প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলছেন ,"হে মানব জাতি ,সেই রবকে তুমি মানো যিনি তোমাদেরকে একটি মূল সত্ত্বা (নফস) থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই সত্ত্বা থেকে তার সাথীকে সৃষ্টি করেছেন এবং এই দুই জন থেকে তিনি অসংখ্য নারী ও পুরুষ সৃষ্টি করেছেন"৷তার মানে আমরা এক পরিবারের ৷

আমরা হচ্ছি বনি আদম ৷আদমের সন্তান ৷আল্লাহ পাক কোরআন শরীফে অন্ততঃ ২০/৩০ বার বলেছেন ,'ইয়া বনি আদামা '(হে আদমের সন্তানেরা ) ৷বাপ-মা এবং সন্তানেরা মিলে যেমন পরিবার তৈরী হয়,তেমনি ইসলামের দৃষ্টিতে মানব জাতি একটি পরিবার ৷সব পরিবারের ওপর হলো মানব জাতির পরিবার ৷তার মানে আমাদের মৌলিক সম্মান ও মর্যাদা ,তা সমান ৷ছোট খাটো কারণে আমাদের মধ্যে পার্থক্য হয়ে যায় ৷তবে জাগতিক মর্যাদা আসল মর্যাদা না ৷

আইনের ভাষায় যেমন বলা হয়,আইনের চোখে সকল মানুষ সমান,তেমনি আল্লাহর কাছেও সবাই সমান ৷ আল্লাহ্র কাছে সম্মানের একমাত্র ভিত্তি হলো 'তাক্বওয়া'৷আল্লাহ বলেন নাই যে,তার কাছে পুরুষ সম্মানিত বা নারী সম্মানিত ৷
আল্লাহ বলছেন,
ইন্না আকরামাকুম ইন্দাল্লাহি (আল্লাহর কাছে),'আতক্বাকুম'(যে মেনে চলে আল্লাহকে) ৷ 
আল্লাহ্র কাছে যদি মর্যাদার এই ভিত্তি হয়,তাহলে মানুষের পার্থক্যে কি কিছু যায় আসে ?  আল্লাহ বলছেন তিনি 'তাক্বওয়া 'ছাড়া (আল্লাহকে কে মানে আর কে মানেনা) কোনো পার্থক্য করেন না ৷

" অতঃপর আমরা এক পরিবারের সন্তান,আমাদের মৌলিক মর্যাদা সমান ৷''(সূরা হুজুরাত ,আয়াত -১৩) 

আরেকটি কথা,কোরআনের সূরা নিসার একটি আয়াতের শেষ অংশে আল্লাহ বলছেন "এবং ভয় পাও সেই আল্লাহকে বা মান্য করো সেই আল্লাহকে ,যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে অধিকার দাবী করে থাক ৷এবং ভয় পাও ' গর্ভ'-কে বা 'মা'-কে৷ আল্লাহ বলছেন 'গর্ভ'-কে ভয় পাও ৷কোরআন শরীফের এই আয়াতটির তফসিরে সৈয়দ কুতুব নামে মিশরের একজন বিখ্যাত আলেম লেখেন ,এই ভাষা পৃথিবীর কোনো সাহিত্যে কোরআনের আগে লেখা হয় নাই ৷আল্লাহ 'গর্ভ '-কে ভয় করতে বলে মা '-কে সম্মান করার কথা বলেছেন,নারী জাতিকে সম্মান করার কথা বলেছেন ৷সুতরাং আমাদের মৌলিক সামাজিক মর্যাদা এক্ষেত্রেও সমান বলে প্রতীয়মান হলো ৷এটা আমাদের নতুন আইডিওলজিক্যাল ফাউন্ডেশনের তৃতীয় প্রমাণ ৷

৪. আল্লাহ্ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টির সময় বলে দিলেন যে,
"তোমরা সবাই খলিফা" ৷তিনি বললেন,"ইন্নি জায়লুন ফিল আরদে খলিফা "৷আল্লাহ বলেন নাই যে,নারী পাঠাচ্ছেন বা পুরুষ পাঠাচ্ছেন ৷ এমনকি তিনি বলেন নাই যে ,তিনি মানুষ পাঠাচ্ছেন;আল্লাহ বললেন,তিনি খলিফা পাঠাচ্ছেন ৷পাঠালেন মানুষ,বললেন খলিফা ৷মানুষকে তিনি খলিফা নামে অভিহিত করলেন ৷খলিফা মানে প্রতিনিধি ৷আমরা পুরো মানব জাতি হচ্ছি আল্লাহর প্রতিনিধি ৷পুরুষ ,নারী নির্বিশেষে আমরা প্রত্যেকে তাঁর প্রতিনিধি-আল্লাহর প্রতিনিধি ৷ তবে এ কথা ঠিক যে ,যদি আমরা গুণাহ্ করি,অন্যায় করি,খুন করি,অত্যাচার করি,জুলুম করি,ঈমান হারিয়ে ফেলি,তাহলে আমাদের খলিফার মর্যাদা থাকে না ৷কিন্তু মূলতঃ আমরা আল্লাহ পাকের খলিফা ৷(কুরআন ২:৩০; ৩৫:৩৯)

এই খলিফার মর্যাদার মধ্যেই রয়েছে সকল ক্ষমতায়ন ;যে ক্ষমতায়নের কথা আমরা বলি ৷ক্ষমতা ছাড়া কেউ কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারে না ৷খেলাফতের দায়িত্ব পালন করতে গেলে প্রত্যেক নারী এবং পুরুষের কিছু ক্ষমতা লাগবে ৷ নারীর ক্ষমতায়নের ভিত্তি এই খেলাফতের মধ্যে রয়েছে ৷শুধু নারী নয়,'খেলাফত 'শব্দের মধ্যে নারী,পুরুষ,গরিব,দুর্বল সকলের ক্ষমতায়নের ভিত্তি রয়েছে ৷সুতরাং নারী পুরুষ মৌলিক সাম্যের এটি হলো চতুর্থ প্রমাণ ৷

ইসলাম চায় every man, every woman, every person should be empowered ;কিন্তু এই মুহর্তে যদি নারীরা বঞ্চিত থেকে যায়,তবে তাদেরকে ক্ষমতায়িত করতে হবে ৷পুরুষরা কোনোদিন বঞ্চিত হলে তাদেরকে ক্ষমতায়িত করতে হবে ৷তবে যে বঞ্চিত তার কথা আমাদের আগে ভাবতে হবে ;নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য বর্তমানে আমাদের আগে কাজ করতে হবে ৷

আজকে আপনাদের আলোচনায় মেয়েদের আসল কাজ কি,তা নিয়ে কথা উঠেছে ৷তারা কি ঘরে বসে থাকবে ? এমন প্রশ্ন উঠেছে ৷কোনো মেয়ে যদি তার স্বাধীন সিদ্ধান্তে ঘরে থাকতে চায়,তার সেটা করার অধিকার আছে ৷পুরুষের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য ৷কিন্তু আল্লাহ কোথাও বলেন নাই যে,নারীদের ঘরে বসে থাকতে হবে ,বাইরের কাজ নারীরা করতে পারবে না ৷বরং আল্লাহ মূল দায়িত্ব নারী -পুরুষের একই দিয়েছেন ৷ সূরা 'তওবা'র ৭১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে,নারী পুরুষের দায়িত্ব ৬টি ৷আয়াতটি এরকম : মোমেন পুরুষ এবং মোমেন নারী একে অপরের অভিভাবক (ওয়ালী) ,একে অপরের বন্ধু,একে অপরের সাহায্যকারী (এই আয়াত কোরআন শরীফের সর্বশেষ সূরা সমুহের একটি ৷উল্লেখিত বিষয়ে আগে যে সকল আয়াত আছে সেগুলোকে এই আয়াতের আলোকে ব্যাখ্যা করতে হবে) ৷এই আয়াতে বলা হয়েছে যে,নারী পুরুষ একে অপরের অভিভাবক,গার্জিয়ান ৷অনেকে বলে যে,নারী গার্জিয়ান হতে পারে না ৷কিন্তু আল্লাহ বলেছেন,নারী গার্জিয়ান হতে পারবে ৷মূল কোরআনে এ ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য নেই ৷ নারী -পুরুষের নির্ধারিত ৬টি ডিউটি হলোঃ

ক. তারা ভালো কাজের আদেশ দিবে ৷

খ. মন্দ কাজের ব্যাপারে নিষেধ করবে ৷
গ. উভয়ে নামাজ কায়েম করবে ৷
ঘ. যাকাত দিবে ৷
ঙ. আল্লাহকে মানবে ৷
চ. রসুলকে মানবে ৷


এসব কথার মাধ্যমে আল্লাহ নারীদের সকল ভাল কাজে অংশগ্রহণের কথা বলেছেন ৷এটাই ইসলামের নীতি ৷এ বিষয়ে আল্লাহ বলেছেন যে ,যারা এই ৬টি দায়িত্ব পালন করবে তাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা রহমত করবেন ৷কোরআনের বেশ কয়েকটি তফসির পড়ে এবং পবিত্র কোরআন ও সুন্নাতে রাসুলে পুরোপুরি বিশ্বাসী একজন মানুষ হিসেবে আমি বিশ্বাস করি যে,এই ছয়টি দায়িত্বের মধ্যে নারী পুরুষ সবাই সমান ৷রাজনীতি ,সমাজসেবা ইত্যাদি সব কাজই এ ৬টির আওতায় পড়ে ৷

আমার মনে হয় আমরা ইসলামের মূল জিনিস পরিত্যাগ করে ছোট-খাটো জিনিস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি ৷ মানুষের তৈরী বিভিন্ন কিতাবের ওপর নির্ভর করছি ৷আল্লাহর মূল কিতাবকে আমরা সেই তুলনায় গুরুত্ব দিচ্ছি বলে মনে হচ্ছে না ৷শেষে একটি কথা বলি ,ইসলামকে যদি আপনারা অন্যের মাধ্যমে শেখেন ,তবে আপনারা কখনোও মুক্তি পাবেন না ৷আপনাদেরকে কোরআনের পাঁচ-ছয়টি তাফসির নিজে পড়তে হবে ৷ অনেকে অনুবাদের মধ্যে তাদের নিজেদের কথা ঢুকিয়ে দেয় ৷ ফলে পাঁচ-ছয়টি বই পড়লে আপনারা বুঝতে পারবেন কোথায় মানুষের কথা ঢুকছে;আর আল্লাহর কথাটা কি ৷কয়েক রকম ব্যাখ্যা পড়লে আপনি ঠিক করতে পারবেন কোন ব্যাখ্যাটা ঠিক ৷মেয়েদের মধ্যে বড় তাফসিরকারক হয়নি ৷এটা মেয়েদের ব্যর্থতা ,মেয়ে তাফসিরকারকদের থাকলে হয়তো gender bias হতো না ৷তবে কোরআন শরীফের কিছু তাফসীর আছে যেগুলো free from gender bias ;যেমন মোহাম্মদ আসাদের " দি ম্যাসেজ অব কোরআন "৷

লেখক সাবেক সচিব,বাংলাদেশ সরকার

দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর ২৩তম উজ্জীবক প্রশিক্ষণে দেয়া  বক্তব্যের সংকলিত অংশ৷

==========================